"দেশের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত রাজ্য..." পশ্চিমবঙ্গ নয়, রাহুলের ন্যায় যাত্রার নিশানায় যে রাজ্য

Rahul Gandhi Bharat Jodo Nyay Yatra : রাহুলের দাবি, হিমন্ত বিশ্ব শর্মা নিজে, তাঁর সন্তান, এবং স্ত্রী- সবাই কোনও না কোনও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত।

'ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা'-র অসম পর্ব শুরু হয়েছে। আর এই পর্বের প্রথম দিনেই কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী দাবি করেছেন, দেশের মধ্যে একমাত্র অসম রাজ্যেই সম্ভবত সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার এবং সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত মুখ্যমন্ত্রী রয়েছেন। নাগাল্যান্ড থেকে ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা অসমে ঢুকেছে। শিবসাগর জেলার হ্যালোটিংয়ে একটি জনসমাবেশে ভাষণ দিতে গিয়ে স্বাভাবিকভাবেই কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন বিজেপি এবং বিজেপির আদর্শ রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের বিরুদ্ধে সারা দেশে ঘৃণা ছড়ানো এবং জনসাধারণের টাকা লুট করার অভিযোগ এনেছেন। বিজেপিরই শাসনে রয়েছে অসম। আর এই অসম প্রশাসন চূড়ান্তভাবে দুর্নীতিতে ডুবে রয়েছে বলে দাবি রাহুলের।

রাহুল গান্ধি বলছেন, বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার আদিবাসী, চা শ্রমিক এবং অসমের অন্যান্য আদিবাসী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অবিচার করছে। আসামে দুর্নীতি প্রবল এবং অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার পুরো পরিবারই দুর্নীতিতে জড়িত। রাহুলের দাবি, হিমন্ত বিশ্ব শর্মা নিজে, তাঁর সন্তান, এবং স্ত্রী- সবাই কোনও না কোনও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। রাহুল বলছেন, "হিমন্ত ভাবছেন, টাকা দিয়ে অসমের মানুষ কেনা যায়। কিন্তু অসমের মানুষকে কেনা যায় না।"

আরও পড়ুন- ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা: কোন পথে মন জিততে চাইছেন রাহুল?

বরাবরই বিজেপির আক্রমণের সামনের সারিতে রয়েছে কংগ্রেস। রাহুলের এমন আক্রমণের পর তাই স্বাভাবিকভাবেই হিমন্ত বিশ্ব শর্মা পাল্টা আক্রমণ শানিয়েছেন। তাঁর দাবি গান্ধি পরিবারই আসলে দেশের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত পরিবার। "শুধু দুর্নীতিগ্রস্ত নয়, ওরা নকলও। ওদের পরিবারের পদবি গান্ধীও নয়, কিন্তু সবাই নকল পদবি বয়ে চলেছে,” বলছেন হিমন্ত।

মণিপুর থেকে শুরু হয়েছিল রাহুলের এই ন্যায় যাত্রা। রাহুল জানাচ্ছেন, গত বছরের ৩ মে থেকে জাতি হিংসার ফলে সেই রাজ্যে গৃহযুদ্ধের মতো পরিস্থিতি হয়েছে। মণিপুর ভাগ হয়ে যাচ্ছে অথচ প্রধানমন্ত্রী একবারও সেই রাজ্যে যাননি। কয়েক মাস ধরে সেখানে হিংসা চলছে, মানুষ মারা যাচ্ছে, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, শান্তি ফিরে আসেনি।

অসমের পুরনো বিদ্রোহের হিংসার দিকে ইঙ্গিত করে রাহুক গান্ধি বলছেন, কংগ্রেস জনগণের পক্ষেই দাঁড়িয়েছিল তখনও, কংগ্রেসই রাজ্যে রক্তপাতের অবসান ঘটিয়েছে। উত্তর পূর্বেরই আরেক রাজ্য নাগাল্যান্ডে নাগা রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান আনতে একটি ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি নয় বছর আগে স্বাক্ষরিত হয়েছিল। তারপর সেই চুক্তির কী হলো কেউ জানে না কারণ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই সম্পর্কে একটি কথাও বলেন না।

রাহুল রাজ্যে রাজ্যে মানুষের সঙ্গে সংযোগ গড়ার কাজ করছেন। কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর অবধি এর আগে যে ভারত জোড়ো যাত্রা হয়েছিল তা বিশাল প্রভাব ফেলেছে বলেই দাবি রাহুলের। কিন্তু বিজেপি মনে করছে এই ধরনের পদযাত্রায় কংগ্রেসের শিকে ছিঁড়বে না।

আরও পড়ুন- ভারত ন্যায় যাত্রা: মণিপুর থেকে মহারাষ্ট্র, কেন এই রুটম্যাপ বাছলেন রাহুল গান্ধী?

রাহুল বলছেন সমস্ত বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতেই অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক অবিচার চলছে, আর তার একমাত্র শিকার হচ্ছেন দরিদ্র এবং প্রান্তিক শ্রেণির মানুষরাই। তাই মণিপুর থেকে মুম্বই এই যাত্রার উদ্দেশ্য শুধু ভারতের প্রতিটি ধর্ম, বর্ণ ও ভাষার মানুষকে একত্রিত করা নয়, ন্যায়বিচার দেওয়াও এই যাত্রার লক্ষ্য। আর এই ন্যায় যাত্রার নেপথ্যে তিনি রাখছেন মধ্যযুগীয় বৈষ্ণব সাধক মহাপুরুষ শ্রীমন্ত শঙ্করদেবকে। অসমের একজন বিখ্যাত মানুষ শঙ্করদেব। সেই শঙ্করদেবের আদর্শেরই যাত্রা কংগ্রেসের এই 'ন্যায় যাত্রা'। শঙ্করদেব যে পথ দেখিয়ে গেছেন সবাইকে একজোট করার, অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার, কংগ্রেস শুধু অসমের সেই ইতিহাসের শিকড় ধরেই এগোচ্ছে, দাবি রাহুলের।

ন্যায় যাত্রায় বেকারত্ব নিয়ে কথা বলছেন রাহুল। প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, ক্ষমতায় এলে সমস্ত সরকারি শূন্যপদ পূরণ করার। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করে সর্বাধিক সংখ্যক কর্মসংস্থান সৃষ্টির কথা বলছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী ২ কোটি চাকরির কথা বলে আসলে ২-৩ জন শিল্পপতির জন্যই কাজ করছেন। বিমানবন্দর, বন্দর, কৃষি, পরিকাঠামোর মতো সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ গৌতম আদানির কাছে বিক্রি করে ফেলছেন।

কিন্তু দুর্নীতির প্রশ্নে কংগ্রেসেরই গলায় বিঁধে আছে কয়লা কেলেঙ্কারি, ২জি স্পেক্ট্রাম থেকে শুরু করে সত্যম কেলেঙ্কারি অবধি বিবিধ দুর্নীতির অভিযোগ। ইন্ডিয়া জোটের অংশ দলগুলির, এমনকী তৃণমূলের বিরুদ্ধে যে লাগামহীন দুর্নীতির অভিযোগ, তাকে ঢাকা যাবে কোন ন্যায় দিয়ে? কংগ্রেস কি দুর্নীতিমুক্ত ভারতের স্বপ্ন দেখাতে পারবে দেশকে, আদৌ?

More Articles