হিন্দু ধর্মের অবমাননা হয়নি! বিজেপির নালিশ উড়িয়ে রাহুলের পাশেই শঙ্করাচার্য

Rahul Gandhi: সম্প্রতি একটি বক্তৃতায় তিনি জানিয়েছেন, তিনি রাহুল গান্ধির পুরো বক্তব্যটাই শুনেছেন। তাঁর বক্তব্য, কোথাও কোনওভাবে হিন্দুধর্মের অবমাননা বা বিরোধিতা করেননি বিরোধী দলনেতা।

হিন্দুত্ব-বক্তব্যে এবার রাহুলের পাশে খোদ শঙ্করাচার্য। কার্যত বিজেপির অভিযোগকে 'শাস্তিযোগ্য অপরাধ' বলেই ভর্ৎসনা করলেন স্বামী অভিমুক্তেশ্বরানন্দ সরস্বতী। লোকসভায় ভাষণ দিতে উঠে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ব্যপক ভাবে বিঁধেছেন বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধি। শুধু রাহুল কেন, গোটা বিরোধী জোটই সুর চড়িয়েছে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে। হবে না-ই বা কেন, বহু বছর পরে লোকসভায় জোরালো বিরোধী টক্কর পেয়েছে গেরুয়া শিবির। পেয়েছে বিরোধী দলনেতাও। রাহুল গান্ধি বক্তৃতা দিতে উঠে সুর চড়িয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে। এমনকী প্রশ্ন তোলেন তাঁর ও তাঁর দলের হিন্দুত্ববাদ নিয়েও। রাহুলের মতে, হিন্দুধর্মের কোথাও হিংসার কথা নেই। শুধু হিন্দুধর্ম কেন, কোনও ধর্মেই নেই। অথচ বিজেপি শুধুই হিংসা ছড়ায়। ভোটমুখী দেশে মোদি-সহ একাধিক বিজেপি নেতার একাধিক ঘৃণাভাষণ তেমন ইঙ্গিতই করেছে। এই মর্মে রাহুলের বক্তব্য, বিজেপি বা মোদি, কেউই আসলে হিন্দু নন।

রাহুলের এই বক্তব্যটিকে ইস্যু করে এর পরেই আসরে নামে বিজেপি। রাহুলের বক্তব্য হিন্দুধর্মের প্রতি অপমান ও অসম্মানজনক বলে দাবি করেন মোদি-সহ বহু বিজেপি নেতাই। সে নিয়ে শুরু হয় জোর তরজা। আঙুল তোলা হয় রাহুলের দিকে। এমনকী লোকসভার অধিবেশনের থেকে বাদ যায় রাহুলের বক্তব্য। সে নিয়ে লোকসভার স্পিকারকে প্রশ্ন করে লম্বাচওড়া চিঠিও লেখেন বিরোধী দলনেতা। হিন্দু-বিদ্বেষী বলে রাতারাতি দেগে দেওয়া হয় রাহুল গান্ধিকে।

আরও পড়ুন: ‘হিন্দুই নন!’ লোকসভায় সরাসরি আক্রমণ রাহুলের, উত্তর দিতে কালঘাম ছুটল টিম মোদির

রাহুলের বক্তব্য ঘিরে বিজেপি যতই চাপে পড়ুক না কেন, যতই বিজেপি আক্রমণ শানাক না কেন, সংসদে রাহুলের বক্তব্যকে সমর্থনও করেছেন অনেকেই। এবার সেই ইস্যুতে রাহুল পাশে পেলেন চার শঙ্করাচার্যের অন্যতম স্বামী অভিমুক্তেশ্বরানন্দ সরস্বতী। এর আগে তিনি নির্মীয়মান রামমন্দিরে রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। আপত্তিও জানিয়েছিলেন সেই অনুষ্ঠানের। এবার রাহুল গান্ধিকে হিন্দু-বিদ্বেষী বলার প্রতিবাদ জানালেন স্বামী অভিমুক্তেশ্বরানন্দজি। এমনকী শাসকদলের বিরুদ্ধে দাগলেন তোপও।

 

হিন্দুধর্মের বিষয়ে শঙ্করাচার্যদের মন্তব্যকে প্রাধান্য দেয় গোটা দেশই। অসম্পূর্ণ রামমন্দিরে রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠা নিয়েও তাঁদের আপত্তিকে ঘিরে বেশ চর্চা হয়েছিল। এবার রাহুলের হিন্দুত্ববাদ সংক্রান্ত প্রশ্নে নিজের সমর্থন জানালেন তিনি। সম্প্রতি একটি বক্তৃতায় তিনি জানিয়েছেন, তিনি রাহুল গান্ধির পুরো বক্তব্যটাই শুনেছেন। আর তা শোনার পরেই তাঁর স্পষ্ট মত, হিন্দুধর্মে সহিংসতার কোনও জায়গা নেই। রাহুল গান্ধি কোথাও কোনওভাবে হিন্দুধর্মের অবমাননা বা বিরোধিতা করেননি। ফলে তাঁর বক্তব্য অর্ধেকটা শুনে প্রচার করা অপরাধ। এবং তা শাস্তিযোগ্য বলেই মনে করছেন শঙ্করাচার্য। শঙ্করাচার্যের সংযোজন, 'ধর্মের অর্থ আসলে ধারণ করা। সেখানে ঘৃণার জায়গা নেই। স্রেফ হিন্দু নয়, যে কোনও ধর্মের ক্ষেত্রেই এ কথা সত্যি।'

আরও পড়ুন: হিন্দু মানেই বিজেপি নয়, অযোধ্যা শিক্ষা দিয়েছে, লোকসভায়  রাহুল

সেদিন সংসদে মোদির বিরুদ্ধে একাধিক প্রশ্ন তোলেন রাহুল। ভোটের আগে যেভাবে দেশ জুড়ে ঘৃণা ছড়িয়েছে বিজেপি, তার ঘোরতর নিন্দা করেছিলেন রাহুল। সেই প্রসঙ্গেই হিন্দু ধর্মের স্বরূপ তুলে ধরার চেষ্টা করেন রাহুল। তা বলতে গিয়ে একটি শিবের ছবি ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা। যদিও তাঁকে সে কাজে বাধা দেয় স্পিকার। এর পরেই হিন্দুধর্ম নিয়ে তাঁর বক্তব্যকে তুলে ধরে আসরে নামেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্যরা। প্রধানমন্ত্রী দু'বার, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ছ'বার, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং দু'থেকে তিনবার, কৃষি মন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহ্বান একবার এবং ভূপেন্দ্র বাঘেল একাধিকবার উঠে দাঁড়িয়ে বিরোধিতা করেন। এভাবে কোনও দলকে দোষারোপ করা যায় না বলে উল্লেখ করে সোচ্চার হন অমিত শাহ। একইভাবে রাজনাথ সিং সহ অন্যান্য BJP নেতারাও রাহুলের বিরোধিতা করেন সংসদে বসেই। তার আবহে গোটা দেশের বিজেপি সমর্থকেরাই রাহুলকে বিঁধতে থাকেন বিষবাক্যে। তবে রাহুল যে খুব একটা ভুল বলেননি বা তাঁর উদ্দেশ্য ভুল ছিল না, তা প্রমাণ করে দিয়েছে খোদ শঙ্করাচার্যের সমর্থন।

More Articles