নিজের দলের সাংসদকে অশ্লীল ভাষায় আক্রমণ, তবু কেন চুপ মায়াবতী?

Ramesh Bidhuri vs Danish Ali : গোলওয়ালকর বলেন, "থ্রি বিগেস্ট ইন্টারনাল এনিমিস অফ হিন্দুস আর মুসলিমস, ক্রিশ্চানস অ্যান্ড কমিউনিস্টস"। এই ভদ্রলোক মোদিজির গুরু।

একজন বিরোধী সাংসদকে 'ভড়ওয়া' বলছেন আরেক সাংসদ, বিজেপি সাংসদ। তা শুনে একগাল হাসছেন অন্য বিজেপি সাংসদরা। বিজেপির রমেশ বিধুরি তাঁরই সহনাগরিক বিএসপি সাংসদ, বলা ভালো মুসলিম সাংসদকে বলছেন, "ইস মুল্লে কো বাহার দেখ লুঙ্গা”! হাসছেন বিজেপির নেতারা। অমৃতকালের অমৃতভাষণ বর্ষণ করছেন বিজেপির হিন্দু সাংসদ! রমেশ বিধুরি সংসদে এমন ভাষা প্রয়োগ করার সাহস রাখেন। সাহস জোগায় দেশের ক্ষমতাসীন বিজেপি দল। আর দানিশ আলির পাশে রইলেন কে? দেশজুড়ে বিরোধীরা প্রতিবাদ জানিয়েছেন ঠিকই কিন্তু মায়াবতী চুপ! নিজেরই দলের সাংসদের এমন অপমানে প্রতিবাদ, ক্ষোভ কোথায় তাঁর? বাংলা যা ভাবছে-র 'অমৃতকালের অমৃতভাষণ' পর্বে এই নিয়েই আলোচনা করলেন সাংবাদিক পরঞ্জয় গুহ ঠাকুরতা।

X-এ হিন্দিতে একটি পোস্টে মায়াবতী লিখেছেন, "যদিও স্পিকার বিএসপি সাংসদ দানিশ আলির বিরুদ্ধে বিজেপি সাংসদের করা আপত্তিকর মন্তব্যটি সরিয়ে দিয়েছেন, তাঁকে সতর্ক করেছেন এবং একজন বর্ষীয়ান মন্ত্রী সংসদে ক্ষমা চেয়েছেন, তবে এটি দুঃখজনক যে দল এখনও তাঁর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি।” ব্যাস! লোকসভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে দানিশ আলির বিরুদ্ধে অত্যন্ত নোংরা শব্দ ব্যবহার করেছিলেন রমেশ বিধুরি, ভড়ওয়া, মুল্লা জাতীয় শব্দ দেশের সংসদে দাঁড়িয়ে বলছেন তিনি! স্পিকার ওম বিড়লা পরে সেই শব্দগুলি বাদ দেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজনাথ সিং রমেশ বিধুরির এই মন্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশও করেন। স্পিকার ওম বিড়লা রমেশ বিধুরিকে সতর্ক করে দেন, ফের এই ধরনের নোংরামি করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দেন। সবই ঠিক আছে। কিন্তু মায়াবতী টুইট করেই দায় সারলেন?

মায়াবতী, যিনি বহুজন সমাজ পার্টির শীর্ষ নেত্রী তিনি একটি অতিরিক্ত কথাও বলেননি এই অশ্লীল ঘটনাটি নিয়ে। এর অর্থ কী? মায়াবতী কেন চুপ আছেন, এই ঘটনাটিই আমাকে আশ্চর্য করে দিচ্ছে। এই ঘটনা গোদি মিডিয়াও হালকা চালে দেখিয়েছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রীও এর নিন্দে করেছেন। কিন্তু কেবল নিন্দেই কি যথেষ্ট? দল থেকে কেন বের করে দেওয়া হচ্ছে না রমেশ বিধুরিকে? বলা হচ্ছে, "কেউ ব্যথিত হলে আমি দুঃখিত"। মানে, কেউ আঘাত পেয়ে থাকলে আমি দুঃখিত, কাউকে আহত করে থাকলে আমি দুঃখিত! তা না হয়ে থাকলে এমন ভাষা প্রয়োগে অসুবিধা নেই!

সৌজন্যে- লোকসভা টিভি

আমরা ছবিতে দেখতে পাচ্ছি, বিধুরির পিছনে হর্ষবর্ধন রয়েছেন। তিনি একজন ডাক্তার, একটা সময় কেন্দ্র সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন। রবিশঙ্কর প্রসাদ রয়েছেন, মোদি সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ছিলেন তিনি! আইনমন্ত্রী ছিলেন। এই ভাষা শুনে তাঁদের একগাল হাসি!

নরেন্দ্র মোদি, দেশের প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়ে একেবারেই চুপ। তবে মোদির নীরবতা বিষয়ে যাওয়ার আগে একটু পিছিয়ে যাওয়া যাক। মোদি প্রায়ই একটা কথা বলেন, তাঁর গুরু হচ্ছেন গোলওয়ালকার। গোলওয়ালকার বহু দশক আগে কী বলেছিলেন? তাঁর বই ‘বাঞ্চ অফ থটস'-এ গোলওয়ালকর লিখেছিলেন, ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের থেকেও আরও একটা বড় লড়াই হলো ভারতবর্ষের ভেতরে হিন্দুদের সবচেয়ে বড় শত্রু কারা, তা জানতে হবে। বইটির নয়া সংস্করণে এই অংশটি মেলে না। পুরনো সংস্করণ পেতে গ্রন্থালয়ে যেতে হবে। কারা 'শত্রু' এই প্রসঙ্গে তিন জনের নাম বলেছিলেন গোলওয়ালকর। "থ্রি বিগেস্ট ইন্টারনাল এনিমিস অফ হিন্দুস আর মুসলিমস, ক্রিশ্চানস অ্যান্ড কমিউনিস্টস"। এই মাধব সদাশিবরাও গোলওয়ালকার মোদিজির গুরু।

এম এস গোলওয়ালকর

সারা বিশ্বেই আমরা দেখছি সংখ্যাগুরুর আধিপত্য। সংখ্যালঘুরা দ্বিতীয় বা তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক। সিএএ, এনআরসি এই মেরুকরণের কাজই তো করে। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দুই দেশ, ইন্দোনেশিয়া এবং পাকিস্তানে ভারতবর্ষের চেয়ে বেশি মুসলিম থাকেন। ভারতে ১৪০ কোটির ১৪ শতাংশ মানুষ মুসলিম। এখন নরেন্দ্র মোদি যে কথা বলছেন সংসদে, নতুন ভারতের কথা বলছেন, তাঁর দল বিজেপি কিন্তু যা আচরণ করছে, তা ঠিক উল্টো। রমেশ বিধুরি লোকসভায় এই ধরনের কথা বলেছেন, 'হেটস্পিচ' বেআইনি জেনেও আমরা কিছু করতে পারছি না।

হাথরাসের ঘটনায় একজন দলিত মহিলাকে ধর্ষণ করার পর দেহ জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। কেরলের একজন মুসলিম সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পান সেখানে গেলেন খবর করতে, তাঁকে জেলে পুরে রাখা হলো ২ বছর। মহম্মদ আখলাখকে যে খুন করা হলো, তখন তো যোগী ছিলেন না ক্ষমতায়, অখিলেশের সমাজবাদী পার্টি ছিল। কিন্তু মোদি তাতেও চুপ ছিলেন। অর্থটা কী?

তবে আমি এত কিছুর পরেও আশাবাদী। কর্নাটকের কথা বলতে চাই। সেখানে হিজাব, বজরংবলি, টিপু সুলতান কত কিছুই তো করেছে ভারতীয় জনতা পার্টি! কর্নাটকের উপকূলে বিজেপি শক্তিশালী। বেঙ্গালুরুতেও শক্তিশালী, তাহলে হেরে গেল কেন? বাংলাতে তো কম টাকা খরচা করেনি বিজেপি। তাও কেন হেরে গেল বিজেপি? আশা আছে। আশাই নতুন ভারতের পথ ঠিক করবে, সংখ্যাগুরুরা নয়।

More Articles