চামড়ার নিচে হামাগুড়ি দিচ্ছে কী? বিরলতম রোগ নিয়ে শোরগোল বিশ্বজুড়ে...
Rare Parasitic Infection: কৃমির সংক্রমণ এতটাই খারাপ পর্যায়ে চলে যায় যে চিকিৎসকরা দেখেন তাঁর ত্বকের নীচে কৃমির লার্ভা হামাগুড়ি দিচ্ছে।
পেশার কারণে ঘটতে থাকা রোগ বিবিধ। মানুষের পেশার ধরন ভেদে রোগের ধরনও যাচ্ছে পালটে। দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা, প্রবল মানসিক চাপ- এসব যদিও এখন জলভাত। পেশাগত কারণে ঘটা রোগ এখন আরও বিপজ্জনক! কিছুকাল আগেই একটি জার্নালে প্রকাশ পেয়েছে, ছত্রাক নিয়ে দীর্ঘকাল কাজ করার ফলে এমন এক বিরল সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন এক ব্যক্তি যা বিশ্বে প্রথম মানব সংক্রমণ। এর আগে কেবল উদ্ভিদের দেহে রোগ ধরাত ওই ছত্রাক। সেই প্রথম কলকাতার ওই ব্যক্তি আক্রান্ত হন ছত্রাকের সংক্রমণে। এবার আরও ভয়াবহ এক রোগের কথা জানা গিয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তির চামড়ার নিচে হামাগুড়ি দিচ্ছে শয়ে শয়ে পোকা! স্পেনের একজন শ্রমিক দীর্ঘদিন থেকেই নর্দমা সাফাইয়ের কাজ করেন। তাঁর দেহে একটি কৃমির সংক্রমণ এতটাই খারাপ পর্যায়ে চলে যায় যে চিকিৎসকরা দেখেন তাঁর ত্বকের নীচে কৃমির লার্ভা হামাগুড়ি দিচ্ছে।
নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে প্রকাশিত একটি গবেষণায় ৬৪ বছর বয়সী ওই সাফাইকর্মীর বিরল 'হাইপারইনফেকশন' রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত বলা হয়েছে। গবেষণায় বলা হয়েছে যে, নর্দমা সাফাইয়ের ওই কর্মচারী বেশ কিছুদিন ধরে ডায়রিয়াতে ভুগছিলেন। চামড়ায় চুলকুনি এবং ফুসকুড়িও দেখা দেয়। অবস্থা ভালো না ঠেকায় একটি হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে যান তিনি। ততদিনে তাঁর ত্বকের নীচে কৃমির লার্ভা ছড়িয়ে পড়েছে দ্রুত।
মাদ্রিদের ইউনিভার্সিটি অব হসপিটালের চিকিত্সকরা দেখতে পান, এই ব্যক্তি স্ট্রংগাইলয়েডস স্টেরকোরালিস সংক্রামিত। এটি এক ধরনের পরজীবী রাউন্ডওয়ার্ম বা গোলকৃমির প্রজাতি যা সারা বিশ্বের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এবং উপক্রান্তীয় অঞ্চলে বাস করে। স্ট্রংইলোডিয়াসিস রোগের কারণ এই পরজীবীই।
গবেষণায় বেশ কিছু ছবি প্রকাশ করা হয়েছে যাতে দেখা যাচ্ছে, ওই সাফাইকর্মীর ত্বকের উপর ট্যাটুর মতো দেখাচ্ছে! চিকিৎসকরা প্রথমে ত্বকের নীচে লার্ভাগুলির প্রাথমিক অবস্থান বুঝতে চামড়ার উপর একটি রেখাচিত্র আঁকেন। দেখা যায়, ঠিক ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওই অবস্থান থেকে লার্ভাগুলি সরে অন্যত্র চলে গিয়েছে! এই সাফাইকর্মীর দেহে ঠিক কীভাবে এমন ভয়ানক সংক্রমণ ঘটেছিল তা স্পষ্ট না হলেও, চিকিৎসকরা উল্লেখ করেছেন যে, এই ব্যক্তির সংক্রমণের বেশ কয়েকটি পরিবেশগত কারণ রয়েছে। যে কারণেই পরজীবী তাঁর দেহে বাসা বাঁধে।
আরও পড়ুন- পৃথিবীতে এই প্রথম! কলকাতার রোগীর দেহে হানা বিরল ছত্রাক সংক্রমণের…
নিউ ইয়র্ক পোস্ট জানাচ্ছে, চিকিৎসকদের ব্যাখ্যা বলছে, স্ট্রংলোয়েডস, মানে যা এই ব্যক্তির মূল সংক্রমণ, তা সাধারণত উপসর্গবিহীন। ফলে বছরের পর বছর কেটে গেলেও তা শনাক্ত করা যায় না। তাহলে কীভাবে এই সাফাইকর্মী টের পেলেন দেহের অস্বাভাবিকতা? ম্যালিগন্যান্ট স্পাইনাল কম্প্রেশনের জন্য হরমোন থেরাপি চলছিল ওই কর্মীর। এই বিশেষ থেরাপির ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটাই কমে যায় দেহের। তখনই দেহে পরজীবীর আক্রমণ ফুটে ওঠে।
হাইপারইনফেকশনের অবস্থায় চলে যান ওই রোগী। এটি এমন এক মারাত্মক অবস্থা যেখানে লার্ভার প্রাচুর্য সেপসিস এবং অঙ্গ বিকল করার মতো সমস্যাকে বাড়িতে তোলে। সংক্রমণ এমন এক জায়গায় গিয়ে ঠেকেছে যেখানে গোলাকার এই কীটগুলি চামড়ার নিচে সরে সরে যাচ্ছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন ওই ব্যক্তির মলের নমুনাতেও লার্ভা পাওয়া গিয়েছে।
শক্তিশালী অ্যান্টি প্যারাসাইটিক ওষুধ দেন চিকিৎসকরা। আইভারমেকটিন ওষুধ দিয়ে চিকিত্সা করার পরে, রোগীর ফুসকুড়ি এবং ডায়রিয়া দুই-ই কমে গেছে, জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।