নতুন কোন লাভের হদিশ দিচ্ছে RBI, জানেন কোথায় টাকা রাখলে পাবেন বেশি সুদ?
Reserve Bank of India : বর্তমানে রেপো রেট বাড়ার কারণে FD এর ওপর সুদের হার বেড়েছে অনেকখানি। কিন্তু পাশাপাশি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া দিচ্ছে আরও একটি অভিনব সুযোগ যাতে আপনি পেতে পারেন ফিক্সড ডিপোজিট এর থেকেও বেশি হারে...
রামকৃষ্ণ দেব যতোই বলে যান, “টাকা মাটি, মাটি টাকা”, বাস্তবে টাকার সঙ্গে মাটির তুলনা করে না কেউই। তার ওপর বর্তমান যুগে দাঁড়িয়ে যখন দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধির চাপে মধ্যবিত্তদের অবস্থা কোণঠাসা, তখন আর টাকাকে মাটি বলা চলে না মোটেই। বর্তমানে বিভিন্ন বেসরকারি বিনিয়োগ এবং মিউচ্যুয়াল ফান্ডের সুযোগ থাকলেও একটা সময় অবধি টাকা জমানোর জন্য মধ্যবিত্তদের কাছে বিকল্প বলতে ছিল ব্যাংক অথবা পোস্ট অফিস। সেখানেই জমানো টাকার ওপর নির্দিষ্ট হারে আরোপ করা হতো সুদ।
আমরা যেমন সম্পত্তি ক্রয় অথবা ব্যক্তিগত কোনও প্রয়োজনে নগদ অর্থের চাহিদা মেটাতে ব্যাংকের কাছ থেকে নির্দিষ্ট সুদের হারে ঋণ নিই, এবং নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে সুদ সমেত সেই টাকাটা ফেরত দিতে হয়, ঠিক তেমনই টাকা জমানোর ক্ষেত্রেও রয়েছে সুদের হার। যা একটু নির্দিষ্ট সময় পর ব্যাংক থেকে পাওয়া যায়। সম্প্রতি রেপো রেট বৃদ্ধির খবর সামনে আসায়, ব্যাংকে জমানো টাকার ওপর সুদের হার বাড়ে। যার জেরে আমানতকারীদের জমানো অর্থের ক্ষেত্রে বেশি মুনাফা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
আরও পড়ুন - ৭.৫ শতাংশ সুদ, বাজেটে দেশের মহিলাদের কী দিল মোদি সরকার?
সাধারণত বিনিয়োগের কথা উঠলে আমরা স্থায়ী আমানত এবং পোস্ট অফিস অথবা LIC এর বিভিন্ন প্ল্যানে বিনিয়োগের কথা ধরে নিই। বর্তমানে কিছু বেশি সুদের আশায় মিউচ্যুয়াল ফান্ডে টাকা রাখার দিকে মানুষ ঝুঁকছে ঠিকই তবে বাজারগত ঝুঁকি এড়াতে সরকারি বিনিয়োগের ভরসা যে বেশি, তা বলাই বাহুল্য।
বর্তমানে রেপো রেট বাড়ার কারণে FD এর ওপর সুদের হার বেড়েছে অনেকখানি। কিন্তু পাশাপাশি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া দিচ্ছে আরও একটি অভিনব সুযোগ যাতে আপনি পেতে পারেন ফিক্সড ডিপোজিট এর থেকেও বেশি হারে সুদের অর্থ। এই বিষয়ে আলোচনা করতে গেলে বলতে হয় ট্রেজারি বিলের কথা। প্রতি সপ্তাহেই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তাদের ট্রেজারি বিল পেশ করে। তবে এতদিন এক্ষেত্রে কেবল অন্যান্য ব্যাংক অথবা বড় কোনও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করতে পারত। কিন্তু বর্তমানে সেই নিয়মে আনা হয়েছে বদল। এখন থেকে ব্যাংক অথবা বর প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি খুচরো বিনিয়োগকারীরাও নিশ্চিন্তে এখানে বিনিয়োগ করে মোটা অঙ্কের মুনাফা অর্জন করতে পারবেন, এমনটাই জানিয়েছে আরবিআই।
আরও পড়ুন - বাজেট প্রকাশের পর ফের বাড়ল রেপো রেট, কোন বাধা আসতে চলেছে সম্পতি ক্রয়ের পথে?
কিন্তু কী এই ট্রেজারি বিল?
ট্রেজারি বিল তিন মাস থেকে সর্বোচ্চ এক বছর মেয়াদের হয়ে থাকে। এটির যে প্রকৃত মূল্য, তার চেয়ে কম মূল্যে বা ডিসকাউন্টে সরকার এটি বিক্রি করে। ফলে ক্রেতা পরবর্তীতে পূর্ণ মূল্যে বিক্রি করে এর থেকে মুনাফা করে থাকেন। তবে ট্রেজারি বন্ডের ক্ষেত্রে দুই বছর থেকে শুরু করে ২০ বছর পর্যন্ত মেয়াদি ট্রেজারি বন্ড রয়েছে। আমাদের যখন কোনও ঋণ নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে তখন আমরা ব্যাংকের যাচ্ছে যাই। এবার নির্দিষ্ট সময় পরে সুদসমেত পুরো অর্থ ফেরত দিতে হয় ব্যাংক-কে। ঠিক সেভাবেই ভারত সরকার বিভিন্ন রাস্তা নির্মাণ করতে, সেতু নির্মাণ করার জন্য অর্থ নেয় RBI এর কাছে। সেইসময় RBI সরকারের ঋণ বন্ড বা ট্রেজারি বিলের আকারে নিলাম করে। সেখানে সুদের পরিমাণ বাকি জায়গার থেকে অনেকটাই বেশি। আর এই বিষয়ে এবার অন্তভূক্ত করা হয়েছে খুচরো আমানতকারীদেরও। ট্রেজারি বিল এবং ট্রেজারি বন্ড এক বিষয় নয়। যদি ১ বছর পর নিজের টাকা ফেরত পান তাহলে সেটিকে বলা হয় ট্রেজারি বিল। বন্ডের ক্ষেত্রে কিন্তু বেশি সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। যদিও বন্ডের ক্ষেত্রে সুদের হার ট্রেজারি বিলের তুলনায় বেশি হয়। হাতে সময় যাদের বেশি নেই তারা সাধারণত বন্ডের বদলে ট্রেজারি বিলের অপশন বেছে নেন। ট্রেজারি বিল প্রধানতঃ চার ধরনের হয়। ১৪ দিনের জন্য, ৯১ দিনের জন্য, ১৮২ দিনের জন্য এবং ৩৬৪ দিনের জন্য।
সম্প্রতি রেপো রেট বৃদ্ধির পর এই সুদের হারেও পরিবর্তন এনেছে রিজার্ভ ব্যাংক। জানা গিয়েছে, তিন মাস বা ৯১ দিন পর্যন্ত জমানো অর্থের ওপর সুদের হার ৬ থেকে ৭.৫%। আবার যদি কেউ এক বিচির অথবা ৩৬৪ দিনের জন্য অর্থ ট্রেজারি বিলের আওতায় জমাতে চান, সেক্ষেত্রে পেতে পারবেন ৬.৯৪% হারে সুদের অর্থ। যদি এ বিষয়ে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, যে সুদ আপনি জমানো অর্থ থেকে পাবেন, তার ওপর কিন্তু আয়কর লাগু হবে। এক্ষেত্রে আয়কর ছাড়ের কোনও সুযোগ এক্ষেত্রে পাবেননা আপনি।