লাল, সবুজ, হলুদ অথবা গোলাপী, দোল উৎসবের সঙ্গে কীভাবে জড়িয়ে গেল রং খেলার প্রসঙ্গ?

Dol utsav : দোলের দিনে এই যে জমিয়ে রং খেলার রেওয়াজ, সেই রেওয়াজ শুরু হল কীভাবে? পুরাণ নাকি কোনও মিথ, কী রয়েছে নেপথ্যে?

ন্যাড়া পোড়ার আগুনের আঁচে রাত পুহিয়েছে। নতুন সকাল, আজ রঙের উৎসব। সকাল থেকেই শহরের ছবিটা খুব অন্যরকম। ট্রেনে বাসে অফিস টাইমে বাদুড় ঝোলা ভিড় নেই, বদলে ভিড় পাড়ায় পাড়ায়, মন্দিরে মন্দিরে। দোল উপলক্ষ্যে দেবতার পায়ে ফাগ দিয়ে তবেই উৎসবের শুভ সূচনা করা হয় এই বাংলায়। বসন্তের এইটুকু উদযাপন ঘিরেই চলে বিরাট প্রস্তুতি পর্ব। দোকানে দোকানে বিভিন্ন রঙের আবিরের পসরা বসে। তার সঙ্গেই থাকে পিচকারি, বালতি, মুখোশ অথবা কুখ্যাত বাদুড় রং। যদিও আধুনিক জীবনের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে এইসব উৎসবেও খানিক ছেদ পড়েছে। এই প্রজন্মের বাচ্চাদের হাতে সময়ের এতো অভাব যে রং খেলার জন্য সময় জোগাড় করতেও রীতিমতো হিমসিম খায়। কিন্তু দোলের দিনে এই যে জমিয়ে রং খেলার রেওয়াজ, সেই রেওয়াজ শুরু হল কীভাবে? পুরাণ নাকি কোনও মিথ, কী রয়েছে নেপথ্যে?

দোলের আগের রাতের ন্যাড়া পোড়া নিয়ে যেমন পৌরাণিক গল্প রয়েছে। ঠিক তেমনই দোল খেলা নিতেই রয়েছে কিছু পৌরাণিক কথন। আসলে এই রং খেলার উৎসবের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে রাধা কৃষ্ণের লীলা খেলার প্রসঙ্গ। গোপিনীদের সঙ্গে কৃষ্ণের করা অজস্র দুষ্টুমির মধ্যে এটাও একটা দুষ্টুমি বলা চলে।

আরও পড়ুন - কোথাও ন্যাড়া পোড়া, কোথাও হোলিকা দহন, বিজ্ঞান নাকি মিথ? কোন সত্যি লুকিয়ে আছে এই প্রথায়?

কথিত আছে যে, শ্রী কৃষ্ণ এই প্রথা শুরু করেছিলেন তার গোপীদের সঙ্গে। এই কারণেই ব্রজে এই দোল বা হোলি উৎসব এখনও অন্যরকম ভাবে পালিত হয়। শুধু আবির অথবা রং নয়, সেই দোল খেলায় থাকে আরও অনেক সরঞ্জাম। আজও লাড্ডু হোলি, ফুলের হোলি, লাঠমার হোলি, রঙের হোলি ইত্যাদি নানারকম আবহ তৈরি হয় সেখানে। এক অথবা দুই দিনেই তাই সাঙ্গ হয় না সবটুকু উৎসব। অনুষ্ঠান শুরু হয় হোলির কয়েকদিন আগে।

শ্রী কৃষ্ণের ১০৮ লীলার মধ্যে, অন্যতম এই হোলি। আসলে শ্রী কৃষ্ণের গায়ের রং ছিল কালো, অন্যদিকে রাধারানী তো ছিল খুবই ফর্সা। এই নিয়ে অবশ্য কৃষ্ণের অভিযোগের কোনও শেষ ছিল নান প্রায়ইমা যশোদাকে এই বিষয়ে অভিযোগ করতেন। আর এই অভিযোগ শুনে তাঁর মা খুবই উচ্চস্বরে হাসতেন। কিন্তু ছোট্ট কৃষ্ণ তো শোনার পাত্র নয়, শেষে মা যশোদা একবার কৃষ্ণকে বললে রাধাকে যে রঙে সে দেখতে চায় রাধার মুখে যেন সেই রং মাখিয়ে দেয় কৃষ্ণ। দুষ্টু কৃষ্ণ মায়ের দেওয়া এই পরামর্শ খুব পছন্দ করলেন এবং গোপীদের সাহায্যে বিভিন্ন রং তৈরি করে রাধা ও তার বন্ধুদের রঙ মাখিয়ে দিলেন।

কৃষ্ণের দুষ্টুমি থেকেই এই প্রথা উৎসবের রূপ নিয়ে ঢুকে পড়ে ভারতের সংস্কৃতিতে। হোলিকা দহন যেমন যা কিছু অশুভ, যা কিছু খারাপ সেই সবকে আগুনে পুড়িয়ে শুভ সূচনার ইঙ্গিত দেয়, ঠিক তেমনই দলের এই রং আনন্দের সূচক। বাতাসে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন রং যেমন উল্লাসের রং। লাল রঙকে ভালোবাসার প্রতীক এবং সবুজ রঙকে সমৃদ্ধির সূচক হিসেবে মনে করা হয়। হলুদ রংকে শুভ এবং নীল রংকে শ্রীকৃষ্ণের রঙ হিসেবে ধরা হয়। তাই রং দিয়ে হোলি খেলা মনের আনন্দকে প্রকাশ করে। মন থেকে পুরনো সমস্ত তিক্ততা দূর হয়ে শুভ সূচনা হয় এই রঙেই।

More Articles