মমির যোনিতে আটকে সন্তানের মাথা! ভয়াবহ যে ঘটনায় আঁতকে উঠেছেন গবেষকরাও...

Pregnant Mummy of Egypt : দেখা যায় তরুণীর বুক ও পেটের গহ্বরের মধ্যে একটি দ্বিতীয় ভ্রূণের উপস্থিতি প্রকাশ পেয়েছে। অর্থাৎ যমজ সন্তান ছিল গর্ভবতী তরুণীর পেটে।

মিশর, পিরামিড আর মমির রহস্যঘেরা এই দেশ নিয়ে সম্ভবত গবেষণা ফুরোবে না কোনওকালেই। মমি কীভাবে সংরক্ষিত হতো, পিরামিডের গহিনে ঠিক কী লেখা, মৃতদেহ নিয়ে কী চর্চা হতো প্রাচীন মিশরে তা নিয়ে বিবিধ গবেষণা তা তথ্য তুলে ধরে, রীতিমতো পিলে চমকানিয়া! সম্প্রতি প্রাচীন মিশরে প্রসবের সময় মারা যাওয়া একটি কিশোরী মেয়ের মমি করে রাখা দেহাবশেষ গবেষকরা বিশ্লেষণ করেছেন। এই মমিটি সত্যিই অদ্ভুত কারণ তরুণী মা-টি যখন মারা যান তখন যমজ সন্তানের প্রসব ঘটছিল। সন্তানের জন্ম দেওয়া অবস্থাতেই তিনি মারা যান। আরও আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, প্রসব সঠিকভাবেও হতেও পারে না কারণ প্রথম শিশুর মাথা জন্মপথেই আটকে যায়, ফলে শিশুর পাশাপাশি মায়েরও মৃত্যু হয়। দেহটি ঠিক ওই অবস্থাতেই মমি করে রাখা হয়।

যখন এই তরুণী মারা যান তখন তার বয়স ছিল প্রায় ১৪ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। তরুণীর মমিটি মূলত ১৯০৮ সালে মিশরের খারগা মরূদ্যানের এল বাগাওয়াত কবরস্থানে খুঁজে পাওয়া যায়। সেই সময়ের গবেষকরা লিখেছিলেন যে তরুণীর পায়ের মধ্যে একটি ভ্রূণ এবং প্ল্যাসেন্টা পাওয়া গেছে। অর্থাৎ প্রসবজনিত জটিলতার কারণেই তিনি মারা গিয়েছিলেন।

আরও পড়ুন- মমি বিক্রি হতো ফুটপাথে! কেন দলে দলে মমি খাওয়ার হিড়িক উঠেছিল বিশ্বে?

এক শতাব্দীরও বেশি সময় পরে মমিটিকে ফের গবেষণা করে দেখা হচ্ছে। মমির ছবি সহ এই গবেষণাটি ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ অস্টিওআর্কিওলজিতে প্রকাশিত হয়েছে। নতুন গবেষকরা ঠিক কী কী কারণে ওই তরুণীর মৃত্যু হয়েছিল তা নির্ধারণ করার জন্য শরীরের কম্পিউটেড টমোগ্রাফি (সিটি) স্ক্যান করেছেন। ফলাফল প্রকাশ্যে আসতেই অবাক হয়ে যান তারা। ওই স্ক্যানগুলিতে দেখা যায় তরুণীর বুক ও পেটের গহ্বরের মধ্যে একটি দ্বিতীয় ভ্রূণের উপস্থিতি প্রকাশ পেয়েছে। অর্থাৎ যমজ সন্তান ছিল গর্ভবতী তরুণীর পেটে।

আরও চমকপ্রদ তথ্য মেলে স্ক্যানে! গবেষকরা লক্ষ্য করে দেখেন, মহিলার পায়ের মাঝখানে যে শিশুটি, তার মাথা নেই। নিবিড়ভাবে পরীক্ষা করার পরে গবেষকরা বুঝতে পারেন যে শিশুর মাথাটি এখনও মায়ের শ্রোণীতেই আটকে আছে। গবেষকদের সন্দেহ, জন্ম দেওয়ার সময় ভ্রূণটির মাথাটি ছিঁড়ে যায়।

এমন ভয়াবহ ঘটনাটি ঘটল কীভাবে? গবেষকরা বলছেন, সম্ভবত শিশুটি ব্রীচ পজিশনে জন্মগ্রহণ করেছিল। অর্থাৎ প্রথমে শিশুর পা বেরিয়ে এসেছিল। ব্রীচ প্রসবের সময় কখনও কখনও আটকে গেলে শিশুদের ধড় থেকে তাদের মাথা আলগা হয়ে যেতে পারে ওই সামান্য অংশ দিয়ে বের হওয়ার কারণে। খুব বিরল ক্ষেত্রে ভ্রূণের শিরচ্ছেদ হতে পারে। এই তরুণীর ক্ষেত্রে সম্ভবত তাই ঘটেছিল।

আরও পড়ুন- নুন দিয়ে দেহ শুকনোর পর কী এমন মাখানো হতো দেহে? অবশেষে ফাঁস মমি তৈরির রহস্য

দ্বিতীয় ভ্রূণের ক্ষেত্রে গবেষকদের সন্দেহ, তরুণীর পেটে যে যমজ সন্তান রয়েছে তা সম্ভবত কারও জানাই ছিল না। তাই যখন দেহটি মমি করা হচ্ছে তখন পেট থেকে মৃত শিশুকে বেরই করা হয়নি। মমির দেহটি যত দ্রবীভূত হয়েছে, ততই ওই অজাত ভ্রুণটি ক্রমেই পেট থেকে বুকের দিকে চলে গেছে। জন্মের সময় মা এবং তার সন্তানদের এই অবস্থা প্রমাণ করে গর্ভাবস্থায় সাধারণ প্রসব কতখানি বিপজ্জনক ছিল সেসময়। গবেষকরা বলছেন, বিশেষ করে প্রাচীন মিশরে যমজ সন্তানের জন্মকে অত্যন্ত অবাঞ্ছিত হিসাবেই দেখা হতো।

ওরাকুলার অ্যামুলেটিক ডিক্রি নামে পরিচিত একটি প্রাচীন প্যাপিরাসে এই ধরনের উল্লেখ মেলে। দুই সন্তান জন্মের ভয়কে তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে লিখিত আছে, "আমরা তাকে অনিয়মিত জন্ম থেকে এবং যমজ সন্তানের জন্ম দেওয়া থেকে রক্ষা করব।"

More Articles