শক্তি কমলেও আজও তাণ্ডব রেমালের! কোথায় কোথায় তুমুল ঝড়-বৃষ্টি?
Cyclone Remal Update: সোমবার অতিভারী বৃষ্টি হতে পারে কলকাতা, হাওড়া, উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, হুগলি, পূর্ব বর্ধমান ও বীরভূম জেলায়।
একরাতে কলকাতায় ১৪৬ মিলিমিটার বৃষ্টি! সৌজন্যে রেমাল। ঘূর্ণিঝড়ের দাপটে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা ছিলই, কিন্তু মৃত্যুও দেখতে হলো শহর কলকাতাকে। প্রবল ঝড়ের মধ্যে সন্তান বাইরে। সন্তানকে ফেরাতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন বাবা। এন্টালিতে রেমালের কারণে মৃত ওই ব্যক্তির নাম মহম্মদ সাজিব। তীব্র ঘূর্ণিঝড় রূপে স্থলভাগে ঢুকে তাণ্ডব চালায় রেমাল। রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ শেষ হয় ঘূর্ণিঝড়ের ল্যান্ডফল প্রক্রিয়া। হাওয়া অফিস জানাচ্ছে, সোমবার সকালে বাংলাদেশে ঢুকে শক্তি হারাবে ঘূর্ণিঝড় রেমাল। তবে, দুর্যোগ চলবে দিনভর। ঘূর্ণিঝড় রেমালের দাপটে সোমবার সারাদিনই বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। লাল সতর্কতা জারি হয়েছে একাধিক জেলায়।
রবিবার রাত সাড়ে দশটা থেকে সাড়ে বারোটা অবধি ঘূর্ণিঝড়ের এই আছড়ে পড়ার প্রক্রিয়া চলতে থাকে। সাগরদ্বীপ ও বাংলাদেশের খেপুপাড়ার মাঝে ল্যান্ডফল হয়। সেই সমত ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ ছিল প্রতি ঘণ্টায় ১৩৫ কিলোমিটার। ঘূর্ণিঝড় রেমাল সোমবার সকালেও ঘূর্ণিঝড় হিসেবেই থাকবে, তারপর অতি গভীর নিম্নচাপ হয়ে ক্রমশ উত্তর-পূর্ব দিকে এগোবে বলে জানাচ্ছে আবহাওয়া দফতর।
শুধু সোমবার নয়, রেমাল চলে গেলেও এই ঘূর্ণিঝড়ের দাপটে আগামী বুধবার পর্যন্ত ঝড়বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। সোমবার নদিয়া ও মুর্শিদাবাদে ব্যাপক ঝড়বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। কলকাতা ও দুই ২৪ পরগণাতেও অতি ভারী বৃষ্টিপাত ও ঝড়ের পূর্বাভাস রয়েছে। তবে আজ থেকে ঝড়বৃষ্টি কিছুটা কমবেও। সোমবার পাহাড় ও ডুয়ার্সে লাল-কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। অল্প সময়ে বেশি পরিমাণ বৃষ্টিতে পাহাড়ি নদীতে হড়পা বানের আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে।
আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, ঘূর্ণিঝড় রেমাল সকালের মধ্যেই গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে, প্রতি ঘণ্টায় গতিবেগ থাকবে ৭০ কিলোমিটার। আর সোমবার বিকেলের মধ্যেই এটি সাধারণ নিম্নচাপে পরিণত হবে। আপাতত রেমাল ক্রমশ উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে এগোচ্ছে। বাংলাদেশের ময়মনসিংহের কাছাকাছি দিয়ে এটি পৌঁছে যাবে উত্তর পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে।
আরও পড়ুন- নিমেষে তছনছ হয়ে যায় জীবন! কেন এত শক্তিশালী হয় রেমালের মতো ঘূর্ণিঝড়?
সোমবার অতিভারী বৃষ্টি হতে পারে কলকাতা, হাওড়া, উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, হুগলি, পূর্ব বর্ধমান ও বীরভূম জেলায়। দক্ষিণবঙ্গের বাকি জেলাতেও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। নদিয়া এবং মুর্শিদাবাদে সর্বোচ্চ ৮০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় দমকা ঝোড়ো বাতাস বইতে পারে। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, বীরভূম, পূর্ব বর্ধমানে ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে প্রতি ঘণ্টায় দমকা বাতাস বইতে পারে। দক্ষিণবঙ্গের বাকি জেলাতেও ৬০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় বাতাস হইতে পারে।
সোমবার বিকেল থেকে কলকাতাসহ উপকূল সংলগ্ন এবং পশ্চিমের জেলাগুলিতে আবহাওয়ার উন্নতি হবে। মঙ্গলবার থেকে দক্ষিণবঙ্গের আবহাওয়ার উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানাচ্ছে হাওয়া অফিস।
কিন্তু মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গে বৃষ্টি আরও বাড়বে। ২০০ মিলিমিটার বা তার বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার জেলায়। দার্জিলিং, কালিম্পং, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরেও ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা আছে। বুধবারেও ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে উত্তরবঙ্গের কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার এবং জলপাইগুড়ি জেলায়। উত্তরবঙ্গের মালদা এবং দুই দিনাজপুরে সোমবার ৫৫ কিলোমিটার গতিবেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। উত্তরবঙ্গের অন্যান্য জেলাতেও আজ দমকা বাতাস বইবে।
কলকাতা সোমবার দিনভর মেঘলা থাকবে, সঙ্গে হালকা ঝোড়ো বাতাস ও বৃষ্টি। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪৬.২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে কলকাতায়। সোমবারও দুপুর পর্যন্ত ঘণ্টায় ২০ থেকে ৩০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতে সম্ভাবনা, জানাচ্ছে হাওয়া অফিস।