হাড়ের চিকিৎসায় এবার নতুন দিগন্ত দেখালেন আইআইটি কানপুরের গবেষকরা

‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি’, কানপুরের (IIT-Kanpur) গবেষকরা এবারে এমন একটি প্রযুক্তি আবিষ্কার করলেন, যা সহজেই হাড়ের ক্ষত বা আঘাত সারিয়ে নতুন করে হাড় (Bone regeneration) তৈরিতে সাহায্য করবে। তবে শুধু হাড়ই নয়, দাঁতের ক্ষতও সারানো যাবে এই প্রযুক্তির সাহায্যে, এমনটাই জানা যাচ্ছে আইআইটি -কানপুরের তরফ থেকে।

আইআইটি-র এই দুই গবেষক প্রফেসর অশোক কুমার এবং অরুণ কুমার তেওটিয়া ন্যানো-হাইড্রক্সিএপাটিট (Nano-hydroxyapatite) এবং ক্যালশিয়াম হেমিহাইড্রেট (Calcium Hemihydrate) নামের দু’টি রাসায়নিকের একটি যুগ্ম তৈরি করেছেন। কোনও কারণে হাড় নষ্ট হলে সেই অংশে নতুন করে হাড় তৈরি অর্থাৎ বোন রিজেনারেশনের জন্যে যে জৈবিক উপাদান (Bioactive Compiund) লাগে, সেগুলি পৌঁছে দেবে এই দুই রাসায়নিকের সংমিশ্রণ।

‘ক্লিনিক্যাল কেস ইন মেটেরিয়াল এন্ড বোন মেটাবলিজম’ (‘Clinical Case in Material and Bone Metabolism’) নামের সায়েন্টেফিক জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা থেকে জানা গেছে, বোন রিজেনারেশনের জন্যে সাধারণত ক্যালশিয়াম ফসফেট (Calcium Phosphate), ক্যালশিয়াম সালফেট (Calcium Sulphate) এবং বায়োঅ্যাক্টিভ গ্লাস (Bioactive Glass) ব্যবহার করা হয়।

ন্যানো-হাইড্রক্সিএপাটিট এবং ক্যালশিয়াম হেমিহাইড্রেটের মিশ্রণ যে কেবল বোন রিজেনারেশনের জন্য ব্যবহৃত বায়োমেটেরিয়ালগুলি ক্ষতস্থানে পৌঁছে দেবে, তা-ই নয়, নতুন হাড়ের বৃদ্ধিও প্রণোদিত করবে এবং বৃদ্ধির হার বাড়াতে সাহায্য করবে। কারণ এই দুই রাসায়নিকের মধ্যেই এই দু’টি বৈশিষ্ট্য রয়েছে (Osteo-inductive and Osteo-promotive Property)।

হাড়ে ক্ষত সৃষ্টি হয় বা হাড় নষ্ট হয় মূলত অস্টিওপোরোসিস (Osteoporosis) বা দুর্ঘটনাজনিত কারণে। প্রফেসর কুমার জানিয়েছেন, টিবি বা ক্যান্সার হলে নতুন করে হাড় তৈরির কোনও সম্ভাবনা থাকে না। সেক্ষেত্রে দেহের ওই অংশ কেটে বাদ দিতে হয়। এই আবিষ্কার কিন্তু সেই ঘটনা থেকেও রোগীকে বাঁচাবে। অর্থাৎ, টিবি বা বোন ক্যান্সারের ফলে হাড় ক্ষতিগ্রস্ত হলেও, তার নিরাময় এবার থেকে সম্ভব হবে। 

আরও পড়ুন: একই মানুষের বহু যৌনসম্পর্কে আগ্রহ, কেন এমন হয়!

এই প্রযুক্তির বানিজ্যিকীকরণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অর্থো-রিজেনেটিক্স প্রাইভেট লিমিটেড নামের একটি বেসরকারি সংস্থাকে।

ন্যানো-হাইড্রক্সিএপাটিট এবং ক্যালশিয়াম হেমিহাইড্রেটের মিশ্রণ জেলের মতো পদার্থ তৈরি করে, যার মধ্যে খুব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্র থাকে। প্রফেসর কুমার জানিয়েছেন, হাড়ের ক্ষততে পৌঁছে গেলেই এই জেল কঠিন পদার্থে পরিণত হয়, তাও আবার পৌঁছনোর পনেরো মিনিটের মধ্যেই। প্রফেসর কুমারের মতে, কৃত্রিমভাবে এই দুই রাসায়নিকের মিশ্রণ ব্যবহার করা হলেও, এরা কাজ করবে একদম প্রাকৃতিকভাবেই।

শরীর সেরে ওঠার জন্যও দরকার নতুন কলা-কোশ তৈরি হওয়া। প্রফেসর কুমার জানিয়েছেন, এরা শরীরে অক্সিজেন সরবরাহে বাধা দেবে না। হাড় কিংবা যে-কোনও কলা-কোশ গঠন হওয়ার পর্যায়ে পর্যাপ্ত রক্ত প্রবাহ এবং অক্সিজেন সরবরাহ অত্যন্ত জরুরি। তা না হলে, কোশ-কলা তৈরি ব্যহত হবে।

আরও পড়ুন: ২০২৫-এর মধ্যেই কি অতিমারিতে পরিণত হবে ডায়বেটিস?

আইআইটি-কানপুরের আধিকারিক অভয় কারান্ডিকর ৩০ মার্চ আইআইটি-কানপুরের তরফ থেকে ট্যুইট করে জানিয়েছেন, ক্ষতস্থানে যাতে নতুন করে হাড় তৈরি হয়, তার জন্য একাধিক প্রযুক্তি সফলভাবে ব্যবহার করা হয়েছে এর আগেও। কিন্তু সেই প্রযুক্তিগুলোর কিছু ত্রুটি আছে– এরা শরীরে বিরূপ প্রভাব ফেলে। কীরকম সেই ক্ষতি? সাধারণত সেই প্রযুক্তিগুলি ইনফেকশন এবং রোগ-প্রতিরোধ সংক্রান্ত জটিলতা সৃষ্টি করে। কিন্তু নতুন এই প্রযুক্তিতে সেই আশঙ্কা নেই এবং ব্যবহৃত দু’টি যুগ্মই একদম প্রাকৃতিক নিয়মে রেচনের মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে যাবে কোনওরকম শারীরিক জটিলতা তৈরি না করেই।

 

More Articles