আরজি কর: মাথায় কার হাত? কেন পুলিশ কমিশনারের নামে নথিভুক্ত ধৃতের বাইক?

RG Kar Doctor Rape-Murder: অভিযোগ, ওই বাইকটিতে চেপেই সেদিন আরজিকর হাসপাতালে গিয়েছিল ধৃত সঞ্জয়। ঘটনার আগে পাওয়া সিসিটিভি ফুটেজেও সেই ছবি ধরা পড়েছে।

আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় তোলপাড় গোটা রাজ্য। ইতিমধ্যেই সেই ঘটনায় ধৃত সিভিক ভলিন্টিয়ার সঞ্জয় রায়ের পলিগ্রাফ পরীক্ষা করেছে সিবিআই। সেই পরীক্ষায় তদন্তকারীদের হাতে এসেছে একাধিক তথ্য। এর মধ্যেই ধৃত সিভিক ভলিন্টিয়ার সঞ্জয় রায়ের ব্যাপারে আরও এক চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এল। প্রথম থেকেই পেশায় সিভিক ভলিন্টিয়ার কেন এত প্রভাবশালী সেই প্রশ্ন উঠেছিল। সম্প্রতি জানা গিয়েছে, যে বাইকটি ব্যবহার করতেন ধৃত সঞ্জয় রায়, সেটিও নাকি নথিভুক্ত রয়েছে কলকাতা পুলিশের নামেই। না, শুধু কলকাতা পুলিশ বললে ভুল হবে, খোদ পুলিশ কমিশনারের নামেই নথিভুক্ত ছিল অভিযুক্তের বাইক।

রবিবার প্রেসিডেন্সি জেলে পলিগ্রাফ পরীক্ষা হয় অভিযুক্ত সঞ্জয়ের। ঘটনার দিন সে কী কী করেছিল রাতভর, তার অনেক কিছুই জানা গিয়েছে তদন্তকারীদের জেরায়। জানা গিয়েছে, ঘটনার দিন রাতে দুটি যৌনপল্লিতে ঘোরা ছাড়াও রাস্তায় এক মহিলার শ্লীলতাহানি করেছিল সে। তবে তাঁর সমস্ত বক্তব্যে ধোঁয়াশা ও বিভ্রান্তি রয়েছে বলেই দাবি করেছেন তদন্তকারীরা। এই পরিস্থিতিতে কেন অভিযুক্ত সিভিক পুলিশের বাইকটি খোদ পুলিশ কমিশনারের নামে নথিভুক্ত, তা নিয়ে বড়সড় প্রশ্নের মুখে পড়েছে পুলিশ।

আরও পড়ুন: দেহ উদ্ধারের পর সেমিনার রুমে কাদের ভিড়? যে সব প্রশ্ন তুলে দিল আরজি কর কাণ্ডের ভাইরাল ভিডিও

যদিও মঙ্গলবার এ ব্যাপারে সোশ্যালমিডিয়ায় বিভ্রান্তি দূর করার চেষ্টা হয়েছে কলকাতা পুলিশের তরফে। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে,কলকাতা পুলিশের ব্যবহারের জন্য সমস্ত সরকারি যানবাহনই সরকারি ভাবে পুলিশ কমিশনারের নামে নথিভুক্ত করা হয়। তার পর সেগুলি বিভিন্ন বিভাগের হাতে ব্যবহারের জন্য তুলে দেওয়া হয়। ধৃত সঞ্জয় রায় সিভিক ভলিন্টিয়ার পদে থাকায়, তার ব্যবহারের জন্য বাইকটিও কলকাতা পুলিশের কমিশনারের নামেই নথিভুক্ত ছিল। এতে কোনও রকম আইনের অপব্যবহার বা বিচ্যুতি নেই বলেই জানানো হয়েছে পুলিশের তরফে।

গ্রেফতারের পরেই ধৃত সঞ্জয় রায়ের বাইকটি বাজেয়াপ্ত করেছিল পুলিশ। তবে পরবর্তীতে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সেই বাইকও তথ্যপ্রমাণ হিসেবে তুলে দেওয়া হয়েছিল সিবিাইয়ের হাতে। কলকাতা পুলিশের তরফে তাদের এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট দিয়ে জানানো হয়েছে, এই বাইক নিয়ে সমাজমাধ্যমে কেউ কেউ ‘বিভ্রান্তি’ তৈরি করার চেষ্টা করছে। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, কলকাতা পুলিশ যে সব সরকারি যানবাহন ব্যবহার করে, তা সবই নথিভুক্ত থাকে পুলিশ কমিশনারের নামে।

RG Kar Doctor Rape-Murder Why was Sanjay Roy's bike registered in police commissioner's name?

অভিযোগ, ওই বাইকটিতে চেপেই সেদিন আরজিকর হাসপাতালে গিয়েছিল ধৃত সঞ্জয়। ঘটনার আগে পাওয়া সিসিটিভি ফুটেজেও সেই ছবি ধরা পড়েছে। ফুটেজে দেখা গিয়েছে, আরজি কর হাসপাতালের করিডরে যখন হাঁটছেন সিভিক ভলান্টিয়ার,তার হাতে ঝুলছে হেলমেট। স্বাভাবিক ভাবে সেই বাইকও এসে গিয়েছে তদন্তকারীদের সন্দেহের তালিকায়।

অভিযুক্তদের বাড়ির লোক থেকে শুরু করে প্রতিবেশী বা পরিচিত সকলেই মেনেছেন, ওই সিভিক ভলিন্টিয়ার সঞ্জয় 'কেপি' (কলকাতা পুলিশ) লেখা বাইকে চেপে সদর্পে ঘুরে বেড়াত। সিবিআইয়ের একটি সূত্রের খবর, ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার আগের দিন সকাল থেকে পরের দিন ভোর পর্যন্ত মোট চার বার আরজি করে যায় অভিযুক্ত। তার মধ্যে একবার সঙ্গে ছিল আর এক সিভিক ভলিন্টিয়ার বন্ধু। পুলিশকে সঞ্জয় জানায়, সেই বন্ধুর পরিচিত আরজি করে ভর্তি ছিলেন, তাঁকে দেখতেই হাসপাতালে যায় সঞ্জয়।

আরও পড়ুন: সেই রাতে যৌনহেনস্থা আর এক মহিলাকেও? যে ভয়ঙ্কর তথ্য উঠে এল আরজি কর-অভিযুক্তের পলিগ্রাফ টেস্টে

চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুন কাণ্ডের আগেই বা কেন নানা অজুহাতে আরজি কর হাসপাতাল চত্বরে গিয়েছিল অভিযুক্ত। ঘটনাস্থল রেইকি করাই কি ছিল তার প্রধান উদ্দেশ্য। সে সময়েও কলকাতা পুলিশ লেখা সাদা বাইকই ছিল তার বাহন। যে বাইকটি কিনা খোদ পুলিশ কমিশনারের নামে নথিভুক্ত। কোনও কোনও সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানানো হয়েছে, সিবিআই জানতে পেরেছে, সেদিন আরজিকরে দুষ্কর্ম সারার পরেও পুলিশের কোনও এক বড়কর্তার বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল অভিযুক্ত। আদৌ কি সত্যি সেই অভিযোগ? আশা করা যায়, খুব শিগগিরই সেই সব তথ্যের কোণা ধরে বড় সত্যির কাছে পৌঁছে যাবেন তদন্তকারীরা।

More Articles