'অর্ডার হলে করে দে...' ! কলতনের ভাইরাল অডিও কি সত্য?
Rg Kar Protest: কুণাল ঘোষ ভাইরাল অডিও ক্লিপ শেয়ার করে লিখেছিলেন, বাম ঘনিষ্ঠ যুব সংগঠনের নেতারা ডাক্তারদের ধর্নামঞ্চে হামলা করে শাসকদলকে কাঠগড়ায় তুলতে চাইছেন
ভাইরাল অডিও কাণ্ডে গ্রেফতার করা হয়েছে সিপিএম এর যুব সংগঠনের নেতা কলতান দাশগুপ্ত-কে। অভিযোগ, স্বাস্থ্য ভবনে ডাক্তারদের ধর্নামঞ্চে হামলার ছক করেছিলেন তিনি। শুক্রবার রাতে এই ঘটনায় আটক করা হয় সঞ্জীব দাসকেও। আজ সকালে গ্রেফতার করা হয় কলতানকে। শনিবার তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা কুণাল ঘোষ ভাইরাল অডিও ক্লিপটি শেয়ার করে লিখেছিলেন, বাম ঘনিষ্ঠ যুব সংগঠনের নেতারা ডাক্তারদের ধর্নামঞ্চে হামলা করে শাসকদলকে কাঠগড়ায় তুলতে চাইছেন। কুণালের দাবি ছিল, ফোনের যাদের কন্ঠ শোনা যাচ্ছে তাঁদের একজনের নামের প্রথম অক্ষর 'স' এবং অপর জনের নামের প্রথম অক্ষর 'ক'। এই অডিও ক্লিপের সত্যতা ইনস্ক্রিপ্ট যাচাই করেনি।
সিপিএম-এর তরফে ফিয়ার্স লেনে ধর্না চলছে। শুক্রবার রাতে সেই ধর্ণামঞ্চে কলতানও ছিল। এদিন সকালে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রথমে সঞ্জীবকে গ্রেফতার করা হয়। সঞ্জীবের জিজ্ঞাসাবাদের পর কলতানকে আটক করা হয়। তবে, কলতনের দাবি তাঁকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হচ্ছে। কলতানের সঙ্গে ছিলেন সিপিএমের নেতা সংগ্রাম চট্টোপাধ্যায়। তাঁরা ট্যাক্সি করে দক্ষিণ কলকাতার দিকে যাচ্ছিলেন। টালিগঞ্জ ফাঁড়ির কাছে পৌঁছতেই ট্যাক্সি ঘিরে ফেলে পুলিশ। প্রথমে দু'জনকেই গ্রেফতার করা হয়েছিল পরে সংগ্রামকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
অডিও ক্লিপের কথাবার্তা
প্রথম কন্ঠ - সাহেব অর্ডার করেছে।
দ্বিতীয় কন্ঠ - সাহেব?
প্রথম কন্ঠ - অর্ডার করেছে।
দ্বিতীয় কন্ঠ - হ্যাঁ।
প্রথম কন্ঠ - সল্টলেক।
দ্বিতীয় কন্ঠ - হ্যাঁ।
প্রথম কন্ঠ - ওড়াবার জন্য।
দ্বিতীয় কন্ঠ - অর্ডার হলে করে দে।
প্রথম কন্ঠ - বলছি, আমি এত বছর এই কাজ করেছি, আমার কোনওদিন ভয়ডর লাগেনি। কিন্তু, এখন এটা বিবেক, মানে, করাটা ঠিক হবে? এরা তো লোকের জীবন বাঁচায়।
দ্বিতীয় কন্ঠ - ফাইট টু ফিনিশ করতে বলেনি।
প্রথম কন্ঠ - হ্যাঁ?
দ্বিতীয় কন্ঠ - তোকে তো ফাইট টু ফিনিশ করতে বলেনি।
প্রথম কন্ঠ - ছেলেরা মদ খেয়ে যায়। কোনো একটা বেহাত কিছু হয়ে গেলে, সেটাও তো চিন্তার বিষয়।
দ্বিতীয় কন্ঠ - সেটাও ওকে বল, যে এরকম মনে হচ্ছে কী করব?
প্রথম কন্ঠ - বাপ্পাদাকে পার্সোনালি জিজ্ঞেস করেছিলাম।
দ্বিতীয় কন্ঠ - হ্যাঁ
প্রথম কন্ঠ - বাপ্পাদা বলছে, জানোয়ার হয়ে যাইনি এখনও
দ্বিতীয় কন্ঠ - হ্যাঁ, ওই মতো করেই কর।
প্রথম কন্ঠ - কী করব? মাথা ফাটানোটা ঠিক হবে?
দ্বিতীয় কন্ঠ - দেখ, খানিকটা যদি কিছু করা যায়। খানিকটা হলেও ওই ব্যাপারটা থাকব, যে ওরাই এটা করল।
কতখানি সত্য?
এ দিন বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট সাংবাদিক বৈঠক করে বলে, অডিওর সত্যতা নিয়ে কোনো সংশয় নেই। পুলিশের তরফে আরও জানানো হয় ধৃত সঞ্জীব অডিও- তে তাঁরই স্বর রয়েছে বলে মেনেও নিয়েছেন। তবে তাঁর রাজনৈতিক পরিচয় জানায়নি তিনি এখনও জানাননি। কলতানের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। পুলিশ আরও জানায়, তদন্তের সময় গলার স্বরের নমুনা মিলিয়ে দেখা হবে। আরও তিন জনের নাম পেয়েছে পুলিশ। সাহেব, দাদু এবং বাপ্পা। পুলিশের বক্তব্য , ধৃত সঞ্জীবের ফোনে কিছু নাম মিলেছে তার ভিত্তিতে তদন্ত চলছে।
কোন ধারায় মামলা?
ধৃতদের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ২২৪, ৩৫২, ৩৫৩- সহ একাধিক ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ধারা ২২৪ ধারায় মামলা করা হয় যখন অভিযুক্ত ব্যাক্তি গ্রেফতারের সময় বাঁধা দেয়। ধারা ৩৫২ ধারায় মামলা করা হয় যখন অভিযুক্ত ব্যাক্তি কোনো গুরুতর অপরাধ (serious assault) করে থাকেন। ৩৫৩ ধারায় মামলা করা হয় যখন কোনো আধিকারিকেরা উপর কর্তব্যরত অবস্থায় আক্রমণ করা হয়।
উল্লেখ্য তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ সোশ্যাল মিডিয়ায় এই অডিও এনে বামেদের দিকে আঙুল তোলেন। ফলস কলতানকে ষড়যন্ত্র করে আটকের দাবিও তুলছে বামেদের একাংশ। অন্যদিকে সঞ্জীব অডিওতে তাঁর স্বর মেনে নিলেও কেন পুলিশ তাঁর রাজনৈতিক পরিচয় জানায়নি তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। কলতানরা যদি সত্যি এই ষড়যন্ত্রের অংশ হন, তবে যে ক্ষতি বামেদের ভাবমূর্তির হবে, তার দায় কে নেবে?