চারবার ভেস্তেছে বৈঠক! তবু কেন বেলাশেষে মুখোমুখি দু'পক্ষ?
Mamata Banerjee Junior Doctor: এটুকু প্রমাণিত ডাক্তারাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফেরানোর সাহস দেখিয়েছেন। সরকার বরাবরই কথা বলতে চেয়েছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে গিয়েছিলেন ডাক্তারদের বিক্ষোভস্থলে। নবান্নেও অপেক্ষা করেছেন। বাড়ির দরজার সামনেও দাঁড়িয়েছিলেন। জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে তবু তাঁর বৈঠক হয়নি। শেষবার তো চা খাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তিনি। তাও প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন। তারপর অবশেষে পঞ্চম ও শেষ চেষ্টা করেছে সরকারপক্ষ। তাতে সাড়া দিয়েছেন আরজি কর কাণ্ডে আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তাররা। কিন্তু কেন চারবার প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পরেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবার জুনিয়র ডাক্তারদের ডাকলেন নিজের বাড়িতে? আগেও মমতা বলেছেন, সব দাবি সঙ্গে সঙ্গে মানা সম্ভব নয়। এমনকী লাইভ স্ট্রিমিং তো সম্ভবই না! তা সত্ত্বেও কেন জুনিয়র ডাক্তাররা কালীঘাটে গেলেন?
মনে রাখতে হবে, ১৭ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের শুনানি। সুপ্রিম কোর্ট গত ৯ তারিখ, সোমবার বলেছিল জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে ফিরতে হবে ১০ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটার মধ্যে। তবে কাজে ফেরেননি ডাক্তাররা। তারা স্বাস্থ্যভবন অভিযান করেছেন। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে রাত জেগে আন্দোলন চালিয়ে গেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের ধর্নামঞ্চে গেছেন। বলেছেন, তিনি ডাক্তারদের সহযোদ্ধা। তিনি ধীরে ধীরে সব দাবি মেনে নেবেন। তবে রাতারাতি নয়। ১৪ সেপ্টেম্বর কালীঘাটের বাড়িতেও ডাকা হয়েছিল ডাক্তারদের। লাইভ স্ট্রিমিংয়ের কথা মানা হয়নি সেখানেও। ডাক্তাররা ফিরে আসেন বৈঠক না করেই। কর্মবিরতি চলেছে। সরকার ইতিমধ্যেই আদালতে হিসেব পেশ করেছে যে জুনিয়র ডাক্তারদের লাগাতার কর্মবিরতির জন্য রোগী মৃত্যু বাড়ছে। কাজে ফেরার নির্দেশ দেওয়ার ১ সপ্তাহ অতিক্রান্ত। এর মধ্যে যদি জুনিয়র ডাক্তাররা কাজে না ফেরেন তাহলে তা শীর্ষ আদালতকে অবমাননা করা হয়।
আরও পড়ুন-দু’দফা দাবি নিয়ে আপস নয়, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের আগেই স্পষ্ট বার্তা জুনিয়র ডাক্তারদের
১৭ সেপ্টেম্বরের সুপ্রিম শুনানিতে রাজ্য আদালতে আবারও বলতেই পারে, সরকারের সদিচ্ছা সত্ত্বেও ডাক্তারদের তরফে সাড়া ছিল না। তাতে সুপ্রিম আদালতে রাজ্যই ক্লিনচিট পেতে পারে, আর ডাক্তারদের ভাবমূর্তি নষ্ট হতে পারে। পাশাপাশি যে পাঁচ দফা দাবি নিয়ে এত কড়া মনোভাব তাও বিশ বাঁও জলে যেতে পারে। ফলে ডাক্তারদের কাছে সরকারের 'শেষ চেষ্টা' হিসেবে বৈঠকে সাড়া দেওয়াটাই কি শেষ উপায় ছিল না? প্রশ্ন উঠছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার বলেছেন, তিনি এবং তাঁর সরকার এই বিচার চাওয়ার লড়াইয়ে সদিচ্ছাই দেখাচ্ছেন। যেভাবে তিনি চিকিৎসকদের ভিজতে বারণ করেছেন, পোশাক দিতে চেয়েছেন, চা খাওয়াতে চেয়েছেন- খালি চোখে এটুকু পরিষ্কার তিনি অসৌজন্য দেখাননি। ফলে সুপ্রিম কোর্টের কাছে রাজ্য সরকার এটুকু বিষয়ে স্পষ্ট থাকতে পারবে যে ডাক্তারদের সঙ্গে কোনও বিমাতৃসুলভ আচরণ করা হয়নি। তিনি তো পদত্যাগ করে দেবেন এমন ঘোষণাও করে ফেলেছিলেন। তাই এটুকু প্রমাণিত ডাক্তারাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফেরানোর সাহস দেখিয়েছেন। সরকার বরাবরই কথা বলতে চেয়েছে। এমনকী সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে মনোজ পন্থ বা চন্দ্রিমা ভটাচার্যরাও বিরূপ মনোভাব দেখাননি। ধর্নামঞ্চে মমতা এও বলেছিলেন, চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাই তিনি নেবেন না। তাই নিজের সদর্থক ভাবমূর্তিকে ধরে রাখতেই মমতা আবারও রাজি হলেন জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠকে বসতেন, বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
আরও পড়ুন-লাইভ স্ট্রিমিং হবে না, মিনিটস লেখাতেই সন্তুষ্ট হবেন জুনিয়র ডাক্তাররা?
অন্যদিকে এই আন্দোলনের আঁচ রাতারাতি নিভে যেত যদি সুপ্রিম কোর্ট এই বিক্ষোভকারী চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কোনও রায় দেয়। ইতিমধ্যেই ডাক্তারদের কর্মবিরতি ও রোগীমৃত্যুর প্রসঙ্গ টেনে এই আন্দোলনকে অন্য রূপ দেওয়ার চেষ্টা চলছেই। নাগরিকদের আন্দোলন থেকে ক্রমেই আরজি কর আন্দোলনকে ডাক্তারদের আন্দোলনে পরিণত করে নজর ঘোরানোর চেষ্টাও জোরকদমে চলছে। "মনে রাখবেন সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলছে। আমি চাই না আপনাদের কোনও ক্ষতি হোক," নরম সুরেই ডাক্তারদের মনেও করিয়ে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মঙ্গলবার জুনিয়র ডাক্তারদের হয়ে সওয়াল করবেন আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিং। প্রধান বিচারপতির বাড়িতে মোদির গণেশ পুজোর ছবি নিয়ে ইন্দিরা জয়সিং ইতিমধ্যেই ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ফলে সমস্ত নজরই এখন সুপ্রিম শুনানির দিকে। তাই কি লাইভ স্ট্রিমিংয়ের মতো দাবি না মানা সত্ত্বেও জুনিয়র ডাক্তাররা কার্যত বাধ্য হলেন কালীঘাটের বৈঠকে সাড়া দিতে?