'বদন বিগড়ে গেছে'! আন্দোলনকারীকে নিয়ে যেভাবে শ্লীলতার মাত্রা ছাড়াচ্ছেন কুণাল-দেবাংশু

Kunal-Debangshu: "হ্যাঁ রে দেবাংশু, তোর পাত্রী দেখার কাজটা এগোব? তোর সঙ্গে বেশ মানাবে। রাগের মধ্যেই থাকে অনুরাগের বীজ," লিখেছেন কুণাল।

আরজি কর আন্দোলন শুধু আর ধর্ষণের বিচারে আটকে নেই। রাতদখলের আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্যই ছিল নিরাপত্তা ও সম্মানের দাবি। আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণের পর মহিলাদের ঘিরে সবস্তরে চলতে থাকা নিগ্রহ, অত্যাচারের বিরুদ্ধে কথা বলা শুরু হয় প্রবলভাবে। দীর্ঘদিন ধরে সহ্য করতে করতে যে কোনও ধরনের নিগ্রহের বিরুদ্ধে তীব্রভাবে কথা বলতে শুরু করেছেন মেয়েরা। এই আন্দোলনকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করার চেষ্টাও কম হয়নি বা হচ্ছে না। নানাভাবেই আন্দোলনকারীদের আক্রমণ করার চেষ্টা চলছে। তবে সেই আক্রমণে রাজনীতি নেই, আছে নোংরামি। সরাসরি ময়দানে নেমে এই কদর্যতায় উৎসবে যোগ দিয়েছেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ এবং তৃণমূলের তরুণ তুর্কি দেবাংশু ভট্টাচার্য। ফেসবুকে প্রকাশ্যে আন্দোলনকারী এক মহিলার ছবি দিয়ে কদর্য কথোপকথন শুরু করেছেন দু'জনে।

তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ আরজি কর আন্দোলনের মধ্যে থেকে এক মহিলার ছবি শেয়ার করেছেন। তিনি একটি ডিজিটাল মিডিয়ার সঙ্গে কথোপকথনরত। কুণাল ওই ছবি শেয়ার করে লিখেছেন,

"হ্যাঁ রে দেবাংশু, তোর পাত্রী দেখার কাজটা এগোব? তোর সঙ্গে বেশ মানাবে। রাগের মধ্যেই থাকে অনুরাগের বীজ। তাছাড়া, কেমন সংস্কার মানে, স্বামীর নাম মুখে আনতে চায় না। আমার তো নিজেকে এখনই ভাসুর ভাসুর লাগছে।"

কুণাল ঘোষ এই ছবি শেয়ার করার পর কুণালের পোস্টটি শেয়ার করেছেন তৃণমূলের যুবনেতা দেবাংশু ভট্টাচার্য। এই কদর্যতায় অবশ্য গুরু কুণালকেও ছাড়িয়ে গেছেন শিষ্য! আন্দোলনকারী মহিলার উদ্দেশ্যে লিখেছেন,

"বলছ তাহলে কুণাল দা? তুমি খুঁজে দিচ্ছ মানে এত সহজে কি না বলতে পারি! কিন্তু গলা শুনে মনে হচ্ছে বড় দজ্জাল.. টিকবে কি? বিনয় কোঙারের মতো 'লাইফ হেল' করে দেবে তো!”

আরও পড়ুন- ফেসবুক থেকে টার্গেট সংসদ! দেবাংশু ভট্টাচার্যের উত্থানের গতি অবাক করবে…

এর পরেই দেবাংশু ওই পোস্টে নিজের মানসিকতার পরিচয় দিয়ে ফেলেন। লেখেন, “এ বাবা! এমা... দাঁড়াও দাঁড়াও... বিবাহিত তো! সরি...
সিরিয়ালে কাজ নেই। বদন বিগড়ে গেছে। ডাক্তারদের আন্দোলনে বিরিয়ানি খেতে গেছে। আমাদের নাম নিয়ে একটু ফুটেজও খাক!”

উল্লেখ্য, যে মহিলাকে নিয়ে তারা এত কথা বলছেন, এত অশ্লীলতা করে চলেছেন কলার তুলে তিনি পেশায় একজন অভিনেত্রী। ছোটপর্দার অত্যন্ত পরিচিত মুখ মৌসুমী ভট্টাচার্য প্রথম থেকেই আরজি কর আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন, পথে নেমেছেন তিনি। সম্প্রতি নিয়মিতই থেকেছেন ডাক্তাদের ধর্নামঞ্চে। তৃণমূল সরকারের বিরোধিতা করে একাধিক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টও করেছেন তিনি। এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মৌসুমীকে বলতে শোনা যায়, ‘এই কুণাল ঘোষ, আর এই যে ছেলেটা, আমি নামও ভুলে যাই, হ্যাঁ দেবাংশু। যেদিন পাবলিকের হাতে পড়বে, দেখব কী হয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বাঁচাতে আসবে না। বাড়িতে বসে বসে প্রেসকে লেকচার দেয়। একদিন না একদিন পাবলিকের সামনে আসতেই হবে। একদিন না একদিন, ডাক্তারের কাছেও যেতে হবে। অসুস্থ তো সবাই হয়। সেই দিনটা খুব ভয়ানক ওদের কাছে।’

আরও পড়ুন- ‘সুযোগসন্ধানী নাটক’! মেয়েদের রাত দখল নিয়ে কী বলছেন কুণাল ঘোষ?

সেই অভিনেত্রীকে নিয়ে প্রকাশ্যে শাসকদলের দুই নেতা কদর্যতা করে চলেছেন। যে আন্দোলন চলছে তাতে সম্ভাব্য সমস্ত 'ইভিটিজার', নিগ্রহকারীদের বিরুদ্ধেই তো চিৎকার করছেন মহিলারা। যে দলের নেত্রী নিজে বলছেন দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে সেই দলের দুই ভিন্ন বয়সের দুই পুরুষ কার অনুমতিতে এই শ্লীলতার মাত্রা ছাড়ানো কাজ করে যাচ্ছেন প্রশ্ন ওঠে। প্রশ্ন ওঠে নেত্রীর স্নেহধন্য দেবাংশু, যিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে 'মা' মনে করেন তিনি একজন অন্য মহিলা সম্পর্কে তাহলে আড়ালে এই মানসিকতাই পোষণ করেন? তিনি আসলে মনে করেন 'বদন' বিগড়ানো মহিলাদের অপমান করাই যায়?

কুণাল ঘোষ অবশ্য এই ময়দানে নয়া খিলাড়ি নন। রাজনীতিকে কীভাবে কদর্যতায় রূপান্তর করা যায় এই নিয়ে আগামীতে গবেষণা হলে অবশ্যই এই নেতার বিবিধ মন্তব্যের উদাহরণ ব্যবহৃত হবে। তাহলে, যে শাসকদলের দুই নেতাই মহিলাদের প্রকাশ্যে অপমান করে চলেছেন বুক ফুলিয়ে তাঁদের দলই আবার তিলোত্তমার ধর্ষণের বিচারের দাবিতে কথা বলছে, বিষয়টা গোলমেলে ঠেকে না কি? কিছুদিন আগে তৃণমূলের এক কাউন্সিলর প্রকাশ্য সভায় আন্দোলনকারীদের হুমকি দিয়েছিলেন এই বলে যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে কুৎসা করলে তিনি আন্দোলনকারীদের মা-বোনদের ছবি বিকৃত করে দেওয়ালে টাঙিয়ে দেবেন। তাঁর বিরুদ্ধে তৃণমূল ব্যবস্থা নেয়। বরখাস্ত করা হয়। সেই খবর এই কুণাল ঘোষই সোশ্যাল মিডিয়াতে ফলাও করে লেখেন। আর প্রমাণ করে দেন চুনোপুঁটিদের বিররুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সহজ। তাঁর বা দেবাংশুর মাথায় আশ্রয়ের হাত না থাকলে কি এই কদর্যতা গর্ব করে সোশ্যাল মিডিয়াতে করতে পারতেন তারা? জনসমক্ষে জানান দিতে পারতেন মহিলাদের কোন নজরে দেখতে চান তারা? রাজনৈতিকভাবে বিরোধীদের কটাক্ষ করা, সমালোচনা করা গণতান্ত্রিক অধিকার, গণতান্ত্রিক সুস্থতা। সেই গণতন্ত্রকে কোন অশ্লীলতায় নামিয়ে আনলেন শাসকের ছায়ায় থাকা এই মানসিকতার মানুষরা!

More Articles