মুখ্যমন্ত্রীর পদ আঁকড়ে ছিলেন জেলেও, জামিন পেয়েই কেন ইস্তফা ঘোষণা কেজরিওয়ালের?
Arvind Kejriwal: এতদিন জেলে থেকেও মুখ্যমন্ত্রীর পদ নিজের দখলে রেখেছিলেন কেজরি। তবে জেলমুক্তির পরেই সামনে এল নয়া ঘোষণা।
আবগারি দুর্নীতি মামলায় প্রায় ৬ মাস ধরে জেলবন্দি ছিলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। অবশেষে জামিন পেয়েছেন তিনি। তবে সেই জামিন মোটেই স্বস্তির হয়নি। এতদিন জেলে থেকেও মুখ্যমন্ত্রীর পদ নিজের দখলে রেখেছিলেন কেজরি। তবে জেলমুক্তির পরেই সামনে এল নয়া ঘোষণা। রবিবার দলীয় সভায় দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের কথা ঘোষণা করলেন কেজরি। তবে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফার জন্য় দু'দিন সময় নিয়েছেন কেজরিওয়াল। জানিয়েছেন, দু'দিন পর তিনি মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করবেন। এ-ও জানিয়ে দিলেন, জনগণের রায় না পাওয়া পর্যন্ত ওই চেয়ারে বসবেন না তিনি।
সামনেই দিল্লিতে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে কেজরির ইস্তফার সিদ্ধান্ত স্বাভাবিক ভাবেই বেশ অস্বস্তির আম আদমী পার্টির জন্য। এই পরিস্থিতিতে কে বসতে চলেছেন দিল্লির মসনদে। এই কুর্সি বদলের ফাঁকে বিজেপি বাজি মেরে চলে যাবে কিনা সেটাও একটা বড় ভাবনা এই মুহূর্তে। চলতি বছরের মার্চ মাসে কেজরি গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই বারবার তাঁর ইস্তফা চেয়েছে বিজেপি। গেরুয়া শিবির বারবার দাবি করেছেন, দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া কেজরি মুখ্যমন্ত্রীর পদে থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন। তা সত্ত্বেও পদ কামড়ে পড়েছিলেন কেজরি। এমনকী জেল থেকেও সরকার চালানোর কথা ঘোষণা করেন তিনি। যদিও তাঁর সেই ইচ্ছাপূরণ হয়নি আদালতে। সেই অনুমতি তাঁকে দেয়নি কোর্ট। সেই প্রসঙ্গে কেজরি জানান, গণতন্ত্র বাঁচাতে চেয়েছিলেন বলেই ইস্তফা দেননি তিনি।
আরও পড়ুন: সুপ্রিম নির্দেশে জামিন কেজরিওয়ালের! নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারবেন দিল্লির মুখমন্ত্রী?
গত শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তিহাড় জেল থেকে ছাড়া পান কেজরিওয়াল। সেখান থেকে বেরিয়েই আম আদমী পার্টির নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে একটি জনসভায় ভাষণ দেন তিনি। সেখানে বার্তা ছিল দিল্লিবাসীর জন্যেও। জানিয়ে দেন আগামী দু'দিনের মধ্যেই দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেবেন তিনি। প্রশ্ন উঠেছে, যদি ইস্তফাই দেবেন, কেন তার জন্য় ৪৮ ঘণ্টা সময় চেয়ে নিলেন কেজরি? তাঁর ইস্তফার ঘোষণার পরেই দিল্লির নির্বাচন কবে হবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। যদিও ভোট হওয়ার কথা ফেব্রুয়ারিতে, কেজরিওয়ালের আর্জি নভেম্বরেই মহারাষ্ট্রের পাশাপাশি দিল্লিতেও বিধানসভা ভোট করানো হোক।
কেন ইস্তফার জন্য দু'দিনের সময় নেওয়া? তাকে অবশ্য পাবলিসিটি স্টান্ট হিসেবেই দেখছে বিজেপি। তাদের দাবি, তথ্য সরিয়ে ফেলতেই এই স্মার্ট পদ্ধতি নিয়েছেন কেজরিওয়াল। যদিও আপের ব্যাখ্যা রবিবার ছুটির দিন। তার পরের দিন সোমবার ইদ-এ-মিলাদ উপলক্ষে দিল্লিতে ছুটি, সে কারণেই মঙ্গলে ইস্তফা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কেজরি, তেমনটাই জানিয়েছেন কেজরির মন্ত্রিসভার মন্ত্রী অতিশি।
তবে ইস্তফা দিলেও যে লড়াইয়ের ময়দান থেকে সরে যাচ্ছেন কেজরি, তেমনটা নয়। বরং আগামী নির্বাচনে যাতে ফের নিজের পদে ফিরে আসতে পারেন, তার জন্য জোরদার প্রস্তুতি আরম্ভ হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। কেজরি জানান, প্রত্যেক বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে, প্রত্যেকের দরজায় দরজায় গিয়ে সমর্থন জোগার করবেন তিনি। মানুষের রায় পেলে তবেই ওই চেয়ারে বসবেন তিনি। কেজরির কথায়, আমি দিল্লির জনগণকে জিজ্ঞাসা করতে চাই, কেজরিওয়াল কি নির্দোষ নাকি দোষী? আমি যদি কাজ করে থাকি তবে আমাকে ভোট দিন।"
আগামী দু'দিনের মধ্যেই আপ বিধায়কদের একটি সভা হবে দিল্লিতে, সে কথাও জানান কেজরিওয়াল। পাশাপাশি বিভিন্ন অবিজেপি রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদেরও আগেভাগে সতর্ক করেছেন কেজরি। তিনি জানান, এটা বিজেপির নয়া ফর্মুলা। যে সব রাজ্যে বিজেপি ভোটে জিততে পারেনি, সেখানকার নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ভুয়ো মামলা করে, গ্রেফতার করে সরকার ফেলে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে বিজপি। এই পরিস্থিতিতে অন্য অবিজেপি রাজ্যের মুখ্য়মন্ত্রীদের উদ্দেশে তাঁর পরামর্শ, কোনও পরিস্থিতিতেই ইস্তফা দেবেন না। কেজরির বক্তব্য, "হেমন্ত সোরেন, সিদ্দারামাইয়া, পিনারাই বিজয়নের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও একই জিনিস চলছে। বিরোধী শিবিরের একজন মুখ্যমন্ত্রীকেও ছাড়ে না এরা। ভুয়ো মামলা করে, জেলে ঢোকায়।দেশের সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের হতজোড় করে বলব, প্রধানমন্ত্রী যদি জেলে ঢোকানোর হিম্মত দেখান, ইস্তফা দেবেন না। জেল থেকে সরকার চালান।"
আরও পড়ুন: ‘ইতিহাসে এমন হয়নি…’ কেজরিওয়ালের বিচার নিয়ে যে প্রশ্ন তুলছেন ১৫০ আইনজীবীর দল
কেজরি এ-ও ঘোষণা করেন, "আমরা কেউ লোভী নই। চেয়ার আঁকড়ে পড়ে থাকার বাসনা নেই। কিন্তু সবিধান, দেশ, গণতন্ত্রকে বাঁচানোটা জরুরি। যে সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে নির্বাচিত হচ্ছে, সেই সরকাকে জেলে ভরছে, ইস্তফা চাইছে। সকল মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ, ওদের এই নতুন ফর্মুলা ব্যর্থ করে দিন।"
এদিকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে কেজরির সরে আসার সিদ্ধান্তের পরেই জোর চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে আপের অন্দরে। আপাতত কে হতে চলেছেন কেজরির উত্তরসূরী? কেজরির ঘোষণার পর থেকেই উঠে এসেছে একাধিক নাম। উঠে এসেছে কৈলাস গেহলটের নাম। তালিকায় রয়েছে রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী তথা সেকন্ড ইন কম্যান্ড মণীশ সিসৌদিয়ার নামও। তবে শেষপর্যন্ত কার কাছে যেতে চলেছে দিল্লিশাসনের দায়িত্ব, তা এখনও পরিষ্কার নয়। নাকি এই সুযোগের ফায়দা নিয়ে দিল্লির মসনদের অধিকার বুঝে নেবে বিজেপি? তা-ও অবশ্য এখনও পরিষ্কার নয়।