"আপনার মেয়েকে ইমার্জেন্সিতে নিয়ে এসেছি", ধর্ষিতার বাবা-মাকে ৩ বার ফোনে কী কী বলা হয়?
RG Kar Phone Calls: দ্বিতীয় ফোনে এক মহিলা বলেন, "আমি সহকারী সুপার। আপনার মেয়েকে আমরা ইমার্জেন্সিতে নিয়ে এসেছি। আপনি এসে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।"
মেয়ের সঙ্গে শেষ কথা হয়েছিল রাত ১১.৩০টা নাগাদ। মেয়ে তখন ৩৬ ঘণ্টা টানা ডিউটি করছে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। রোজের মতোই মেয়ের ফোন আসে, বেশি কথাও হয়নি মায়ের সঙ্গে। কে জানত ওইটিই মা ও মেয়ের শেষ ফোনালাপ। তারপর কলেজ থেকেই ফোন আসে। তখন সকাল। ৯ অগাস্ট। আধ ঘণ্টার মধ্যে তিনটি ফোন এসে ভেস্তে দিয়েছিল সোদপুরের এক মধ্যবিত্ত পরিবারের নিজস্ব পৃথিবী। তারপর থেকে ২০ দিন অতিক্রান্ত। রাতে যে মেয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন, দুপুরে সেই মেয়েরই দেহ দেখেছেন। ধর্ষিতা, মৃতা! ৩১ বছরের সমস্ত স্বপ্ন, লড়াই নিমেষে শেষ। তারপর সারা বাংলা বিচার চেয়ে পথে নেমেছে। ৯ অগাস্টের সকালে যে তিনটি ফোন পেয়েছিলেন ধর্ষিতা, মৃতা চিকিৎসকের পরিবার সেই তিনটি ফোনের রেকর্ডিং প্রকাশ্যে এসেছে। ফোনের কথোপকথনে স্পষ্ট হয়েছে, কীভাবে নির্যাতিতার মা-বাবাকে ক্রমাগত বিভ্রান্ত করা হয়েছে। দুই বৃদ্ধ বাবা-মা মেয়ের মৃতদেহ দেখার আগেই যা যা সহ্য করেছেন, তা অকল্পনীয়।
এনডিটিভির এক প্রতিবেদন জানাচ্ছে, চিকিৎসকের বাবা-মা আদালতকে জানিয়েছেন, সকাল ১০টা ৫৩ মিনিটে প্রথম ফোনটি আসে। ফোনে ওপারে ছিলেন একজন মহিলা। পরিচয়, হাসপাতালের সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট। সুপ্রিম কোর্টে কলকাতা পুলিশ যে সময়সারণী জমা দিয়েছে, তাতে বলা হয়েছে ওই সময়ে হাসপাতালের তরফে বাবা মাকে খবর দেওয়া হয় কিন্তু কথোপকথনের বিস্তারিত বিবরণ জমা দেয়নি পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে মাত্র একটিই ফোনের কথা। তবে ফোন রেকর্ডিং থেকে তিনটি অডিও ফাইল পাওয়া গেছে। অর্থাৎ তিনটি ফোন করা হয়েছিল এবং শেষবারের ফোনে জানানো হয়, ওই চিকিৎসক মারা গেছেন। কী কথোপকথন হয়েছিল?
আরও পড়ুন- দেহ উদ্ধারের পর সেমিনার রুমে কাদের ভিড়? যে সব প্রশ্ন তুলে দিল আরজি কর কাণ্ডের ভাইরাল ভিডিও
নির্যাতিতার বাবা- কী হয়েছে, বলুন!
ফোন: ওর অবস্থা খুব খারাপ, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আসুন
নির্যাতিতার বাবা- কী হয়েছে বলুন না প্লিজ
ফোন: ডাক্তার বলবে, আপনি তাড়াতাড়ি আসুন।
নির্যাতিতার বাবা- আপনি কে বলছেন?
ফোন: আমি সহকারী সুপার, ডাক্তার নই
নির্যাতিতার বাবা- ওখানে ডাক্তার নেই?
ফোন: আমি সহকারী সুপার। আপনার মেয়েকে আমরা ইমার্জেন্সিতে নিয়ে এসেছি। আপনি এসে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
নির্যাতিতার মা-: ওর কী হয়েছে, ও তো ডিউটিতে ছিল
ফোন: আপনারা তাড়াতাড়ি আসুন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।
দ্বিতীয় ফোনে একটি পুরুষ কণ্ঠ শোনা যায়। ততক্ষণে বাবা-মা হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন।
ফোন: আমি আরজি কর হাসপাতাল থেকে বলছি
নির্যাতিতার মা: হ্যাঁ, বলুন
ফোন: আপনারা আসছেন তো?
নির্যাতিতার মা: হ্যাঁ, আমরা আসছি। মেয়ে এখন কেমন আছে?
ফোন: আপনারা আসুন, আমরা কথা বলব, আরজি কর হাসপাতালের বক্ষ বিভাগের এইচওডি-র কাছে আসবেন।
নির্যাতিতার মা: ঠিক আছে
আরও পড়ুন- যৌনাঙ্গে ক্ষত, শরীরের ২৪ জায়গায় চোট! নারকীয় অত্যাচারের প্রমাণ ময়নাতদন্তের রিপোর্টে
তৃতীয় ফোনে চিকিৎসকের বাবা-মাকে বলা হয়, মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। আদালতে বিচারকরাও বারবার জিজ্ঞাসা করেছেন, কেন অভিভাবকদের এভাবে মিথ্যা বলে বিভ্রান্ত করা হয়েছিল! এই ফোনটি করেন সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট, যিনি প্রথম ফোনটি করেছিলেন।
নির্যাতিতার বাবা- হ্যালো
ফোন: সহকারী সুপার বলছি।
নির্যাতিতার বাবা- হ্যাঁ
ফোন: ব্যাপারটা হচ্ছে, আপনার মেয়ে সম্ভবত আত্মহত্যা করেছে, মারা গেছে। মেয়ে মারা গেছে, পুলিশ এখানে এসেছে, আমরা সবাই এখানে আছি, দয়া করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আসুন।
নির্যাতিতার বাবা- আমরা এক্ষুনি আসছি
নির্যাতিতার মা পাশ থেকে চিৎকার করে ওঠেন: আমার মেয়ে আর নেই!
বৃদ্ধ দুই অভিভাবককে হাসপাতাল প্রশাসন যেভাবে বিভ্রান্ত করেছে তা ভয়ঙ্কর! কলকাতা হাইকোর্টেও অভিভাবকরা জানিয়েছিলেন, হাসপাতালে যাওয়ার পরেও তাদের তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করানো হয়েছে। বাবা-মা সন্দেহ প্রকাশ করছেন যে ইচ্ছাকৃতভাবেই তাঁদের দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। কলকাতা পুলিশ অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। কলকাতা পুলিশের হিসেব অনুযায়ী, চিকিৎসকের বাবা-মা দুপুর ১টায় হাসপাতালে পৌঁছেছিলেন এবং তাদের ১০ মিনিট পরেই সেমিনার হলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, যেখানে মৃতদেহটি পাওয়া গিয়েছিল। মেয়ের শরীরে তখন কোনও কাপড় ছিল না। কেবল একটি বিছানার চাদর জড়ানো। পা দুটো দু'দিকে, একটি হাত মাথার উপরে। আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ডাঃ সন্দীপ ঘোষের নেতৃত্বে হাসপাতাল প্রশাসন কেন পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেনি এবং পুলিশ কেনই বা অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করে তা নিয়েও আদালত প্রশ্ন তুলেছে। নির্যাতিতার বাবা অভিযোগ দায়ের করার পরে, গভীর রাতে এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল।