আরজি কর ইন-ক্যামেরা শুনানি: যা যা হল প্রথম দিনে

RG Kar Trial: এদিন শিয়ালদহ আদালতে সাক্ষ্য দিতে হাজির ছিলেন আরজি করের নির্যাতিতার বাবা। মামলায় প্রধান অভিযুক্ত সিভিক ভলিন্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে নিয়ে আসা হয়েছিল আদালতে।

আরজি কর কাণ্ড নিয়ে সপ্তম দিনের শুনানিতেই সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, রাজ্যের বাইরে কোথাও নয়, বাংলাতেই হবে ওই মামলার শুনানি। সিবিআই ইতিমধ্যেই ওই মামলার প্রথম চার্জশিট প্রকাশ করেছে। যার ভিত্তিতে সোমবার, ১১ নভেম্বর শিয়ালদহ আদালতে ওই মামলার বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা ছিল। হলও তেমনটাই। সোমবার থেকেই শুরু হল আরজি কর হাসপাতালে ধর্ষণ ও খুনের মামলায় ইন-ক্যামেরা বিচার।

এদিন শিয়ালদহ আদালতে সাক্ষ্য দিতে হাজির ছিলেন আরজি করের নির্যাতিতার বাবা। মামলায় প্রধান অভিযুক্ত সিভিক ভলিন্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে নিয়ে আসা হয়েছিল আদালতে। তাঁকে দুপুর সওয়া দু'টো নাগাদ এজলাসে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপরেই শুরু হয় সাক্ষ্যগ্রহণ। কার্যত তিন ঘণ্টা চলেছে প্রথম দিনের এই সাক্ষ্যগ্রহণ পর্ব। এই মামলার বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে প্রথম থেকেই নেওয়া হয়েছিল অতিরিক্ত সতর্কতা। যাঁরা এই মামলার সঙ্গে জড়িত নন, তাঁদের বেরিয়েও যেতে বলা হয় আদালত কক্ষ থেকে। এদিনের এই রুদ্ধদ্বার বিচার প্রক্রিয়ায় বাইরের কারওর প্রবেশাধিকার ছিল না, 'ইন ক্যামেরা' বিচার বলতে যা বোঝায়, সেই ছবিই দেখা গেল আরজি কর কাণ্ডের বিচারপ্রক্রিয়ায়।

আরও পড়ুন: বাংলা থেকে সরবে না আরজি কর মামলা, সপ্তম শুনানিতে যে যে বড় সিদ্ধান্ত সুপ্রিম কোর্টে

এদিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন নির্যাতিতার পরিবারের আইনজীবী বৃন্দা গ্রোভারও। এর আগে নির্যাতিতার পরিবারের হয়ে মামলা লড়ছিলেন সিপিএম সাংসদ তথা বিখ্যাত আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। পরে মামলার দায়িত্ব যায় আইনজীবী বৃন্দার কাছে। এদিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন নির্যাতিতার প্রতিবেশী ঞ্জীব মুখোপাধ্যায়ও, যিনি নিজেকে ‘কাকু’ বলে পরিচয় দিয়েছিলেন। যদিও আরজি কর কাণ্ডের পর তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উঠেছিল। সোমবারও অবশ্য সঞ্জীব দাবি করেছেন, তিনি সাক্ষ্য দেওয়ার জন্যই আদালতে গিয়েছেন।

গত ৯ আগস্ট আর জি কর হাসপাতালের চারতলায় সেমিনার হল থেকে উদ্ধার হয় নির্যাতিতার দেহ। ময়নাতদন্তের পর রাতেই উত্তর কলকাতার সিঁথি থানায় ধর্ষণ ও খুনের মামলা শুরু হয়। পরের দিন কলকাতা পুলিশ সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে গ্রেপ্তার করে। হাই কোর্টের নির্দেশে সিবিআই এই ধর্ষণ ও খুনের মামলার তদন্তভার হাতে নেয়। টানা তদন্তের পর গত ৭ অক্টোবর কলকাতা পুলিশের হাতেই ধৃত একমাত্র অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ের বিরুদ্ধে শিয়ালদহ আদালতে চার্জশিট পেশ করে সিবিআই। গত ৪ নভেম্বর সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে শিয়ালদহের এডিজে আদালতে চার্জ গঠন করা হয়। সেদিনই বিচারক জানিয়ে দেন যে, ১১ নভেম্বর, সোমবার থেকে শুরু হবে মামলার বিচারপর্ব বা ‘ট্রায়াল’। ছুটির দিনগুলি ছাড়া প্রায় প্রত্যেকদিনই বিচারপর্ব চলবে। আদালতের সূত্র জানিয়েছে, আজ ‘ট্রায়াল’-এর শুরুতেই নির্যাতিতার বাবাকে দিয়েই শুরু হবে সাক্ষ‌্যগ্রহণ।

 

প্রথম থেকেই ঠিক ছিল, এই মামলার বিচারপ্রক্রিয়া শুরুর প্রথম পর্বে সাক্ষ্য হিসেবে আদালতে বয়ান নথিবদ্ধ করাবেন নির্যাতিতার বাবা-মা। এই মামলায় সব মিলিয়ে মোট ১২৮ জন সাক্ষী রয়েছেন বলে খবর। তার মধ্যে রয়েছেন জুনিয়র ডাক্তার থেকে শুরু করে কলকাতা পুলিশের একাধিক আধিকারিক এবং ফরেন্সিক অফিসারেরে। এদের প্রত্যেকের বয়ান ধাপে ধাপে নথিভুক্ত করা হবে বলে খবর। সূত্রের খবর, সোমবার দুপুর বারোটা নাগাদ আরজি কর নির্যাতিতা চিকিৎসকের বাড়িতে পৌঁছন সিবিআইয়ের এক আধিকারিক। তার পর সিবিআইয়ের গাড়ি করেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অফিসে পৌঁছন নির্যাতিতার বাবা। এরপর কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তায় আদালতে ঢোকেন তিনি। প্রথম দিনে শুধু নির্যাতিতার বাবার বয়ানই নথিভুক্ত করা হয়েছে। এর পর নির্যাতিতার মায়ের বয়ান নথিভুক্ত করা হবে বলে খবর।

আগের দিন সঞ্জয় রায় সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরার সামনে দাবি করেছিল, তাকে সরকার ফাসাচ্ছে । আরজি কর হাসপাতালে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার সঙ্গে সেই কোনও ভাবেই যুক্ত নয়। আজ ওই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, তার জন্য আজ শিয়ালদা আদালতে পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো হবে বলে জানা গিয়েছে। এর আগে সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে 'বায়োলজিক‌্যাল এভিডেন্স' জোগার করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা । আরজি কর হাসপাতালে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় সঞ্জয় রায় একমাত্র অভিযুক্ত। আগে এই ঘটনার প্রথম চার্জশিটেই উল্লেখ করেছিলেন সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা।

আরও পড়ুন: আরজি কর কাণ্ডে আদালতে নিজের বক্তব্য জানাতে পারবে ধৃত সঞ্জয়? কী বলছে ভারতের আইন?

ইতিমধ্য়েই এই ঘটনায় যে চার্জশিট পেশ করেছে সিবিআই, তাতে প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে নাম রয়েছে সিভিক ভলিন্টিয়ার সঞ্জয় রায়েরই। তবে প্রমাণ লোপাট-সহ একাধিক অভিযোগ আনা হয়েছে আরজি কর কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সঞ্জীব ঘোষ ও টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মন্ডলের বিরুদ্ধে। জানা যাচ্ছে, এই দু'জনের বিরুদ্ধেই এই ঘটনায় দ্বিতীয় চার্জশিট জমা দিতে পারে সিবিআই। আপাতত এই মামলার বিচারপ্রক্রিয়া টানা চলবে শিয়ালদহ কোর্টে, তেমনটাই জানা গিয়েছে। ধাপে ধাপে সাক্ষ্যগ্রহণের পরে আদালত মূল বিচারপ্রক্রিয়ায় ঢুকবে বলে খবর। এদিকে, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির পদ থেকে ইতিমধ্যেই অবসর নিয়েছেন ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। তাঁর অনুমোদন অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির পদে বসেছেন বিচারপতি সঞ্জীব খান্না। আরজি কর মামলায় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। সেই মামলার শুনানি এতদিন চলছিল প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চে। চন্দ্রচূড়ের অবসরের পর সেই মামলা উঠতে চলেছে সুপ্রিম কোর্টের নতুন বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চেই।

 

More Articles