সুপ্রিম কোর্টের কাজের ফেরার নির্দেশকে মানছেন না জুনিয়র ডাক্তাররা! কী দাবি তাঁদের?
RG Kar Junior Doctor Protest: সুপ্রিম কোর্টের কাজে ফেরার নির্দেশকে মানছেন না চিকিৎসকরা। নতুন করে আন্দোলন কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেছে জুনিয়র ডাক্তারদের সংগঠন।
সোমবার ছিল সুপ্রিম কোর্টের শুনানি। তাতে ধর্ষণ কাণ্ড নিয়ে বিশেষ কোনও দিশা না পাওয়া গেলেও জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি তুলে কাজে ফেরার সময়সীমা বেঁধে দেয় শীর্ষ আদালত। তবে কলকাতার জুনিয়র চিকিত্সকরা ঘোষণা করেছেন, বিচার না হওয়া পর্যন্ত আরজি কর হাসপাতালে তিলোত্তমাকে ভয়ঙ্করভাবে ধর্ষণ করা এবং হত্যা করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চালিয়ে যাবেন তারা। সোমবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট জানায়, মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটার মধ্যে কর্মবিরতি তুলে জুনিয়র ডাক্তারদের ফিরতে হবে কাজে। সোমবার সন্ধেয় নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে চিকিত্সকরা বলেন এই প্রতিবাদ "জনগণের আন্দোলন এবং সরকার বা সুপ্রিম কোর্টের তা ভুলে যাওয়া উচিত নয়।"
আরজি কর হাসপাতালের জুনিয়র চিকিৎসকরা বলছেন, "সুপ্রিম কোর্টের শুনানি দেখে আমরা অত্যন্ত হতাশ। মামলা হাইকোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্টে, রাজ্য পুলিশের হাত থেকে সিবিআইয়ের হাতে গেছে কিন্তু বিচার এখনও নাগালের বাইরে।" সোমবার শীর্ষ আদালতে রাজ্য সরকারের তরফের আইনজীবী বলেছেন, চিকিৎসকদের কর্মবিরতির ফলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতির ফলে রাজ্যে ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলেও দাবি করেন রাজ্যের আইনজীবী। চিকিৎসকরা বলছেন, রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে ভুল তথ্য তুলে ধরছে। কর্মবিরতির কারণে মোটেও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে এই কথা বলা যায় না।
আরও পড়ুন- ‘মিথ্যা বলছেন মুখ্যমন্ত্রী’! টাকা দিয়ে চুপ করানো প্রসঙ্গে কী বললেন তিলোত্তমার মা?
অন্যদিকে, ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের পশ্চিমবঙ্গ শাখা সাফ জানিয়ে দিয়েছে, যাই হয়ে যাক না কেন, জুনিয়র ডাক্তারদের সিদ্ধান্তকে তারা সমর্থন করবে। আইএমএ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, "আমরা অপরাধের নৃশংসতার কথা মাথায় রেখে ইতিবাচক ফলাফলের প্রত্যাশা করছিলাম। তবে আদালত এবং সিবিআইয়ের কার্যক্রম দেখে আমরা সম্পূর্ণভাবে হতাশ। আমাদের সহকর্মীকে ন্যায়বিচার দেওয়ার জন্য দ্রুত বিচারের জন্য কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। হাসপাতালগুলিতে অল্প কিছু মৃত্যুর জন্য জুনিয়র ডাক্তারদের যেভাবে দায়ী করা হয়েছে তা অত্যন্ত মর্মান্তিক এবং জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের কারণে কোনও হাসপাতালে পরিষেবা সম্পূর্ণভাবে ব্যাহত হয় না।"
আরও পড়ুন- আরজি কর গণ আন্দোলন | কেন ফায়দা তুলতে পারছে না রাম-বাম?
জুনিয়র ডাক্তাররা প্রায় এক মাস ধরে সরকারি হাসপাতালে কর্মবিরতি পালন করছেন। সোমবার শুনানির সময় শীর্ষ আদালত প্রতিবাদী চিকিত্সকদের মঙ্গলবার সন্ধ্যার মধ্যে কাজে ফিরতে হবে বলে নির্দেশ দেয়। ভারতের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, "আগামিকাল বিকেল ৫টার মধ্যে ডাক্তাররা কাজে আসবেন, কোন প্রতিকূল পদক্ষেপ করা হবে না। সুযোগ-সুবিধা থাকা সত্ত্বেও কর্মবিরতি চলতে থাকলে ভবিষ্যতে ব্যবস্থা নেওয়ার সম্ভাবনাও তৈরি হবে।" এই টানা এক মাসের বিক্ষোভের ফলে স্বাস্থ্য পরিষেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, "তারা পরিষেবা দেওয়ার ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছেন। আমরা সুযোগ-সুবিধা দেব কিন্তু তাদেরও প্রতিদান দিতে হবে। চিকিৎসকরা যদি আবার কাজ শুরু না করেন, তাহলে সরকারকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া থেকে আমরা আটকাতে পারব না।" প্রধান বিচারপতি আরও জানান, জুনিয়র ডাক্তাররা এমনটা বলতেই পারেন না যে সিনিয়ররা কাজ করছেন, তাই তারা করবেন না।
কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের এই কাজে ফেরার নির্দেশকে মানছেন না চিকিৎসকরা। নতুন করে আন্দোলন কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেছে আরজি-কর কাণ্ডের প্রতিবাদে আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের সংগঠন। পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছেন তারা। রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব, স্বাস্থ্য অধিকর্তা (ডিএইচএস) এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তার (ডিএমই) ইস্তফাও দাবি করেছেন তাঁরা। মঙ্গলবার স্বাস্থ্যভবন অভিযানের ডাক দিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। জুনিয়র ডাক্তারদের পাঁচ দফা দাবি কী কী?
১। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত সমস্ত দোষীদের দ্রুত চিহ্নিত করা, অপরাধের উদ্দেশ্য সামনে আনা এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।
২। তথ্যপ্রমাণ লোপাটের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে জড়িতদের চিহ্নিত করে বিচার।
৩। সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণে ‘ব্যর্থ প্রমাণিত’ কলকাতা পুলিশের কমিশনার বিনীত গোয়েলের ইস্তফা।
৪। রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজ, হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা।
৫। রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভয়মুক্ত পরিবেশ গড়া এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ সুনিশ্চিত করা।