বিবেকানন্দ-রামকৃষ্ণ সম্পর্কের ভিয়েন, আজও অটুট রহস্য

এখন তাঁর মন যে নরেনের দিকে যাচ্ছে আর নরেনও যে তাঁর প্রতি আগ্রহ বোধ করছেন ক্রমশ কী হবে তার পরিণতি? কী ভাবছিলেন ঠাকুর? অকপটে বলছেন, ‘নরেন্দ্র বেশি আসে না। সে ভাল। বেশি এলে আমি বিহ্বল হই।’

ভালবাসার সঙ্গে কার সম্পর্ক বেশি নিবিড়? বুদ্ধির না মনের? বুদ্ধি দিয়ে যা বুঝতে পারি না, অনেক সময় মন দিয়েই তো তা খুঁজি। মনই তখন সেই উপযুক্ত প্রকরণ– খুঁজছে আর ভাবছে ‘আমি কোথায় পাবো তারে/ আমার মনের মানুষ যে রে।’ গগন হরকরার এই গান রবি ঠাকুরের প্রিয় ছিল খুব। শিলাইদহে যখন ছিলেন তখন বাউল-দলের সঙ্গে নিয়মিত দেখা হত তাঁর। সেই বাউলেরা মাঝে-মাঝে আসতেন কলকাতায়। রবীন্দ্রনাথ স্মৃতিচারণ করেছেন, "আমার মনে আছে তখন আমার নবীন বয়স- শিলাইদহ অঞ্চলেরই এক বাউল কলকাতায় একতারা বাজিয়ে গেয়েছিল ‘কোথায় পাব তারে/ আমার মনের মানুষ যে রে!/ হারায়ে সেই মানুষে তার উদ্দেশে/ দেশে বিদেশে বেড়াই ঘুরে।" রবীন্দ্রনাথের মনে হয়েছিল ‘তার গেঁয়ো সুরে, সহজ ভাষায় ... অন্ধকারে মাকে দেখতে পাচ্ছে না যে শিশু, তারই কান্নার সুর– তার কণ্ঠে বেজে উঠেছে।’ এই যে মনের কান্না তাকেই তো বলি ভালবাসা– মনই কাঁদছে, মনই খুঁজছে।

মন যখন কাঁদে, মন যখন খোঁজে মনের মানুষে, তখন শরীরের সামাজিকতা বজায় রাখা যায় না। বুদ্ধির যুক্তিকে অতিক্রম করে শরীর, সামাজিক বিধিকে অস্বীকার করে। 

উনিশ শতকে কলকাতার কাছেই থাকতেন রামকৃষ্ণদেব। গ্রামের মানুষ তিনি, এসেছিলেন দাদার সঙ্গে শহর কলকাতার কাছাকাছি, রানি রাসমণির দক্ষিণেশ্বরে– তারপর কলকাতার কাছেই দক্ষিণেশ্বরে তাঁর থেকে যাওয়া। রবীন্দ্রনাথ বাউলের গানে অন্ধকারে মাকে দেখতে না-পাওয়া শিশুর যে কান্নার সুর শুনতে পেয়েছিলেন সেই কান্নার সুরই রামকৃষ্ণদেবের সাধনা, ভালবাসার সাধনা। সেই সাধনায় বুদ্ধি-যুক্তিনিয়ন্ত্রিত শরীরের সামাজিকতা পড়ত ভেঙে। 

আরও পড়ুন: নিবেদিতার ভালবাসার সর্বনাশ হয়েছিল বিবেকানন্দর কাছে

শরীরের সামাজিকতা না-ভাঙলে মন দেশে-বিদেশে অকপটে ঘুরবে কেমন করে! রামকৃষ্ণদেবের জীবনেই শুধু নয়, মরমিয়া সাধকদের জীবনেও তো তাই সামাজিকতার অঙ্গরাগ খুলে খুলে যায়। মরমিয়া সাধিকা আক্কা-মহাদেবী তাঁর বচনে একটি অমোঘ প্রশ্ন করেন।  ‘অঙ্গ থেকে বস্ত্র যদি সরে/ পুরুষ নারী লজ্জা পেয়ে মরে/ প্রাণপ্রভু পূর্ণ করে আছো ত্রিভুবন/ লজ্জা কোথা রাখি?’ তাঁর মনের মানুষ তো জগৎ ব্যাপ্ত করে আছেন– সেই ব্যাপ্তির মধ্যে লজ্জার নিভৃতি থাকা আর না-থাকা দুই সমান। ১৮৮৬ সালের ২৩ এপ্রিল। ঠাকুর অসুস্থ, ব্রাহ্মভক্ত হীরানন্দ এসেছেন। রামকৃষ্ণদেব অনেক সময়েই কোমরে কাপড় রাখতে পারছেন না। হীরানন্দকে জিজ্ঞাসা করছেন, ‘কাপড় খুলে গেলে তোমরা কি অসভ্য বল?’ এমন কাণ্ড ঠাকুরের জীবনে নতুন নয়, প্রেমের ঘোরে মাঝে-মাঝেই তাঁর বস্ত্র এলোমেলো হয়, শরীর বসে থাকে না। তাঁর এই এলোমেলো বস্ত্র আর বশে না-থাকা শরীর রবীন্দ্রনাথের পিতা দেবেন্দ্রনাথের ভাল লাগত না, একসময় ভালো লাগেনি রবীন্দ্রনাথেরও। মহর্ষি রামকৃষ্ণদেবকে ব্রাহ্মদের উদ্যান-উৎসবে আমন্ত্রণ করেছিলেন, তবে শর্ত ছিল একটাই– ঠিক ঠিক জামাকাপড়টি পরে যাওয়া চাই। নিজের শরীরের ওপর, নিজের জামাকাপড়ের ওপর ভদ্রতা-রক্ষার শর্ত চাপাতে পারেননি বলে দেবেন্দ্রনাথের আহ্বানে সেখানে যেতে পারেননি। পরে অবশ্য ব্রাহ্ম সমাবেশে গিয়েছেন। 

আর রবীন্দ্রনাথ? তাঁর ‘রূপ ও অরূপ’ প্রবন্ধে নাম-না করে রামকৃষ্ণদেবের সমালোচনা করেছিলেন। চিড়িয়াখানায় সিংহ দেখে পরমহংস বিবশ হয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথের অভিমত, “শুনা যায় শক্তি-উপাসক কোনো-একজন বিখ্যাত ভক্ত মহাত্মা আলিপুর পশুশালায় সিংহকে বিশেষ করিয়া দেখিবার জন্য অতিশয় ব্যাকুলতা প্রকাশ করিয়াছিলেন— কেননা ‘সিংহ মায়ের বাহন’। শক্তিকে সিংহরূপে কল্পনা করিতে দোষ নাই— কিন্তু সিংহকেই শক্তিরূপে যদি দেখি তবে কল্পনার মহত্ত্বই চলিয়া যায়।” চিড়িয়াখানায় গিয়ে সিংহ দেখে ঠাকুরের মায়ের কথা মনে পড়ছে, তিনি আকুলি-বিকুলি করছেন, তাঁর জামাকাপড় ঠিক থাকছে না, তাঁর শরীর সামাজিক নিয়মের বশে থাকছে না। যুক্তি-বুদ্ধি, সভ্যতা-ভব্যতা মন আর শরীরের এই আচরণকে ঠিক মেনে নিতে পারছে না। রবীন্দ্রনাথের লেখা সেই মানতে না-পারা সমাজের স্বর। 

পরমহংস এক জায়গায় থেমে থাকার মানুষ নন, রবীন্দ্রনাথও তাই। রামকৃষ্ণদেব সম্বন্ধে তাঁর মনে যে সংশয় ও দ্বিধা ছিল, তা পরে আস্তে আস্তে কেটে যায়। ক্ষিতিমোহন সেনের গবেষণার সূত্রে তিনি প্রাগাধুনিক পর্বের হিন্দু-মুসলমান সাধকদের কথা জানতে পারেন। কবীর, দাদূ আরও কত-শত সাধক-বাউলরাও এই ধারার, শিলাইদহে সেই বাউলদের সঙ্গ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। টের পেয়েছিলেন তাঁদের মনের মানুষ সাধনের কথা। রামকৃষ্ণদেবও যে এই ধারারই সাধক বুঝতে পেরেছিলেন তা- রামকৃষ্ণদেবের জন্মশতবর্ষে লিখেছিলেন ছোট্ট একটি কবিতা। লিখেছিলেন, ‘বহু সাধকের বহু সাধনার ধারা/ ধেয়ানে তোমার মিলিত হয়েছে তারা’–  রামকৃষ্ণদেব যে এই মরমিয়া সাধনধারার মানুষ তা বুঝেছিলেন তিনি।

সে বোঝার কথা থাক, ঠাকুরের ভালবাসার কথায় ফেরা যাক। কেমন সে ভালবাসার রূপ? সে রূপ বড় মন-উচাটন করা। প্রথম প্রথম নরেন্দ্র বুঝতে পারতেন না ভালবাসার সে রকম। বিব্রত হতেন। নরেন্দ্র ইংরেজি পড়া, যুক্তিনিষ্ঠ যুবা। ব্রাহ্মসমাজে তাঁর যাতায়াত। এই গেঁয়ো মানুষটির রকম-সকম তাঁকে অবাক করত। রামকৃষ্ণদেবের সঙ্গে নরেন্দ্রর প্রথম দেখা ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দে, ঠাকুর চলে গেলেন ১৮৮৬-তে। পরমহংসর সঙ্গে নরেন্দ্রর যখন প্রথম দেখা হয়েছিল, তখন তিনি আঠেরো বছরের যুবক। এই বছরপাঁচেক নরেন্দ্র মন-উচাটন এক ভালবাসার স্পর্শ পেয়েছিলেন। সেই ভালবাসার টানে ভদ্রলোকের যুক্তিবোধের ধর্মাচরণ থেকে দক্ষিণেশ্বরের দিকে চলে এলেন তিনি– তাঁর ব্রাহ্মসমাজের সদস্য পদ রইল, কিন্তু সেই সমাজের প্রতি তাঁর বুদ্ধিবাসনা অন্তর্হিত হল। 

কথামৃতে আছে রামকৃষ্ণদেব বলছেন নরেনকে, ‘দেখ, আর একটু বেশি বেশি আসবি। সবে নূতন আসছিস কি না! প্রথম আলাপের পর নূতন সকলেই ঘন ঘন আসে, যেমন নূতন পতি (নরেন্দ্র মাস্টারের হাস্য)। কেমন আসবি তো?’ আবার বলছেন, ‘ওর [নরেন্দ্রর] মদ্দের ভাব(পুরুষ ভাব) আর আমার মেদীভাব(প্রকৃতিভাব)।’ নরেন্দ্র কয়েকদিন দক্ষিণেশ্বরে না-এলে ঠাকুর আকুল হয়ে পড়তেন। কয়েকদিন আসেননি বলে তিনি নরেন্দ্রর খোঁজে ব্রাহ্মসমাজে গিয়ে হাজির হলেন। ভাবোন্মাদ অবস্থায় তিনি বেদির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। ব্রাহ্মরা ভাবলেন ঠাকুর বুঝি বেদি দখল করতে চাইছেন। বেদি নয়, ঠাকুরের আকুলতার কারণ নরেন্দ্রনাথ। ব্রাহ্মসমাজের গানের দলে নরেন্দ্রনাথ ছিলেন, তিনি বুঝতে পারলেন ঠাকুরের আসার কারণ। আলো নিভিয়ে দেওয়া হল। পিছনের দরজা দিয়ে তিনি ঠাকুরকে বের করে দক্ষিণেশ্বরে নিয়ে গেলেন।

এই যে মন-উচাটন আকুলতা, যে আকুলতা সামাজিক বিধি-নিয়মের তোয়াক্কা করে না– তাই ঠাকুরের ভালোবাসা। সেই ভালবাসার করণ ও প্রকরণ মন। সেই মনের টানে ক্রমে নরেন্দ্র দক্ষিণেশ্বরমুখী। গান গাইছেন, ‘আমায় দে মা পাগল করে।/ আর কাজ নেই মা জ্ঞান বিচারে।।’ নরেন্দ্র মন না-হয় ঠাকুরের মনকে ধরতে পারছে, জ্ঞান বিচার না-করে বুঝতে পারছে সেই পাগলপারা ভালবাসার রূপ। কিন্তু সমাজ তো বিচার করতে বসবে। রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দের এই সম্পর্ককে নাম-রূপ দিতে চাইবে। বলবে এ কী? এ কি দুই সমলিঙ্গ মানুষের পারস্পরিক আকর্ষণের কাহিনি? লিঙ্গের প্রকরণে ইন্দ্রিয়ের তৃপ্তির সূত্রেই কি তা বিচার্য? কথাগুলি উঠেছে– বিতর্ক হয়েছে। সে বিতর্কের ভিতর না-গিয়ে ‘কথামৃত’ আর ‘লীলাপ্রসঙ্গ’ এই দু'টি বই থেকে অকপট কিছু উচ্চারণ উদ্ধার করা যাক।

শরীরের সীমার কথা জানতেন পরমহংস। শরীরের সীমার দু'টি দিক। একটি দিক সম্বন্ধে কলকাতা শহরের ভদ্রলোকরা অত্যন্ত বিরক্ত। নরেন্দ্রনাথ দত্তর ভাই মহেন্দ্রনাথ দত্তর সাক্ষ্য থেকে জানা যায় সেই সময় কলকাতা শহরে ধর্মের নামে যৌন-অজাচারের নানা চক্র বসত। সেই চক্রের সন্ধান পেলেই তাঁরা গিয়ে ভেঙে দিয়ে আসতেন। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী তাঁর রচনায় বৌদ্ধ সহজিয়াদের শারীরিক ব্যভিচার সম্বন্ধে তীব্র মত প্রকাশ করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথও শহর কলকাতায় এই যৌন অজাচারের ধর্মীয় রূপটি সম্পর্কে সচেতন। রামকৃষ্ণদেবের কাছে নানা সময় নানা ধর্ম-সম্প্রদায়ের সাধক আসতেন। তাঁদের অনেকের সম্বন্ধে ঠাকুর শ্রদ্ধাশীল, অনেকের ওপর বিরক্ত। বিশেষ করে প্রেম-ধর্মের অছিলায় দেহসুখ-সন্ধানীদের তিনি খুবই অপছন্দ করতেন। রামকৃষ্ণদেবের পায়ে এসে পড়লেন প্রেমী কীর্তনিয়া। গান গাইছে, ‘আমার এ প্রেম রাখব কোথা!’ ঠাকুর তাড়াতাড়ি একটি ভাঙা ধুনুচি নিয়ে এলেন। ধুনুচিটি কাছের খাঁ-পুকুরের ধারে গুলঞ্চগাছের তলায় ছাইগাদার পাশে পড়েছিল। ঠাকুর নাকি বলেছিলেন, ‘এই ভাঙা ধুনুচিতে রাখ; তোমার যেমন প্রেম, এ পাত্রটি তার উপযুক্ত।’ এ-সমস্ত সাক্ষ্য থেকে বোঝা যায় রামকৃষ্ণদেব ও বিবেকানন্দের সম্পর্ক যদি কেবল দুই সমলিঙ্গী পুরুষের ইন্দ্রিয়সুখ নিরসনের উপায় হতো, তাহলে শহর-কলকাতা নীরব থাকত না। এই সম্পর্কের মধ্যে যে ভালবাসার গভীর রূপ প্রকাশিত, সেদিনের কলকাতা তা বুঝতে পেরেছিল।

শরীরের কামনার অজাচার ছাড়াও, আরেকটি দিক আছে। শরীরের বৃত্তি ও প্রবৃত্তি যে অনেক সময় নাছোড় ঠাকুর তা জানতেন। বলেছেন, ‘একসময়ে মনে হয়েছিল যে কামটাকে জয় করেছি। তারপর পঞ্চবটীতে বসে আছি আর এমনই কামের তোড় এল যে আর সামলাতে পারিনি।’ শিষ্যদের বলছেন, ‘কি জানিস– (তোদের) এখন যৌবনের বন্যা এসেছে। তাই বাঁধ দিতে পাচ্ছিস না।... আর মনে একবার-আধবার কুভাব এসে পড়ে তো কেন এল বলে বসে বসে তাই ভাবতে থাকবি কেন? ওগুলো কখনও কখনও শরীরের ধর্মে আসে যায়...।’ বোঝা যায়, দেহ সম্বন্ধে হেতুহীন পাপবোধ ঠাকুরের নেই, ব্রাহ্ম ও খ্রিস্টানদের অনেকের মধ্যে দেহ নিয়ে যে শুচিবায়ুগ্রস্ততা ছিল তার থেকেও তিনি মুক্ত।

এখন তাঁর মন যে নরেনের দিকে যাচ্ছে আর নরেনও যে তাঁর প্রতি আগ্রহ বোধ করছেন ক্রমশ কী হবে তার পরিণতি? কী ভাবছিলেন ঠাকুর? অকপটে বলছেন, ‘নরেন্দ্র বেশি আসে না। সে ভাল। বেশি এলে আমি বিহ্বল হই।’ বিহ্বল হওয়া মানে প্রেম পরবশ হওয়া, প্রেমে আত্মহারা  হওয়া। এই আত্মহারাই কি তবে পরিণতি? ১৮৮৫, ২৪ অক্টোবর। কথামৃতর সাক্ষ্য থেকে জানা যাচ্ছে, ঠাকুর বলছেন, ‘ওর [নরেন্দ্রর] সব মন কুড়িয়ে আমাতেই আসবে– যিনি এর ভিতর আছেন, তাঁতে!’ তাহলে ঠাকুর চান না, তিনি নরেনের লক্ষ্য হন। নরেন সবটুকু মন ঠাকুরের ভেতরে যিনি আছেন, তাঁর দিকে যাক। কে তিনি? তিনি ‘মনের মানুষ’। সেই মনের মানুষের গান বাউল গাইছিলেন। সেই মনের মানুষের গান শুনে রবি ঠাকুরের মনে হয়েছিল, অন্ধকারে মাকে না-পাওয়া ছেলের কান্না লেগে আছে তাতে।

সেই কান্নাটাই তো ভালবাসা। সেই ভালবাসা কোনও ব্যক্তিতে আটকে যায় না- ব্যক্তিকে স্পর্শ করে তা চলে যায় আরও গভীরে। এ-মানুষে সে-মানুষ আছে। কিন্তু এ-মানুষটা সে-মানুষটা নয়। খোঁজ চলে– সেই চলাটাই ভালবাসার কান্না। সে কান্নার একটি অভিমুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন রামকৃষ্ণ, সেই কান্নার অভিমুখে এগিয়ে গেলেন বিবেকানন্দ। 

১৮৮৬। ৪ জানুয়ারি। কিছুদিন পরে মারা যাবেন ঠাকুর। নরেন্দ্র মণিকে বলছেন, ‘বুক আটুপাটু করতে লাগল!– অমন কান্না কখনও কাঁদি নাই। তারপর বইটই ফেলে দৌড়!– রাস্তা দিয়ে ছুট! জুতো-টুতো রাস্তায় কোথায় একদিকে পড়ে রইল! খড়ের গাদার কাছ দিয়ে যাচ্ছিলাম।... গায়েময়ে খড়, আমি দৌড়ুচ্চি,... কাশীপুরের রাস্তায়।’ 

যুক্তি পড়ে রইল, বই-পত্র-পরীক্ষা পড়ে রইল। কান্নাময় নরেন দৌড়ুচ্ছে কলকাতায়। এই কান্নার নাম ভালবাসা– তা ধরা দেয় না, ধরা দেওয়ার আভাস দেয় মাত্র। বুদ্ধিতে তার সীমা মেলে না, মনই যে তার করণ। সেই ভালবাসার করণ নিয়ে বিবেকানন্দ কী করলেন? তাঁর কান্নাকে ছড়িয়ে দিলেন মানুষের কাজে– যেটুকু পারেন, যেভাবে পারেন। সেই কান্নাই হয়ে উঠল তাঁর সেবাধর্ম। 

 

More Articles