বিহারের বিস্ময়! ধুলোয় ঢাকা আস্ত ‘পারফেক্ট ইংলিশ ভিলেজ’!
Anglo Indians of Jamalpur-Munger: বিহারের এত কাছাকাছি ধুলোয় ঢাকা ছিল একটা আস্ত ‘পারফেক্ট ইংলিশ ভিলেজ’?
“Crotons, palms, mangoes, wellingtonias, teak, and bamboos adorn it, and the poinsettia and bougainvillea, the railway creeper and the Bignonia venusta, make it gay with many colours.It is laid out with military precision, to each house its just share of gardens, its brick red path, its growth of trees and its neat little wicket gate… ”
ছোট-ছোট লাল ইটের রাস্তা। প্রত্যেক বাড়ির লাগোয়া একটা বাগান। ঝুপসি হয়ে আসা সবুজের মাঝখানে কাঠের গেট। ডাচ আতিথেয়তা বাদ দিলেও ‘পারফেক্ট ইংলিশ ভিলেজ’ এ ছাড়া আর কিছু হয় কি? তিনদিক দিয়ে আছে পাহাড়ের ছাউনি। আরেকদিকে স্থানীয়রা যাকে বলে ‘শেড’— রেলওয়েপাড়া, ওয়ার্কশপ, অফিস। কোম্পানির তরফ থেকে এখানে আছেন লর্ড ডাফেরিন বাবু, তাঁর দেহরক্ষী, কাউন্সিলের অন্যান্য সদস্যরা, স্যর ফ্রেদেরিক রবার্টস প্রমুখ।
রুডইয়ার্ড কিপলিং লিখছেন তাঁর জামালপুরের বর্ণনা। কিং’স রোড, প্রিন্স’স রোড, ক্যুইন’স রোড, ভিক্টোরিয়া রোড— জামালপুর রাজকীয়। আর রেলওয়েটুকু ছাড়িয়ে গেলেই অ্যালবার্ট রোড, চার্চ স্ট্রিট, স্টিম রোড। গাড়িঘোড়া এখানে কম চলে কারণ ভদ্রজনদের বাগানবাড়ি থেকে অফিস কাছে। শহরটা পরিষ্কার। নইলে সেন্ট মেরি’স চার্চ থেকে রেলওয়ে পর্যন্ত যেখানে প্রতিদিন হাজারে হাজারে টিকিট ছাপা হয় আর ফোনের ঘণ্টায়, ওয়ার্কশপে কাজের আওয়াজে শহরটা চনমনে হয়ে ওঠে, সেখানে রাস্তা এত পরিষ্কার? বাতাস এত সতেজ? এ শহরেরই ট্রাফিকের মধ্যে মিশে আছে হাজার নেটিভ আর শ’খানেক মতো ইউরেশিয়ান। অফিসে যেতে গেলে প্রতিদিনই যাদের পেরিয়ে যেতে হয় পশলা-পশলা সবুজ। কেউ কেউ বাচ্চা কাঁখে নিয়ে গুনগুন করে গান গায় বা মলিন বারান্দা থেকে ভেসে আসে পিয়ানোর ম্লান সুর। শহরটা কোম্পানিকে ঘিরেই তৈরি হলো। ‘কোম্পানি’ যদিও বরাবরই ছিল 'আউটসাইডার'-দের জন্য। তবু এসবের মাঝেই বেজে উঠত ‘বিগ স্টিম হুইস্যেল’। জামালপুর জেগে থাকত কর্মীদের টিফিন বাক্সের ঠোনাঠুনিতে। ১১টা থেকে ১২টা কোম্পানির টিফিন ব্রেক চলত। তারপর আবার কাজ। বিকেলটায় জামালপুর ঘুমতো। আর সন্ধে হলেই ছুটত টেনিস হাতে কোর্টে। গরমকালের বিকেল ছিল সাঁতার কাটার জন্য অথবা বইপত্রে ঠাসা লাইব্রেরিতে কাটানোর জন্য। মঙ্গল-শুক্রবার কোম্পানির প্যারেড হতো। তাদের ইউনিফর্ম ছিল ধূসর আর লাল রঙের। খেলাধুলোর জন্য আসত ‘সরকারি কিট’। রেলওয়েকে ঘিরে একটা-দুটো করে বাগানবাড়িতে সেজে উঠল জামালপুর পাড়া। আর তাকে ঘিরে তৈরি হলো দোকানবাজার। (‘অ্যামং দ্য রেলওয়ে টক’, চ্যাপ্টার ১, রুডইয়ার্ড কিপলিং)।
আরও পড়ুন- ব্রিটিশদের ‘বর্জ্য’! খড়গপুর রেল কলোনিতে মুছে গেছে অ্যাংলো জীবনের ঘ্রাণ
কিপলিং সাহেবের বর্ণনা থেকে আদর্শ ইংরেজি ভিলেজের ধারণা যেন জলছবির মতো পরিষ্কার হয়ে ওঠে। এবারে দেখা যাক জামালপুর শহরের আসল ইতিহাস।
মুঙ্গের জেলা থেকে ৯ কিমি দূরে জামালপুর। ইতিহাস বলছে, মহাভারতেও উল্লেখ আছে এই ‘মনঘ্যর’ বা মুঙ্গের জেলার। গঙ্গার দক্ষিণ প্রান্তে এই জেলা। আর্যদের জনবসতির বিস্তারের একেবারে মাঝখানের জায়গা। মহাভারতের ‘মদ-গিরি’ শহরের সঙ্গে মেলানো যায় এর অবস্থানকে, যা ছিল প্রাচীন তাম্রলিপ্তের রাজধানী। অঙ্গরাজ্য মুঙ্গের ও ভাগলপুর একসময় শাসন করতেন মহাভারতের কর্ণ। ষষ্ঠ খ্রিস্টাব্দে মগধের বিম্বিসার হত্যা করেন ব্রহ্মদত্তকে যিনি ছিলেন প্রাচীন অঙ্গরাজ্যের শেষ স্বাধীন অধিপতি। এরপর অঙ্গরাজ্য চলে যায় গুপ্ত শাসকদের হাতে। পরিব্রাজক হিউয়েন সাং-ও তাঁর লেখনীতে মুঙ্গের রাজ্যের বিবরণ দিয়েছেন। এ জায়গা ছিল পাথুরে জমিতে ভরা।
ব্লেয়ার উইলিয়মস ‘অন জামালপুর- অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান রেলওয়ে’ প্রবন্ধে লিখেছেন,
জামালপুরে ছিল ইস্ট ইন্ডিয়া রেলওয়ের সবচেয়ে বড় ওয়ার্কশপ। যেখানে প্রায় ১২০০০ কর্মী কাজ করতেন। তাঁদের মধ্যে অন্তত ১০০০ জন ছিলেন অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান। জামালপুর কলকাতা থেকে এক রাত্তিরের দূরত্ব আর সেখানকার অ্যাংলো-ব্রিটিশ সংস্কৃতি ছিল জনপ্রিয়। রেলওয়ে ইন্সটিটিউটটি ছিল বিশাল। এর ভেতরেই একটি থিয়েটার হল ছিল, ছিল প্রায় ৬ লেনের একটি স্যুইমিং পুল, চারটে টেনিস কোর্ট, দুটো বিলিয়ার্ড রুম আর একটা বোলিং লনও ছিল। বিখ্যাত ছিল সন্ধ্যাবেলার অ্যাংলো-যন্ত্রসঙ্গীত ও নাচের আবহ। শহরটা তৈরি রেলওয়েকে ঘিরেই। আসলে ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত ইউরেশিয়ানদের প্রতিরক্ষা করার জন্যই এই মডেল ভিলেজের নির্মাণ। ব্রিটিশদের পছন্দ ছিল প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ নিরিবিলি জায়গা। রেলওয়ে দিয়ে ভারতকে প্রথম মুড়তে শুরু করে কোম্পানিই। জামালপুরে ছিল রেলওয়ে ট্রেনিং সেন্টার এবং ওয়ার্কশপ। এই রেলওয়েকে ঘিরে আবার যথারীতি শহরে এল অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানরা। কর্মঠ, নেটিভ ইংলিশে বলিয়ে-কইয়ে।
সুষ্ঠু রেল ব্যবস্থা চালানোর জন্য কোম্পানি চার রকমের ট্রেনিং দিত। প্রথম ভাগে ছিল ট্রেড অ্যাপরেন্টিস— যারা ৩ বছরে বিভিন্ন বিষয়ে ট্রেনিংয়ের পর মেকানিস্ট, ফিটারিস্ট, বয়েল মেকার ইত্যাদি চাকরি পেত। আরেকটি ভাগে ছিল প্যাসেঞ্জার এবং মেল ট্রেন ড্রাইভার। ট্রেনিংয়ে ভালোরা পেত অ্যাসিস্ট্যান্ট মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়র বা ডিভিশনাল মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়রের চাকরি। শেষভাগে ছিল অ্যাপারেন্টিস মেকানিকরা, যারা একটি সরকারি পরীক্ষার মাধ্যমে চাকরি পেত। আর এই ট্রেনিংয়ের ওয়ার্কশপগুলিতে থাকত বিপুল সংখ্যক অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানরা। মিশিনারি স্কুলে পড়ানো বাদ দিয়ে অ্যাংলোদের প্রধান কাজ ছিল এই রেলওয়েতে। তাই যেখানে এতবড় রেলওয়ে ওয়ার্কশপ গড়ে উঠেছে সেখানে অ্যাংলোরা থাকবেই। আবার সমাজ ইতিহাসের অনেক গবেষকরাই মনে করেন মহানগর বাদ দিয়ে ভারতের নানা রেলওয়েভিত্তিক ছোট শহরগুলিতে সামাজিক প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছে অ্যাংলোরা। পাথুরে জমি, যার অনেকটাই অনাবাদি, গরমকালে মাটি তেতে ওঠে এমন পরিবেশে হঠাৎই কী করে গড়ে উঠল পারফেক্ট ইংলিশ ভিলেজ?
আরও পড়ুন- কয়লা শহর, রেল আর চার্চ! কেমন আছেন আসানসোলের আধা-ফিরিঙ্গিরা?
১৯৩৪-এর ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আগে বেশ জনপ্রিয় ছিল জামালপুরের জিমখানা বিল্ডিং। তরুণ অ্যাপারেন্টিসরা যেখানে দল বেঁধে থাকতেন মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়র হিসাবে গ্রাজুয়েট হওয়ার আগে। এখনকার জামালপুরের জামালপুরের মেঠো রাস্তা, বিল-নালা, কাঁচা-পাকা বাড়ি ছাড়িয়ে একবার ঢুকে পড়তে হবে ধুলোর চাদর মোড়া পুরনো রেলওয়ে কলোনিতে। ছোট-ছোট লাল ইটের তৈরি নির্জন সাহেবি বাংলো, চওড়া বারান্দা, মাথায় লতিয়ে ওঠা জংলি সবুজ। লালমাটি ধূ-ধূ করছে, কোথাও কেউ নেই।
বিকেলে রানি রং সন্ধ্যামণির আগুন। এদিকে মাঝে মাঝে ভেসে আসছে ভারী স্টিম হুইস্যলের আওয়াজ। দুপুরে অ্যাংলো রেল কর্মচারীদের টিফিন ব্রেকের কল্লোল ছাড়া আর অন্য কোনও আওয়াজ নেই। এ দেখেই দেশান্তরে থাকা কোন সাহেবের কী জানি কবে পড়ল ক্যান্টারবেরির গ্রামের কথা। ১৮৬২-তে এখানে তৈরি হয় ‘লোকোমোটিভ ওয়ার্কশপ’। তারপর প্রায় ১৫০ বছর ধরে টিকেছিল এই কলোনি। তথ্যসূত্র অনুসারে, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একেবারে প্রথম দিককার কলোনি এই জামালপুরে। জামালপুর ভিলেজকে এরপর ব্যবহার করা হয় বহু রেলওয়ে কলোনি তৈরির মডেল হিসাবে। জামালপুর ছাড়াও দানাপুর, ধানবাদ, মুঙ্গের, কুরজি এবং পটনা এলাকাতেও ছড়িয়ে ছিল প্রচুর অ্যাংলো ইন্ডিয়ান। এরা এই অঞ্চলগুলিতে থাকতে শুরু করে স্বাধীনতার আগে থেকেই। শহর কলকাতা থেকে দূরে নিরিবিলি গ্রাম্য পরিবেশে এরা মানিয়ে নিয়েছিল সহজেই। বরং এই ছোট শহরগুলিতেই এরা তৈরি অনেক বেশি করে তৈরি করতে পেরেছিল ‘কমিউনিটি লিভিং’। সাজিয়ে নিয়েছিল চার্চপাড়া। তাকে ঘিরে বেকারি। ভাষা অন্তরায় ছিল না। ইংরেজিতে লিখতে পড়তে জানলেও অ্যাংলোরা পারস্পরিক আদান-প্রদানের জন্য শিখে নিয়েছিল আঞ্চলিক ভাষাও। আর অ্যাংলোরা বরাবরই ভালো ছিল খেলাধুলোয়। রেলওয়ে অ্যাংলোরা ছিল ‘প্রাণস্ফূর্ত, ডিসিপ্লিনড আর কর্মঠ’। তাই অ্যাংলোদের কল্যাণেই জামালপুরে গড়ে উঠেছিল টেনিস ও রাগবি খেলার জায়গা। রবিন এন্ডুজ ও অঞ্জলি গেরা রায় তাঁদের ‘বিয়ন্ড দ্য মেট্রো’স অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানস ইন ইন্ডিয়া’স স্মলার টাউন্স অ্যান্ড সিটিস’ বইতে বারবার দেখিয়েছেন মফসসল শহরে এই সামাজিক প্রতিষ্ঠান নির্মাণে অ্যাংলো গোষ্ঠীর ভূমিকা।
জামালপুরের সকল বাসিন্দাদের মধ্যেই তখন জনপ্রিয় ছিল রেল কলোনির সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সেখান থেকেই অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান নাচ-গানের সঙ্গে পরিচয় হয় সাধারণ মানুষের। ব্রিটিশ ভারতবর্ষে ভাষা-জাতিগত সংকীর্ণ আত্মপরিচয়বোধ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠেনি। বিদেশি গান-খাদ্যরুচি ও সাহিত্যে নিতান্ত সাধারণবিত্তরও খানিক আগ্রহ থাকত। কোম্পানির পৃষ্ঠপোষকতায় তৈরি হওয়া বেশিরভাগ স্কুলগুলিতে বিদ্যাশিক্ষার মাধ্যম ছিল ইংরেজি। জামালপুরে গড়ে উঠেছিল অনেকগুলি চার্চও। এখানে রয়েছে সেন্ট মেরি’স চার্চ, সেন্ট পল’স চার্চ, সেন্ট জোসেফ ক্যাথলিক চার্চ, চার্চ অব নর্থ ইন্ডিয়া জামালপুর ইত্যাদি বহু পুরনো চার্চ। বিহারের একটি মফসসলে কীভাবে এল এতগুলি চার্চ?
সিপাহী বিদ্রোহের পর কিছু সময়ের জন্য খানিক শঙ্কিত হয়ে পড়েছিল কোম্পানির সাহেবরা। ‘রেলওয়েজ অব দ্য রাজ’ আর্কাইভ থেকে জানা যায় ১৮৬৩ সালে জামালপুর লোকোমোটিভ ওয়ার্কশপের সুপারিন্টেন্ডেট ছিলেন ডেভিড ক্যাম্পবেল সাহেব। তিনিই নিজের হাতে সাজাতে শুরু করেন এই জামালপুর কলোনি। নজর দেন রাস্তাঘাট তৈরির দিকেও। উদ্দেশ্য, কোম্পানির বেতনভোগী ও অনুগত মানুষের বসবাসের সুরক্ষা ও সুবিধা দেওয়া। তিনিই এখানে বসতি স্থাপন করান ক’ঘর অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানদের। গড়ে দেন ছাউনি। রুডইয়ার্ড কিপলিং ১৮৮২-তে তাঁর জামালপুর ভ্রমণের সময় লিখেছিলেন,
“When it was laid out, in or before the mutiny year, its designers allowed room for growth and made the houses of one general design - some of brick, some of stone, some three, four and six roomed, some single men's barracks and some two storeyed - all for the use of employees …Jamalpur is loyal."
আরও পড়ুন- ম্যাকল্যাস্কিগঞ্জ, অ্যাংলো স্মৃতিবেদনার এক হারিয়ে যাওয়া শহর
কোম্পানির ব্যারাকগুলি ছিল মূলত শহরের পশ্চিম প্রান্তে। ইঞ্জিনিয়র ও কর্মীদের থাকার জায়গা ঘিরে তৈরি হয়েছিল বিখ্যাত ‘রামপুর কলোনি’। সম্পূর্ণ জ্যামিতিক ছন্দে নকশা করা এ শহরের। সমস্ত রাস্তা এসে মিলত শহরের মাঝখানের একটি বিন্দুতে। ছিল সদর বাজার, জেনারেল মার্কেট, প্রাইভেট মার্কেট। শহরের ড্রেনেজ সিস্টেম ছিল প্ল্যানমাফিক আর শহরের দুইভাগকে জুড়ে ছিল সুদৃশ্য ‘বাড়ি পুল’। বিহারের ছোট্ট ব্রিটিশ গ্রামে, নিরিবিলিতে দিন কাটছিল ব্রিটিশ সাহেব ও অ্যাংলোদের। চারিদিকে ঘন সবুজ। আর আদিম সবুজের বুক চিরে চলত কোম্পানির লাল স্টিম ইঞ্জিন। জামালপুরে এখন বুড়ো ইঞ্জিনের গা জড়িয়ে উঠেছে গুল্মলতা। সন্ধ্যামণির ঝাড়। লাল মাটি ছেড়ে কবে চলে গেছে সাহেব-আধাফিরিঙ্গিরা। আর স্বাধীন দেশে আজ চারিদিকে থিকথিক করে উঠেছে সাংস্কৃতিক অসহিষ্ণুতা, ফান্ডামেন্টালিজম। গত চার-পাঁচ দশক ধরে জামালপুরে ভীষণভাবে কমে অ্যাংলোদের সংখ্যা।
বিহার! ভারতবর্ষের যে রাজ্যের কথা শুনলেই আপামর বাঙালি মনে প্রথমেই আসে অশিক্ষা, সামাজিক অপরাধ, গার্হস্থ্য হিংসা ও না মাজা-ঘষা গ্রাম্য জীবনের কথা, সেই বিহারের এত কাছাকাছি ধুলোয় ঢাকা ছিল একটা আস্ত ‘পারফেক্ট ইংলিশ ভিলেজ’?
নীতিন সিনহা তাঁর “এন্টারিং দ্য ব্ল্যাক হোল: বিটুইন মিনি ইংল্যান্ড অ্যান্ড স্মেল-লাইক রটেন পটাটো: দ্য রেলওয়ে ওয়ার্কশপ টাউন অব জামালপুর” প্রবন্ধে দেখিয়েছেন, জামালপুরে বাঙালি-বিহারি, অ্যাংলো ও ব্রিটিশদের মিলেমিশে থাকার কথা ও জামালপুর শহরের দ্রুত পরিবর্তন। জামালপুর থেকে অ্যাংলো জনজীবনের গন্ধ একেবারে মুছে যাওয়ার একটি প্রাথমিক কারণ জাতিহিংসা। মার্জিত-সাজানো ছন্দে সাজানো ব্রিটিশ টাউন ভেঙে পড়ে স্বাধীনতার পর থেকেই। জাতি-অহংবোধ এতটাই প্রবল হয়ে পড়ে যে সংস্কৃতি মেনে নেয় বিচ্ছিন্নতা।
মনে পড়ছিল কলকাতার অ্যান আন্টির আবগতাড়িত কথা,
“The Britishers were more disciplined. But now there is indiscipline everywhere. Which has ruined all the systems that used to foster cultural harmony. That’s why you have swept them away, Naah?”