কখনও গুজব, কখনও প্রবল ভিড়! ভারতে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর যে ইতিহাস স্তব্ধ করে দেয়
India's deadly Religious stampedes: সবচেয়ে মারাত্মক ঘটনাটি ঘটেছিল ২০০৫ সালে মহারাষ্ট্রের মান্ধারদেবী মন্দিরে। পদপিষ্ট হয়ে সেবার ৩৪০ জনেরও বেশি মানুষের প্রাণ যায়।
ধর্ম, ধর্মাচারণ ও ধর্মগুরুদের প্রতি আসক্তি দেশে নতুন নয়। নতুন নয় বিভিন্ন ধর্মী গুরুদের প্রতি প্রাণপাত করা ভক্তি। মঙ্গলবার হাথরাস জেলার একটি গ্রামে ধর্মীয় সৎসঙ্গে এক ধর্মগুরুকে দেখতে, তাঁর পা ছুঁতে সাধারণ মানুষের যে হুড়োহুড়ি, তার ফলস্বরূপ ১২১ জনের মৃত্যু ঘটল পদপিষ্ট হয়ে। আহতও শতাধিক। হাথরাসের ধর্মীয় সমাবেশে পদদলিত হয়ে মৃত্যুর মতো এই মর্মান্তিক ঘটনা কিন্তু কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। গত কয়েক বছর ভারতে অসংখ্য মৃত্যুর ঘটেছে পদপিষ্ট হয়ে এবং তা বিভিন্ন ধর্মীয় সমাবেশেই।
সবচেয়ে মারাত্মক ঘটনাটি ঘটেছিল ২০০৫ সালে মহারাষ্ট্রের মান্ধারদেবী মন্দিরে। পদপিষ্ট হয়ে সেবার ৩৪০ জনেরও বেশি মানুষের প্রাণ যায়।
২০০৮ সালে রাজস্থানের চামুণ্ডা দেবী মন্দিরেও পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটে। কমপক্ষে ২৫০ জন মারা যান ওই দুর্ঘটনায়।
২০২২ সালের ১ জানুয়ারি, জম্মু ও কাশ্মীরের বৈষ্ণো দেবী মন্দিরে ভক্তদের প্রবল ভিড়ের চাপে পদপিষ্ট হয়ে ১২ জনের প্রাণ যায়, আহত হন আরও ১৫ জন।
২০২৩ সালের ৩১ মার্চ। ইন্দোরের একটি মন্দিরে যজ্ঞ চলাকালীন একটি প্রাচীন কুয়োর উপরে নির্মিত স্ল্যাব ধসে পড়ে কমপক্ষে ৩৬ জনের মৃত্যু হয়।
আরও পড়ুন- তাঁকে দেখতে গিয়েই পদপিষ্ট হয়ে মৃত ১২১! কে এই হাথরাসের ভোলে বাবা?
২০১৫ সালের ১৪ জুলাই গোদাবরী নদীর তীরে একটি স্নানের ঘাটে পদপিষ্ট হয়ে ২৭ জন তীর্থযাত্রী মারা যান। ২০ জন ভক্ত আহত হন। অন্ধ্রপ্রদেশের রাজামুন্দ্রিতে 'পুষ্করম' উত্সবের উদ্বোধনী দিনে ভক্তদের বিশাল ভিড়ে এই পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনাটি ঘটে।
২০১৪ সালের ৩ অক্টোবর দশেরা উদযাপন শেষ হওয়ার ঠিক পরেই পটনায় গান্ধি ময়দানে পদপিষ্ট হয়ে ৩২ জন মারা যান এবং ২৬ জন আহত হন।
২০১৩ সালের ১৩ অক্টোবর মধ্যপ্রদেশের দাতিয়া জেলার রতনগড় মন্দিরে নবরাত্রি উত্সব চলাকালীন পদপিষ্ট হয়ে ১১৫ জন নিহত এবং ১০০ জনেরও বেশি আহত হন। ভক্তরা যে নদীর সেতুটি পার হচ্ছিলেন সেটি ভেঙে পড়ার গুজব রটে যায়। সেই কারণেই হুড়োহুড়িতে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটে।
২০১২ সালের ১৯ নভেম্বর পটনার গঙ্গা তীরে আদালত ঘাটে ছট পুজোর সময় একটি অস্থায়ী সেতু ভেঙে প্রায় ২০ জন মারা যান।
২০১১ সালের ৮ নভেম্বর হরিদ্বারের বিখ্যাত গঙ্গা নদীর তীরে হর-কি-পৌরি ঘাটে পদপিষ্ট হয়ে কমপক্ষে ২০ জন নিহত হন।
২০১১ সালের ১৪ জানুয়ারি কেরলের ইদুক্কি জেলার শবরীমালায় তীর্থযাত্রীদের একটি জিপ ধাক্কা মারে। এর ফলে হুড়োহুড়িতে পদদলিত হয়ে ১০৪ জন ভক্তের প্রাণ যায় এবং ৪০ জনেরও বেশি আহত হন।
২০১০ সালের ৪ মার্চ উত্তরপ্রদেশের প্রতাপগড় জেলার কৃপালু মহারাজের রাম জানকী মন্দিরে এক ধর্মগুরুর থেকে বিনামূল্যে পোশাক এবং খাবার সংগ্রহ করতে জড়ো হয়েছিনে ভক্তরা। সেখানে পদপিষ্ট হয়ে প্রায় ৬৩ জন নিহত হন।
আরও পড়ুন- হজ করতে গিয়ে মৃত্যুর মুখে ১,৩০০ পুণ্যার্থী, কেন মৃত্যুনগরী মক্কা?
২০০৮ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর রাজস্থানের যোধপুরে চামুণ্ডা দেবী মন্দিরে বোমা পাওয়ার গুজব রটে যায়। সেখানে পদদলিত হয়ে প্রায় ২৫০ জন ভক্ত মারা যান এবং ৬০ জনেরও বেশি আহত হন।
২০০৮ সালে হিমাচল প্রদেশের নয়না দেবী মন্দিরে একটি ধর্মীয় সমাবেশে পদদলিত হয়ে ১৬২ জনের প্রাণ যায়।
২০০৩ সালের ২৭ অগাস্ট মহারাষ্ট্রের নাসিক জেলায় কুম্ভ মেলায় পবিত্র স্নানের সময় পদদলিত হয়ে ৩৯ জন নিহত এবং প্রায় ১৪০ জন আহত হন।
ধর্মীয় অনুষ্ঠানে, কোনও ধর্মগুরুর অনুষ্ঠানে জনসমাগম নিয়ন্ত্রণ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বারেবারে দুর্ঘটনা ঘটেছে। কখনও গুজব, কখনও অত্যধিক ভিড়ের কারণে পরিস্থিতি বিশৃঙ্খল হয়ে আম জনতার প্রাণ গেছে। এই ধরনের অনুষ্ঠানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরালো করতেও বাধা আসে ধর্মীয় ভাবাবেগের কথা ভেবে। ধর্মের নামে অনিয়ন্ত্রিত এই হুড়োহুড়ি, পদপিষ্ট হয়ে মর্মান্তিক মৃত্যু থেকে যে আমরা কোনও শিক্ষাই নিই না, কোনও পদক্ষেপই করি না তা আবারও স্পষ্ট করে দিল হাথরাসের ঘটনা।