'জটায়ুর চরিত্রে আমাকে মানাবে, কখনও ভাবিনি': অনির্বাণ চক্রবর্তী

'দার্জিলিং জমজমাট'-এ জটায়ুর গল্প নিয়ে সিনেমা হওয়া দিয়েই গল্পের শুরু, তাছাড়াও ঝাউবনে লাশ আবিষ্কার করে জটায়ু আর তোপসে মিলেই, যাতে রহস্যের মোড় ঘুরে যায়। সৃজিত সেই স্কোপও আমাকে দিয়েছে চিত্রনাট্যে। ফলে আমি ভীষণভাবে উপভোগ করেছ...

 

১৭ জুন 'হইচই' ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পেয়েছে 'ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি' ওয়েব সিরিজের প্রথম সিজন 'দার্জিলিং জমজমাট'‌। নেটিজেন‍রা এখনও মজে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় এই সিরিজ নিয়ে চর্চায়। এর ফাঁকেই ইনস্ক্রিপ্ট-এর সঙ্গে একান্ত কথোপকথনে 'জটায়ু' অনির্বাণ চক্রবর্তী। জটায়ু চরিত্র নিয়ে, তাঁর জটায়ু হয়ে ওঠা নিয়ে নানা কথা ভাগ করে নিলেন। এরপর ফেলুদার অ্যাডভেঞ্চার কি হংক‌ংয়ে? 'টিনটোরেটোর যীশু' গল্প নিয়ে? ভাঙলেন না অনির্বাণ, তবে সুখবর দিলেন দর্শকদের।

অনেকেই মনে করেন, জটায়ু হিসেবে আপনি পিকচার পারফেক্ট, আপনি নিজে কখনও ভেবেছিলেন জটায়ু হবেন?

অনির্বাণ চক্রবর্তী: না, সত্যি বলতে কি, আমি কখনও ভাবিনি। আমি জটায়ু করব, বা জটায়ু হিসেবে আমাকে মানাবে, এটা আমার কখনও মনে হয়নি। আসলে ২০১৮ সালে যখন 'একেনবাবু' হলো, তখন থেকেই শুরু হলো আমার এই জার্নিটা। গল্পে একেন্দ্র সেনের যে গেট আপ, সেটা একদম অন্যরকম। কিন্তু একেনবাবুর যে লুকটা শেষমেশ ঠিক হলো, তার পোশাক-আষাক, চেহারা, ইত্যাদির সঙ্গে জটায়ুর অনেকটা মিল। তখন অনেকেই বলতে শুরু করেছিল, এই তো একজন জটায়ু পাওয়া গেল, জটায়ু নিয়ে আমাদের দুশ্চিন্তা দূর হলো। খবরের কাগজেও তেমন লেখালিখি শুরু হলো। চ্যানেলগুলোতেও বলা হলো এই কথা। তখন আমার মনে হয়েছিল, এত মানুষ যখন বলছে, তখন তার মধ্যে নিশ্চয়ই সত্যি আছে কিছু। এরপর সৃজিত (মুখোপাধ্যায়) যখন ফেলুদা নিয়ে ওয়েব সিরিজ করবে ঠিক করল, তখন ও আমাকে জটায়ু হিসেবে চাইল। এর আগে সিনেমা হয়েছে, ছোটপর্দায় ছবি, সিরিজ হয়েছে, কিন্তু ওয়েব সিরিজ প্রথম, ওয়েব আগে ছিলও না যেহেতু। কাজেই বিষয়টা কিছুটা নতুনও হলো। কিন্তু এর আগে আমি কোনওদিন ভাবিনি আমি জটায়ু করব।

আরও পড়ুন: ‘যে তোমার গায়ে হাত তোলেনি কক্ষনও, সে এসেছে’, ফিসফিস করে বললেন মানিককাকা

জটায়ু যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ একটা চরিত্র, বাংলা সাহিত্যে বেশ কিছুটা অভিনবও বটে। অভিনয় করতে গিয়ে আপনি জটায়ুকে কীভাবে আবিষ্কার করছেন?

অনির্বাণ চক্রবর্তী: জটায়ু সম্পর্কে ছোটবেলা থেকেই নিজের মতো করে একটা ধারণা আমাদের আছে। আমরা গল্পগুলো পড়েছি, ছবিগুলো দেখেছি। জটায়ু বা ফেলুদাকে বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখেন। জটায়ুকে কেউ কমিক রিলিফ মনে করেন, কেউ অন্যভাবে দেখেন। জটায়ুকে গোয়েন্দাগল্পে কমিক রিলিফ বলে কখনওই মনে হয়নি আমার। আমার মনে হয়, কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ফেলুদার আছে, যা জটায়ুর নেই, আবার কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য জটায়ুর আছে, যা ফেলুদার নেই। কাজেই এরা পরস্পরের পরিপূরক। জটায়ু সহজ-সরল, বন্ধুবৎসল, এবং একইসঙ্গে ইন্টেলিজেন্ট লোক। তার যথেষ্ট বুদ্ধি আছে বলেই সে কখনও কখনও ব্যাকসিট নেয় জেনেবুঝেই। জটায়ু ফেলুদার গুণ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল বলেই, সে ফেলুদার অনুসারী হয় কখনও। আমি জটায়ুকে এভাবেই দেখি। 'সোনার কেল্লা'-র আগের গল্পগুলোতে তো জটায়ু ছিল না, তারপর থেকে জটায়ু রয়ে গেল। এবং তার ভূমিকাও বেশ জরুরি। এর আগে আমি যে দুটো সিজন করেছি, একটা 'ছিন্নমস্তার অভিশাপ' নিয়ে, আরেকটা 'যত কাণ্ড কাঠমান্ডুতে' নিয়ে, সেটা অবশ্য দেখতে পায়নি মানুষ, যাই হোক, দুটো ক্ষেত্রেই রহস্য সমাধানে জটায়ুর জরুরি ভূমিকা আছে। 'দার্জিলিং জমজমাট'-এ জটায়ুর গল্প নিয়ে সিনেমা হওয়া দিয়েই গল্পের শুরু, তাছাড়াও ঝাউবনে লাশ আবিষ্কার করে জটায়ু আর তোপসে মিলেই, যাতে রহস্যের মোড় ঘুরে যায়। সৃজিত সেই স্কোপও আমাকে দিয়েছে চিত্রনাট্যে। ফলে আমি ভীষণভাবে উপভোগ করেছি।

Chinnamastar Abhishap

'ছিন্নমস্তার অভিশাপ' ওয়েব সিরিজের একটি দৃশ্যে জটায়ুর ভূমিকায়, সঙ্গে টোটা রায়চৌধুরী

এর আগে ফেলুদা নিয়ে পিরিয়ড পিস হয়নি। 'ছিন্নমস্তার অভিশাপ' ও 'দার্জিলিং জমজমাট' দুটোই পিরিয়ড পিস। এক্ষেত্রে কি কোনও বাড়তি চাপ ছিল?

অনির্বাণ চক্রবর্তী: পিরিয়ড পিস করতে গিয়ে জটায়ু চরিত্রটা তো বদলায়নি। সন্তোষ দত্ত এখন অভিনয় করলে হয়তো পোশাকটা অন্যরকম হতো। রবি ঘোষ থেকে বিভু ভট্টাচার্য, যাঁরাই করেছেন জটায়ু, সময়ের সঙ্গে তাঁদের পোশাকে বড়জোর টুকটাক পরিবর্তন আসতে পারে, চরিত্রটা তো একই থেকে গিয়েছে। 'যত কাণ্ড কাঠমান্ডুতে' যখন সৃজিত করেছিল, তখন সেটা এই সময়ের প্রেক্ষিতে করা হয়েছিল। তার একটা প্র্যাকটিকাল কারণও ছিল, যখন শুটিং করতে যাই আমরা, তার আগে কাঠমান্ডুতে একটা ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়েছিল। ফলে, ভূমিকম্পর আগের কাঠমান্ডু আমাদের পক্ষে দেখানো সম্ভব হয়নি। সেইজন্য সময়টা ওভাবেই ঠিক করা হয়েছিল। 'দার্জিলিং জমজমাট'-এর ক্ষেত্রে সৃজিত চেয়েইছিল আটের দশকের সময়টাকে ধরতে। সেক্ষেত্রে অভিনয় করতে গিয়ে কোনও সমস্যা আমাদের হয়নি, বেশি সমস্যাটা হয়েছে প্রোডাকশন ডিজাইনে। শুট করতে গিয়ে এইট্টিজের দার্জিলিং তৈরি করা, শুটের পরে কম্পিউটার গ্রাফিক্সের সাহায্য নিতে হয়েছে, কারণ দার্জিলিং এখন আমূল বদলে গেছে। অভিনেতারা সেই সমস্যা ফেস করিনি, কারণ চরিত্রদের মননটা একইরকম রয়ে গেছে।

Darjeeling Jomjomat

'দার্জিলিং জমজমাট'-এর একটি দৃশ্যে টোটা রায়চৌধুরী ও কল্পন মিত্রর সঙ্গে

সিনেমা, ছোটপর্দা মিলিয়ে আপনার পছন্দের জটায়ু কে?

অনির্বাণ চক্রবর্তী: সন্তোষ দত্ত, এই নিয়ে কোনও দ্বিধাই নেই।

সন্তোষ দত্তর প্রভাব আপনার জটায়ুর চরিত্রায়ণে পড়েছে কখনও?

অনির্বাণ চক্রবর্তী: আমি কোনওভাবে ওঁকে অনুকরণ করার চেষ্টা করিনি, করলে খারাপ হতো, কারণ ওটা একটা লিজেন্ড, সেটাকে স্পর্শ করতে যাওয়াটা বোকামি। সৃজিতও তা চায়নি। ফলত, আমি যেভাবে চরিত্রটাকে বুঝেছি, সেভাবে অভিনয় করেছি। তবে সন্তোষ দত্তর ছাপটা কোথাও আমাদের মধ্যে এতটাই গাঢ়, যে অবচেতনে হয়তো সন্তোষ দত্ত চলে আসেনই অভিনয়ের সময়। কিন্তু শেষত আমি নিজের মতো করেই করেছি অভিনয়।

Santosh Dutta

'সোনার কেল্লা'-র আইকনিক দৃশ্যে সন্তোষ দত্ত ও সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায়

'যত কাণ্ড কাঠমান্ডুতে' তো এখনও দেখা গেল না, কিন্তু এরপর ফেলুদা আবার কবে ফিরছে, এবং কোন গল্প নিয়ে?

অনির্বাণ চক্রবর্তী: এটুকু বলতে পারি, এই টিম নিয়েই আমরা ফিরব আবার। 'ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি'-র পরবর্তী সিজন অবশ্যই আসবে। কোন গল্প নিয়ে, কবে, সেগুলো এখনই বলা যাবে না (হাসি)।

 

More Articles