একই গুরুর শিষ্য! নীতীশ নিয়ে যা বললেন যোগেন্দ্র যাদব
Yogendra Yadav Bharat Jodo Nyay Yatra : "নীতীশ কুমারকে একটাই প্রশ্ন। এই খেলা আর কদ্দিন? এই আসনে তো কম দিন বসেননি। এবার আসন নিয়ে কি কেউ উপরে যায়?” প্রশ্ন যোগেন্দ্রর
তিনি বলেছিলেন, কংগ্রেসের ভারত জোড়ো যাত্রা আসলে দক্ষিণায়ন যাত্রা। দক্ষিণ থেকে উত্তরে ভারতকে ভালোবাসায় বাঁধার এই যাত্রা। ভারত জোড়ো যাত্রার দ্বিতীয় ধাপ, ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রাতে যোগ দিয়ে উত্তরবঙ্গকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া পক্ষেই সওয়াল করলেন রাজনৈতিক সমাজকর্মী যোগেন্দ্র যাদব। ইনস্ক্রিপ্টের সঙ্গে কথাবার্তায় স্বরাজ অভিযানের প্রতিষ্ঠাতা যোগেন্দ্র বলছেন পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে উত্তরবঙ্গ এক বিশেষ এলাকা। এই এলাকার সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্ক প্রায় বছর পঁচিশের। বহুবারই ফলাকাটা, ধূপগুড়ি, জলপাইগুড়ি এসেছেন তিনি। তখন তাঁর সঙ্গী ছিলেন যুগল কিশোর রায়বীর। তিনি ছিলেন রাজবংশী, দলিত সমাজের মানুষ। তাঁর নেতৃত্বে বহু রাজনৈতিক শিক্ষা পেয়েছেন যোগেন্দ্র। এতকাল পরে নিজের শুরু সময়ের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে এই ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা।
যোগেন্দ্র বলছেন, এই দেশে যদি প্রকৃত ন্যায়ের প্রয়োজন থাকে কোনও অঞ্চলের, তাহলে তা উত্তরবঙ্গ। উত্তরবঙ্গের রাজনৈতিক ন্যায় প্রয়োজন, আর্থিক ন্যায়, সামাজিক ন্যায় প্রয়োজন। যোগেন্দ্রর কথায়, "এই অঞ্চলটি যদি পুরো দেশে ২৪ ঘণ্টাও গুরুত্ব পায় তাহলেই আমার এখন মনে হয়, অনেক পাওয়া! দার্জিলিংয়ে ভোট কী হবে, নীতীশ কুমার কেন পালটি খেলেন, কার জোট, কী আসন ভাগাভাগি এসবের থেকে অনেক বড় বিষয় হচ্ছে, উত্তরবঙ্গের সমস্যা। আমাদের সেইদিকে নজর দিতে হবে।"
আরও পড়ুন- ফালাকাটায় রাহুল গান্ধি? না পেলি আমাকে আর তোকেও আমি পেলাম না
যোগেন্দ্রর কথায়, সমাজকর্মীরা সবসময়ই চান মূল সমস্যা, বাস্তবের সমস্যাগুলিকে তুলে ধরতে। তারা চাইছেন এই অঞ্চলের, ভারতের, ন্যায়ের মূল সমস্যার জায়গাগুলি তুলে ধরতে। উত্তরবঙ্গ হচ্ছে বাংলার এমন এক জায়গা যা অর্থনৈতিক বঞ্চনায় ভুগেছে। এই অংশের রাজবংশী এবং অন্যান্য আদিবাসদের সঙ্গে সামাজিক চূড়ান্ত বৈষম্য হয়েছে। এই অঞ্চলে রাজনৈতিক বঞ্চনাও হয়েছে। ফলে যে ন্যায় যাত্রা রাহুলকে সামনে রেখে এগিয়ে চলেছে, সেই যাত্রা উত্তরবঙ্গের এই অংশকে বেছে নিয়েছে কারণ 'ন্যায়' শব্দটিই এখানে প্রহসন হয়ে উঠছে।
কিন্তু কংগ্রেস যেখানে একদিকে ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা করছে, সেখানে ইন্ডিয়া জোটসঙ্গী নীতীশ কুমার ফেল দল বদলে ফেলে ইস্তফা দিয়ে দিয়েছেন। বিরোধীদের মধ্যে এই মতভেদ, এই আলগা বিষয়টিই কি বিজেপিকে আরও শক্তিশালী করছে না? যোগেন্দ্র ইনস্ক্রিপ্টের এই প্রশ্নের উত্তরে বলেন, “নীতীশ কুমার যা করলেন তাতে আমার ব্যক্তিগতভাবে একটা জায়গাতেই খারাপ লাগছে। নীতীশ কুমার আর আমি গুরুভাই। কিষণ পট্টনায়ক আমার গুরু, তিনিই নীতীশেরও রাজনৈতিক গুরু। আমরা দুজনেই তাঁর নেতৃত্বে রাজনীতির পাঠ শুরু করি। কিষণ পট্টনায়কের শিষ্য হিসেবে, গুরুভাই হিসেবে আমার লজ্জা হচ্ছে। নিজের রাজনৈতিক জীবনের একেবারে শেষলগ্নে এসে এমন জঘন্য কাজ করলেন তিনি! আমারই লজ্জা লাগছে ভাবতে। নীতীশ কুমারকে একটাই প্রশ্ন। এই খেলা আর কদ্দিন? এই আসনে তো কম দিন বসেননি। এবার আসন নিয়ে কি কেউ উপরে যায়?”
যোগেন্দ্র বলছেন, নিজের ও দলের নাম কালিমালিপ্ত করে আসলে নীতীশ নিজেই নিজেকে ছোট করেছেন। নীতিশের এই সিন্ধান্ত কি ইন্ডিয়া জোটের কাছে বড় ধাক্কা নয়? যোগেন্দ্র বিশ্বাস, ইন্ডিয়া জোটকে নীতীশ বিন্দুমাত্র সমস্যায় ফেলতে পারেননি। কারণ বহু সময় ধরে অনেকেই জানতেন এমনটা হতে চলেছে। "এই দেশ এখন যে অবস্থায় দাঁড়িয়ে তাতে আমার মনে হয় ভালোই হয়েছে। মানুষ জেনে যাক কে কে আসলে সাম্প্রদায়িক শক্তির পাশে রয়েছে আর কারা লড়াই করছে সত্যের। যারা এই সাম্প্রদায়িক শক্তিকেই ভেতরে ভেতরে পুষে রাখে তারা সবাই বাদ চলে যাক, আমি তো চাই এরা সবাই চলে যাক। তাহলে দেশ জানবে কারা খাঁটি"।
আরও পড়ুন- আবার প্রতারণা নীতীশের! যেভাবে এগোয় পল্টুরামের পাল্টির কিসসা
তবু, বিজেপির মতো সংগঠিত শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করা কি সহজ? বিজেপির বিরুদ্ধে কিছু বললেই ইডি-সিবিআইয়ের মতো কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তাহলে উপায় কী? যোগেন্দ্র ইনস্ক্রিপ্টকে বলেন, “ইডি এখন বিজেপির নির্বাচনী বিভাগ। যখন এসব ঘটনা কোনও গণতন্ত্রে ঘটে তখন শেষ জবাব দেয় জনতাই। মানুষই এই সমস্ত অনাচারের যোগ্য উত্তর দেবে। তাই আমাদের মানুষদের সচেতন করতে হবে। সত্যকে মানুষের কাছে নিয়ে যেতে হবে, মানুষকে সত্যের কাছে নিয়ে যেতে হবে। এইটাই এই মুহূর্তে বিরোধীদের একমাত্র স্ট্র্যাটেজি।"
যোগেন্দ্র আরও বলেন, "প্রধানমন্ত্রী লাক্ষাদ্বীপ ঘোরেন, মণিপুর যান না। ইতিহাস যদি দেখি, বরাবরই কার কী অবস্থান তা শেষমেশ পরিষ্কার হয়েই যায়। আজ দেশ বুঝে গেছে আসলে দেশভক্ত কারা, আসলে কারা নয়। কারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে আর কারা একনায়কতন্ত্রে।" ন্যায় যাত্রা আসলে সত্যের যাত্রা। মিথ্যা আর ঘৃণার লড়াইয়ে কে সত্য অনুসন্ধানের সাহস রাখে, আর কারা এই অন্ধকারে নিজের আখের গোছাচ্ছে তা জনগণের কাছে স্পষ্ট হয়ে যাক, চাইছেন যোগেন্দ্র!