'মনের মতো চরিত্র পেলে তবেই সিরিয়ালে ফিরব': সুদীপ্তা চক্রবর্তী
Sudipta Chakrabarty Interview: ইনস্ক্রিপ্ট-এর সঙ্গে একান্ত কথোপকথনে সুদীপ্তা চক্রবর্তী।
'কালার্স বাংলা'-য় 'রান্নাঘরের গপ্পো' নিয়ে টেলিভিশনে ফিরলেন সুদীপ্তা চক্রবর্তী। ফেসবুকের ট্রোলিং থেকে সিরিয়ালে অভিনয়, বাংলা সিনেমা থেকে মঞ্চে ফেরা, সবকিছু নিয়ে ইনস্ক্রিপ্ট-এর সঙ্গে অকপট অভিনেত্রী।
শুরুটা করি টাটকা বিতর্ক দিয়ে, রান্নার শো-এর সঞ্চালনা প্রসঙ্গে ফেসবুকে একজনের আলটপকা মন্তব্যর যোগ্য জবাব দিলেন আপনি। রান্নার শো-র জনপ্রিয়তা তুঙ্গে, তাও একাংশের মধ্যে এইরকম মানসিকতা কাজ করে কেন বলে মনে হয়?
সুদীপ্তা চক্রবর্তী: এই মানসিকতা রান্নাবান্নার শো নিয়ে নয়, রান্নাবান্না নিয়ে। ওটা একটা আব্বুলিশ কাজ, তথাকথিত কাজের লোকরা করে, খুব নিম্নমানের কাজ যেন। মিল্ক রাইস খেলতাম ছোটবেলায়, অনেকের ধারণা, রান্নাবান্নাও তেমনই একটা দুধেভাতে খেলা। আসলে মূর্খরা তো থাকেই, তারা মতামতও প্রকাশ করে মাঝেমধ্যে।
সদ্য 'ইন্টারন্যাশনাল শেফ'স ডে' গেল। আপনার মন্তব্যের প্রেক্ষিতেই মনে হয়, পুরুষ শেফদের সংখ্যাও আস্তে আস্তে বাড়ছে। ক্লাউড কিচেনের সংখ্যা বাড়ছে। রান্না অনেককে ভাষা দিচ্ছে বলে মনে হয়?
সুদীপ্তা চক্রবর্তী: রান্নাবান্না এত উদ্যোগ নিয়ে আগেও করেছে মানুষ, বিষয়টা নতুন হচ্ছে না। যেটা নতুন, তা হলো, রান্নাবান্না যে আব্বুলিশ নয়, ফেলনা নয়, এটা ক্রমে বুঝছে লোকে। এটাই পার্থক্য। আমাদের প্রত্যেকের বাড়িতেই রান্না হয়, আমরা খেয়ে উদ্ধার করেছি চিরকালই। কখনও ভেবেই দেখিনি, সেই মানুষটার কথা, যে দিনের পর দিন, সন্ধের পর সন্ধে রান্নাঘরেই কাটিয়ে দিল! দু'ঘণ্টা ধরে যে শ্রমটা দিল, দু'মিনিটে তা সাবাড় করে রক্ষে করলাম। এই কৃতজ্ঞতাটুকুও আমাদের কাজ করে না, যে রান্নাটা কেমন হলো বলি। যেন এটা তো মায়ের বা কাকিমার করারই কথা! ওই 'করারই কথা' বলে যা ধরে নিয়েছিলাম আমরা, তা এখন মানুষ সগর্বে জাহির করছে। কম্পিউটারের কিবোর্ড পেষাও যেমন কাজ, রান্নাও কাজ, কাজেই সেটাকে শ্রদ্ধা করতে হবে। এই দাবিটা করার হক জন্মাচ্ছে। মহিলারা প্যাশনেট রান্নাবান্না করছেন, শেফদের অনেক মানুষ চিনছে, পরিস্থিতি কাজেই পাল্টাচ্ছে।
আরও পড়ুন: ‘মৃণাল সেনের চোখে দেখেছি আমার শহর’: কথাবার্তায় অঞ্জন দত্ত
ইউটিউব বা সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন গুচ্ছ গুচ্ছ রান্নার শো, ভ্লগ। টেলিভিশনের রান্নাবান্নার শো কোনও চ্যালেঞ্জ ফেস করছে বলে মনে হয়?
সুদীপ্তা চক্রবর্তী: আমি তো বহু যুগ পর টেলিভিশনে ফিরলাম, কাজেই আমি সঠিকভাবে বলতে পারব না এটা। দীর্ঘদিন এই মাধ্যমে ছিলাম না, কাজেই টিভিতে কোন শো চলে, কোনটা চলে না, কোন চ্যানেলে কোন রান্নার শো হয়- এসব আমি কিছুই জানি না। প্রযোজক বলেছিলেন যখন, এককথায় রাজি হয়ে গেছি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, আরও ভাবনাচিন্তা করে হ্যাঁ বলা উচিত ছিল তো! আমি একটা রান্নার শো করছি, এতে এত মানুষের এত আগ্রহ, এত প্রশ্ন, এত বিতর্ক, এত ইন্টারভিউ- এতকিছু যে হতে পারে, আমার ধারণার বাইরে ছিল সেটা। এখন বেশ ভয় পেয়ে যাচ্ছি এত কাণ্ড দেখে!
'খাসখবর', 'শ্রীমতী' থেকে 'ধন্যি মেয়ে', আপনি নন-ফিকশনে বারবার জনপ্রিয়তা পেয়েছেন, নন ফিকশন আপনার কি বেশি পছন্দ? টেলিভিশনে ফেরার জন্য তাই এটাই বেছে নিলেন?
সুদীপ্তা চক্রবর্তী: এত বড় স্টার আমি নই, যে প্রচুর অফারের মধ্য থেকে বেছে নিতে হবে! (হাসতে হাসতে) তবে হ্যাঁ, ফিকশনের প্রস্তাবও প্রায়শই পাই আমি। কিন্তু হয় চরিত্র পছন্দ হয় না, নয় সময় হয়ে ওঠে না, বা সাম্মানিকের অঙ্কটা পছন্দ হয় না- কিছু না কিছু কারণে হয়ে ওঠে না কাজ করা। তার মধ্যে এই অফারটা এল, হ্যাঁ বলে দিলাম। এতটাই সহজ ব্যাপারটা, যতটা নাটকীয় মনে হচ্ছে, আদৌ তা নয়। মানুষ কেন এত বাড়াবাড়ি করছে এটা নিয়ে।
'নানা রঙের দিনগুলি' থেকে 'খেলা', আপনার সিরিয়ালের চরিত্রও বেশ জনপ্রিয়। এখন কি আবার সিরিয়ালে সেরকম চরিত্র পেলে অভিনয় করতে চান?
সুদীপ্তা চক্রবর্তী: 'খেলা' ২০০৬ সালের সিরিয়াল! তারপর ষোলোটা বছর পেরিয়ে গেছে। এখন নিশ্চয়ই আমাকে তখনকার মতো দেখতেও নেই। কাজেই ওরকম চরিত্র পাওয়ার আশা করে আর লাভ নেই।
তাও যদি পছন্দসই চরিত্র পান, করবেন?
সুদীপ্তা চক্রবর্তী: কেন করব না? একটি শো চ্যানেল থেকে লক করে দিয়েছিল গত বছর, সব কথা পাকা! তারপর সেটা হলো না কেন জানি না। কিন্তু লিডিং চ্যানেলগুলোর থেকে প্রায় প্রতি মাসে একটা না একটা চরিত্রের প্রস্তাব আসে। সকলেই চায় আমি টেলিভিশনে ফিরি, আমিও চাই। কিন্তু এতদিন বাদে ফিরে ওই থোড় বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোড় চরিত্র করার মধ্যে কোনও বাহাদুরি নেই। আমি যথেষ্ট কিক পাব না, কিক পাওয়ার মতো চরিত্র হলেই করব, নচেৎ নয়। যথাযথ, মনের মতো চরিত্র পেলেই সিরিয়ালে ফিরব।
'বাড়িওয়ালি'-র স্বীকৃতি আজও উজ্জ্বল। বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত থেকে ঋতুপর্ণ ঘোষ-এতজনের সঙ্গে কাজ করেছেন, বাংলা সিনেমা আপনাকে তেমনভাবে ব্যবহার করতে পারল না বলে মনে হয়?
সুদীপ্তা চক্রবর্তী: কী জানি! এমনটা বললে একটু বেশি বেশি শোনাবে। নিজেকে অতটাও ওভাররেট আমি করি না। কিন্তু যেটা দুঃখ দেয়, তা হলো, যে চরিত্রগুলো পাই, তার লেংথ। আমি সব ধরনের চরিত্র করতে আগ্রহী। কিন্তু আমাদের এখানে এখনও গায়ের রং, কোমরের মাপ, চোখ কেমন- ইত্যাদি দেখে প্রধান চরিত্রের জন্য অভিনেতা নির্বাচন হয়। আমার নিশ্চয়ই কোনও গণ্ডগোল আছে, তাই আমার কথা বড় চরিত্রে ভাবা হয় না। আমি হোপলেস অভিনেতা নই, আমাকে কেউ নিল না, আমি যা ডিজার্ভ করি, তা পেলাম না, আমাকে কেউ ব্যবহার করল না- এই 'না, না' বিষয়টা আমার মোটেই পছন্দ নয়। এসব ভাবি না কখনও। কাজেই আমি খুব তরতাজা থাকি, আমি বুড়িয়ে যাইনি কখনও। আমি এখনও সামনের দিকে চেয়ে। নিশ্চয়ই তেমন চরিত্র পাব কখনও।
'বিকেলে ভোরের সর্ষেফুল' বা 'সওদাগরের নৌকা'-র পর আবার মঞ্চে দেখা যাবে আপনাকে?
সুদীপ্তা চক্রবর্তী: কথা চলছে নতুন নাটক নিয়ে, ফেব্রুয়ারি-মার্চ নাগাদ মঞ্চস্থ হওয়ার কথা। প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে কাজ।