বিরাট কারচুপি না হলে ফের পরীক্ষা নয়! নিট-বিতর্কে যা জানাল সুপ্রিম কোর্ট
NEET UG: প্রশ্নফাঁসজনীত অনিয়মের জেরে নতুন করে পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে চল্লিশেরও বেশি আবেদন জমা পড়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। সেই মামলার বিচারভার যায় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চের কাছে।
ডাক্তারির প্রবেশিকা পরীক্ষা নিটে একাধিক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। সেই কাণ্ড নিয়ে তোলপাড় পড়ে গিয়েছিল দেশ জুড়ে। সেই মামলার জল গড়ায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। যার শুনানি ছিল বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে। নিটে অনিয়ম নিয়ে ক্ষোভ জানিয়ে নতুন করে পরীক্ষা নেওয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন পড়ুয়ারা। সুপ্রিম কোর্টেও সেই মর্মে আবেদন জানানো হয়। তবে সেই আবেদনে সম্মতি জানায়নি সর্বোচ্চ আদালত। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় জানিয়ে দিলেন, নিট পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের কারণে ব্যাপক পরিসরে প্রভাবের পোক্ত প্রমাণ মিললে তবেই পুনরায় পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে।
নিট পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ ওঠার পর তোলপার পড়ে গিয়েছিল দেশ জুড়ে। গত ৫ মে স্নাতক স্তরের নিট পরীক্ষা হয়। ফল প্রকাশ হলে দেখা যায়, সেই পরীক্ষায় প্রথম স্থান পেয়েছে অন্তত ৬৭ জন। সেই প্রবেশিকা পরীক্ষা নিয়ে এর পর উঠতে থাকে একের পর এক অভিযোগ। পরীক্ষার বেশ কিছু কেন্দ্রে যান্ত্রিক সমস্যার কারণে বেশ কয়েকজন পরীক্ষার্থী পূর্ণ সময় পরীক্ষা দিতে পারেনি বলে অভিযোগ করা হয়। সেই অভিযোগ খতিয়ে দেখে দেড় হাজার পড়ুয়াকে গ্রেস মার্কস দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল নিট পরীক্ষার নিয়ামক সংস্থা ন্য়াশনাল টেস্টিং এজেন্সি (NTA)। সেই সিদ্ধান্ত পরে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। অভিযোগ ওঠে প্রশ্ন ফাঁস নিয়েও। একাধিক পরীক্ষাকেন্দ্রে সিসিটিভি না থাকা-সহ একাধিক অনিয়মের অভিযোগ উঠতে থাকে একের পর এক। প্রশ্নফাঁস মামলায় তদন্তে নেমে বেশ কয়েক জনকে গ্রেফতারও করে সিবিআই।
আরও পড়ুন: ২৪ জন কর্মী নিয়ে নিট-নেটের মতো পরীক্ষা পরিচালনা! NTA-এর ভয়াবহ গাফিলতি ফাঁস
প্রশ্নফাঁসজনীত অনিয়মের জেরে নতুন করে পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে চল্লিশেরও বেশি আবেদন জমা পড়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। সেই মামলার বিচারভার যায় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চের কাছে। পুনরায় পরীক্ষার দাবিতে মামলাকারীদের তরফে আদালতে উপস্থিত ছিলেন বরিষ্ঠ আইনজীবী নরেন্দ্র হুডা। প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় এদিন শুনানিতে তাঁকে বলেন, মন কোনও প্রমাণ থাকতে হবে যা ইঙ্গিত করে, প্রশ্নফাঁসের জন্য পুরো পরীক্ষাই প্রভাবিত হয়েছে। যে কারণে গোটা ইউজি-নিট পরীক্ষা বাতিল করা যেতে পারে। প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের কথায়, “শুধুমাত্র ২৩ লাখ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১ লাখ পরীক্ষার্থী ভর্তি হবেন, এই কারণে আমরা পুনরায় পরীক্ষার নির্দেশ দিতে পারি না। পুনরায় পরীক্ষা যদি নিতে হয়, তবে তার জন্য পোক্ত প্রমাণ থাকতে হবে যে, গোটা পরীক্ষা ব্যবস্থাতেই এর প্রভাব পড়েছে।”
নিট মামলাকে কেন্দ্র করে যে বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়েছে, তাতে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে কার্যত গোটা পরীক্ষা ব্যবস্থা নিয়েই। নিট বিতর্কের মধ্যে প্রশ্নফাঁসের আশঙ্কায় পরীক্ষার ঠিক একদিন আগে বাতিল হয় ইউজিসি নেট পরীক্ষা। যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল অসংখ্য পরীক্ষার্থী। এই সব খতিয়ে দেখে নেট বিতর্ক নিয়ে সামাজিক প্রভাবের কথা বিবেচনা করে বৃহস্পতিবার অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে নিট মামলা শুনতে রাজি হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। সুপ্রিম কোর্টে জরুরি শুনানিযোগ্য মামলার তালিকায় পড়ে রয়েছে আয়কর রিটার্ন সংক্রান্ত একাধিক মামলা-সহ আরও জরুরি মামলা। সেসবকে পিছনে রেখেই নিট মামলার আগে শুনানির সিদ্ধান্ত নেয় সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলেন, “এই মামলায় কী রায় হয়, লক্ষ লক্ষ পড়ুয়া সেই দিকে তাকিয়ে আছেন।”
বৃহস্পতিবার শুনানির শুরুতেই প্রধান বিচারপতি মামলাকারীদের আইনজীবীর কাছ থেকে জানতে চান, সরকারি ও বেসরকারি কলেজ মিলিয়ে মোট কত জন ডাক্তারিতে ভর্তি হতে পারেন। তার উত্তরে হুডা জানান, সংখ্যাটা ১ লক্ষ ৮ হাজার। পুনরায় পরীক্ষার স্বপক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, “যদি পুনরায় পরীক্ষা নেওয়া হয়, তা হলে গত বার যে ২৩ লক্ষ পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়েছিলেন, তাঁরা আবার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাবেন।’’ কিন্তু সেই যুক্তি মানতে চায়নি আদালত। প্রধান বিচারপতি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, “পরীক্ষার্থীরা আবার পরীক্ষায় বসতে চাইছেন, শুধুমাত্র এই কারণে আমরা পুনরায় পরীক্ষার নির্দেশ দিতে পারি না। যদি পরীক্ষা ব্যবস্থায় সামগ্রিক ভাবে প্রভাব পড়ার কোনও প্রমাণ মেলে, একমাত্র সে ক্ষেত্রেই তা হতে পারে।”
সূত্রের খবর, এরই মধ্যে কেন্দ্র হলফনামা দিয়ে শীর্ষ আদালতকে জানিয়েছে, স্নাতক স্তরে ডাক্তারির অভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষা নিটে অব্যবস্থার অভিযোগের তদন্ত হয়েছে। পোশাকি ভাষায় যাকে বলে 'টেকনিক্যাল অ্যানালিসিস'। যার দায়িত্বে ছিলেন আইআইটি মাদ্রাজের বিশেষজ্ঞরা। আর সেই বিশ্লেষণের ফল বলছে যে, নিট-২০২৪ পরীক্ষায় সর্বত্র বা বৃহত্তর স্তরে বেনিয়ম হয়নি। কেন্দ্রের দাবি, নিট পরীক্ষা বাতিল করার কোনও যুক্তি নেই। পুরো পরীক্ষা বাতিল হলে লক্ষ লক্ষ সৎ পরীক্ষার্থী সমস্যায় পড়বেন।
কার্যত সেই সুরই শোনা গিয়েছে এ দিন শুনানিতে প্রধান বিচারপতির বক্তব্যেও।
আরও পড়ুন:খাস কলকাতা থেকে গ্রেফতার প্রশ্নপত্র ফাঁসের চাঁই! কোথায় দাঁড়িয়ে নিট-তদন্ত?
সুপ্রিম কোর্ট এদিন ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি (NTA)-কে নির্দেশ দিয়েছে, আগামী শনিবার দুপুর বারোটার মধ্যে নিট পরীক্ষার শহর-ভিত্তিক এবং কেন্দ্র-ভিত্তিক ফলাফল প্রকাশ করার। আবেদনকারীদের তরফের আইনজীবী হুডা সমস্ত পরীক্ষার্থীদের ফলাফল ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছিলেন আদালতে। সলিসিটর জেনারেল অবশ্য জানান, পরীক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি পরীক্ষার ফলাফল। সে জন্যই সম্পূর্ণ ফলাফল ওয়েবসাইটে ঘোষণা করা হয় না। সব দিক খতিয়ে দেখে সুপ্রিম কোর্ট এনটিএ-কে নির্দেশ দিয়েছে, পরীক্ষার্থীদের পরিচয় প্রকাশ না করেই তাঁদের ফলাফল ঘোষণা করার।
শুনানির আগেই এদিন পটনা এইমসের তিন ডাক্তারি পড়ুয়াকে আটক করে সিবিআই। নিটের প্রশ্নপত্র ফাঁস ঘটনায় বৃহস্পতিবার ওই তিন জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তার পরে ওই তিন জনকেই সিবিআই হেফাজতে নিয়েছে বলে খবর। ওই তিন জনই ২০২১ সালের ব্যাচ বলে জানা গিয়েছে। তাঁদের ল্যাপটপ, ফোন বাজেয়াপ্ত করা হয়। সেসব খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বুধবার পটনা থেকে আরও ২ জনকে গ্রেফতার করেছিল সিবিআই। তার মধ্যে এক জন প্রশ্নপত্র ফাঁস কাণ্ডের মাফিয়া বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। নিট কাণ্ডে এ পর্যন্ত ন'জনকে গ্রেপ্তার করল সিবিআই।