মানুষ আসলে কখনই মারা যায় না, মৃত্যু পুরোটাই ভাঁওতা! কেন এমন উদ্ভট দাবি করলেন এই বিজ্ঞানী?
Death is Hoax Claims Scientist Biocentrism : বিজ্ঞানী হঠাৎই দাবি করে বসলেন, মৃত্যু জিনিসটাই ভাঁওতা! মানুষ কেন, কোনও প্রাণীই আদতে মারা যায় না!
‘জন্মিলে মরিতে হইবে’, এই কথাটি প্রায়ই শুনি আমরা। দার্শনিকরা বলে গিয়েছেন, জীবনে অজস্র সত্য আর মিথ্যের ঢেউ আসবে। কিন্তু একমাত্র দুটো জিনিস সবসময় সত্য, ভবিতব্য হয়ে থাকবে। জন্ম, এবং মৃত্যু। বিভিন্ন গল্পে, পুরাণে অমরত্বের উদাহরণ থাকলেও, বাস্তবে সেটা দেখা যায়নি এখনও। তবে প্রতিটি মানুষের মনেই একটি প্রশ্ন হয়তো ঘোরাফেরা করে। জন্ম হলে মৃত্যু হবে, এটা তো চিরন্তন সত্য। কিন্তু মৃত্যুর পর কী হবে?
এই একটি প্রশ্ন নিয়ে যুগ যুগ ধরে নানা তত্ত্ব সামনে এসেছে। বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থে নানা ভাবে একে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। মৃত্যুর পরে পুনর্জন্ম, পরজন্ম ইত্যাদি অনেক ব্যাপারই উঠে এসেছে সেই বইয়ে। কিন্তু সত্যিই মৃত্যুর পরে কী হয় মানুষের? কোথায় যায়? এর উত্তর আজও পাওয়া যায়নি। তারই মধ্যে এক বিজ্ঞানী হঠাৎই দাবি করে বসলেন, মৃত্যু জিনিসটাই ভাঁওতা! মানুষ কেন, কোনও প্রাণীই আদতে মারা যায় না! তাহলে সভ্যতার শুরু থেকে যে সত্যি আমাদের সামনে ঘুরে বেড়াচ্ছে, প্রিয়জনের মৃত্যুর দুঃখে আমরা কাঁদি, এই সমস্তটাই আসলে ধোঁয়াশা! সমস্তটাই ভাঁওতা!
আরও পড়ুন : আড়াই বছর পার, এখনও অধরা সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যু রহস্য, ঠিক কী ঘটেছিল সেই দিন?
এমনই দাবি করেছেন বিজ্ঞানী রবার্ট লানজা। পরিচয়? লানজা আদতে অ্যাসটেলাস গ্লোবাল রিজেনারেটিভ মেডিসিনের প্রধান এবং অ্যাসটেলাস ইনস্টিটিউট অফ রিজেনারেটিভ মেডিসিনের চিফ সায়েন্টিফিক অফিসার। স্টেম সেল নিয়ে গবেষণার পাশাপাশি অ্যাস্ট্রো ফিজিক্স এবং কোয়ান্টাম মেকানিক্স নিয়েও চর্চা করেন এই বিজ্ঞানী। এই যাবতীয় গবেষণার মাঝেই নিজস্ব একটি তত্ত্ব সামনে আনেন। নাম ‘থিয়োরি অফ বায়োসেন্ট্রিজম’ (Biocentrism)। এই বিশেষ বিষয় নিয়ে একটি বইও লিখেছেন তিনি। সেখানেই তিনি এমন বক্তব্য পেশ করেছেন। তাঁর দাবি, মৃত্যুকে আমরা যেভাবে দেখি, যেভাবে ভাবি, মৃত্যু আসলে সেরকম নয়। পুরোটাই আসলে ভাঁওতা। বরং লানজার দাবি, আসলে মৃত্যু হল একটা দরজা। যেটা খুলে গেলে অজস্র সম্ভাবনার রাস্তা খুলে যায়। সামনে চলে আসে অনন্ত বিশ্বব্রহ্মাণ্ড।
স্পেস আর টাইম, অর্থাৎ সময় ও স্থান – এই দুটি জিনিস নিয়ে বহুদিন ধরেই গবেষণা চলছে পৃথিবীতে। অজস্র পদার্থবিদদের থিয়োরি, বিজ্ঞানীদের গবেষণা সংঘটিত হয়েছে এই বিষয়টিকে ঘিরে। তাঁরা বলেন, আমাদের এই ব্রহ্মাণ্ডই একমাত্র সত্য নয়। আরও অজস্র ব্রহ্মাণ্ড ছড়িয়ে রয়েছে শূন্যে। আমাদের এই ব্রহ্মাণ্ড কতটা বড়, তার সীমা পরিসীমা কতটা সেটা এখনও সম্পূর্ণভাবে নির্ণয় করা যায়নি। তবে এর বাইরেও আরও অনেক ব্রহ্মাণ্ড ছড়িয়ে রয়েছে। সেখানে যাওয়ার রাস্তা এখনও আমাদের অজানা। ব্ল্যাক হোল, ওয়ার্ম হোলের মতো মহাজাগতিক বিষয়গুলি নিয়ে তাই আজও রহস্যের শেষ নেই।
আরও পড়ুন : ৫৮৩ জনের মৃত্যু, পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা, কী ঘটেছিল সেদিন?
বিজ্ঞানী রবার্ট লানজা বলছেন, এই ব্রহ্মাণ্ডে যাতায়াত করার আরেকটা রাস্তা হল মৃত্যু! মানুষের মৃত্যু হওয়া মানে এই পৃথিবীতে তাঁর জীবন শেষ হওয়া। এর মানে অন্য অনেক ব্রহ্মাণ্ডে যাওয়ার রাস্তা তাঁর কাছে খুলে গেল। মৃত্যু আসলে সাময়িক; এরপর অন্য একটি জগতে সেই মানুষটি ঠিক ফিরে আসে! উদাহরণ দিতে গিয়ে রবার্ট লানজা বলছেন, মৃত্যু ঠিক যেন একটা ভালো টিভি সিরিজের ক্লাইম্যাক্স। একটা প্ল্যাটফর্মে আপনি একটি সিরিজ দেখছেন, শেষ হয়ে যাওয়ার পর অন্য একটি সিরিজ খুলছেন। কোন সিরিজটি এরপর দেখবেন, সেটা ওই বিশেষ চ্যানেলে ঘুরতে ঘুরতে ঠিক করছেন।
আমাদের এই বিশাল অনন্ত মহাবিশ্বও সেই প্ল্যাটফর্মটির মতোই। আর আমদের জীবন টিভি সিরিজের মতো। ক্লাইম্যাক্সের পর শেষ হয়ে যায়, তারপর ফের নতুন একটা সিরিজ শুরু হয়। বিজ্ঞানী লানজার দাবি, শক্তি তো অবিনশ্বর। শক্তির কোনও ধ্বংস হয় না, সৃষ্টিও হয় না। কেবল এক রূপ থেকে অন্য রূপে পরিবর্তিত হয়। মানুষের আত্মাও আসলে সেই শক্তিরই নামান্তর। তাই মৃত্যুর পর তার বিনাশ হয় না। অন্য একটি রূপে, অন্য একটি জগতে সে চলে যায়।