পরণে দু'ফালি সাদা কাপড়, মক্কায় 'উমরাহ' পালনে মগ্ন শাহরুখ খান, কী এই প্রথা?

Shah Rukh Khan Umrah: সৌদি আরবে রাজকুমার হিরানির পরবর্তী ছবি ডাঙ্কির শ্যুটিং শেষ করেই সোজা মক্কায় পৌঁছে যান সুপারস্টার শাহরুখ খান।

পরণে শুধু সাদা থান। শরীরের কিয়দংশ খোলা। উসকোখুসকো চুল। মুখে মাস্ক। এক নজরে দেখে চেনাই দায় যে তিনি বলিউডের কিং খান! পবিত্র শহর মক্কাতে গিয়েছেন শাহরুখ, ‘উমরাহ’ পালন করতে। আর শাহরুখকে এমন অবতারে দেখে কোনও এক ভক্ত চিনে ফেলেন। অতঃপর ক্যামেরাবন্দি করতেও পিছপা হননি তিনি। তারপর শুরু গুঞ্জন। কেন তিনি গেলেন? কী এই উমরাহ?

অভিনেতাকে ‘উমরাহ’ পালন করতে দেখে অনেকেই কুর্নিশ জানিয়েছেন। তবে কট্টরপন্থীদের রোষানল থেকে বাদ পড়লেন না তিনি। মুসলিম কট্টরপন্থীদের কারও কারও অভিযোগ, “শাহরুখ মূর্তি পুজো করেন। নিজের বাড়িতেও দেবতার মূর্তি রাখেন। আর ইসলামে এর থেকে পাপের আর কিছু নেই!” জনৈকের মন্তব্য, “এই লোকটা হিন্দু মেয়েকে বিয়ে করেছেন। বাড়িতে দেবদেবীর মূর্তি পুজো করেন রোজ। শুধুমাত্র মুসলিম নামের ধারক ও বাহক বলে এটা মনে করার কোনও কারণ নেই যে ইসলাম ধর্মাবলম্বীরাও একে মেনে নেবেন।” সৌদি আরবে রাজকুমার হিরানির পরবর্তী ছবি ডাঙ্কির শ্যুটিং শেষ করেই সোজা মক্কায় পৌঁছে যান সুপারস্টার শাহরুখ খান। অভিনেতার উমরাহ করার একাধিক ছবি আর ভিডিও শাহরুখের টিমের পক্ষ থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হয়েছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে তা ঝড়ের গতিতে ভাইরাল হয়ে যায়।

ছবিতে দেখা যাচ্ছে শাহরুখের পরণে রয়েছে রিদা আর ইজার। আর মুখ ঢেকে রেখেছেন মাস্কে। তাঁর আশপাশে বেশ কিছু মানুষ রয়েছেন। মনে করা হচ্ছে, তাঁরা শাহরুখের দেহরক্ষী বা নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন। কেউ কেউ তাঁকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘হিপোক্রিট’ বলে গালিগালাজ করলেও মোদ্দা কথা হল শাহরুখ যে কারণেই মক্কা গিয়ে থাকুন না কেন, এই প্রথার সঙ্গে জড়িয়ে আছে মুসলিমদের পবিত্র রীতি রেওয়াজ।

আরও পড়ুন- শাহরুখ খান: কেন আজও ভারতের ‘দ্য লাস্ট স্টার অফ দ্য স্টারস’ বাদশা

উমরাহ প্রথা কী?

উমরাহ একটি ইসলামি তীর্থযাত্রা। বর্তমান সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে উমরাহ করতে হয়। উমরাহ বছরের যেকোনও সময় করা যায়। আরবি ভাষায় উমরাহ শব্দের অর্থ হল জনবহুল স্থানে ভ্রমণ করা। ইসলামি পরিভাষায় উমরাহের অর্থ ইহরাম অবস্থায় কাবার চারপাশে তাওয়াফ, সাফা-মারওয়া পাহাড়ের মধ্যখানে সায়ি করাকে বোঝায়। হজের সঙ্গে এদিক থেকে উমরাহ-এর সাদৃশ্য রয়েছে। তবে হজের গুরুত্ব উমরাহের চেয়ে বেশি। প্রত্যেক সক্ষম মুসলিমের জন্য জীবনে একবার হজ করা ফরজ। উমরাহর ক্ষেত্রে এই বাধ্যবাধকতা নেই, তবে এটি জীবনে একবার করতে উৎসাহিত করা হয়। সাধারণত পাপ স্খলনের জন্য সারা বিশ্বের মুসলিমরা মক্কায় গিয়ে প্রার্থনা করেন। এই প্রথার নামই উমরাহ।

কোন সময়ে উমরাহ পালিত হয়?

জিলহজ মাসের ৯-১৩ তারিখ হচ্ছে পবিত্র হজের নির্দিষ্ট সময়। এ সময়ের বাইরে হজ করা যায় না। এই জিলহজ আবার কী? জিলহজ অথবা ধু আল-হিজ্জাহ্ ইসলামি বর্ষপঞ্জির ১২ তম মাস। এটি মুসলিমদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ কেননা এই মাসে মুসলিমরা হজ পালন করেন। জিলহজ মাসের ১০ তারিখে মুসলমানদের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বাৎসরিক ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আযহা বা কুরবানি ঈদ উদযাপন করা হয়।

উমরাহের জন্য নির্দিষ্ট কোনও সময় নেই। শুধু হজের দিনগুলো ছাড়া বছরের বাকি সময়গুলোতে উমরাহ করা যায়। বিশেষ করে রমজানের সময় উমরাহর ফজিলত অনেক বেশি। তারপরও বিশ্বের কোটি কোটি মুমিন মুসলমান হজের জন্য বাইতুল্লায় গেলে হজের পূর্বে উমরাহ করে থাকেন। আবার অনেকে হজ ও উমরাহের ইহরাম এক সঙ্গে বেঁধে আগে উমরাহ করেন এবং সেই ইহরাম দিয়ে পবিত্র হজও সম্পাদন করেন।

উমরাহের পোশাক

উমরাহের জন্য বিশেষ পোশাক নির্ধারিত। তাই শাহরুখের যে ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ধরা পড়েছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে, বাদশা তাঁরা চেনা বেশ ছেড়ে দীন বেশে তীর্থ যাত্রায় গেছেন। তাঁর পোশাকে নেই কোনও আড়ম্বর। ইহরামের পোশাক (আহরামের পোশাক) হচ্ছে, ইসলামি তীর্থযাত্রা হজ বা উমরাহ-এর ইহরামের পর্যায়ে মুসলিম নারী ও পুরুষদের পরিহিত পোশাক। এ পোশাক পরার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে মনোযোগ আকর্ষণ এড়ানো। পুরুষদের পোশাক দু’টি সাদা আনহেমড শিট (সাধারণত তোয়ালে তৈরির কাপড়) নিয়ে গঠিত। উপরভাগ (রিদা) কাঁধের উপর আবৃত থাকে, এবং নীচের অংশ (ইজার) একটি বেল্ট দ্বারা সুরক্ষিত থাকে। পায়ে থাকে একজোড়া স্যান্ডেল। তবে নারীদের পোশাকে উল্লেখযোগ্যভাবে আঞ্চলিক এবং ধর্মীয় প্রভাব প্রতিফলিত হয়, কিন্তু তাঁরা প্রায়ই বিশেষ পোশাক পরেন না।

আরও পড়ুন- শাহরুখের নিজস্ব স্বর্গ ‘মন্নত’-এর অন্দর কেমন?

সাদা ইহরাম পোশাকে সবাইকে একই রকম দেখানোর বিশেষ উদ্দেশ্য রয়েছে। এই পোশাক নির্দেশ করে যে, সৃষ্টিকর্তার সামনে রাজকুমার কিংবা একজন সাধারণ বালকের মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। ইহরাম মক্কা শহরে থাকাকালীন তীর্থযাত্রীদের এরকম এক ঐক্যের অনুভূতি জাগ্রত করে যেন তাঁরা সবাই ভাই-বোন যাঁরা শুধুমাত্র আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশ্যে যোগ দিয়েছেন। যদিও শুধুমাত্র তীর্থযাত্রার সময় এই পোশাক পরিধান করা হয়, ইহরাম সঠিকভাবে পরিধান সম্পর্কে কিছুটা ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি আছে। উদাহরণস্বরূপ, একজন তীর্থযাত্রীর জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক দিনে ইহরামের প্রয়োজন হয়, যে ধরনের তীর্থযাত্রা করছেন সেই অনুযায়ী। ইহরাম সাধারণত ইসলামিক ক্যালেন্ডারের শেষ মাস জিলহজ মাসে পরিধান করা হয়।

হজের সফরেও উমরাহ করা যায়। একই সফরে একাধিক উমরাহ করতে বাধা নেই। হজ যেমন জীবনে একবার ফরজ; তেমনি উমরাহ জীবনে অন্তত একবার সুন্নত। রমজানে উমরাহ পালন করা হজের সমান সওয়াব; শাওয়াল মাসও উমরাহ করার জন্য উত্তম সময়। তবে হজ ফরজ থাকা অবস্থায় তা আদায়ের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও হজ সম্পন্ন না করে বারবার উমরাহ করা অযৌক্তিক। কারণ, শত উমরাহ একটি হজের সমকক্ষ হবে না। একইভাবে উমরাহ আদায় করলে হজ ফরজ হয়ে যায় এমনটিও সঠিক নয়।

এ তো গেল উমরাহ প্রথার রীতি রেওয়াজ নিয়ে খুঁটিনাটি। ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা কতটা এতে নিমগ্ন হয়ে থাকেন সেই নিয়ে তর্কে না গিয়ে বলা যায় বাদশার হঠাৎ করে মুসলিম হয়ে ওঠা নিয়ে নেটদুনিয়া কিন্তু বেশ খেপেছে। তাঁর স্ত্রী গৌরীকেও ছাড়ছেন না একাংশের ভক্তরা। হিন্দু স্ত্রী এবং ঘরে মূর্তি পুজোর আয়োজন রেখে কোন দায়ে তিনি ধর্মপ্রাণ হয়ে উঠলেন এই ধর্মনিরপেক্ষ ভারতে সেই প্রশ্ন ইতিমধ্যেই উঠে গিয়েছে।

More Articles