ইউনেস্কোর হেরিটেজ শান্তিনিকেতন! রবিঠাকুরের গর্ব কতখানি ধরে রেখেছে এই শহর?
Shantiniketan UNESCO World Heritage : বিশ্বভারতীর নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের হাতে থাকায় এই রাজ্যে তৃণমূল-বিজেপির দ্বন্দ্বের অন্যতম বিন্দুও এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
বাংলাকে ভাবায় সাম্প্রতিকতম যে তর্কগুলি, তারই মধ্যে একটি হচ্ছে রবীন্দ্রনাথের ঐতিহ্য কি আদৌ ধরে রেখেছে শান্তিনিকেতন? বাঙালি কি নিজেরই অজান্তে বা জ্ঞানতই প্রাণের শান্তি, মনের আরামের বারোটা বাজিয়ে দেয়নি শান্তিনিকেতনের? রবীন্দ্রনাথের ঐতিহ্যের বিশ্বভারতীই হোক বা সোনাঝুরির হাট, উইকেন্ড গেটওয়ের দাপটে সবই যে ধরাশায়ী! তবে নিন্দুকদের মুখে ছাই দিয়ে শান্তিনিকেতন প্রমাণ করেছে, গৌরব সবটুকুই হারায়নি সে। ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের তালিকায় সে নিজের স্থান করে নিয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতন এখন আন্তর্জাতিক 'হেরিটেজ'।
১৯০১ সালে শান্তিনিকেতনে স্কুল এবং ১৯২১ সালে বিশ্বভারতীর পথ চলা শুরু। বিশ্বভারতী কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে ওঠে ১৯৫১ সালে। ১৮৬৩ সালে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর রায়পুরের জমিদার ভুবন মোহন সিংহের কাছ থেকে দু'টি ছাতিম গাছসহ ২০ একর জমি ইজারায় কিনেছিলেন। তিনিই একটি অতিথিশালা গড়েন, নাম রাখেন 'শান্তিনিকেতন'। সেই থেকেই গোটা অঞ্চলটির নাম হয় শান্তিনিকেতন। ১৭ বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জোড়াসাঁকো থেকে শান্তিনিকেতনে আসেন। পরে বিশ্বভারতী গড়েন। বিশ্বভারতীর নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের হাতে থাকায় এই রাজ্যে তৃণমূল-বিজেপির দ্বন্দ্বের অন্যতম বিন্দুও এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বিগত কয়েক মাসে বিশ্বভারতী-উপাচার্য-আন্দোলন নিয়ে জেরবার হয়েছে শান্তিনিকেতন। সেই সবের মাঝেই হেরিটেজও হয়ে উঠেছে বাঙালির প্রিয় ছুটি কাটানোর ঠিকানা!
🔴BREAKING!
— UNESCO 🏛️ #Education #Sciences #Culture 🇺🇳 (@UNESCO) September 17, 2023
New inscription on the @UNESCO #WorldHeritage List: Santiniketan, #India 🇮🇳. Congratulations! 👏👏
➡️ https://t.co/69Xvi4BtYv #45WHC pic.twitter.com/6RAVmNGXXq
এমনটা হওয়ার আঁচ অবশ্য ছিলই। বিশ্বের ঐতিহ্যশালী স্থানের তালিকায় শান্তিনিকেতনের নাম আসা ছিল সময়ের অপেক্ষামাত্র। রবীন্দ্রনাথের এই ঐতিহ্য হেরিটেজ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, ক্ষমতায় আসার পর থেকে গত প্রায় এক যুগ ধরে বাঁচাতে কী কী করেছে তৃণমূল সরকার! শান্তিনিকেতন তাঁর কাছে এই 'বিশ্ববাংলারই' গর্ব। তাঁর সরকারই শান্তিনিকেতনের পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ করে গিয়েছে। ইউনেস্কোর এই স্বীকৃতিতে আপ্লুত মোদিও!
Glad and proud that our Santiniketan, the town of Gurudev Rabindranath Tagore, is now finally included in UNESCO's World Heritage List. Biswa Bangla's pride, Santiniketan was nurtured by the poet and has been supported by people of Bengal over the generations. We from the…
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) September 17, 2023
মোদি সরকারই এই 'হেরিটেজ' তকমা প্রাপ্তির ইঙ্গিত দিয়েছিল। ইউনেস্কোর হেরিটেজের তালিকায় শান্তিনিকেতনের নাম আসার ইঙ্গিত এই বছর রবীন্দ্রজয়ন্তীর পরের দিনই দিয়েছিল কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রী জি কিষাণ রেড্ডি এক্সে (আগেকার টুইটারে) লিখেছিলেন, ‘‘গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে সারা দেশের জন্য সুখবর। শান্তিনিকেতনকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তালিকায় রাখার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।’’
উল্লেখ্য, শান্তিনিকেতনের নাম প্রস্তাব করেছিল ইউনেস্কোর উপদেষ্টা সংগঠন ইকোমস। কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক এবং দেশের পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের হয়ে শান্তিনিকেতনের ঐতিহ্যের দাবিপত্রটি তৈরি করেন সংরক্ষণ স্থপতি আভা নারায়ণ লাম্বা এবং মনীশ চক্রবর্তী। দার্জিলিংয়ের টয়ট্রেন এবং সুন্দরবন ইতিমধ্যেই রয়েছে হেরিটেজ তালিকায়। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসাবে দুর্গাপুজোকেও 'ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তকমা পেয়েছে গতবছরই। এ বার শান্তিনিকেতন।