ভালোবাসা বাড়ি ফেরায়! ভিন রাজ্যে হারিয়ে যেভাবে ২৫০ কিমি হেঁটে বাড়ি ফিরল এই কুকুর...

Lost Dog: ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে ফেলেছিল সঙ্গী মানুষটিকে কিন্তু প্রায় ২৫০ কিমি পথ হেঁটে, নিজের চেনা মুখকে ভালোবেসে ফিরে এসেছে।

পাশের পাড়া নয়, পাশের শহরও না। ২৫০ কিলোমিটার দূরের অচেনা শহরে হারিয়ে গিয়েছিল মহারাজা। অচেনা মানুষ, অচেনা ভিড়, চেনা মুখ নেই একটিও। চেনা ডাক নেই একটুও। মহারাজা ভিন শহরে একা। ২৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে অবশেষে মাস দেড়েক পর বাড়ি ফিরেছে সে, পায়ে হেঁটে! মহারাজা সারমেয়, আরও সহজ করে বলতে গেলে পথকুকুর! নিজের চেনা পাড়ায়, নিজের প্রিয় মানুষ বন্ধুটির কাছে সে ফিরেছে অবশেষে! বেলাগাভি জেলার নিপানি তালুকের ইয়ামাগর্নি গ্রামে মহারাজের ফিরে আসার ঘটনায় রীতিমতো উৎসব! উচ্ছ্বসিত মানুষ মহারাজকে মালা পরিয়ে বরণ করেছে। মহারাজের ফিরে আসার খুশিতে লোক খাইয়েছে। গ্রামবাসীদের কাছে হারিয়ে যাওয়া কুকুরের ফিরে আসা প্রায় অলৌকিক ঘটনার সমান।

মহারাজ হারিয়ে গেছিল দক্ষিণ মহারাষ্ট্রের তীর্থ শহর পান্ধরপুরে। প্রচুর ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে ফেলেছিল সঙ্গী মানুষটিকে কিন্তু উত্তর কর্ণাটকের বেলাগাভি গ্রামে সে ফিরে এসেছে একাই। প্রায় ২৫০ কিমি পথ হেঁটে, নিজের চেনা মুখকে ভালোবেসে ফিরে এসেছে।

জুনের শেষ সপ্তাহে, মহারাজ তার মালিক কমলেশ কুম্ভরের সঙ্গে মহারাষ্ট্রের পান্ধরপুরে যায়। কমলেশ বেরিয়েছিলেন বার্ষিক 'ওয়ারী পদযাত্রা'-য়। কমলেশ কুম্ভর প্রতি বছরই আষাঢ় একাদশী এবং কার্তিকী একাদশীতে পান্ধরপুরে যান। এবার তার সঙ্গে তাঁর প্রিয় কুকুরটিও গিয়েছিল বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুন- সভ্য দেশে পথকুকুর থাকে না? কেন ৪০ লক্ষ কুকুরের নিধনযজ্ঞে মাতছে তুর্কি সরকার?

কমলেশ বলছেন, মহারাজ সবসময় ভজন শুনতে পছন্দ করে। একবার মহাবালেশ্বরের কাছে জ্যোতিবা মন্দিরে আরেকটি পদযাত্রায় কমলেশের সঙ্গী হয়েছিল মহারাজ। প্রায় ২৫০ কিলোমিটার ধরে রাস্তা হেঁটে মহারাজ কমলেশ এবং কমলেশের একদল বন্ধুর সঙ্গে চলে যায়।

বিঠোবা মন্দির দর্শনের পরে, কমলেশ কুম্ভর দেখেন, প্রিয় কুকুরটি সঙ্গে নেই। তিনি ওই ভিড়েই মহারাজকে খোঁজেন প্রচুর। সেখানকার অন্য মানুষরা বলেন, কুকুরটি অন্য দলের সঙ্গে চলে গেছে। বিশ্বাস হয় না কমলেশের। সর্বত্র মহারাজকে খুঁজতে থাকেন তিনি, কিন্তু পাননি। অগত্যা, বিশ্বাস করে নেন, বাকিরা হয়তো ঠিকই বলছে। মহারাজ বুঝি নতুন সঙ্গী পেয়ে চলে গেছে। গত ১৪ জুলাই একাই নিজের শহরে ফিরে আসেন কমলেশ কুম্ভর।

তারপর কেটে গেছে সময়। হঠাৎ এক সকালে কমলেশ কুম্ভর অবাক হয়ে দেখেন, মহারাজ তাঁর বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে লেজ নাড়াচ্ছে! ভাবখানা, যেন কিছুই হয়নি। দুর্বলও হয়নি। মন মেজাজও ভালোই দেখাচ্ছিল। কমলেশের সেই উচ্ছ্বাস বলে বোঝানোর নয়! শুধু কমলেশ কুম্ভর নন, গ্রামবাসীরাও এই ঘটনায় অবাক! সবাই মিলে চাঁদ দিয়ে তাই মহারাজের ফিরে আসার উদযাপনে ভোজ খাওয়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। গ্রামবাসীরা মনে করেন, এ সত্যিই অলৌকিক ঘটনা! এত দূরের পথ গন্ধ শুঁকে চিনে ফেরাটা অবাকই ঠেকে। তবু, ভালোবাসার টানে মানুষও ফেরে, কুকুর তো ফেরেই!

More Articles