বিজেপির উপর গোঁসা করেই তৃণমূলে! 'বহিরাগত' শত্রুঘ্ন এবারও জিতবেন?
Shatrughan Sinha Asansol: ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে, বিজেপি তাঁকে পটনা সাহেব আসন থেকে সরিয়ে দেয়
প্রথম দফার নির্বাচন শুরু হতে মাত্র ২ সপ্তাহ। অথচ বিজেপি পশ্চিমবঙ্গের আসানসোল আসনে এখনও প্রার্থী দিতেই পারেনি। অন্যদিকে, সিপিআইএম এবং তৃণমূল প্রার্থী ঘোষণা করে লড়াই শুউর করে দিয়েছে। বামেদের হয়ে লড়ছেন জাহানারা খান। আর তৃণমূলের ভরসা এবারেও অভিনেতা শত্রুঘ্ন সিনহা। ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের আসানসোল আসন থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে লড়বেন শত্রুঘ্ন। বিজেপির হয়ে লড়ে গত লোকসভায় জিতেছিলেন বাবুল সুপ্রিয়। তারপর তিনি পদত্যাগ করে তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় এই আসন খালি হয়ে যায়। তারপর ২০২২ সালের উপনির্বাচনে তিন লক্ষেরও বেশি ভোটে জয়ী হন তিনবারের সাংসদ শত্রুঘ্ন সিনহা।
১৯৪৫ সালের ৯ ডিসেম্বর শত্রুঘ্ন সিনহার জন্ম পটনায়। পটনা বিজ্ঞান কলেজে পড়াশোনা শেষ করে চলে আসেন মহারাষ্ট্রে। পুনের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া (এফটিআইআই) থেকে স্নাতক হন তিনি। শত্রুঘ্ন সিনহা তাঁর বলিউডের কর্মজীবন শুরু করেছিলেন দেব আনন্দের প্রেম পূজারি (১৯৭০) সিনেমা দিয়ে। এরপর মেরে আপনে, কালীচরণ, দোস্তানা এবং কালা পাথর-এর মতো সিনেমাম অভিনয়ের জন্য প্রশংসা অর্জন করেন, ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হতে থাকেন।
আরও পড়ুন- যাদবপুরে সততা বনাম দুর্নীতি! সায়নী ঘোষের বিরুদ্ধে কতটা শক্তিশালী সৃজন ভট্টাচার্য?
রাজনীতিতে শত্রুঘ্নের প্রবেশ ১৯৮০ সালে। বিজেপিতে যোগদান করেছিলেন তিনি। ১৯৯২ সালে নির্বাচনী আত্মপ্রকাশ করেন শত্রুঘ্ন। নয়াদিল্লি আসনের উপনির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন আরেক অভিনেতার বিরুদ্ধে, রাজেশ খান্না। কংগ্রেস প্রার্থী রাজেশ খান্নার কাছে ২৫,০০০ ভোটে হেরে যান শত্রুঘ্ন।
শত্রুঘ্ন সিনহা ১৯৯৬ এবং ২০০২ সালে দুই মেয়াদে রাজ্যসভায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। অটল বিহারী বাজপেয়ী সরকারের অধীনে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী (২০০২-০৩) এবং তারপর নৌপরিবহন মন্ত্রীর (২০০৩-০৪) দায়ভারও সামলেছিলেন তিনি।
২০০৯ সালে ফের নির্বাচনী রাজনীতিতে ফিরে আসেন তিনি। পটনা সাহেব লোকসভা কেন্দ্র থেকে বিজেপির টিকিটেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তাঁর বিরোধী প্রার্থীদের মধ্যে ছিলেন আরেক অভিনেতা, কংগ্রেস প্রার্থী শেখর সুমন। ২০১৪ সালে, যখন নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি দেশ জুড়ে গেরুয়া ঝড় বইয়ে দেয় তখন কংগ্রেস প্রার্থী কুণাল সিংকে ১ লক্ষেরও বেশি ভোটে পরাজিত করে নিজের আসন ধরে রেখেছিলেন শত্রুঘ্ন।
আরও পড়ুন- বারুইপুর, যাদবপুর হয়ে দমদম! ‘সুদিন’ ফেরাতে পারবেন সুজন চক্রবর্তী?
২০১৯ সালের নির্বাচনের আগে, শত্রুঘ্ন সিনহা জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট অর্থাৎ এনডিএ সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী মোদির চরম সমালোচনার করতে থাকেন। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে, বিজেপি তাঁকে পটনা সাহেব আসন থেকে সরিয়ে দেয়, ওই আসনে প্রার্থী করে তৎকালীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ। শত্রুঘ্নকে টিকিট না দেওয়ায় তিন দশকের দীর্ঘ সম্পর্কের অবসান ঘটিয়ে বিজেপি থেকে বিদায় নেন শত্রুঘ্ন। কংগ্রেসের টিকিটে পটনা সাহেব আসনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন ঠিকই কিন্তু রবিশঙ্কর প্রসাদের কাছে হেরে গিয়েছিলেন। ২০২২ সালে তিনি তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন এবং সেবছর আসানসোল আসনের উপনির্বাচনে বিজয়ী হয়ে লোকসভায় ফিরে আসেন।
আসানসোল লোকসভার মধ্যে রয়েছে সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র, পাণ্ডবেশ্বর, রানিগঞ্জ, জামুড়িয়া, আসানসোল দক্ষিণ, আসানসোল উত্তর, কুলটি, বারাবনি। ১৯৮৯ থেকে শুরু করে টানা ২০১৪ সাল পর্যন্ত এই আসন ছিল বামেদের দখলে। প্রথমে হারাধন রায়, তারপর বিকাশ চৌধুরী এবং বংশগোপাল চৌধুরী এই আসন সামলেছেন। ২০১৪ সালে বাবুল সুপ্রিয়র হাত ধরে ভারতীয় জনতা পার্টি এখানে খাতা খোলে। কিন্তু বাবুল দলবদল করায় উপনির্বাচনে তৃণমূলের শত্রুঘ্ন এখানে জিতে যান। অন্যদিকে জামুড়িয়ার জাহানারা খান দীর্ঘদিনের বামপন্থী নেত্রী। লড়াকু মনোভাবের জাহানারা এই অঞ্চলের মানুষও। বাংলায় বাংলাভাষীকে প্রার্থী করার দাবি নিয়ে বাংলাপক্ষর মতো সংগঠন সরাসরি জাহানানারা খানকে সমর্থন করছে। তাই কি প্রার্থী বাছাইয়ে এবার এত সময় নিচ্ছে বিজেপি? হারানো আসন ফিরে পাবে গেরুয়া বাহিনী?