পাহাড় ধ্বংস করে উন্নয়নের ছক ঠেলছে কোন বিপদের মুখে?
Shimla Development Plan 2041: হিমাচল প্রদেশ সরকারের অনুমোদিত সিমলা ড্রাফট ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান ২০৪১-কে সম্পূর্ণভাবে বেআইনি বলে আখ্যা দিল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল।
বাতিল হয়ে গেল সিমলা ড্রাফট ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান। ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল ঘোষণা করল এই সিদ্ধান্ত। হিমাচল প্রদেশ সরকারের অনুমোদিত সিমলা ড্রাফট ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান ২০৪১-কে সম্পূর্ণভাবে বেআইনি বলে আখ্যা দিল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল। সেই সঙ্গে জানাল, সিমলায় যত্রতত্র বেআইনি নির্মাণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলার পূর্ববর্তী নির্দেশও হিমাচল প্রদেশের সরকার মানার প্রয়োজন মনে করেনি। স্বাভাবিকভাবেই ভোটের আগে চরম বিপাকে রাজ্যের শাসক দল।অভিযোগ, বিজেপি সরকারের পরিকল্পনা ছিল বেআইনি নির্মাণগুলিকে মান্যতা দিয়ে ব্যালট বাক্সে তার ফায়দা তোলা। কিন্তু দেশে এখনও পরিবেশকে রক্ষা করতে কিছু মানুষ, কিছু সংগঠন এবং কিছু সাংবিধানিক কর্তৃপক্ষ সচেষ্ট।
বিচারক আদর্শ গোয়েল তাঁর কুড়ি পাতার রায়ে জানিয়েছেন, হিমাচল প্রদেশ সরকারের এই পরিকল্পনা ট্রাইব্যুনালের ২০১৭ রায়ের বিরুদ্ধাচরণ করা। সরকার তাদের রায়কে অমান্য করার ধৃষ্টতা দেখিয়েছে। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ঠিক কীসের ভিত্তিতে হিমাচল প্রদেশের মন্ত্রিসভা এমন এক প্রকল্পের অনুমোদন দিল?
আরও পড়ুন: ১৯০ কোটি বছর ধরে মহাকাশের পথ পেরিয়ে পৃথিবীতে কোন বার্তা এসে পৌঁছল?
এই সরকারের পাহাড়ের প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংস করে নির্মাণ কাজ করা, পরিকাঠামো তৈরি করার প্রবণতা নিয়ে পরিবেশবিদ এবং আন্দোলনকারীরা বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছেন। গত এক দশকে বহুবার দেখা গিয়েছে, কীভাবে ধস নেমে, হড়পা বান এসে সবকিছু তছনছ করে দিয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতেই পাহাড়জুড়ে এখন ধস নামছে। তার পিছনে কারণ খুব স্পষ্ট। যত্রতত্র আইন না মেনে নির্মাণকাজ করতে করতে এবং নির্বিচারে গাছ কেটে পাহাড়ের মাটি আলগা করে দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে অতিমারীর পর একটি নতুন প্রবণতার জন্ম নিয়েছে। পর্যটন কেন্দ্র থেকে কাজ করার- Work From Destination। হ্যাঁ, এখন আর পর্যটন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীরা শুধুমাত্র পর্যটকদের কথা ভেবে বিনিয়োগ করছেন না। তাঁরা পাখির চোখ করছেন এক থেকে দুই মাস, বা তার থেকেও বেশি সময়ের জন্যে থাকতে আসা কর্পোরেট চাকুরিজীবীদের। সেই কারণে পাহাড়ে, বিশেষ করে উত্তর ভারতের হিমালয়ান বেল্টে এখন কংক্রিটের জঙ্গল আরও বেশি করে গজিয়ে উঠছে। মুনাফা এবং ক্ষমতা ধরে রাখার লোভে শাসক দলও তাতে যথেষ্ট পরিমাণে মদত দিচ্ছে। এমনিতেও এই রাজনৈতিক দলের পরিবেশ সচেতনতার বা পরিবেশ রক্ষার্থে কোনও কাজ করার বিশেষ উদাহরণ নেই। সুতরাং, তাদের বিশেষ অসুবিধাও হচ্ছে না। বরং তাদের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে পরিবেশ আন্দোলনকারীরা এবং গ্রিন ট্রাইবুনালের মতো প্রতিষ্ঠান গুলি, কারণ সরকারের যে কাজ করার কথা, তা তারা করছে এবং চোখে আঙুল দিয়ে সরকারের ভূমিকা দেখিয়ে দিচ্ছে। বেআব্রু করে দিচ্ছে তাদের জনতার সামনে।
যেমন এই সিমলা ডেভেলপমেন্ট প্ল্যানের কথাই ধরা যাক। এই প্ল্যান অনুযায়ী নির্মাণ কাজ হওয়ার কথা ছিল সিমলার একদম কোর অঞ্চলে। এখানেই শেষ নয়, ১৭টি সংরক্ষিত গ্রিন বেল্টেও নির্মাণ করার পরিকল্পনা ছিল রাজ্য সরকারের। যে স্থানগুলিতে নির্মাণ কার্য নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছিল ২০০০ সালে। সিমলা শহরকে এখনও সম্প্রসারণ করা হচ্ছে ১৯৭৯ সালের Interim Development Plan অনুসারে। রাজ্য সরকারের দাবি অনুযায়ী, ২০৪১ সাল নাগাদ এই শহরের জনসংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে প্রায় সাড়ে ছয় লক্ষে। সেই কারণেই তারা এই প্রকল্প নিয়ে এগোচ্ছিল। কিন্তু গ্রিন বেঞ্চে তাদের এই যুক্তি ধোপে টেকেনি। মামলাকারী যোগেন্দ্রমোহন সেনগুপ্তর পক্ষেই রায় গিয়েছে।
কিন্তু এইভাবে কতদিন পরিবেশ আদালতকে ঢাল হয়ে দাঁড়াতে হবে? কেন সরকারের প্রতিনিধিরা, জনপ্রতিনিধিরা পরিবেশ রক্ষার গুরুত্ব বুঝবেন না? বারবার পাহাড়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয় হয়, প্রচুর মানুষ প্রাণ হারান, ক্ষয়ক্ষতি হয় কোটি কোটি টাকার। প্রত্যেকবারই বিশেষজ্ঞরা কারণ হিসেবে মানুষের কার্যকলাপ, যত্রতত্র নির্মাণকেই দায়ী করেন। তা সত্ত্বেও তাদের টনক নড়ার কোনও চিহ্ন নেই। ঠিক কোন মূল্যে এই পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়, সেটাই দেখার। সেই দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করারও সময় হয়তো আমাদের হাতে নেই। উত্তরাখণ্ডে বছর বছর দাবানলের নামে আগুন লেগে যাওয়া হোক, বা মধ্যপ্রদেশের পান্নার জঙ্গল আমেরিকার মাইনিং প্রকল্পের হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করা, সরকারি বিভিন্ন পরিকল্পনার সঙ্গে পরিবেশের স্বার্থের সংঘাত এই নতুন নয়। নয়া পরিবেশ বিল, যা গত বছর পাশ হয়ে আইনে রূপান্তরিত, সেখানে সরাসরি বড় শিল্পকে পরিবেশ ধ্বংসের ছাড় দেওয়া হচ্ছে। এর মাশুল গুনতে হবে, একথা কি বুঝছে না সরকার?