গোটা রাজধানী যেন আস্ত গ্যাস চেম্বার! কোন পথে এই ভয়াবহ পরিস্থিতি রুখবে দিল্লি?
Air Pollution in Delhi: পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, বন্ধ করে দিতে হয়েছে দিল্লির সমস্ত প্রাথমিক স্কুল। গোটা তাজমহল অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে ধোঁয়াশার চাদরে।
প্রতিবার শীত পড়তে না পড়তেই ভয়াবহ দূষণের চাদরে ঢেকে যায় দিল্লি। এবারও তার ব্যতিক্রম হল না। পর পর তিন দিন কুয়াশায় মুড়ে রইল দিল্লি। গত কয়েক দিনে মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে রাজধানীর বাতাসের গুণগতমান। শুক্রবার সকালে দিল্লির বেশ কয়েকটি অংশের বায়ুর গুণগতমান ভয়ঙ্কর রকম নেমে যায়। নয়ডা, গাজিয়াবাদ ও গুরুগ্রাম-সহ একাধিক জায়গা ধোঁয়ায় ঢেকেছিল এদিনও। সব মিলিয়ে দিল্লি যেন আস্ত একটা গ্যাস চেম্বার। যেখানে সুস্থ ভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়াই একটা মস্ত চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে দিল্লিবাসীর জন্য।
পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, বন্ধ করে দিতে হয়েছে দিল্লির সমস্ত প্রাথমিক স্কুল। গোটা তাজমহল অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে ধোঁয়াশার চাদরে। ফলে যাঁরা গ্যাঁটের কড়ি খরচ করে তাজমহলের রূপ দেখতে গিয়েছেন, তাঁদের ফিরতে হয়েছে হতাশ হয়েই। বৃহস্পতিবার সকালে উত্তরপ্রদেশের আগ্রায় তাপমাত্রার ন্যূনতম অঙ্ক ছিল ১৭ ডিগ্রি। আরও তিন দিন পরিস্থিতি একই রকম থাকবে বলেই জানিয়েছেন আবহবিদেরা। মনে করা হচ্ছে, তুমুল কুয়াশার সঙ্গে ধোঁয়া মিশেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যার নেপথ্যে রয়েছে আদতে সেই খড় পোড়ানোর সমস্যাই। বারবার সতর্কতা,সচেতনতা সত্ত্বেও শস্য খেতের নাড়া পোড়ানোর এই সমস্যাকে সরানো যায়নি। উত্তরভারতের বিরাট অংশ জুড়ে আজও এক জ্বলন্ত সমস্যা এই রীতি। জরিমানা ধার্য করা থেকে শুরু করে নিষেধাজ্ঞা জারি, কোনও ভাবেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। এমনকী গত সপ্তাহে বাড়ানো হয়েছিল জরিমানার অঙ্কও।
আরও পড়ুন: গাড়ির কালো ধোঁয়ায় আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হয়!
চলতি বছর দেওয়ালির আগে থেকেই খারাপ হতে শুরু করে দিল্লির পরিস্থিতি। রাজধানী ঢেকে গিয়েছিল পুরু কুয়াশার চাদরে। সে সময়েই বাতাসের গুণগতমান প্রায় বিপদসীমা ছুঁয়ে ফেলেছিল। তা নিয়ে বারবার সতর্কও করেন পরিবেশবিদেরা। তবে কাজের কাজ হয়নি। যত সময় গিয়েছে, আরও খারাপ হয়েছে দিল্লির অবস্থা। কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে দিল্লি সরকার। তার পরেও পরিস্থিতি উন্নত হয়নি। আপাতত এই ভয়াবহ পরিস্থিতি সামাল দিতে একাধিক পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করেছে দিল্লি প্রশাসন। কমিশন ফর এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট (CAQM) কেন্দ্রীয় দূষণ পর্যবেক্ষণকারী সংস্থাকে তৃতীয় পর্যায়ের বিধিনিষেধ জারি করার নির্দেশ দিয়েছে। ইতিমধ্যেই রাজ্য জুড়ে সমস্ত প্রাথমিক স্কুল বন্ধ করার নির্দেশ জারি হয়েছে। এরপর যানবাহন চালানোর উপরেও জারি করা হচ্ছে বিধিনিষেধ। BS-III পেট্রোলচালিত গাড়ি ও BS-IV ডিজেল চালিত গাড়ি শহরে চলাচলে জারি হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। শুক্রবার সকাল থেকেই যা কার্যকর করা হয়েছে দিল্লি জুড়ে। সরকারের তরফে পরবর্তী নির্দেশ আসা না পর্যন্ত অনলাইন মোডে পঠনপাঠন চলবে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে।
সেন্ট্রাস পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ড (CPCB)-র তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় আনন্দবিহার এলাকায় বাতাসের গুণগতমান ছিল ৪৪১। বাওয়ানায় ছিল ৪৫৫, দ্বারকা সেক্টর ৮ এলাকায় ৪৪৪ এবং জাহাঙ্গিরুরি এলাকায় বাতাসের গুণগত মান ছিল ৪৫৮। এই এলাকাগুলির অবস্থা সবচেয়ে খারাপ, কারণ এই প্রতিটি জায়গাতেই বায়ুর গুণগতমান ৪০০ পেরিয়ে গিয়েছে। যাকে গুরুতর বললে কম বলা হয় না।
কমিশন ফর এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্টের তরফে জানানো হয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে দিল্লি ও তার পার্শ্ববর্তী গুরুগ্রাম, ফরিদাবাদ, গাজিয়াবাদের মতো এলাকাগুলিতে -III পেট্রোলচালিত এবং BS-IV ডিজেলচালিত চার চাকার গাড়ি উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। যা ভাঙলে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। GRAP-এর তৃতীয় পর্যায়ের অধীনে আন্তঃরাজ্য বাসগুলিতে দিল্লিতে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। এই পরিস্থিতিতে দিল্লি ও সংলগ্ন এলাকায় যে কোনও ধরনের নির্মাণ বা ধ্বংস কাজ এবং খনি সম্পর্কিত কাজে স্থগিতাদেশ জারি করা হয়েছে। প্রতিদিন প্রধান প্রধান রাস্তাগুলিতে জল ছেটানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বৈদ্যুতিক যানবাহন, সিএনজি যান ও BS-VI ডিজেলচালিত বাস চলাচলের উপরই কেবলমাত্র অনুমতি থাকছে রাজধানী ও সংলগ্ন এলাকায়। প্রতি মুহূর্তে পাল্লা দিয়ে পড়ছে দিল্লির বাতাসের গুণগতমান। দিল্লির ৩৯টি মনিটরিং স্টেশনের মধ্যে ২৭টিই গুরুতর বিভাগের আওতায় চলে এসেছে বাতাসের গুণগতমানের বিচারে। গত ৩০ অক্টোবর থেকেই পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করেছিল দিল্লির। যত দিন গিয়েছে পরিস্থিতি খারাপ থেকে খারাপতর হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দিল্লির পরিবেশমন্ত্রী গোপাল রাইয়ের পদত্যাগ দাবি করেছে বিজেপি। পাল্টা আক্রমণ শানিয়েছেন গোপালও।
আরও পড়ুন:পাকিস্তানে ভয়াবহ স্বাস্থ্য-ঝুঁকির মুখে ১১ মিলিয়ন শিশু, শিশু-মৃত্যু ঠেকাতে পারবে পাক-সরকার?
দিল্লি-এনসিআরের বাতাসের গুণগতমান ক্রমাগত খারাপ হচ্ছে। কার্যত তা হয়ে উঠছে বিষাক্ত। যত তাপমাত্রা বাড়ছে দিল্লির, ততই বাড়ছে দূষণ। জাহাঙ্গীরপুরি, ওখলা, মুন্ডকা এবং সারাই কালে খানের মতো একাধিক এলাকারই বায়ুর গুণগতমান ৪০০-র উপরে। এদিকে এই পরিস্থিতিতে ভয়াবহ ধোঁয়াশার জেরে প্রতিবছরই দৃশ্যমানতা কমে যাওয়ার সমস্যায় ভোগে রাজধানী। এবারও একই রকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে দিল্লিতে। গত কয়েকদিনে রাজধানী ও সংলগ্ন এলাকায় কম দৃশ্যমানতার কারণে একাধিক ট্রেন ও ফ্লাইট লেটে চলেছে। বাধ্য হয়ে মানুষকে মুখে তুলে নিতে হয়েছে মুখোশ। প্রশাসনের তরফে জনসাধারণতে যতটা সম্ভব রাস্তায় কম বেরোতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষত সন্ধে ও সকালের দিকে বাতাসের গুণগতমান সবচেয়ে খারাপ থাকে। এই সময়গুলো অতিরিক্ত সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জনগণকে।