ছয় ফুট উচ্চতা ‘বুড়ো শিব’-এর! জানেন কোথায় আছে রাজ্যের সবথেকে বড় কালো পাথরের শিবলিঙ্গ?

Largest black stone Shivalinga : শোনা যায়, স্বয়ং কণিষ্ক নিয়মিত পুজো করতেন এই শিবলিঙ্গের। তারপর নাকি বন্যায় দামোদরের জলে একসময় এখানে ভেসে এসেছিল এটি

বারোমাসে তেরো পার্বণের হিসেব অবশ্য আর খাটে না হিন্দুদের ক্ষেত্রে। হাজার খানেক পার্বণ ইতিমধ্যে যোগ হয়েছে তালিকায়। তবে আজকের দিনে বাঙালি তথা হিন্দুদের যে ব্রতের চল আছে বাংলায় তা বহু প্রাচীন। দিনটি হল শিবরাত্রি। পৌরাণিক চরিত্র হলেও শিব নিয়ে একটা অজানা রহস্য রয়েই গিয়েছে। সারা বাংলা জুড়েই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বিখ্যাত সব শিব মন্দির। এরই মধ্যে বিখ্যাত হল বর্ধমান জেলা।

শৈব ও শাক্ত ধর্মের পীঠস্থান বলা হয় বর্ধমানকে। এখানেই রয়েছে এই রাজ্যের সব থেকে বড় কালো পাথরের শিবলিঙ্গ। উচ্চতা প্রায় ছয় ফুট। ওজন ১৩ টনেরও বেশি। গোটাটাই একটি মাত্র কালো পাথর নিপুণভাবে কেটে তৈরি করা হয়েছিল। এমন সুবিশাল শিবলিঙ্গ এই রাজ্যে তো নেই-ই, এমনকী দেশের মধ্যেও বিরল। লোকমুখে অনেকেই একে ‘বুড়ো শিব’ বলে ডাকেন। আবার এতো চওড়া গড়নের জন্য ‘মোটা শিব’ নামেও পরিচিত এই বর্ধমানেশ্বর। আজকের দিনে বর্ধমানের এই মন্দির সেজে ওঠে উৎসবের মহড়ায়। এই শহরেই অধিষ্ঠিত রয়েছেন দেবী সর্বমঙ্গলা। রয়েছে আরও নানান প্রসিদ্ধ কালী মন্দিরও। আবার এই শহরেরই উপকণ্ঠে রয়েছে রাজ আমলে প্রতিষ্ঠিত হয় একশো আট শিবমন্দির। তবে এই রাজ্যের সব থেকে বড় কালো পাথরের যে শিব লিঙ্গের কথা বলা হচ্ছে সেটি অন্য একটি মন্দির।

আজ থেকে প্রায় পঞ্চাশ বছর আগের কথা। সময়টা ১৯৭২ সাল। বর্ধমানের আলমগঞ্জ এলাকায় পুকুর খনন কাজ চলাকালীন মাটি কাটতে কাটতে গাঁইতির আঘাত লাগে পাথরে। কৌতূহল বাড়তেই সেই দিকে নজর পড়ে। অবশেষে সেখান থেকেই উদ্ধার হয় গৌরিপট্ট-সহ ৬ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট একক কালো পাথরের এই শিবলিঙ্গটি। তার পর স্থানীয়দের সহায়তায় এখানেই প্রতিষ্ঠা পান বর্ধমানেশ্বর শিব।

আরও পড়ুন - হিন্দু শিব মন্দিরে মেলে জৈন ছোঁয়া, কীভাবে ‘বাঁকুড়া’ নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক্তেশ্বর?

মন্দিরের ঠিক পাশেই রয়েছে দুধপুকুর। সেই পুকুরে স্নান সেরে পুজো দেন ভক্তেরা। শ্রাবণ মাসে পাওয়া গিয়েছিল শিবলিঙ্গটিকে, তাই সেই মাসেই এই শিবের আবির্ভাব দিবস পালন করা হয়। ওইদিন হাজার হাজার পুণ্যার্থী গঙ্গা থেকে বাঁকে করে জল এনে শিবের মাথায় ঢালেন। শিবরাত্রিতে অগণিত ভক্তের ভিড় হয় মন্দিরে। মেলাও বসে। কয়েকদিন ধরে চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আসর।

তবে এখানেই শেষ হয়ে যায় না ইতিহাস, বরং ইতিহাসবিদরা সম্পূর্ণ অন্য একটি দিক তুলে ধরেন গবেষণায়। তাঁদের মতে, এই শিবলিঙ্গ কণিষ্কের সময়কালের। অর্থাৎ প্রায় ১৬০০ -১৭০০ বছর আগের। শোনা যায়, স্বয়ং কণিষ্ক নিয়মিত পুজো করতেন এই শিবলিঙ্গের। তারপর নাকি বন্যায় দামোদরের জলে একসময় এখানে ভেসে এসেছিল এটি। যদিও এই বিষয়ে কোনও প্রামাণ্য নথি এখনও মেলেনি। তবে কনিষ্কের শিবভক্তির বর্ণনায় বারবার যে রকম শিবলিঙ্গের প্রসঙ্গ উঠে এসেছে তার সঙ্গে মিলে যায় এটি। তাই ইতিহাসবিদরা এই মতকেই প্রাধান্য দেন। আজকের দিনে বর্ধমান শহরের ১০৮ শিব মন্দিরের পাশাপাশি সবচাইতে বড় কালো পাথরের এই শিবলিঙ্গের মন্দিরেও পুণ্যার্থীদের ঢল নামে। প্রতিবছরই নতুন করে সেজে ওঠে মন্দির চত্বর। আর ভক্ত আর ভক্তির মিশেলে এভাবেই বছরের পর বছর ধরে রক্ষণ হয় ইতিহাসের।

More Articles