সিরাজ কি সত্যিই দেশপ্রেমিক ছিলেন?
Siraj ud-Daulah & Krishnachandra Roy: সিরাজ ঠিক করেছিলেন বণিকদের কায়েমিী স্বার্থ ভেঙে ফেলার পাশাপাশি এক ধাক্কায় তাঁর বিরুদ্ধে সংগঠিত সমস্ত পারিবারিক ষড়যন্ত্রেরও অবসান ঘটাবেন
দেশের সর্ববৃহৎ 'গণতান্ত্রিক উৎসব', থুড়ি; ভোটযুদ্ধ সরগরম হয়ে উঠেছে। সংসদপন্থী দলগুলো কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে প্রচারে। কেন্দ্রের দাঙ্গাবাজ বিজেপি সরকার এবং রাজ্যের তোলাবাজ তৃণমূল সরকার টেবিলের তলা দিয়ে হ্যান্ডশেক করা জারি রাখলেও উপরে একে অপরের বিরুদ্ধে রীতিমতো রণং দেহি মেজাজ দেখাচ্ছে। তুলনায় বামপন্থীদের অবস্থা খারাপ। কেরলে যেখানে সিপিআই প্রার্থী অ্যানি রাজার বিরুদ্ধে রাহুল গান্ধি স্বয়ং ইন্ডিয়া জোটের কালীদাস রূপে অবতীর্ণ হয়েছেন, সেখানে বাংলায় ফ্যাসি-বিরোধী মোর্চার নামে বামফ্রন্টের কত পাউন্ড মাংস কেটে অধীর চৌধুরীকে ভোজ দেওয়া হবে, সেই নিয়ে বাম মহলে আকচা-আকচি ক্রমবর্ধমান। 'প্রাইভেট' এবং 'পাবলিক' নকশালদের মধ্যেও দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। প্রাইভেটদের 'ভোট বয়কট করুন' বলে কলঘরে মুক্তাঞ্চল বানানোর বিপরীতে নির্বাচনকে লেনিনিয় কায়দায় ব্যবহার করতে চাওয়া 'পাবলিক'-রা কীভাবে অস্তিত্ব জাহির করবেন, সেই নিয়ে সূক্ষ্ম বিচার প্রক্রিয়া ও রাজনৈতিক ঘোষণাপত্র রচনা চলছে।
এরই মাঝে জমে উঠেছে ভোট-তরজা, যার অন্যতম সিরাজ-কৃষ্ণচন্দ্র বিতর্ক।
কৃষ্ণনগর লোকসভা আসন থেকে তৃণমূলের হেভিওয়েট প্রার্থী, প্রাক্তন সাংসদ মহুয়া মৈত্রের বিপরীতে বিজেপির হয়ে লড়তে নেমেছেন 'নদিয়ার রাজমাতা', শ্রীমতী অমৃতা রায়। প্রার্থীর নাম ঘোষণার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বিতর্ক তৈরি হয়েছে, কেননা বিজেপির বিরুদ্ধে প্রচারাভিযানে তৃণমূল টেনে এনেছে (এবং নির্বাচনী বাম পোঁ ধরেছে) পলাশী প্রান্তরে সিরাজদৌল্লার পরাজয়ের পিছনে থাকা ষড়যন্ত্রের প্রসঙ্গ, যার অন্যতম অংশীদার নদিয়া রাজবংশের শ্রেষ্ঠ পুরুষ বলে কীর্তিত মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র রায়। প্রচার করা হয়েছে যে, সিরাজকে হারিয়ে ইংরেজদের আনার ক্ষেত্রে কৃষ্ণচন্দ্রের যে বিশ্বাসঘাতকতা, বাংলার মাটিতে হিন্দুত্ববাদী, ফ্যাসিস্ট বিজেপিকে আনার ক্ষেত্রে সেই বিশ্বাসঘাতকতার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে চলেছেন রাজমাতা। শ্রীমতী রায়ও পাল্টা জবাব দিয়েছেন, সনাতন হিন্দুধর্মকে রক্ষা করার স্বার্থেই নাকি ব্রিটিশের সঙ্গে হাত মেলান কৃষ্ণচন্দ্র, কারণ বিধর্মী মুসলমান সিরাজের অত্যাচারে হিন্দু জনগণ ও ধর্ম বিপন্ন হয়ে পড়েছিল। সেই থেকে সংবাদ ও সামাজিক মাধ্যমে ঝড় বয়ে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠিত সংবাদপত্র থেকে অ্যামেচার ওয়েব পোর্টাল, সবাই ছুটছে ইতিহাস বিশেষজ্ঞদের দপ্তরে। উদ্দেশ্য, জনগণের সামনে তুলে ধরা সিরাজ কত বড় দেশপ্রেমিক এবং কৃষ্ণচন্দ্র কত নিকৃষ্ট খলনায়ক কিংবা এর উল্টোটা। বাংলার বুদ্ধিজীবী সমাজও এই নিয়ে ভাগ হয়ে গেছে। প্রামাণিক আখ্যান ও প্রতিআখ্যান রচনার চেষ্টায় ভূরিভূরি 'ঐতিহাসিক' তথ্যের জোগান ও উৎপাদন চলছে।
আরও পড়ুন- রাম ভগবান না কি ইতিহাসপুরুষ? যে প্রশ্ন গুলিয়ে দিচ্ছে রামমন্দির
মূল দাবিদাওয়া, জনগণের দৈনন্দিন সমস্যা, বিজেপি সরকারের জনবিরোধী নীতিসমূহের বিরোধিতার বদলে পৌনে তিনশো বছর আগে কী ঘটেছিল, তাই নিয়ে বিজেপির যে ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি, তাকেই তুলে ধরার পূর্ণ সুযোগ করে দিচ্ছে বিরোধী শক্তি। সিরাজ-কৃষ্ণচন্দ্র তরজা ওঠায় আদতে সুবিধাই পাচ্ছে বিজেপির প্রচারযন্ত্র। আরএসএস-বিজেপির ফ্যাসিস্ট পন্থা ও জনবিরোধী সীমাহীন দুর্নীতির কথা এড়িয়ে তারা এখন নেমেছে ভারতীয় ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের এক পার্শ্বচরিত্রকে মুখ্য ভূমিকায় প্রতিষ্ঠিত করতে, যাতে নিজেদের ধর্মীয় প্রচারের আড়ালে কর্পোরেট পুঁজির দালালি আরও ভালোভাবে করা যায়। স্বভাবতই, ইলেক্টোরাল বন্ডের ঠান্ডায় নেতিয়ে পড়া পদ্মগোখরো আবার ফণা তুলে দাঁড়িয়েছে।
কিন্তু প্রসঙ্গ উত্থাপন যখন হয়েছে, তখন সে নিয়ে আলোচনা চলবেই। ফলে কেন্দ্রীয় সরকারের মদতে ঘটে চলা দেদার লুঠের কথায় পাশাপাশি ঐতিহাসিক বিষয় নিয়েও কিছু শব্দ, বাধ্য হয়েই, খরচ করতে হবে।
ঐতিহাসিক অন্বেষণের যে কোনও পদ্ধতি বা মেথড প্রয়োগ করলে যে বাস্তব সত্য উঠে আসে তা হলো এই যে, পলাশী যুদ্ধে তৎকালীন বাংলার হিন্দু-মুসলমান সমাজের মাথারা উভয় পক্ষই সিরাজকে সরানোর জন্য যে চক্রান্ত করেছিল, তাতে বৃহৎ হিন্দু সামন্তরাজা কৃষ্ণচন্দ্র সামিল হয়ে অতীব গুরুত্বপূর্ণ 'অবদান' রাখলেও প্রধান পরিচালক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। নিজে ব্রাহ্মণ্যবাদের উগ্র অনুশীলনকারী হয়েও অন্যান্য ছোটখাট ষড়যন্ত্রকারীদের মতো তিনি এই ষড়যন্ত্রে অংশগ্রহণ করেছিলেন কোনও সনাতনী হিন্দুস্বার্থ রক্ষার দায় থেকে নয়। পুরোটাই ছিল ব্যক্তিগত লাভ-অলাভের, কায়েমি স্বার্থের ব্যাপার।
পলাশী যুদ্ধের আদত ষড়যন্ত্রকারী জগৎশেঠ মাহতাব ও স্বরূপচাঁদ। বাকিরা তাঁদের হাতের পুতুল কিংবা সহকারী মাত্র। নবাব সরফরাজ খানের বিরুদ্ধে যখন ষড়যন্ত্র করছিলেন আলীবর্দী, তখন তাঁর পক্ষে ছিলেন জগৎশেঠ। বাংলার সেই আমলের তিন সবচেয়ে প্রতিপত্তি ও প্রভাবশালী বণিকরাজার মধ্যে প্রধান ছিলেন তিনিই। মিন্ট বা টাঁকশাল ছিল তাঁরই দখলে। পলাশী ষড়যন্ত্রে জগৎশেঠদের আরেক সহযোগী ছিলেন বণিকরাজা আমীরচাঁদ বা উমিচাঁদ।
ঘটনা হলো, নবাব আলীবর্দী অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে এঁদের হাতে রাখতেন, না চটিয়ে কাজে লাগাতেন, কায়েমি স্বার্থে কৌশলী প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেও তাঁদেরকে বিপক্ষ শিবিরের ঠেলে দিতেন না। কিন্তু নতুন নবাব সিরাজউদ্দৌলা, তাঁর দৌহিত্র, ক্ষমতা পাওয়া মাত্রই প্রবল হয়ে উঠলেন। তিনি অল্পবয়সী এবং উদ্ধত। এক আঘাতেই সমস্ত কায়েমি স্বার্থ গুঁড়িয়ে ভেঙে সকলকে নিজের কর্তৃত্বের বশীভূত করতে চাইছিলেন তিনি, যা সেই সময়ে আর সম্ভব ছিল না।
নবাব কাঙ্খিত এই প্রশ্নহীন আনুগত্য সেদিন আর সুদূর সম্ভাবনাও ছিল না কারণ ততদিনে গগনচুম্বী সম্পদের মালিক হয়ে ওঠা জগৎশেঠরা আর নিছক বণিক থাকতে চাইছিলেন না। মুঘল সামন্ততন্ত্রের গর্ভে জন্মানো এই নব্য বুর্জোয়াবর্গ ক্রমশ শক্তি বৃদ্ধির ফলে দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোর মতো তার রাজনৈতিক ও সামাজিক উপরিকাঠামোকেও নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছিল এবং রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করে হয়ে উঠতে চাইছিল দেশের নিয়ন্ত্রা। তাই স্বৈরাচারী সিরাজদ্দৌলা এবং ক্ষমতালোভী জগৎশেঠের মধ্যে দ্বন্দ্ব ঐতিহাসিকভাবেই ছিল এক অবশ্যম্ভাবী ঘটনা। কিন্তু এর মাত্রা সেদিন নিশ্চিতভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যেত যদি তরুণ নবাব তাঁর দাদামশায়ের মতো বুদ্ধিমান এবং কৌশলী হতেন।
সিরাজ ঠিক করেছিলেন বণিকদের কায়েমি স্বার্থ ভেঙে ফেলার পাশাপাশি এক ধাক্কায় তাঁর বিরুদ্ধে সংগঠিত সমস্ত পারিবারিক ষড়যন্ত্রেরও অবসান ঘটাবেন। কিন্তু অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ না থাকলে যে তা করা যায় না এবং সেই নিয়ন্ত্রণ যে সব সময় জোর খাটিয়ে আদায় হয় না— এই প্রয়োজনীয় পরিপক্কতাও তাঁর ছিল না।
তখৎ-এ-মোবারকে বসেই তিনি জগৎশেঠ ও আমিরচাঁদের রাজনৈতিক ও সিয়াসী ক্ষমতা খর্ব করতে শুরু করলেন। নবাবের প্রিয়পাত্র হয়ে উঠলেন আরেক বণিকরাজা, আর্মেনীয় খোজা ওয়াজিদ। প্রাথমিকভাবে জগৎশেঠ ও আমিরচাঁদ এতে চিন্তায় পড়লেন। সমস্যা আরও ঘনীভূত হল যখন ইংরেজদের পক্ষ নিয়ে জগৎশেঠ নবাবের সামনে দু' চার কথা পেশ করলেন। সিরাজ এমনিতেই ইংরেজদের উপর বেজায় খাপ্পা ছিলেন। কলকাতায় অবৈধভাবে কেল্লা নির্মাণের চেষ্টা, মুঘল সম্রাটের দেওয়া ফরমানের যথেচ্ছ অন্যায় ব্যবহার ও তার দ্বারা কর ফাঁকি এবং নবাবের আদেশ অমান্য করে রাজবল্লভের ছেলে কৃষ্ণবল্লভকে অ্যাসাইলাম দেওয়ায় ইংরেজদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। এমতাবস্থায় জগৎশেঠ ইংরেজদের পক্ষে দু'কথা বললে এবং শওকত জঙ্গের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করতে নবাবকে তিন কোটি টাকা দিতে অস্বীকার করায় সিরাজ সমস্ত সভাসদ ও অমাত্যদের সামনে জগৎশেঠকে অপমান করলেন। অপমানিত বণিকরাজ ঠিক করলেন প্রতিশোধ নেবেন। শুরু হল ষড়যন্ত্র। এমনিতেই পারিবারিক ও রাজনৈতিক স্তরে নানা সমস্যা চলছিল। জগৎশেঠ তাকেই কাজে লাগালেন।
মীরজাফর প্রমুখরাও খামখেয়ালি নবাবের হাত থেকে মুক্তি চাইছিলেন। জগৎশেঠ ও আমিরচাঁদ এই সুযোগে ইন্দ্রিয়প্রবণ মীরজাফরকে সামনে রেখে নিজেদের কাজ গুছিয়ে নেবার চেষ্টা করবেন এটাই তো স্বাভাবিক। মুর্শিদাবাদের রাজশক্তির প্রতিভূ স্বরূপ ছিলেন মীরজাফর। তাঁকে তখৎ-এ-মোবারকের টোপ দিয়ে নিজের পক্ষে আনার প্রয়োজন ছিল ষড়যন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। সেই কাজ তাঁরা ভালোভাবেই করেছিলেন।
আরও পড়ুন- ইতিহাসে মাখামাখি বড়দিন! কলকাতার বুকে যেভাবে বেঁচে রয়েছে একফালি আর্মেনিয়া
শাসন ক্ষমতার দ্বিতীয় স্তরে যাঁরা অবস্থান করতেন, তাঁরা হলেন ভূমিশক্তি বা জমিদারশ্রেণি। এঁদের প্রতিনিধি ছিলেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়। তাঁকেও জয় করেন জগৎশেঠ। সিরাজের আমলে এই শ্রেণির কায়েমি স্বার্থ ব্যাপকভাবে বিঘ্নিত হতে শুরু করেছিল। খুব স্বাভাবিকভাবেই সামন্তশ্রেণির এই প্রতিনিধিরা যোগদান করেন ষড়যন্ত্রে এবং হয়ে ওঠেন ব্রিটিশ শক্তির সঙ্গে মুর্শিদাবাদের সিরাজ-বিরোধী রাজশক্তির সেতু বিশেষ। এখানে, বলা বাহুল্য, হিন্দু-মুসলমান জাতীয় ধর্মীয় বিভাজন আদৌ প্রয়োজনীয় ছিল না।
সেদিন হিন্দু-মুসলমান সম্প্রদায়গত বিরোধের বিষয়টাই যদি প্রধান হতো, তাহলে আলীবর্দীর আমলে বর্গী আক্রমণ ঠেকাবার ক্ষমতা নবাবের থাকত না। সেই সময় কৃষ্ণচন্দ্রের থেকে বিপুল কর আদায় করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে তাঁকে ধর্মশ্রেষ্ঠ বা ওই জাতীয় উপাধিতে ভূষিত করে তাঁর ক্ষোভ আলীবর্দী প্রশমিত করার পদ্ধতি গ্রহণ করেন ও তাঁর সমর্থন জিতে নেন। আর কৃষ্ণচন্দ্রের যে নদিয়া রাজবংশ, তার জন্মটাই তো হিন্দু রাজা প্রতাপাদিত্যের প্রতি তাঁর পূর্বপুরুষ ভবানন্দ মজুমদারের বিশ্বাসঘাতকতার মাধ্যমে, মানসিংহের নেতৃত্বাধীন মুঘল সেনাকে পথ দেখিয়ে দরজা খুলে দিয়ে। কৃষ্ণচন্দ্র মূলত একজন কূটবুদ্ধি সম্পন্ন, দুরাচারী, নারীসঙ্গলোলুপ, সুবিধাবাদী রাজা ছিলেন। সিরাজের কারণে ইংরেজ বণিক এবং জগৎশেঠের দ্বন্দ্বে তিনি যাঁর সঙ্গে তাঁর লাভের সম্পর্ক ছিল, সেই পক্ষ বেছে নিয়েছিলেন। নতুন নবাবের খামখেয়ালিপনায় ভীত ছিলেন তিনি, তার কায়েমি স্বার্থে আঘাত হেনেছিলেন সিরাজ।
তবে, আবারও বলা প্রয়োজন যে, জগৎশেঠ কিংবা মীরজাফর কিংবা কৃষ্ণচন্দ্র কোনওভাবেই ব্রিটিশদের হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়ার কথা কল্পনাতেও আনেননি। এঁরা সিরাজ-বিরোধী সওদাগর, মনসবদার ও জমিদার শক্তির প্রতিভূরূপে আস্থা স্থাপন করেছিলেন কর্নেল সাবিৎজঙ্গ বা ক্লাইভের ওপর। ভেবেছিলেন, খেতাব, মনসব আর পয়সা দিয়ে ক্লাইভ তথা ইংরেজদের দিয়ে নিজেদের কাজ হাসিল করে তাদের মোগল শাসনের আওতাতেই রেখে দেবেন। ইংরেজরাও প্রাথমিকভাবে, এমনকী আলিনগরের যুদ্ধের পরেও, ভেবেছিল সিরাজের সঙ্গে মিটমাট করে সখ্য গড়ে তুলবেন। কিন্তু ঘটনার পরিণতি হয়েছিল অন্যকিছুই।
ফলে, সিরাজ-কৃষ্ণচন্দ্র ইত্যাদি দ্বন্দ্বকে সামনে এনে বিজেপির শ্রমিক-কৃষক বিরোধী লুঠতরাজ এবং ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ অবস্থানকে ধ্বংস করে, কর্পোরেট পুঁজির প্রধান পাহারাদার রূপে, সাংবিধানিক ছিটেফোঁটা গণতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করার বিষয় আড়ালে চলে যাচ্ছে। আজকে সামনে আনতে হবে এই বিষয়গুলোই। সস্তা ঐতিহাসিক প্রতিতুলনা টেনে লাভের লাভ কিছু হবে না, জনগণকে সচেতন করা প্রয়াস অধরাই থেকে যাবে। মহাকালের রথের ঘোড়া এখন পাতালের দিকে ছুটছে। তার কেশর খামচে জমির উপরে নিয়ে আসার চেষ্টা না করলে গোটা দেশটাই রসাতলে গিয়ে পৌঁছবে। এই বোধ না জাগলে সামনে সমূহ বিপদ।