পুরুষদের সংবেদনশীল অংশের সমূহ বিপদ ঘটাচ্ছে স্মার্টফোনই? যা বলছে গবেষণা
Sperm Count and Smart Phone : গত ৫০ বছরে পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা এবং গুণমান দুই-ই যে হ্রাস পেয়েছে
স্মার্টফোন ছাড়া জীবন ভাবা এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে সম্ভব কি? নিয়মিত জীবনযাপনে থেকে, কাজের মধ্যে থেকে, সামাজিকতায় থেকে স্মার্টফোনকে বাদ দেওয়া একটা বড় অংশের মানুষদের কাছেই অসম্ভব। স্মার্টফোন আমাদের কী কী সর্বনাশ করেছে এই তালিকা সামান্য খুঁজলেই মিলবে। তবে নতুন গবেষণা সম্প্রতি সেই তালিকায় এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উল্লেখ করেছে। গবেষণা বলছে, স্মার্টফোন পুরুষদের শুক্রাণুর গুণমানকে প্রভাবিত করতে পারে। বিজ্ঞানের ভাষায় বিষয়টিকে বলে 'স্পার্মাগেডন'।
গত ৫০ বছরে পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা এবং গুণমান দুই-ই যে হ্রাস পেয়েছে তা সত্য। তবে একটি বিশেষ সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২০০৫ সালের পর থেকেই এই হ্রাস উল্লেখযোগ্য হারে ঘটেছে। স্মার্টফোন কি সত্যিই এর জন্য দায়ী? জেনেভা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা ১৮ থেকে ২২ বছর বয়সি ২,৮৮৬ জন সুইস পুরুষের তথ্য খতিয়ে দেখেন। ২০০৫ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে দেশব্যাপী ছয়টি সামরিক নিয়োগ কেন্দ্রে ছিলেন এই পুরুষরা।
এই পুরুষদের জীবনযাত্রার অভ্যাস, তাদের সাধারণ স্বাস্থ্যের অবস্থা এবং স্মার্টফোন ব্যবহার করা, ব্যবহার না করার সময় ফোন সাধারণত কোথায় রাখা থাকে সেই সম্পর্কিত বিশদ তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, যে পুরুষদের শুক্রাণুর ঘনত্ব উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি ছিল তাঁরা সপ্তাহে একবারের বেশি ফোন ব্যবহার করেননি (প্রতি মিলিলিটারে ৫৬.৫ মিলিয়ন শুক্রাণু)। যে পুরুষরা তাদের ফোন দিনে ২০ বারের বেশি ব্যবহার করেন তাঁদের শুক্রাণু ২১ শতাংশ কম (প্রতি মিলিলিটারে ৪৪.৫ মিলিয়ন)। ওই বিশ্লেষণে আরও বোঝা যায় যে, শুক্রাণুর গুণমান ২০০৫-২০০৭ সালের তুলনায় ২০০৮-২০১১ এবং ২০১২-২০১৮ এবং এর পরবর্তী সময়ে আরও দ্রুত হ্রাস পেয়েছে।
আরও পড়ুন- দ্রুত গতিতে বাড়ছে পুরুষদের লিঙ্গের দৈর্ঘ্য! আনন্দ নয়, চরম ভয়ের কারণ শোনালেন গবেষকরা
অর্থাৎ স্মার্টফোন যত 2G থেকে 3G এবং তারপর 3G থেকে 4G-র দিকে এগিয়েছে, ফোনের ট্রান্সমিটিং ক্ষমতা ততই হ্রাস পেয়েছে, বলছেন সুইস ট্রপিক্যাল অ্যান্ড পাবলিক হেলথ ইনস্টিটিউটের লেখক এবং সহযোগী অধ্যাপক মার্টিন রোসলি। ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক বিকিরণ শুক্রাণুর গুণমানকে ভীষণ প্রভাবিত করে। অনেকেই নিজেদের স্মার্টফোনটি প্যান্টের পকেটে রাখে, কুঁচকির খুব কাছে। মোবাইল থেকে বের হওয়া ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গ শরীরের এই সংবেদনশীল অংশটিতে প্রভাব ফেলে।
তবে এটিই একমাত্র কারণ নয়। গবেষক রিটা রাহবান বলছেন, যারা ফোন নিজের শরীরের এত কাছে রাখেননি সেই পুরুষদের শুক্রাণুর উপরেও প্রভাব পড়েছে। ফলে নির্দিষ্ট করে এই কারণটিকেই দায়ী করা যায় না। তবে সাম্প্রতিক দশকগুলিতে শুক্রাণুর গুণমান কমে যাওয়া যে প্রযুক্তিগত, সামাজিক বা পরিবেশগত পরিবর্তনের সঙ্গেই যুক্ত তা অস্বীকার করা যায় না। গবেষকদের একাংশ এর আগে যুক্তি দিয়েছিলেন যে 'স্পার্ম অ্যাপোক্যালিপস' মূলত দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত পণ্য তৈরিতে কাজে লাগা পরিবেশগত দূষকের কারণেই হচ্ছে। নতুন গবেষকরা বলছেন, মোবাইল ফোন ব্যবহার এবং বীর্যের গুণমানের মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে অবশ্যই। তবে তা একটি মাত্র কারণ নয়।
পুরুষদের উর্বরতা বাড়াতে বা বীর্যের মান বৃদ্ধি করতে ফোন ব্যাগে রাখা বা ফোনের ব্যবহার সীমিত করতে বলাই যায়। কিন্তু বর্তমানে এমন কোনও প্রমাণ নেই যাতে এগুলি করলেই শুক্রাণুর গুণমানকে উন্নত হবে তা নিশ্চিত করে বলা যায়। মোবাইল একটি যন্ত্র মাত্র, হ্যাঁ তা অবশ্যই পুরুষদের যৌনস্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলছে। তবে মোবাইল থেকে দূরে গেলেই যে স্পার্ম ঘটিত সমস্যার সমাধান হবেই তাও নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না বিজ্ঞানীরা।