ল্যাগারেঞ্জ পয়েন্টের একেবারে কাছে আদিত্য এল-১, নতুন বছরেই কি তবে সূর্যজয়?
Aditya L1: ইসরোর প্রধান এস সোমনাথ জানিয়েছেন,আগামী ৬ জানুয়ারি বিকেল চারটে নাগাদ সূর্যের ল্যাগারেঞ্জ পয়েন্টে পৌঁছনোর কথা আদিত্য এল ওয়ানের।
চাঁদের মাটিতে সাফল্যের পর সূর্যে হানা দিয়েছে ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন (ISRO)। গত ২ সেপ্টেম্বর সূর্যের উদ্দেশে রওনা হয়েছিল আদিত্য এল ওয়ান। তার পর প্রায় ১০ লক্ষ কিলোমিটার পাড়ি দিতে হয়েছে সেই মহাকাশযানটিকে। যাতে সময় লাগার কথা ছিল প্রায় ১২০ দিনের মতো। অবশেষে সেই দূরত্বের অধিকাংশটাই পার করে ফেলেছে আদিত্য এল ওয়ান। ইসরোর তরফে জানানো হয়েছে, আগামী ৬ জানুয়ারি উদ্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে যাওয়ার কথা সূর্যযান আদিত্য এল ওয়ান।
ইসরোর প্রধান এস সোমনাথ জানিয়েছেন,আগামী ৬ জানুয়ারি বিকেল চারটে নাগাদ সূর্যের ল্যাগারেঞ্জ পয়েন্টে পৌঁছনোর কথা আদিত্য এল ওয়ানের। ওই ল্যাগারেঞ্জ পয়েন্টের প্রায় ধারেকাছে ইতিমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছে সৌরযানটি। তবে এই সময়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে জানিয়েছেন ইসরোর কর্ণধার। আদিত্য এলওয়ানের ইঞ্জিনটি এসময় নিয়ন্ত্রিত ভাবে জ্বলবে, যাতে সেটি হ্যালো নামক কক্ষপথে প্রবেশ করতে পারে। ফলে এই সময়ের উপরেই নির্ভর করছে গোটা অভিযানের সাফল্য।
আরও পড়ুন: পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে সূর্যের কক্ষপথে, সাফল্য থেকে আর কতদূরে দাঁড়িয়ে আদিত্য?
গত ২ সেপ্টেম্বর পোলার স্যাটেলাইন লঞ্চ ভেহিক্যাল বা PSLV-C57 রকেটে চেপে সূর্যের অভিমুখে রওনা হয় ইসরোর সূর্যযানটি। উৎক্ষেপণের প্রায় এক ঘণ্টা পাঁচ মিনিট পর পৃথিবীর কক্ষপথে স্থাপন করা হয় সেটিকে। তার পরে ১৬ দিন পর্যন্ত পৃথিবীর চারদিকেই ঘুরপাক খেয়েছে সৌরযানটি। আর এ সময়েই যথাসাধ্য গতিবেগ বাড়িয়েছে সেটি। প্রায় পাঁচটি ধাপে গতিবেগ বাড়ানোর পর পৃথিবীর কক্ষপথ ছেড়ে আসল যাত্রা শুরু করে আদিত্য এল ওয়ান।
প্রায় চার মাস পরে গন্তব্যের একেবারে কাছে পৌঁছে গিয়েছে সৌরযানটি। সূর্য অভিযান বটে, তবে চাঁদের মতো মোটেও সূর্যের বুকে গিয়ে নামবে না আদিত্য এল ওয়ান। কারণ সূর্য বড় কঠিন ঠাঁই। সেখানে একটু বেসামাল হলেই পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। ফলে আদিত্য এল ওয়ানের গন্তব্য ছিল পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে এমন একটি স্থান যেখানে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি অনেকটাই নিরপেক্ষ, যাকে বিজ্ঞানীরা বলছেন ল্যাগারেঞ্জ পয়েন্ট। তবে ওই জায়গায় মাধ্যাকর্ষণ একেবারে নিরপেক্ষ বললে কিন্তু ভুল হবে। কারণ পৃথিবী ছাড়াও তো মঙ্গল, শুক্রের মতো অন্যান্য গ্রহরা রয়েছে, যারা একই ভাবে মাধ্যাকর্ষণ বল প্রয়োগ করছে সূর্যের উপরে। তবে যে জায়গাটা আদিত্য এল ওয়ানের জন্য বাছাই করা হয়েছে, সেটি তুলনামূলক ভাবে স্থিতধী বলেই মনে করেছেন বিজ্ঞানীরা। সেখানেই দাঁড়িয়ে সূর্যকে খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করার কথা আদিত্য এলওয়ানের। আর তার মাধ্যমেই সমস্ত তথ্য এসে পৌঁছবে ইসরোর হাতে।
ইসরোর তরফে জানানো হয়েছে, ইতিমধ্যেই প্রয়োজনীয় পরীক্ষানিরিক্ষা সেরে ফেলেছেন বিজ্ঞানীরা। ছয়টি পেলোড পরীক্ষা করা হয়েছে। সেগুলো সম্পূর্ণ ঠিকঠাক মতো কাজ করছে, এবং প্রয়োজনীয় তথ্য পৌঁছে দিচ্ছে ইসরোর সদর দফতরে। তবে ল্যাগারেঞ্জ পয়েন্টে পৌঁছেই কিন্তু সূর্যের দিকে মুখ তুলে তাকাবে না আদিত্য এল ওয়ানের পেলোডগুলি। ভিতরের ইলেকট্রনিক্সগুলি একেবারে ঠিকঠাক অবস্থায় রয়েছে এবং তা তথ্য় পাঠাতে প্রস্তুত, তা জানার পরেই কাজ শুরু করবে সেগুলি। ইসরোকর্তা এস সোমনাথ জানাচ্ছেন, মহাকাশের আবহাওয়া এবং অন্যান্য বিষয়ের উপর সূর্যের প্রভাব ও আরও অনেক নতুন বিষয় জানতে সাহায্য করবে এই সৌরঅভিযান।
আরও পড়ুন: চাঁদ ছুঁয়ে সূর্যমুখী যাত্রা, ইসরোর আদিত্য এল ১-এর দিকে যে কারণে তাকিয়ে বিশ্ব
চাঁদের পর এবার কি তাহলে সূর্যজয়! নতুন বছরের শুরুটা কি তবে হতে চলেছে ফের নতুন এক সাফল্য দিয়েই। এখন থেকেই আশায় বুক বাঁধছে গোটা বিশ্ব।