বিলাসবহুল ফ্ল্যাট থেকে লাখ টাকার জমি, ভারতের এই ভিখারিদের সম্পত্তি আপনাকেও ভাবাবে

Rich Beggars of India : সেই সম্পত্তি পাওয়া তো অনেকের কাছেই স্বপ্ন! সেখানে এই মানুষগুলি স্রেফ ভিখারি হয়েই কোটি কোটি টাকার মালিক!

মাথার ঘাম পায়ে ফেলে নিত্যদিন খেটে চলে সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষ। সামান্য যে কটা টাকা আসে, সেটা দিয়েই চলে সংসার। আজকের মূল্যবৃদ্ধির বাজারে খরচের খাতাতেই হয়তো বেশি অঙ্ক জমা হয়। তারপরও সামান্য কিছু জমিয়ে রাখা হয়। এ তো গেল মধ্যবিত্তের গল্প। কিন্তু ভারতের বুকে কেবল এদেরই লড়াই চলে না। উচ্চ-নিম্নবিত্তদের ভিড়ের বাইরে থাকে আরও একটা শ্রেণী – ভিক্ষাজীবী। গোদা বাংলায়, ভিখারি। প্রায় প্রতিটা স্টেশনের বাইরে, রাস্তার মোড়ে, উড়ালপুলের নিচে তাঁদের আস্তানা। জীবনের জটিলতা তাঁদের এই খাদে এনে ফেলেছে। কখনও দু’মুঠো জোটে, কখনও আবার পেট ফাঁকা রেখেই গোটা রাত কাটিয়ে দেয় ভারতের ভিখারিরা।

কেবল বাংলা নয়, গোটা ভারতজুড়ে কয়েক লক্ষ পথবাসী, ভিখারি রয়েছে। উত্থান পতনের মধ্যে দিয়েই বয়ে যায় সেই জীবন। এক নজরে দেখলে মনে হবে, মধ্যবিত্তের চিঁড়েচ্যাপ্টা জীবনের বাইরে এঁরা আরও গভীর ঘূর্ণাবর্তের মধ্যে পড়েছেন। কাঁধে একটা ঝোলা, সঙ্গে অ্যালুমিনিয়াম বা স্টিলের থালা বা গ্লাস – সম্বল বলতে এতটুকুই। তবুও তাঁদের সংসার থাকে, জীবন থাকে। আপাতদৃষ্টিতে এটাই ভারতের সিংহভাগ ভিখারির জীবন।

‘সিংহভাগ’ কেন? কারণ, সমস্ত জিনিসেরই কিছু না কিছু ব্যতিক্রম থাকে। এই ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমের সেই নিদর্শনগুলি দেখলে আমার আপনার মাথা ঘুরতে বাধ্য। এই ভারতের বুকেও এমন কয়েকজন ভিখারি আছেন, যাঁদের পেশা ভিক্ষাবৃত্তি। কিন্তু সেই মানুষগুলির সম্পত্তির পরিমাণ শুনলে মুখ হাঁ হয়ে যাবে গোটা ভারতের। সেই সম্পত্তি পাওয়া তো অনেকের কাছেই স্বপ্ন! সেখানে এই মানুষগুলি স্রেফ ভিখারি হয়েই কোটি কোটি টাকার মালিক! না, কোনও মজার ঘটনা নয়। সত্যিই এমন কয়েকজন ‘কোটিপতি’ বিখারি রয়েছে এই দেশে। তবুও তাঁরা আজও রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে ভিক্ষাবৃত্তি করেন।

আরও পড়ুন : ভারতের লক্ষ লক্ষ শিশুকে হাত পাততে হচ্ছে দু’মুঠো ভিক্ষের জন্য, কেন এই অবস্থা দেশের শৈশবের?

ভরত জৈন

মুম্বইয়ের এই ভিখারির গল্প এর আগেও সংবাদপত্রে, সোশ্যাল মিডিয়ায় উঠে এসেছে। আজও ভরত জৈন মুম্বইয়ের পারেল এলাকায় ভিক্ষাবৃত্তি করেন। কিন্তু তাঁর আয় শুনলে মাথা খারাপ হয়ে যাবে আপনার। সংবাদমাধ্যমের গবেষণা বলছে, ভরত জৈন প্রতি মাসে প্রায় ৭৫ হাজার টাকার কাছাকাছি আয় করেন! শুধু তাই নয়, মুম্বইয়ের মতো জায়গায় তাঁর দুটো বিলাসবহুল ফ্ল্যাটও রয়েছে। প্রতিটা ফ্ল্যাটের দাম নাকি ৭০ লাখ টাকা!

কৃষ্ণকুমার গিতে

ইনিও মুম্বইয়ের রাস্তাতেই লাঠি হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়ান। গাড়ি থামলে, কিংবা পথচলতি মানুষের থেকে ভিক্ষা চান। যা জোটে, সেটা দিয়েই চলে দিন। কিন্তু কত জোটে? প্রতিদিন প্রায় ১৫০০ টাকা রোজগার করেন কৃষ্ণকুমার। আর সেই উপার্জন জমিয়ে জমিয়েই মুম্বইয়ে একটি ফ্ল্যাটও কিনেছেন তিনি। ভাইয়ের সঙ্গে এখন সেখানেই থাকেন, সঙ্গে চলতে থাকে ভিক্ষাবৃত্তি।

লক্ষ্মী দাস

১৯৬৪ সাল থেকে কলকাতার রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতেন লক্ষ্মী দাস। সেই ১৬ বছর বয়স থেকেই ভিখারির জীবন শুরু। তারপর ৫০ বছরেরও বেশি সময় কেটে গিয়েছে। প্রতিদিন প্রায় ১০০০ টাকা আয় করেন লক্ষ্মীদেবী। সেইসঙ্গে রয়েছে নিজস্ব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট। মোটা অঙ্কের টাকাও জমে আছে সেখানে।

আরও পড়ুন : কবে আসবে মোদির ‘১৫ লাখ’! ২০২৪ এর আগে কি ফিরতে চলেছে প্রতিশ্রুতির অর্থ?

বুরজু চন্দ্র আজাদ

২০১৯-এ মুম্বইয়ের একটি ট্রেন দুর্ঘটনায় বুরজু মারা যান। তার আগে অবধি ভিক্ষাবৃত্তিই ছিল একমাত্র পেশা। মৃত্যুর পর মুম্বই পুলিশ তাঁর সম্পত্তির খোঁজ করে। তখনই চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যায় সবার। বুরজুর প্রায় ৯ লক্ষ টাকা ব্যাঙ্কে ফিক্সড ডিপোজিট রয়েছে। সেইসঙ্গে নগদ রয়েছে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা! আর পুরোটাই নাকি ভিক্ষাবৃত্তি করেই উপার্জন করেছিলেন তিনি।

পাপ্পু কুমার

পাটনায় গেলে, সেখানকার রেল স্টেশনে প্রায়ই দেখা যায় পাপ্পুকে। দুর্ঘটনায় তাঁর পা ভেঙে যায়। তারপর থেকেই ভিখারির জীবন শুরু। এখনও তা-ই চলছে। কিন্তু সম্পত্তির পরিমাণ দেখলে যে কোনও মানুষের চোখ কপালে উঠতে বাধ্য! কয়েকটি সমীক্ষার রিপোর্ট বলে, পাপ্পুর সম্পত্তির পরিমাণ নাকি প্রায় দেড় কোটি টাকা!

সরবতিয়া দেবী

এই বৃদ্ধাও পাটনার অশোক সিনেমা হলের কাছেই থাকেন। পাটনার অন্যতম পরিচিত ভিখারি সরবতিয়া দেবী নাকি প্রতি মাসে ৫০,০০০ টাকা রোজগার করেন! শুধু তাই নয়, সরবতিয়া দেবী নিজস্ব ইনস্যুরেন্স আছে, তাও প্রিমিয়াম বিভাগের! সেজন্য প্রতি বছর ৩৬,০০০ টাকা করে দিতেও হয়।

শম্ভাজি কালে

নিজেকে ‘পেশাদার ভিখারি’ বলতেই ভালোবাসেন তিনি। ভিক্ষাবৃত্তি করলেও তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ সবাইকে অবাক করে দেবে। রিয়েল এস্টেট নাকি শম্ভাজির বিশেষ পছন্দ। তাই একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের পাশাপাশি কয়েক লাখ টাকার জমিও কিনে রেখেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, সোলাপুরে নিজের দু’টি বাড়িও রয়েছে!

More Articles