এক হাতে পদ্ম, অন্য হাতে ফল! ভারতের এই রাজ্যেই আছে সনিয়া গান্ধীর বিশাল মন্দির!

Sonia Gandhi Temple: মন্দিরে সনিয়ার একটি ৯ ফুটের মূর্তি রয়েছে, সোনালি রঙের৷

ভারত মূর্তিপুজোর দেশ। না, অবশ্যই শুধু ধর্মের পুজো না। রাজনীতির পুজোতেও এখানে আদর্শের থেকে এগিয়ে ব্যক্তি, দলের থেকে এগিয়ে দলপতি। ভারতের রাজনীতি চিরকালই আইকন খুঁজেছে। নেতাজি, গান্ধীজি, নেহেরু থেকে শুরু করে ইন্দিরা, জ্যোতি বসু, মোদি, বিজয়ন অথবা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভারতের ভোটাররা সামনে একজন মূর্তি খোঁজেন। তাই দলও নেতা নেত্রীর কাট আউটে ভরিয়ে ফেলে সাম্রাজ্য। অতি উৎসাহীরা শুধু কাট আউটেই থেমে থাকেন না, গড়ে ফেলেন আস্ত মূর্তিও, মন্দিরও। এই ভারতেই কংগ্রেস দলের নেত্রী সনিয়া গান্ধীর একটি মন্দির রয়েছে তা অনেকেরই অজানা। তেলেঙ্গানার একজন কংগ্রেস সমর্থক তৈরি করছিলেন এই মন্দির।

পি শঙ্কর রাও প্রাক্তন মন্ত্রী। মন্দিরের নেপথ্যের কারিগর তিনিই। সনিয়া গান্ধীর প্রতি নিজের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতেই এই মন্দির গড়েছেন তিনি। মন্দিরে সনিয়ার একটি ৯ ফুটের মূর্তি রয়েছে, সোনালি রঙের৷ ইতালিয় বংশোদ্ভূত সনিয়া গান্ধী এই দেশের অন্যতম শক্তিশালী রাজনীতিবিদ তা নিয়ে সন্দেহ নেই। এই মন্দার বাজারেও কংগ্রেসকে সামলে রেখেছেন তিনি। সম্প্রতি তাঁরই সন্তান রাহুল গান্ধী ভারতের অখণ্ডতাকে জুড়তে রাস্তায় নেমেছেন, ‘ভারত জোড়ো যাত্রা' নিয়ে এগিয়ে চলেছেন দক্ষিণ থেকে উত্তরে। আর সনিয়া সামলাচ্ছেন দলকে, কখনও আড়ালে থেকে, কখনও প্রকাশ্যে।

অবশ্য তৎকালীন অন্ধ্রপ্রদেশে সনিয়ার মন্দিরই কোনও রাজনীতিবিদের প্রথম মন্দির ছিল না। এর আগে, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এবং জনপ্রিয় চলচ্চিত্র তারকা অথা রাজনীতিবিদ এনটি রামা রাওয়ের স্মৃতিতেও মন্দির তৈরি করা হয়েছে।

পি শঙ্কর রাও জানিয়েছিলেন, ২০১৪ সালে দক্ষিণ ভারতের রাজ্য অন্ধ্রপ্রদেশকে ভেঙে একটি নতুন রাজ্য তেলেঙ্গানা তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তৎকালীন কংগ্রেস সভাপতি সনিয়া গান্ধী। এই সিদ্ধান্তের জন্য ধন্যবাদ' জানাতেই তিনি মাহবুবনগর জেলায় মন্দিরটি নির্মাণ করেন।

আরও পড়ুন- ভারতের এই মন্দিরে পূজিত হয় মোটরবাইক! ‘বুলেট বাবা’-র নেপথ্যে রয়েছে গা ছমছমে যে ঘটনা

তেলেঙ্গানার জনসংখ্যা ৩৫ মিলিয়ন। ভারতের ষষ্ঠ বৃহত্তম শহর হায়দরাবাদ সহ অন্ধ্র প্রদেশের ২৩ টি জেলার থেকে ১০টি জেলা নিয়ে গঠিত হয় এই রাজ্য। "পৃথক তেলেঙ্গানা রাজ্যের স্বপ্ন পূরণে ঐতিহাসিক ভূমিকার জন্য সনিয়া গান্ধীকে ধন্যবাদ জানানোর এটাই আমাদের পন্থা," বলেছিলেন শঙ্কর রাও।

তেলেঙ্গানার স্থানীয় শিল্পীরাই সনিয়া গান্ধীর মূর্তি তৈরির কাজ করেছেন। সনিয়ার এক হাতে রয়েছে একটি পদ্ম এবং অন্য হাতে ফলের বাটি। মন্দিরের বাইরের দেয়ালে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধী এবং রাহুল গান্ধী সহ পুরো গান্ধী বংশের প্রতিকৃতিও রয়েছে। ২০১৪ সালে প্রাক্তন সাংসদ পোনম প্রভাকর, প্রাক্তন বিধায়ক সুদ্দলা দেবাইয়া সহ অন্যান্যদের উপস্থিতিতে টি জীবন রেড্ডি আনুষ্ঠানিকভাবে মন্দিরটির উদ্বোধন করেছিলেন।

তবে মন্দিরটি সমালোচনার মুখেও পড়েছে বিস্তর। রাজ্যের বর্ষীয়াণ কমিউনিস্ট নেতা রামকৃষ্ণ সাফ জানিয়েছিলেন, এসব মন্দির ব্যক্তিগত স্বার্থকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ছলনা মাত্র। "ভারত একটি গণতান্ত্রিক দেশ এবং গণতন্ত্রে এই জাতীয় অযৌক্তিক অনুশীলনের কোনও স্থান নেই। রাজনৈতিক নেতাদের সম্মান করা উচিত তবে ঈশ্বরের মতো পুজো করা উচিত নয়," বলেছিলেন তিনি।

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভ করার পর থেকেই নেহেরু-গান্ধী বংশই বেশিরভাগ সময় ভারতকে শাসন করেছে। তবে পরিবারে প্রধানমন্ত্রিত্বের দীর্ঘ ইতিহাস থাকলেও সনিয়া গান্ধী কোনও দিনই সেই পথে হাঁটতে চাননি।

 

More Articles