তাঁবুর ভেতর সাতজন মিলে গণধর্ষণ বিদেশি ট্রাভেল ভ্লগারকে! ঝাড়খণ্ডের ঘটনায় শিউরে উঠছে দেশ

Jharkhand Gang Rape: সন্ধে সাড়ে ৭টার দিকে দু'টি মোটরসাইকেলে কয়েকজন লোক আসে। তারা ওই তাঁবুর কাছে দাঁড়ায়।

ঝাড়খণ্ড নিসর্গ প্রেমীদের স্বর্গ। রুক্ষভূমি, জঙ্গল, টিলার রাজ্য তাই পর্যটকদের কাছে, বিশেষ করে অফবিট ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে আকর্ষণীয়। তবে ঝাড়খণ্ডের সাম্প্রতিক ভয়াবহ ঘটনা এই রাজ্যকে আতঙ্কের রাজ্য করে তুলেছে। মুখের সামনে ছুরি ধরে হুমকি, লাথি, ঘুষি এবং ধর্ষণ! গত ১ মার্চ ঝাড়খণ্ডের দুমকায় সাতজন পুরুষের বিরুদ্ধে একজন স্প্যানিশ মহিলা ট্রাভেল ভ্লগারকে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। ওই স্প্যানিশ ভ্লগার পুলিশের কাছে তাঁর অভিযোগে জানিয়েছেন, পুরো ঘটনাটি চলেছিল আড়াই ঘণ্টা ধরে।

ওই স্প্যানিশ মহিলা এবং তাঁর সঙ্গী প্রধান সড়ক থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে একটি জঙ্গলে পাহাড়ি এলাকায় তাঁবু খাটিয়ে থাকছিলেন। ২ মার্চ গভীর রাতে, প্রায় ২ টো নাগাদ কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে তাঁর বিবৃতি রেকর্ড করা হয়। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬ডি (গণধর্ষণ) এবং ৩৯৫ (ডাকাতি) ধারার অধীনে এফআইআর নথিভুক্ত করা হয়েছে। পুলিশের ওই এফআইআরে বলা হয়েছে, প্রথমে তিনজন পুরুষ ওই মহিলার সঙ্গীর সঙ্গে ঝগড়া শুরু করে। তারপর এই ঝগড়া হাতাহাতির পর্যায়ে যায়। ওই তিনজন ব্যক্তি মহিলার সঙ্গীর হাত বেঁধে দেয়। মহিলার অভিযোগ, অন্য চারজন ব্যক্তি ছুরি দেখিয়ে তাঁকে জোর করে তুলে নিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। অনবরত লাথি, ঘুষি মারতে থাকে এবং সাতজন পুরুষই বারবার ধর্ষণ করে ওই স্প্যানিশ মহিলাকে। এফআইআরে মহিলা বলেছেন, ওই পুরুষদের সকলেই অল্পবিস্তর মদ্যপ ছিল। ঘটনাটি সন্ধে প্রায় ৭.৩০ টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত চলে।

আরও পড়ুন- কাশ্মীর থেকে মণিপুর, ক্ষমতার হাতিয়ার যখন ‘ধর্ষণ’

মহিলা ও তাঁর সঙ্গী মোটরবাইকে বিশ্বভ্রমণে বেরিয়েছিলেন। গত বছরের জুলাইয়ের মাঝামাঝি পাকিস্তান ঘুরে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন তারা। দু'সপ্তাহ আগেই এই দম্পতি শ্রীলঙ্কায় অল্প সময় কাটিয়ে ভারতে ফের ফিরে আসেন। মহিলা জানিয়েছেন, দুমকার কুমরাহাট গ্রামে এসে পৌঁছেছিলেন তারা। অনেকটা দেরি হয়ে যাওয়ায় অস্থায়ী তাঁবু খাটিয়ে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন পাশের জঙ্গলে ঘেরা পাহাড়ি রাস্তায়। সন্ধে ৭টার দিকে তারা ওই তাঁবুর ভিতরেই ছিলেন। বাইরে কিছু লোকজনের আওয়াজ পান তারা। তা শুনে তাঁবু থেকে বেরিয়ে আসতেই দেখেন দু'জন লোক ফোনে কথা বলছেন। সন্ধে সাড়ে ৭টার দিকে দু'টি মোটরসাইকেলে কয়েকজন লোক আসে। তারা ওই তাঁবুর কাছে দাঁড়ায়। 'হ্যালো ফ্রেন্ডস' বলে বিড়বিড় করে নানা কথা বলতে থাকে। টর্চ জ্বালিয়ে যখন ওই মহিলা ও তাঁর সঙ্গী তাঁবু থেকে বের হয়ে আসেন, দেখেন পাঁচজন তাঁদের দিকে ছুটে আসছে এবং আরও দু'জন তাঁবুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই ব্যক্তিরা সবাই স্থানীয় ভাষায় কথা বলছিলেন, মাঝে মধ্যে কয়েকটি ইংরেজি শব্দও ব্যবহার করছিলেন বলে অভিযোগে জানিয়েছেন ওই মহিলা।

এই সাতজন ব্যক্তি মহিলা ট্রাভেল ভ্লগার এবং তাঁর সঙ্গীর জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয়, যার মধ্যে ছিল একটি সুইস ছুরি, একটি হাতঘড়ি, হিরে বসানো প্ল্যাটিনামের আংটি, একটি রুপোর আংটি, ইয়ারপড, পার্স, ক্রেডিট কার্ড, প্রায় ১১,০০০ টাকা, ৩০০ মার্কিন ডলার। মহিলা জানিয়েছেন, এই সাতজনের মধ্যে একজনের বয়স ছিল ২৮ থেকে ৩০ বছর, পরনে সাদা স্কার্ফ এবং সাদা টি-শার্ট। বাকিরা তুলনায় বেশি বয়স্ক। গোটা ঘটনাটি ঘটিয়ে তারা গ্রামের দিকে পালিয়ে যায়। এই ঘটনার প্রাথমিক ধাক্কা সামলে মহিলা ও তাঁর সঙ্গী তাঁদের মোটরসাইকেল নিয়ে কোনওমতে মূল সড়কে চলে আসেন। রাত্রি ১১ টা নাগাদ হাঁসডিহা পুলিশের টহলদারি দল তাঁদের দেখে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে। দু'জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য কাছের একটি কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে নিয়ে গিয়ে সেখানেই তাঁদের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত সাতজনকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মহিলা ও তাঁর সঙ্গী মঙ্গলবারই রাজ্য ছেড়ে চলে গেছেন। ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয়েছে তাঁদের। কিন্তু নিরাপত্তার ক্ষতিপূরণ সম্ভব? ঝাড়খণ্ডে দুই বিদেশি পর্যটকের এই হেনস্থা আতঙ্ক বাড়াচ্ছে সকলের মধ্যেই। একা মহিলাদের ভ্রমণ হোক বা সঙ্গী নিয়ে ভ্রমণ, নিরাপত্তা যে কতটা ঠুনকো বারেবারে প্রমাণিত হয়েছে এই দেশে।

More Articles