'ভয়ঙ্কর ছিল প্রথম ২৪ ঘণ্টা'... সুড়ঙ্গের ভয়াল স্মৃতি ভুলতে পারছেন না হিমাচলের বিশাল

Uttarkashi Tunnel Collapse: প্রাথমিক ভাবে ওঁরা ভেবেছিলেন, বড়জোর পাঁচ থেকে দশদিনের মধ্যেই তাঁরা বাইরের বেরিয়ে আসবেন। তবে ক্রমশ দীর্ঘ হতে থাকে অপেক্ষা।

সতেরো দিনের একটা যুদ্ধ। যে যুদ্ধের শেষে বাড়ি ফেরা আদৌ আছে কিনা জানতেন না সুড়ঙ্গে বন্দি ৪১ জন শ্রমিক। ভিতরে বাইরে এক অবিরাম লড়াই শেষে এসেছে এক আশ্চর্য জয়। যেখানে হারেনি কোনও পক্ষই। বিপর্যয়ের মুখের উপর দিয়ে সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গে বন্দি সমস্ত শ্রমিকের প্রাণ ফিরিয়ে এনেছেন হাজার হাজার উদ্ধারকারী। সেই মিছিলে কে নেই। স্থানীয় পুলিশ, প্রশাসন, দমকল, বিপর্যয় মোকাবিলা দল। নেমেছিল সেনা, এনডিআরএফ। এই উদ্ধারপ্রক্রিয়ায় ক্রমাগত মাথা খাটিয়েছেন একাধিক ইঞ্জিনিয়ার। দেশ-বিদেশ থেকে নানা বিশেষজ্ঞ দল নিয়ে আসা হয়েছিল এই কাজের জন্য। এত বড় উদ্ধারকাজ এর আগে দেখেনি দেশ।

এ দেশের বেশিরভাগ বড় কাজই হয় ভিনরাজ্যের শ্রমিকদের দিয়ে। সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গের কাজ করতেও বিভিন্ন রাজ্য থেকে এসেছিলেন শ্রমিকেরা। বিশাল কুমার নামে এক শ্রমিক এসেছিলেন হিমাচলপ্রদেশ থেকে। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর অভিজ্ঞতা। ভাগ করে নিয়েছেন ওই ১৭ দিনের ভয়ঙ্কর লড়াইয়ের গল্প। বিশাল জানান, সুড়ঙ্গে আটকে পড়ার পর প্রথম ২৪ ঘণ্টা ছিল ভয়াবহ। কারণ ওরা জানতেই না, আদৌ ওদের বাঁচাতে কিংবা সাহায্য় করতে আসছেন কিনা। বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ করাটাই ছিল সেসময় একটা চ্যালেঞ্জ।

আরও পড়ুন: ‘ইনসান কো ইনসান সমঝে!’ শ্রমিকদের বাঁচানোর পুরস্কারমূল্য ফিরিয়ে যা চাইলেন ব়্যাটহোল মাইনার্সরা

ক্রমে বাইরের পৃথিবী জানল, এই অন্ধকার সুড়ঙ্গে আটকা পড়ে রয়েছেন ৪১টি প্রাণ। কাজ করছে না ওয়াকিটকি। বাইরে কীভাবে জানাবেন যে আটকে পড়েছেন তাঁরা সুড়ঙ্গের ভিতরে। এমন সময়ে মাথায় আসে, দুটি পাইপ থাকে সুড়ঙ্গে। একটি অপরিষ্কার জল বাইরে পাঠানোর। দ্বিতীয়টি দিয়ে বাইরে থেকে বিশুদ্ধ জল ঢোকে সুড়ঙ্গের ভিতরে। তাঁরা ওই বর্জ্য জলের পাইপটিকেই সংকেত হিসেবে ব্যবহার করেছেন শ্রমিকেরা। তাঁরা যে আটকা পড়ে রয়েছেন সুড়ঙ্গের মধ্যে, জানানোর চেষ্টা করেন সকলকে। তিন থেকে চার বার পাম্প চালানো হয় এমন ভাবে, যাতে তা সঙ্কেতের মতো ঠেকে বাইরের পৃথিবীর কাছে। না, ব্য়র্থ হয়নি সেই চেষ্টা। এর পর দশ থেকে বারো ঘণ্টার মধ্যে সেই পাইপ দিয়েই ক্রমে অক্সিজেন আসতে শুরু করে তাঁদের কাছে।

 

ক্রমে ফুরিয়ে আসছিল মোবাইলের চার্জ। বাধ্য় হয়েই তাঁরা বন্ধ করে দেন মোবাইলগুলি। বিশাল জানান, প্রথম ওই ২৪টি ঘণ্টা ছিল হৃদপিণ্ড বন্ধ করে দেওয়া। আর কোনওদিন কি বেরোনো হবে বাইরের পৃথিবীতে। তবে উদ্ধারকাজ শুরু হয়েছে বোঝার পর একটু কমে উৎকণ্ঠা। তখনও কি জানতেন তাঁরা ওই সুড়ঙ্গেই কাটাতে হবে ১৭টা দিন। প্রাথমিক ভাবে ওঁরা ভেবেছিলেন, বড়জোর পাঁচ থেকে দশদিনের মধ্যেই তাঁরা বাইরের বেরিয়ে আসবেন। তবে ক্রমশ দীর্ঘ হতে থাকে অপেক্ষা। হিমাচলের বাসিন্দা বিরাট জানিয়েছেন, তাঁরা ভেবেছিলেন, বেশিরভাগ সময়টা ঘুমিয়ে কিংবা বাকিদের সঙ্গে গল্প করেই কেটে যাবে।

‘Spent most time sleeping’, Rescued Uttarkashi tunnel worker recounts experience

খাবার আসছিল, জল আসছিল। অক্সিজেন পাঠানো হচ্ছিল আমাদের কাছে। কিন্তু ক্রমশ ধৈর্যের বাঁধ ভাঙছিল। বাইরের আলো দেখার জন্য, পরিবারের মানুষগুলোর মুখ দেখার জন্য ভিতরে ভিতরে কেমন একটা অস্থিরবোধ করতেন শ্রমিকেরা। গত বারোই নভেম্বর ওই সুড়ঙ্গের ভিতরে কাজ করার সময় হঠাৎ করেই ধস নামে। আটকে যায় সুড়ঙ্গ থেকে বেরোনোর সমস্ত পথ। উদ্ধারকাজ শুরু হলেও বারবার উদ্ধারের পথে এসেছে কাঁটা। কখনও খুঁড়তে গিয়ে নেমেছে ধস, কখনও আবার দিল্লি থেকে উড়িয়ে আনা মার্কিন খননযন্ত্র গিয়েছে ভেঙে। শেষপর্যন্ত ব়্যাটহোল মাইনার্সদের আনা হয়। যন্ত্র হাত তুলে দেওয়ার পর হাত দিয়ে খুঁড়ে খুঁড়ে শ্রমিকদের কাছে পৌঁছনো হয় শেষমেশ।

আরও পড়ুন:সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গে ঘাপটি মেরে নয়া বিপদ! আরও বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কায় কাঁপছে উত্তরকাশী

অবশেষে মঙ্গলবার রাতে উদ্ধার করা হয় বন্দি শ্রমিকদের। উদ্ধারের পর চিনিয়ালিসাউরের একটি অস্থায়ী হাসপাতালে রাখা হয় তাঁদের। পরে শারীরিক পরীক্ষার জন্য ঋষিকেশের এইমস হাসাপাতালেও আনা হয় তাঁদের। সেখানে পরীক্ষানিরিক্ষার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে শ্রমিকদের। সকলেই সুস্থ রয়েছেন মোটামুটি। ফিরেও যাবেন বাড়িতে। তবে স্মৃতি থেকে ওই দুঃসহ ১৭দিনকে তাড়িয়ে দেওয়া বোধহয় সহজ নয়। সেই স্মৃতি বুকে নিয়েই আপাতত পুরনো জীবনে ফেরার চেষ্টা করছেন বিশালরা।

 

 

More Articles