হামাসকে সুড়ঙ্গে শেষ করতে তৈরি ইজরায়েলের স্পঞ্জ বোমা! কী এই অভাবনীয় অস্ত্র?

Israel Hamas Sponge Bomb : টানেল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে হামাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ইজরায়েল এই স্পঞ্জ বোমা তৈরি করছে বলে জানা গেছে।

ফিলিস্তিনি জঙ্গিগোষ্ঠী হামাস ইজরায়েলে হামলা চালিয়েছিল ৭ অক্টোবর। ১,৪০০ নিরস্ত্র মানুষের প্রাণ নিয়েছিল হামাস। তারপর এই হামলার প্রতিশোধ নিতে গাজায় যুদ্ধ শুরু করেছে ইজরায়েল। ২১ তম দিন যুদ্ধের, ইজরায়েল প্যালেস্তাইনের প্রায় ৭,০০০ মানুষকে খুন করেছে। ১,৪০০-র বদলে ৭,০০০। হিসেবের খতিয়ানই বলে দিচ্ছে ইজরায়েল ঠিক কতটা আগ্রাসী প্যালেস্তাইনে। হামাসকে খতম করার লক্ষ্য সামনে রেখে ইজরায়েল ফিলিস্তিনি শিশুদের শেষ করে দিচ্ছে, হাসপাতালে বোমা ফেলছে, শরণার্থী শিবির নিকেশ করে দিচ্ছে। ৭ অক্টোবর থেকে টানা গাজায় ইজরায়েলি বোমাবর্ষণ চলছে, ব্যবহৃত হয়েছে সাদা ফসফরাসও। তবে এখানেই থেমে নেই ইজরায়েল। গাজায় স্পঞ্জ বোমা ব্যবহার করতে চলেছে ইজরায়েল।

হামাসের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালাতে ইজরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজায় আরও গভীরে ঢুকে পড়েছে। তবে ইজরায়েলি সৈন্যদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলির মধ্যে একটি হচ্ছে হামাসের বিস্তৃত টানেল নেটওয়ার্ক। এই টানেলেই হামাস জঙ্গিগোষ্ঠী বেশ কয়েকজনকে অপহরণ করে রেখেছে বলে জানা গেছে। হামাসের বিভিন্ন ধরনের সুড়ঙ্গ রয়েছে প্যালেস্তাইন জুড়ে। প্রতিটি সুড়ঙ্গই কয়েকশো কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ৮০ মিটার পর্যন্ত গভীর। ৩৬০ বর্গ কিলোমিটার উপকূলীয় গাজা এবং এর সীমানার নিচ দিয়ে চলে গেছে সুড়ঙ্গগুলি। এই সুড়ঙ্গের মধ্যে হামাসকে শেষ করতে স্পঞ্জ বোমা ব্যবহার করতে চলেছে ইজরায়েল। স্পঞ্জ বোমা আসলে কী?

আরও পড়ুন- গাজায় সাদা ফসফরাস ছড়াচ্ছে ইজরায়েল! কতটা মারাত্মক এই ‘নিষিদ্ধ অস্ত্র’?

টানেল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে হামাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ইজরায়েল এই স্পঞ্জ বোমা তৈরি করছে বলে জানা গেছে। স্পঞ্জ বোমা ফেনার একটি আকস্মিক বিস্ফোরণ তৈরি করে। এই ফেনা অতি দ্রুত প্রসারিত হয় এবং তারপর শক্ত হয়ে যায়। দ্য টেলিগ্রাফের একটি প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ইজরায়েল রাসায়নিক গ্রেনেড পরীক্ষা করছে। এই গ্রেনেডে কোনও বিস্ফোরক নেই। কিন্তু সেগুলো যদি সুড়ঙ্গের ফাঁকা মুখে অর্থাৎ টানেলের প্রবেশপথ দিয়ে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় তাহলে সুড়ঙ্গের মুখ বন্ধ হয়ে যাবে। সেখান দিয়ে হামাসের জঙ্গিরা আর বের হতে পারবে না।

এই স্পঞ্জ বোমাগুলিকে প্রতিরক্ষামূলক প্লাস্টিকের পাত্র রাখা হয়। এই পাত্রে একটি ধাতব বাধা থাকে যা দু'টি স্বতন্ত্র তরলকে পৃথক করে রাখে। বোমা সক্রিয় হলে, এই তরলগুলি একসঙ্গে মিলে যায় এবং বিস্ফোরণ ঘটায়। ২০২১ সালে গাজা সীমান্তের কাছে একটি মক টানেল সিস্টেমে অনুশীলনের সময় ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীকে এই বোমাগুলি ব্যবহার করতে দেখা গেছে।

মাটির নীচে যাওয়ার দায়িত্বে আছে ইয়াহলোম, ইজরায়েলের কমব্যাট ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পসের বিশেষজ্ঞ কমান্ডোরা। এদের বলা হয় 'ওয়েসেলস’। এই সুড়ঙ্গগুলি খুঁজে বের করা, সাফ করা এবং ধ্বংস করতে দক্ষ ওয়েসেলসরা।

গাজায় ১৯৮৭ সালে তৈরি হয় হামাস। ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে সুড়ঙ্গ খোঁড়া শুরু করে হামাস। ইজরায়েল-অধিকৃত ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের তুলনায় গাজায় হামাস বেশি শক্তিশালী হওয়ার অন্যতম মূল কারণ হচ্ছে এই সুড়ঙ্গের জাল। ২০০৫ সালে যখন ইজরায়েল গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার করে এবং ২০০৬ সালের নির্বাচনে হামাস ক্ষমতায় আসে তখন এই সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কাজ আরও সহজ হয়ে যায়।

More Articles