খোদ কালীঘাটে কালীপুজোয় পুজো পান না দেবী কালিকা! কেন এই রীতি জানেন?

Kali Puja 2023: সারা দেশ যখন শক্তির আরাধনায় মগ্ন, তেমন এক মহাক্ষণে সমৃদ্ধির দেবীর আরাধনায় মাতে খোদ কালীঘাট।

লক্ষ্মী মানেই শান্তশিষ্ট অথচ চঞ্চলা। কোনও স্থানে বেশিক্ষণ থামেন না দেবী। এদিকে কালী উগ্রচণ্ডা, রুদ্রাণী মূর্তি তাঁর। অথচ রামপ্রসাদ থেকে রামকৃষ্ণ, বারবার তিনি হয়ে উঠেছেন ভক্তের ঘরের মেয়ে। শক্তিরই এই দুই রূপ, তবে খালি চোখে এই দুই রূপের তেমন কোনও সাযুজ্য নেই। এক দেবী শান্ত লক্ষ্মীটি, অন্যজন ভয়ঙ্করী। একজন বরাভয়দাত্রী, সমৃদ্ধির প্রতীক, তো অন্যজন অসুরবিনাশী। অথচ কালীঘাটের মতো সতীপীঠে কালীপুজোর সন্ধেবেলা পুজিত হন লক্ষ্মী। সারা দেশ যখন শক্তির আরাধনায় মগ্ন, তেমন এক মহাক্ষণে কেন সমৃদ্ধির দেবীর আরাধনায় মাতে খোদ কালীঘাট? ভেবেছেন কখনও। কেন সতীপীঠ কালীঘাটে এমন রীতি?

দুর্গাপুজোর রেশ জিইয়ে রেখে আশ্বিন শেষে ঘরে ঘরে শুরু হয় মা লক্ষ্মীর আরাধনা। মা দুর্গার ফেলে রাখা মণ্ডপের প্রদীপ-পিলসুজ একপাশে সরিয়ে রেখে আয়োজন করা হয় লক্ষ্মীপুজোর। তবে শুধু কোজাগরী পূর্ণিমাতেই নয়, কার্তিকের ঘনঘোর অমাবস্যাতেও আরাধনা করা হয় সমৃদ্ধির এই দেবীর। বহু বাড়িতেই কালীপুজোর সন্ধে বেলা লক্ষ্মীপুজোর চল। অলক্ষ্মী বিদায় করে লক্ষ্মীকে গৃহে আহ্বান বানানোর রীতি রয়েছে বহু জায়গাতেই। অবাঙালিদের ধনতেরাসও তো আদতে লক্ষ্মীরই উপাসনা। ধনতেরাস উপলক্ষে সোনা,রূপো বা ধাতু কেনার যে চল, তা-ও তো আদতে সমৃদ্ধির আবাহনই, লক্ষ্মীকে ঘরে নিয়ে আসা। ঠিক তেমন ভাবেই কালীঘাটে কালীপুজোর সন্ধেবেলা পুজো হয় মহালক্ষ্মীর।

আরও পড়ুন: কেন কালীপুজোর দিন হয় অলক্ষ্মী বিদায়

কার্তিক মাসের এই অমাবস্যা পরিচিত দ্বীপান্বিতা অমাবস্যা হিসেবে। প্রায় সমস্ত শক্তিপীঠেই এই দিনটা শক্তির আরাধনা করা হয়। কালীপুজোর রাত ঘরদোর সাজিয়ে তোলা হয় আলোয় আলোয়। ব্যতিক্রম কেবল দক্ষিণ কলকাতার বুকের এই কালীঘাট। ওই দিন সন্ধ্যায় কালীঘাটের মন্দিরের গর্ভগৃহে উপবিত দক্ষিণাকালীই পূজিত হন মহালক্ষ্মী হিসেবে। অমবস্যায় অলক্ষ্মী দূর করার নিয়ম সারা হলে সন্ধ্যার পরে শুরু হয় লক্ষ্মীপুজো। সন্ধে নামতেই মন্দিরের চারদিকে সাত পাক ঘোরার পরে খড়ের পুতুলে আগুন ধরিয়ে দূর করা হয় অলক্ষ্মীকে। তারপর শুরু হয় মহালক্ষ্মীর পুজো। সেটিই হল মূল পুজো।

শোনা যায়, আজকের যে কালীঘাট মন্দির, তা নাকি তৈরি করেছিলেন সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার। পরবর্তীকালে সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারে জ্ঞাতি গঙ্গাপ্রসাদ চক্রবর্তী দায়িত্ব পান মন্দির পরিচালনা। এই গঙ্গাপ্রসাদ নিজে ছিলেন পরম বৈষ্ণব। তাঁর আমল থেকেই কালীঘাটে কালীপুজোর রাতে মহালক্ষ্মীর উপাসনা চালু হয় বলে মনে করা হয়।

Why Goddes Mahalaxmi is being worshipped instead of Devi Kali in Kalighat temple kolkata on the auspicious time of Kalipujo and diwali

তবে ওইদিন বিশেষ করে লক্ষ্মীপুজোর আয়োজন করা হলেও প্রতিদিনের ভোগ থেকে বঞ্চিত হন না দেবী কালিকা। আর পাঁচটা দিনের মতো করেই সকাল থেকেই দক্ষিণাকালীর নিত্য পুজো ও দুপুরের ভোগ নিবেদন করা হয়। সন্ধে থেকে শুরু হয় লক্ষ্মীপুজোর আয়োজন। এই পুজোর প্রথম ভাগ হল অলক্ষ্মী পুজো শেষ তাঁকে গৃহ থেকে বিদায়। মন্দিরের সেবায়তরা পাট কাঠি জ্বাসিয়ে প্রথম প্রদক্ষিণ করেন মন্দিরের চারপাশ। তারপর ওই আগুন প্রত্যেকে নিজের নিজের বাড়িতে নিয়ে যান। অলক্ষ্মী বিদায়ের পর ধুয়ে ফেলা হয় গোটা মন্দির। তার পর শুরু হয় আসল লক্ষ্মীপুজো।

Why Goddes Mahalaxmi is being worshipped instead of Devi Kali in Kalighat temple kolkata on the auspicious time of Kalipujo and diwali

লক্ষ্মীপুজো তো আসলে সন্ধেবেলার পুজো। সেসময় দক্ষিণকালীকে পুজো করা হয় মহালক্ষ্মী রূপে। সেই পুজোয় নিবেদন করা হয় খই, নাড়ু, মুড়কি, মিষ্টি, ফল, লুচি ও তরকারি। তবে এখানেই শেষ নয়। মহালক্ষ্মীর সন্ধের পুজো শেষ হলে শুরু হয় আরতি। আরতি শেষে রাতে আরেক বার ভোগ পান অধিষ্ঠাত্রী দেবী। সেই সময় খিচুড়ি, পোলাও, মাছ এবং পরমান্ন ভোগ হিসেবে নিবেদন করা হয় মহালক্ষ্মীকে।

আরও পড়ুন: নামে কালী, অথচ গায়ের রং ধবধবে সাদা! জানেন বাংলার কোথায় রয়েছে বিখ্যাত শ্বেত কালী?

হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন। খোদ কালীঘাটেই মহালক্ষ্মীকে নিবেদন করা হয় আমিষ ভোগ। এমন আমিষভোগের রীতি কিন্তু রয়েছে অনেকবাড়িতে। একান্নটি শক্তিপীঠের মধ্যে সবসময়েই একটি ব্যতিক্রমী শক্তিপীঠ হিসেবে পরিচিত হয়ে থেকেছে কালীঘাট। ফলে পুজো থেকে ভোগ, সব ব্যপারেই বেশ অন্য পথের পথিক এই মহাতীর্থ কালীঘাট।

More Articles