খিচুড়ি-লাড্ডু নয়, দেশের এই মন্দিরে দেবতার প্রসাদ নাকি বই!
Mahadeva Temple Prasad: ফলমিষ্টিও নয়। বরং প্রসাদ হিসেবে এই মন্দির আপনার হাতে তুলে দেবে একটি করে বই। তেমনটাই রীতি কেরলের এই মন্দিরের।
বিদ্যার দেবী সরস্বতী। কিন্ত এ দেশেই রয়েছে এমন এক দেবতার মন্দির, যেখানে প্রসাদ হিসেবে বিতড়ন করা হয় জ্ঞান। শুধু দেবতা বললে অবশ্য কম বলা হয়,তিনি ত্রিদেবের সেরা, দেবাদিদেব মহাদেব। না, এই মন্দিরে লাড্ডু বা ভোগ পাবেন ভাবলে হতাশ হবেন ভক্তেরা। এমনকী ফলমিষ্টিও নয়। বরং প্রসাদ হিসেবে এই মন্দির আপনার হাতে তুলে দেবে একটি করে বই। তেমনটাই রীতি কেরলের এই মন্দিরের।
ত্রিশূর জেলার এই শিবমন্দিরে শুধু প্রসাদই নয়, ভক্তের দেবতার উদ্দেশে যে নৈবেদ্য নিয়ে আসেন, সেখানেও খাবার জিনিসের কুটোটিও নেই। কারণ এই মন্দিরের দেবতা তুষ্ট হন শুধুমাত্র জ্ঞানে। তাই লেখার জিনিস বা পড়াশোনার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত জিনিসপত্রই এই মন্দিরের পুজোয় ভেট হিসেবে চড়াতে পারেন দেবতারা। তেমন রীতিই চলে আসছে বছরের পর বছর ধরে।
আরও পড়ুন: পাহাড়ের কোলে রয়েছে বিশাল মনসা মন্দির, ২০০ বছরের এই ঐতিহ্য অনেকেরই অজানা
ভক্তেরা কেউ পান পাঠ্যবই, তো কেউ পেয়ে যান লেখার সামগ্রী। এমনকী জ্ঞানসমৃদ্ধ বিভিন্ন ব্রোশিওরও প্রসাদ হিসেবে পেয়ে যান কেউ কেউ। কারওর কারওর হাতে আবার আসে জ্ঞানসমৃদ্ধ সিডি এবং ডিভিডি। হ্যাঁ, ওটাই প্রসাদ। পৃথিবীর সমস্ত মন্দিরে যখন ফুল-ফল-মিষ্টিতে দেবতার নৈবেদ্য সাজানো থালা নিবেদনই রীতি, এ মন্দির দাঁড়িয়ে থাকে যেন একেবারে বিপরীত মেরুতে।
ভারতবর্ষের বহু জায়গাতেই আজও ধর্মের নামে জেগে থাকে অন্ধবিশ্বাস, বিশ্বাসের নামে বড় হয়ে ওঠে সাম্প্রদায়িক একচ্ছত্রবাদ। আর এই সমস্ত অন্ধকারের বুকে আলো ফোটাতে পারে শুধুমাত্র শিক্ষা। আজকের বিশ্বে সেই শিক্ষাটুকুর যেন বড়ই অভাব। অন্ধবিশ্বাস বা ভক্তির চেয়েও ঈশ্বরের কাছাকাছি মানুষকে নিয়ে যেতে পারে শিক্ষা। আর সেই গভীর সত্যকেই মানুষের হাতে তুলে দিয়ে চলেছে ত্রিশূরের এই শিবমন্দির।
মন্দিরে জমতে থাকা পড়াশোনার সামগ্রী তাই পুরোহিতেরা পুজোর পরে বিলিয়ে দেন ভক্তদের মধ্যেই। জ্ঞানের ধর্মই তো ছড়িয়ে পড়া। আর সেই পবিত্র ধর্মেরই পালন করে আসছে বছরের পর বছর ধরে এই মন্দিরে। ত্রিশূরের একটি গ্রামে এমন বৈপ্লবিক এক মন্দিরের অস্তিত্ব রয়েছে এমনকী আজকের এই ধর্মান্ধতার যুগেও, তা ভাবলে অবাক হতে হয় বৈকি।
প্রতিবছর বিজয়া দশমীতে এই মন্দিরে উপচে পড়ে ভিড়। সবে সবে অক্ষরজ্ঞান হয়েছে যাদের, তেমন শিশুদের নিয়ে ওই দিনটা মন্দিরে জড়ো হন আশপাশের গ্রামের মানুষ। স্থানীয় বিশ্বাস, এতে তাদের পড়াশোনায় মতি হবে। আর নিত্যদিনের পুজো তো রয়েইছে। প্রচারের আলোয় আসার পর এই মন্দিরে ভিড় জমান দেশি-বিদেশি বহু পর্যটকই।
আরও পড়ুন:বাড়ি তৈরিতে লেগেছে প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ! কোথায় রয়েছে অষ্টম শতাব্দীর হারানো ‘কুটুমবাড়ি’ মন্দির?
ন্যাশনাল হেরিটেজ সেন্টার (এনএইসি)-র ক্যাম্পাসের মধ্যেই রয়েছে এই মন্দিরটি। যার রক্ষণাবেক্ষণের ভার রয়েছে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্টিফিক হেরিটেজ (আইআইএসএইচ)-এর উপরে। তারা বিশ্বাস করে সমাজের বদল এবং অন্ধবিশ্বাস নির্মূল তখনই হবে, যখন জ্ঞানের আলো আর বিজ্ঞানচেতনা প্রসারিত হবে। আর তেমন এক প্রগতিশীল ভাবনা থেকেই সমস্ত ভক্তের হাতে বই তুলে দিচ্ছে এই মন্দির, তাও আবার প্রসাদ হিসেবে। আর সেটাই এই মন্দিরের ইউএসপি।