ঠিক কী কারণে সিবিআই-এর র‍্যাডারে অনুব্রত কন্যা! অভিযোগ জানলে স্তম্ভিত হবেন

একদা বীরভূমের 'বেতাজ বাদশা’ থুড়ি অনুব্রতর মেয়ে সুকন্যা, সিবিআইয়ের শ্যেনদৃষ্টি থেকে রেহাই পাচ্ছেন না তিনিও। কেন?

কান টানলে মাথা আসে। এবার অনুব্রত মন্ডলকে জালে জড়িয়ে একে একে গোরুপাচার কাণ্ডের জাল বিস্তার করছে সিবিআই। বাপকে টেনে এবার সিবিআইয়ের জালে মেয়ে। একদা বীরভূমের 'বেতাজ বাদশা’ থুড়ি অনুব্রতর মেয়ে। সিবিআইয়ের শ্যেনদৃষ্টি থেকে রেহাই পাচ্ছেন না তিনিও। কেন?

গরুপাচার কাণ্ডে অনুব্রত মন্ডলের মেয়ে সুকন্যাকে সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে বলে আগেই জানা গিয়েছিল। এই আবহে এবার প্রকাশ্যে এল আরও চাঞ্চল‍্যকর তথ্য। জানা গিয়েছে, সিবিআই তদন্তকারীদের হাতে এসেছে এক নয়া সংস্থার হদিশ। ২০০৬ সালে তৈরি হওয়া এই সংস্থার নাম 'নীড় ডেভলপার প্রাইভেট লিমিটেড'। আগেই খোঁজ মিলেছিল, ANM অ্যাগ্রোকেম ফুড প্রাইভেট লিমিটেড নামে এক সংস্থার। নীড় ডেভলপার নাকি সেই সংস্থার ঠিকানাতেই রেজিস্টার্ড। জানা গিয়েছে, এই সংস্থার দুই ডিরেক্টর হলেন অনুব্রত কন্যা সুকন্যা মন্ডল এবং অনুব্রত-ঘনিষ্ঠ বিদ্যুৎবরণ গায়েন।

বোলপুরের কালিকাপুরের হারাধন মন্ডল রোডের ঠিকানায় রেজিস্টার্ড নীড় ডেভলপারের শেয়ার ক্যাপিটাল ছিল দেড় কোটি টাকা। অনুব্রত মন্ডলের ভোলে ব্যোম রাইস মিলের ঠিকানাও এই হারাধন মন্ডল রোডে। মোট ৩টি সংস্থার ঠিকানা এটি। অনুব্রতর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে বিশেষ লেনদেন না হলেও এই সব কোম্পানিতে প্রচুর অর্থের লেনদেন হয়েছে। এই আবহে বুধবার সকালে অনুব্রতর হিসাবরক্ষককে ডেকে পাঠায় সিবিআই। নজরে আছে সুকন্যার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট। খবর, বীরভূমে তৃণমূল কংগ্রেস জেলা সভাপতির বোলপুরের বাড়িতে গিয়ে সুকন্যাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা। এদিকে সূত্রের খবর, অনুব্রতর ব্যক্তিগত হিসাবরক্ষকের কাছ থেকে সুকন্যার সম্পত্তির হিসেব চাইতে পারে সিবিআই। সিবিআই সূত্রে দাবি, সুকন্যার নামে বোলপুরে জমি, চালকল-সহ একাধিক সম্পত্তি কেনা হয়েছে। অনুব্রতর কন্যা পেশায় স্কুল শিক্ষিকা। একজন স্কুল শিক্ষিকার নামে এত সম্পত্তি কোথা থেকে এল, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। আবার টেট পাশ না করেই চাকরি পাওয়ার অভিযোগও উঠে আসছে সুকন্যার বিরুদ্ধে।

আরও পড়ুন: ‘চড়াম চড়াম’ ঢাক থেকে ‘ভয়ংকর খেলা হবে’ || বাহুবল আর অপশব্দের মিশেলে গড়া অনুব্রত সাম্রাজ্য

টাকার উৎস কী?
ওই টাকার উৎস কী? কোথা থেকে এসেছে ওই টাকা? কীভাবে ওই টাকার আইটি ফাইল বা করা হয়েছে? কী কাগজপত্র দেখানো হয়েছে? তার সবটাই এখন আতসকাচের তলায়। সূত্রের খবর, অনুব্রত মন্ডলের একাধিক নথিতে মেয়ের নাম পাওয়া গেছে। সুকন্যার নামে বহু সম্পত্তি রয়েছে বলে অনুমান সিবিআইয়ের। তদন্তকারী সংস্থার নজরে তাই সুকন্যা মন্ডলের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট। সিবিআইয়ের জেরার হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না সুকন্যা। এর আগে একবার-দু’বার নয়, টানা ১০ বার, গরুপাচার কাণ্ডে যখনই নোটিস পাঠিয়েছে সিবিআই, তখনই অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে এড়িয়ে গিয়েছেন অনুব্রত। এরপর ১১ অগাস্ট বোলপুরের বাড়ি থেকে তৃণমূলের বীরভূমের জেলা সভাপতিকে গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এখন সিবিআই হেফাজতে কলকাতার নিজাম প্যালেসে রয়েছেন দিদির আদরের কেষ্ট।

নিয়োগ দুর্নীতিতে সুকন্যা
অনুব্রত সিবিআই জালে জড়ানোর আগেই এসএসসি দুর্নীতি নিয়ে তোলপাড় হয়েছে রাজ্য। ইডি গ্রেফতার করেছে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। এরপর কুবেরের বিষয়আশয় প্রত্যক্ষ করেছে রাজ্যবাসী। বলাই বাহুল‍্য, রাজ্যবাসীর যখন ভিরমি খাওয়ার জোগাড়, তখন কাঁধ থেকে পার্থকে ঝেড়ে ফেলে নিজেদের 'শাপমুক্ত’ করার চেষ্টা করে তৃণমূল। তখনও দুর্নীতির পেঁয়াজের খোলা উন্মোচনের আরও বাকি ছিল। তবে মজার ব্যাপার হলো, তৃণমূল পার্থকে ঝেড়ে ফেললে, দিদি তাঁকে বাঁচাতে একটা রা কাড়েননি। অথচ কেষ্টকে রক্ষাকবচ দিতে তিনি কসুর করেন না। এই অবস্থায় তাঁর মেয়েও জড়িয়ে যাচ্ছে নিয়োগ দুর্নীতিতে। উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য।

অভিযোগ, টেট পাশ না করেই চাকরি পেয়েছিলেন সুকন্যা। বাড়ি বসে সই করে বেতন তুলতেন অনুব্রতর মেয়ে। বাবা দোর্দণ্ডপ্রতাপ, বীরভূমের বেতাজ বাদশা বলেই কি মেয়ের এই রামরাজত্ব? প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।

নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অনুব্রত মন্ডলের কন্যা সুকন্যা মন্ডল-সহ তাঁর পরিবারের ৬ জনকে বৃহস্পতিবার কলকাতা হাই কোর্টে হাজিরা দিতে বলেছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তার মধ্যেই অনুব্রত কন্যার নামে উঠে এল একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। অভিযোগ, টেট পাশ না করেই প্রাথমিক স্কুলে চাকরি পেয়েছিলেন সুকন্যা। শুধু তাই নয়, কোনওদিন স্কুলে যাননি তিনি, অধিকাংশ দিন হাজিরা খাতায় সই করতেন বাড়িতে বসেই। আবেদনকারীদের দাবি, ২০১২ সালে বাড়ির পাশেই কালিকাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি পান অনুব্রত মন্ডলের মেয়ে সুকন্যা। কিন্তু সেবার টেট পাশ করতে পারেননি তিনি। টেট পাশ না করেও নিয়োগ পেয়ে যান সুকন্যা। শুধু তাই নয়, ওই সময় প্রাথমিকে চাকরি পেয়েছেন অনুব্রতর পরিবারের আরও ৫ সদস্য। তাঁরা হলেন, অনুব্রতর ভাই সুমিত মন্ডল, অর্ক দত্ত, সাত্যকি মন্ডল, কস্তুরী চৌধুরী ও সুজিত বাগদি। অভিযোগ এই বেনিয়ম যখন চলছে তখন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতির পদে রয়েছেন অনুব্রতর ভাগ্নে রাজা ঘোষ।

কেষ্টর পাশে দিদি
গ্রেফতারির পর অনুব্রত মন্ডলের পাশে দাঁড়িয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর প্রশ্ন, "কেষ্টকে কেন গ্রেফতার করলেন? কী করেছিল কেষ্ট?" সঙ্গে হুঁশিয়ারি, "একটা কেষ্টকে ধরলে, লক্ষ কেষ্ট তৈরি হবে।" শুধু তাই নয়, অনুব্রতর প্রশংসাও শোনা যায় মমতার মুখে। বলেন, "ছেলেটা গত ২ বছর কষ্ট পেয়েছে। আমি জানি বলে তাই। ওর বউ ক‍্যানসারে মারা গিয়েছে। প্রতিদিন কলকাতা আর বোলপুর করত। পঞ্চায়েত ভোটের সময় ওর বউয়ের অপারেশনে হচ্ছে। আমাকে একদিন বলল, দিদি তোমার বউমা বলছে, তোমার পঞ্চায়েত ইলেকশন, আমাকে দেখতে হবে না। যাও, দলের কাজ করো‌।"

এসএসসি দুর্নীতি নিয়ে পার্থকে ঘিরে এক নির্লজ্জ অধ্যায়ের সাক্ষী থাকল রাজ্য। কেষ্ট জালে জড়াতেই একের পর এক দুর্নীতি পরতে পরতে উন্মোচিত হচ্ছে। এবার তাঁর মেয়েও! এর শেষ কোথায়? পার্থকে ঝেড়ে ফেলতেই কি জালে কেষ্ট? তাই কি দিদি কেষ্টর হয়ে লড়ছেন? সে যাই হোক, সুকন্যা এখন আতসকাচের নিচে। কাজেই পিকচার আভি বাকি হ্যায়।

More Articles