“নিজেকে ভালোবাসো তুমি এবার...”, পরীমনিকে কেন এ কথা বললেন তসলিমা?
Pori Moni: পরীমনির জীবন অনেকটা আমার মতো, বললেন তসলিমা নাসরিন
একদিকে সাম্প্রতিক ভাইরাল নায়িকা পরীমনি, অন্যদিকে বহুল পরিচিত মুখ তসলিমা নাসরিন। দুজনেই বিতর্কিত। কর্মজীবনে নানা কিছু করলেও বারবার শিরোনামে জায়গা করে নিয়েছেন ব্যক্তিগত জীবনের টানাপোড়েনের জেরেই। গতকাল মধ্যরাত্রে সামনে এসেছে বাংলাদেশী নায়িকা পরীমণির বিতর্কিত একটি পোস্ট।
‘হ্যাপি থার্টিফার্স্ট এভরিওয়ান! আমি আজ রাজকে আমার জীবন থেকে ছুটি দিয়ে দিলাম এবং নিজেকেও মুক্ত করলাম একটা অসুস্থ সম্পর্ক থেকে। জীবনে সুস্থ হয়ে বেঁচে থাকার থেকে জরুরি আর কিছুই নেই।’ - এটাই ছিল বিতর্কিত পোস্ট। যার জেরে পরীমনির পঞ্চমবার বিবাহ বিচ্ছেদের আশঙ্কা জোরালো হয়েছে। তারপর থেকেই উত্তাল নেট মাধ্যম। কেউ পরীমনিকে দ্বিতীয়বার ভেবে দেখার কথা বলেছেন, কেউ আবার বাঁকা মন্তব্য করে মুখ ঘুরিয়েছেন। কিন্তু তাতে পরিস্থিতির বদল ঘটেনি। বছর শুরুর উৎসবের আমেজেও আলোচনার কেন্দ্রে সেই বিতর্কিত পরীমনি।
এসবের মধ্যেই আলোচনার তোপ আরও বাড়িয়ে দিলেন লেখিকা তসলিমা নাসরিন। পরীমনির উদ্দেশ্যে তিনি নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় আজ সকালে একটি পোস্ট করেন। সেখানেই পরীমনির জীবনকে নিজের জীবনের সঙ্গে সরাসরি তুলনা টানেন লেখিকা। সেই পোস্টে তসলিমা লেখেন, “পরীমনির জীবনটা অনেকটা আমার জীবনের মতো। মানুষকে ভালোবাসে, বিশ্বাস করে, আঘাত পায়, কাঁদে, সরে আসে, আবার বিশ্বাস করে, আবার আঘাত পায়, আবার কাঁদে, আবার সরে আসে, আবার বিশ্বাস করে --। এ যেন একটা চক্রের মতো। সৎ, সরল এবং সংবেদনশীল মানুষই এই চক্রের মধ্যে পড়ে যায়।”
আর এখানেই স্পষ্ট হয়ে যায় একটা সামাজিক ছবি। সমাজের মেয়েদের অবস্থান নিয়ে শুরু হয়ে যায় বাড়তি টানাপোড়েন। সেই ১৮ বছর বয়স থেকে বারবার বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন পরীমনি। প্রথমবার বাড়ি থেকে দেখাশোনা করে গ্রামের জাকির হোসেনের ছেলে ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে বিয়ে দেন তাঁর। যৌতুক সংক্রান্ত কারণে বিয়ের মাত্র ২ বছরের মাথায় বিচ্ছেদের পথে এগয় সম্পর্ক। তারপর একে একে ফুটবলার ফেরদৌস কবীর সৌরভ, সাংবাদিক তামিম হাসান, সহকারী পরিচালক কামরুজ্জামান রনি হয়ে অতঃপর বিয়ে করেন অভিনেতা শরিফুল রাজকে। কিন্তু এর আগের কোনও সম্পর্কই বেশিদিন টেঁকেনি। এমনকী রাজের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্কে এসেছিল একমাত্র সন্তান রাজ্য, কিন্তু তাতেও বদল হল না পরিস্থিতির। আগের চারবারের মতো সেই একই পথে পরীমনি।
আর এখানেই মিলে যান তসলিমা। তাঁর জীবনেও একাধিক বিয়ে, এবং বিবাহ বিচ্ছেদের নজির রয়েছে। তসলিমা ১৯৮২ সালে কবি রুদ্র মোহাম্মদ শহীদুল্লাহর প্রেমে পড়েন এবং তাঁকে বিয়ে করার জন্য বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। অথচ মাত্র চার বছরের মাথাতেই সেই সম্পর্ক ভেঙে যায়, অবশেষে ১৯৮৬ সালে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। এরপর তিনি সাংবাদিক ও সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খানকে বিয়ে করেন; সেই বিয়েও ভেঙে যায় ১৯৯১ সালে। আবারও বিয়ে করেন একই বছরে, সাপ্তাহিক বিচিন্তার সম্পাদক মিনার মাহমুদকে, কিন্তু সেই সম্পর্কও পরিণতি পায়নি। তাই পরীমনির জীবনের গ্রাফটা দেখে স্বাভাবিকভাবেই হুবহু নিজেকেই যেন দেখতে পান তসলিমা।
জীবনে বারবার বিশ্বাস করে ঠকে যাওয়া একটা মানুষ যে কী ভীষণ যন্ত্রণার শিকার হতে পারেন সেকথাই বলেন তিনি। কিন্তু পরীমনিকে তিনি আর পাঁচজন মেয়ের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলতে নারাজ। পরীমনি ব্যতিক্রম। যে এই তথাকথিত সমাজের চোখ রাঙানিকে উপেক্ষা করতে পারে। যে ভয় পে না মেয়ে নামক ট্যাবুতে। তসলিমা নিজের পোস্টে আরও বলেন, “পরীমনি নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে। ও যদি মাথা উঁচু করে, মেরুদণ্ড সোজা করে একা বাঁচতে না পারে, তবে আর পারবে কে? আমি পেরেছি। আরও অনেকেই পেরেছে। নিজেকে ভালোবাসলে পারা যায়।”
আরও পড়ুন - চার মাসের ছোট্ট ছেলে কোলে বাড়ি ছাড়লেন অভিনেত্রী, যে কারণে বারবার বিচ্ছেদের শিকার পরীমনি
তসলিমা বহুবার বহু বিতর্কিত মন্তব্যে ঝর তুলেছেন। কখনও তা নিতে বাহবা দিয়েছে অনুরাগীরা, কখনও আবার ধুয়ে দিয়েছে ওই নেট মাধ্যমই। কিন্তু আজকের পরিসর সম্পূর্ণ ভিন্ন। আজ প্রশ্নটা সমাজে নারীদের অবস্থান নিয়ে। প্রশ্ন একটাই, বারবার বিয়ে ভেঙে যাওয়া মানেই কি সেই মেয়ের সম্পূর্ণ দোষ? নাকি বাঁচার জন্য বিয়েটাই একমাত্র উপায়? প্রশ্নের উত্তরও একপ্রকার দিয়েছেন তসলিমা। তিনি পরীমণিকে বলেছেন, নিজেকে ভালোবাসার কথাই।
অর্থাৎ সম্পর্ক কোনও নিয়ম হতে পারে না। বন্ধন কোনও শিকল হতে পারে না। দম বন্ধ লগল মুক্তি আবশ্যক। তাতে লজ্জার কিছুই নেই। পরীমনির জীবনের ঠিক ভুল নিয়ে বিচার করার আমরা কেউ নয়, সে দায় পাঠকেরই। তবে রসায়ণ যাই হোক না কেন, সমাজকে বুড়ো আঙুল দেখাতে পাড়ার জন্য যে দমটা লাগে সেটা বোধ হয় নায়িকার ভালরকমই আছে।