যুদ্ধবিধ্বস্ত প্যালেস্টাইনের হাতে জয়ের পুরস্কার তুলে দিলেন টেনিস তারকা
Israel-Palestine conflict: এই পরিস্থিতিতে নিজের সামর্থ থেকে যতটুকু সম্ভব, গাজাবাসীর উদ্দেশ্যে দিয়ে দিলেন তিউনিশিয়ার টেনিস তারকা ওনস জাবেউর।
সাতাশ দিন ধরে চলছে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধটা। লাগাতার রকেট হামলা, বোমা হামলায় জেরবার গাজা। বহু দেশই যুদ্ধ থামানোর কথা বলছে কিন্তু আদৌ গাজার সাহায্যে এগিয়ে আসছে না তেমন কেউই! ইজরায়েলের বন্ধু দেশ যারা, তারা যুদ্ধবিরোধীতার কথাটুকুও মুখ ফুটে বলতে পারছে না। জল নেই, খাবার নেই, বিদ্যুৎ পরিষেবা নেই, নেই ইন্টারনেট। শুধু রক্ত আর ধ্বংস সঙ্গী এখন গাজার। কোথায় যাবেন বাসিন্দারা? কোথায় গিয়ে মাথা গুঁজবেন? মিশর বলেছে আশ্রয় দেওয়ার কথা। মিশরের কাছে বারবার আশ্রয় চাইছে গাজা। কিন্তু সেই দরজা যে কবে খুলবে, তা জানা নেই কারওর। গাজার সাহায্যে এগিয়ে আসছে না যখন তাবড় দেশ ও তাদের রাষ্ট্রনেতারা, সে সময় ছোট্ট ক্ষমতা থেকে সাহায্যের হাতটুকু বাড়িয়ে দিলেন টেনিস তারকা।
সেই ৭ অক্টোবর ইজরায়েলে আচমকা হামলা চালিয়েছিল জঙ্গিগোষ্ঠী হামাস। তার পরেই সরাসরি গাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধঘোষণা করে দেয় ইজরায়েল। হামাসকে খতম করতে যে কোনও পর্যায়ে যেতে রাজি নেতানিয়াহু সেনা। সেই থেকে ভয়ানক পরিস্থিতিতে রয়েছে গাজা। গত সাতাশ দিনে গাজায় সাত হাজারেরও বেশি রকেট হামলা চালিয়েছে ইজরায়েলি সেনা। প্রায় ৯ হাজার ছুঁই ছুঁই গাজায় মৃতের সংখ্যা। যার মধ্যে অর্ধেকই শিশু। হাসপাতাল থেকে শুরু করে একের পর এক শরণার্থী শিবিরে পড়ছে বোমা। বাদ যাচ্ছে না গির্জাও। মুহূর্তের মধ্যে মাটিতে মিশে যাচ্ছে একের পর এক জনপদ।
আরও পড়ুন: ফিলিস্তিনি কণ্ঠস্বরকে চেপে রাখছে ফেসবুক, টিকটক! কতটা সত্যি মালয়েশিয়ার অভিযোগ?
অবশ্য এই অগণিত মৃত্যুমিছিল বিশেষ নাড়া দিচ্ছে না ইজরায়েলকে। তারা হামাস দমনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আর সেই পথে যদি কয়েক হাজার সাধারণ নিরপরাধ মানুষ মারা পড়ে, তাতে বিশেষ কিছু যায় আসে না তাদের। কারণ এমন বড় বড় যুদ্ধে এসব সামান্য কোল্যাটারাল ড্যামেজ ঘটেই থাকে, সে কথা তো কারওর অজানিত নয়। রাষ্ট্রপুঞ্জে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব পাশ হয়েছিল ঠিকই। বিপক্ষে ১৪টি দেশ আর ভোটদান থেকে ৪৫টি দেশ বিরত থাকলেও ১২০টি দেশের ভোট নিয়ে পাশ হয়েছিল সেই প্রস্তাব। যাই হয়ে যাক, মারণ এই যুদ্ধ থামাক ইজরায়েল, এই আর্জি কার্যত গোটা বিশ্বের। তবে ইজরায়েল সে কথা কানে তোলার প্রয়োজনবোধ করেনি। বরং দিন দিন আরও বাড়িয়ে গিয়েছে হামলার মাত্রা। প্রতিদিন আরও আরও ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে গাজা।
এই পরিস্থিতিতে নিজের সামর্থ থেকে যতটুকু সম্ভব, গাজাবাসীর উদ্দেশ্যে দিয়ে দিলেন তিউনিশিয়ার টেনিস তারকা ওনস জাবেউর। সম্প্রতি ওমেনস টেনিস অ্যাসোসিয়েশন (WTA)ফাইনাল জেতেন ওনস। মেক্সিকোর ক্যানকুনে চেক টেনিস খেলোয়ার মার্কেটা মার্কেটা ভনড্রোসোভাকে হারান ওনস। জিতে নেন খেতাবও। পুরস্কার গ্রহণের মঞ্চে উঠে ওনস জানান, তিনি একই সঙ্গে আনন্দিত এবং দুঃখিত। একদিকে যেমন এই জয় তাঁকে এনে দিয়েছে অপরিসীম আনন্দ, তেমনই গাজার পরিস্থিতি তাঁকে ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছে। বলতে বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন ওনজ।
গোটা মেক্সিকো শহর ভাসছে তখন সমর্থক ও সহ-খেলোয়ারদের হাততালির শব্দে। তিনবার গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনালিস্ট ওনজ জানান, তাঁর পুরস্কারমূল্যের একটি অংশ যাবে যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিনিদের কাছে। যাতে তাঁদের জীবনধারনটা আগের চেয়ে একটু সহজ হতে পারে। ওনজ জানান, প্রতিদিন এই এত এত শিশুর মারা যাওয়া দেখাটা ভয়ঙ্কর কঠিন। তিনি এ-ও জানান, কোনও রাজনৈতিক পক্ষের হয়ে নয়, শুধু মানুষ হিসেবেই যুদ্ধবিধ্বস্ত প্যালেস্টাইনের পাশে দাঁড়াতে চান ওনজ।
গাজায় এখন যা পরিস্থিতি, তাতে বাসিন্দাদের টিকে থাকাটাই যেন একটা চ্যালেঞ্জ। খাবারদাবার নেই, ওষুধপত্র নেই। ন্যূনতম জলটুকু পর্যন্ত নেই। সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে শিশু ও মহিলারা। শরীর তো নিজের নিয়মে চলে। সে তো যুদ্ধ, খারাপ সময় বোঝে না। যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় মহিলাদের কাছে ঋতুস্রাবের সময়টুকুও তাই এখন এক লড়াই। জল নেই, স্যানিটারি ন্যাপকিন বা ট্যাম্পনটুকুও জুটছে না। ন্যূনতম সুস্বাস্থ্যটুকু বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে তাঁদের পক্ষে। মাথার উপর ছাদ নেই, বিদ্যুৎ নেই। কিন্তু বোমা, রকেট হামলা, ছুটে আসা গুলি আছে লাগাতার। শরণার্থী শিবিরগুলিতে আশ্রয় নিয়েও নিস্তার নেই। একাধিক শরণার্থী শিবিরগুলিকে নিশানা করেই হামলা চালাচ্ছে ইজরায়েলি সেনা। প্রতিদিন বাড়াছে শবদেহের ভিড়। সেই শবের পাশে বসেই মৃত্যুর দিন গুনছে গাজা।
মানবাধিকার সংগঠনগুলির ন্যূনতম ত্রাণ আসছে বটে, তবে তা বাড়ন্ত এই যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায়। মিশর সামান্য সংখ্যক গাজা শরণার্থীকে জায়গা দেবে বলে কথা দিয়েছে বটে। তবে তা যে কবে সত্যি হবে, কেউ জানে না। ত্রাণ সামগ্রী পাঠানোর কথাও বলেছিল মিশর। তা-ও আদৌ পৌঁছেছে কিনা পরিষ্কার নয়। এই পরিস্থিতিতে গাজার কাছে যে কোনও ধরনের সাহায্যই কম। তাবড় প্রথম বিশ্বের দেশ যারা রাষ্ট্রপুঞ্জে শান্তিকামী বলে বড়াই করে, তারা দিব্যি মুখে কুলুপ এঁটেছে। কারণ তাঁদের অনেকেই ফিলিস্তিনিদের তেমন পছন্দ করে না। বলা ভালো, প্যালেস্টাইন তাদের বন্ধুরাষ্ট্র নয়। তাই বন্ধুতার খাতিরে ইজরায়েলকেই সমর্থন করে চলে তারা।
আরও পড়ুন: ইজরায়েল গাজা যুদ্ধে ভারত কী চায়? উত্তর লুকিয়ে ৭৩ বছর আগের এই ঘটনায়…
যুদ্ধ মানেই তো আসলে রক্ত রক্ত খেলা। যে যুদ্ধে কোনওদিন কারওর ভালো হয়নি। সে কথা সাধারণ মানুষ বোঝেন, বোঝেন ওনসের মতো বিশ্বনেতারাও। বোঝেন না কেবল রাষ্ট্রনেতারা। যারা গাজার জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া তো দূরের, তাদের হয়ে কথাটুকু বলে না। অথচ দেখুন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময় কিন্তু ছবিটা তেমন ছিল না। যুদ্ধক্লান্তদের প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে এই ভয়াবহ ঘৃণার প্রকাশ বোধহয় আমরা আগে দেখিনি কখনও। তা সত্ত্বেও গাজা মাথা তুলে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে। আর সেই চেষ্টার পাশে যেখানে বিশ্বের তাবড় সব দেশের থাকার কথা ছিল, সেখানে গাজাবাসীর পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন তিউনিশিয়ার এক খেলোয়ার। না, প্যালেস্টাইনের সঙ্গে তাঁর তেমন কোনও সম্পর্ক নেই বটে। কিন্তু মানুষ হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে গেলে যে সম্পর্কের প্রয়োজন হয় না, তা বুঝে গিয়েছেন টেনিস তারকা। দুর্বলকে প্রহারে প্রহারে শেষ করে দেওয়ার মধ্যে যে কোনও বীরত্ব নেই, তা ইজরায়েল বুঝবে না! যুদ্ধশান্তির পক্ষে একজোট হবে না বিশ্বের বাহুবলী সব দেশ! সাহায্য় করবে না গাজাকে?