দু’চোখের পাতা এক করলেই বিপদ! কখনওই নিশ্চিন্তে ঘুমায় না যেসব প্রাণী
Offbeat animals : ঘুমের সঙ্গে বেজায় আড়ি, জানেন এই বিশ্বেই আছে এমন কিছু প্রাণী যারা জীবনে কখনোই নিশ্চিন্তে ঘুমায় না!
একই পৃথিবীতে বসবাস করেও যোজন ফারাক মানুষের সঙ্গে প্রাণীজগতের একটা বড় অংশের। সারা বিশ্ব জুড়েই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অজস্র প্রাণীদের রকমফের। কোনওটা জলচর, কোনওটা স্থলচর, কোনওটা আবার উভচর। এইসব বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীদের মধ্যে আজও লুকিয়ে আছে এমন বেশ কিছু বিস্ময়, যা শুনলে হয়তো চমকে যাবেন অনেকেই। ধরা যাক সারাদিন খুবই কাজের চাপ গিয়েছে, ক্লান্তি কাটানোর একমাত্র ওষুধ হল শান্তির একটা লম্বা ঘুম। চিকিৎসকেরাও ঘুমিয়ে যে কোনও রোগ নিরাময়ের মোক্ষম প্রতিষেধক বলে দাবি করেন। সেখানে এই বিশ্বেই রয়েছে এমন বেশ কিছু প্রাণী, যাদের কিনা ঘুমের সঙ্গেই বেজায় আড়ি। নিশ্চিন্তে ঘুম নেই তাদের অভিধানে। আসুন এক নজরে দেখে নেওয়া যাক বিশ্বের এমন সব প্রাণীর তালিকায় রয়েছে কারা...
ডলফিন - ডলফিন শব্দটি শুনলেই চোখে ভেসে ওঠে পানিতে দাপাদাপি করে সাঁতরে বেড়ানো এক উচ্ছল প্রাণীর ছবি। মাঝেমাঝেই গণমাধ্যমে বেশ কিছু অসাধারণ ছবি সামনে আসে এই প্রাণীটির। কখনও সে জলের মধ্যেই বল নিয়ে খেলছে, কখনও আবার জল থেকে লাফিয়ে উঠে ভালোবেসে আলিঙ্গন করছে মানুষকে। জলচর প্রাণীদের মধ্যে এরা দারুণ বন্ধুসুলভ। সহজে মানুষের সঙ্গে মিশতে এদের জুড়ি মেলা ভার। বুদ্ধিমত্তার নিরিখেও ডলফিনকে জলচর প্রাণীদের মধ্যে সবথেকে এগিয়ে রাখার দাবি তোলেন বহু গবেষকই। এমন বহু ঘটনাই সামনে এসেছে যেখানে মানুষকে জলে ডুবে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করেছে এই প্রাণীটিই। কিন্তু জানেন কি এরা মোটেই ঘুমায় না। সদ্যোজাত ডলফিন, প্রথম একমাস বয়স পর্যন্ত মোটেই দু চোখের পাতা এক করে না। এমনকী এর পরবর্তী জীবনিও ঘুম নেই বিশেষ। প্রচণ্ড ঘুম পেলেও এক চোখ বন্ধ করে এবং অন্য চোখ খুলে রেখেই ঘুমায় এরা। এই প্রাণিরা জলে থাকা অন্যান্য শিকারি প্রাণীদের হাতে আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে একটা চোখ খুলে ঘুমোয়।
ফ্রুট ফ্লাইস বা ফলের ওপরে থাকে যেসব মাছি - এগুলি সাধারণত ছোট পোকা যা ড্রোসোফিলিডি পরিবারের অন্তর্গত। প্রায় ১/৮ ইঞ্চি আকারের হয় এবং উজ্জ্বল লাল চোখ সহ একটি কষা বা হলুদ-বাদামী শরীর থাকে এদের। মূলত ফল, শাকসবজি এবং অন্যান্য জৈব পদার্থের ওপর দেখতে পাওয়া যায় এদের। এদিকে যেমন এর অকারণ ভনভন শব্দ বিরক্তির উদ্রেগ করে, তেমনই অন্যদিকে এরা ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যান্য ক্ষতিকারক অণুজীবও বহন করে, যা আমাদের স্বাস্থ্যের বিশেষ ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তবে এটাও দিনে খুব কম সময় ঘুমায়। দিনে ৭২ মিনিট ঘুম এদের মধ্যেই সর্বাধিক রেকর্ড। এমন অনেক মাছিই রয়েছে যারা সারাদিন মাত্র মিনিট চারেক ঘুমিয়েই সন্তুষ্ট থাকে।
আরও পড়ুন - ব্যস্ততার সঙ্গে বেজায় আড়ি, ১ কিমি চলতে লাগে কয়েক ঘণ্টা! বিশ্বের সবচেয়ে ধীর গতির প্রাণী কারা?
বুলফ্রগ - এটি একটি সাধারণ ইংরেজি ভাষার শব্দ যা প্রজাতি নির্বিশেষে বড়, আক্রমণাত্মক ব্যাঙকে বোঝায়। আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, এশিয়া এবং আফ্রিকার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে বসবাস করে এই বিশেষ প্রজাতির ব্যাঙগুলি। এরাও মোটেই শান্তিতে ঘুমায় না। সর্বক্ষণ সজাগ থাকে। সারা বছর একটি নির্দিষ্ট সময় এরা ঘুমায় ঠিকই তবে সেই ঘুমের মধ্যে কান খোলা থাকে সামান্য কোনও শব্দেই সতর্ক হয়ে যায় এই প্রাণী।
জেলিফিশ - এক ধরনের সামুদ্রিক অমেরুদন্ডী প্রাণী হল জেলিফিশ। সারা পৃথিবীর যেকোনো মহাসাগরে এদের অস্তিত্ব মেলে। এরা সমুদ্রের স্রোতের টানে ভেসে বেড়ায় এবং ভাটার সময় বেলাভূমির দিকে চলে আসে। সাগরতলে ঘুরে বেড়ানো এই প্রাণীগুলো যেমন সুন্দর, তেমনি অদ্ভুত। অনেকে এই প্রাণীটিকে রাখেন অ্যাকুরিয়ামের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য। অনেক আবার প্রাকৃতিক পরিবেশেই এদের দেখতে ভালোবাসেন। কিন্তু এই প্রাণীর মধ্যেও লুকিয়ে আছে বিস্ময়? এরা কখনোই অঘোরে ঘুমায় না, পরিবর্তে এমন একটি পরিস্থিতিতে প্রবেশ করে যা ঘুমের মতো অবস্থা। এই সময় তাদের কার্যকলাপ হ্রাস এবং উদ্দীপনা ধীর হয়ে যায়।
ফ্রিগেট পাখি - পেলিকান এবং করমোরেন্টের প্রজাতির নিকটতম আত্মীয় হয় এরা। মূলত গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং উপ-ক্রান্তীয় অঞ্চলগুলি এদের বিশ্বাসের জন্য অনুকূল আবাস হিসাবে বিবেচিত হয়। প্রশান্ত মহাসাগর ও আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত দ্বীপগুলিতে পাওয়া যায় এই বিশেষ প্রজাতির পাখিদের। এরাও ডলফিনের মতো একই কৌশল মেনে ঘুমায়। কখনোই সম্পূর্ণ ঘুম নিমজ্জিত থাকে না এই বিশেষ ধরনের পাখিরা।