ডাইনোসর সীমান্ত! ওরা ঠাণ্ডা চোখে পরস্পরকে মেপে চলেছে
সীমান্ত চৌধুরী: বড় রাজপথের একদিকে সম্রাট চেঙ্গিজ খান ও কুবলাই খানের দেশ মঙ্গোলিয়া। অন্যদিক পরিচিত মাও সে তুংয়ের 'বিপ্লবী কমিউনিস্ট' সরকারের দেশ চিন। দুই দেশের এই দুই অতি পরিচিত ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বের সময়কাল কম করেও ছশো বছরের ব্যবধান। তবু দুজনই এখনও প্রশংসিত, আলোচিত, সমালোচিত।
চিন ও মঙ্গোলিয়া প্রতিবেশি দেশ। তাদের মধ্যে সাড়ে ৪ হাজার কিলোমিটারের বিশাল সীমান্তে মিশে আছে বিশ্বের অন্যতম ভয়াবহ গোবি মরুভূমি। এর এক কোনায় রাশিয়ার সঙ্গে শুরু হয়েছে অপর সীমান্তটি। বারোটি দেশের সঙ্গে চিনের বিশাল সীমান্তরেখা এশিয়া ও ইউরোপ একাকার। এসব অভিনবত্বের মাঝে যে বিষয়টি বিশেষ আলোচিত হয় সেটি হলো ডাইনোসর।
গোটা দুনিয়ায় যত অভিনব সীমান্ত চেকপোস্ট আছে তাদের অন্যতম চিন-মঙ্গোলিয়া সীমান্তের ডাইনোসর চেকপোস্ট! সরকারিভাবে না হলেও এমনই নামে পরিচিত এই আন্তর্জাতিক সীমান্ত।
পূর্ব চিনের সঙ্গে পশ্চিম মঙ্গোলিয়ার যোগসূত্র শহর ইনার মঙ্গোলিয়ার এরলিয়েন (Erlian) শহর। যারা প্রাগৈতিহাসিক জীবাশ্ম চর্চা করেন, গবেষণা করেন তাঁদের কাছে মঙ্গোলিয়া বিশেষ আকর্ষণের দেশ। মূলত ডাইনোসর গবেষকরা বেশি নজর দেন মঙ্গোলিয়ার দিকে। সেই সূত্রে এরলিয়েন সীমাম্ত শহরটি গুরুত্বপূর্ণ। এই শহরের মূল আকর্ষণের আর একটি হলো বিরাট ডাইনোসর মূর্তি।
ডাইনোসর গবেষণার কারণেই চিনের পূর্বাঞ্চল গুরুত্বপূর্ণ। গবেষকরা সেদিকেও নজর রাখেন। যে বিখ্যাত ভয়াল বিশাল প্রাণীটি কোটি কোটি বছর আগে পৃথিবীর শাসক হয়ে দাপাত ! তাদের অবলুপ্তি হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতির মধ্যে মিশে থাকা তাদের ফসিল বা জীবাশ্ম চরম কৌতুহল। ডাইনোসর গবেষকরা সেই সূত্র ধরে পৃথিবীর সৃষ্টি ও ভবিষ্যতের মধ্যে যোগ স্থাপন করে চলেছেন।
চিন ও মঙ্গোলিয়ার এরলিয়েন শহরের অভিনবত্ব এই ডাইনোসরের কারণেই। ডাইনোসর গবেষণাকে সম্মান জানিয়ে দুই দেশের সরকার ২০০৭ সালে তৈরি করে বিখ্যাত ও অভিনব চেকপোস্ট।
ডাইনোসরের বেশকয়েকটি প্রজাতির একটি হলো
'Brontosauruses', অজগর সাপের মতো লম্বা গলা, সরু চোয়াল, ছোট মাথা, আর বিরাট লেজ নিয়ে চারপেয়ে এই প্রাণী নিয়ে বিস্তর গবেষণা চলছে। তৃণভোজী নাকি মাংশাসী তাই নিয়ে বিতর্ক কম নেই। তবে বেশিরভাগই দাবি করেছেন মূলত শাকাহারী এই ডাইনোসরের প্রজাতি।চিন-মঙ্গোলিয়ার মাঝে অভিনব সীমান্তে এমনই দুটি 'Brontosauruses' মূর্তি একে অপরের দিকে ঠাণ্ডা চোখে তাকিয়ে রয়েছে। তবে দূর থেকে দেখলে মনে হবে দুটি ডাইনোসর পরস্পরকে চুম্বন করছে। এই দৃশ্যটি দেখতে সীমান্তের দুই দিকে পর্যটকরা জড়ো হন।
"It was built to introduce the world about the destination’s reputation as a fossil hub. What’s fascinating is their tall necks that stretches to the other and then there’s a point where the mouth of these two meet which looks exactly like they are kissing each other. It’s absolutely cute and interesting at the same time." -TOI
এরলিয়েন শহরটি এরেনহট (Erenhot) নামেও পরিচিত। শহরটি বিখ্যাত গোবি মরুভূমির অংশ। "Erenhot is located in the Gobi Desert, in the Xilin Gol league of the Inner Mongolia Autonomous Region. The city was established as the only train trade route between Inner and Outer Mongolia back in the 1950's, but the area has been gaining international attention since the 1920's with the discovery of dinosaur fossils in the Erlian Basin."
সৌ: amusingplanet
ডাইনোসরদুটির গলার তলা দিয়ে চলে গেছে রাজপথ। মূর্তিগুলোর যত কাছে যাওয়া যায় তত স্পষ্ট হয় চোখের ভুল। এরসময় দেখা যায় বিশেষ কোণে দুটি ডাইনোসর পরস্পরের দিকে তাকিয়ে আছে। বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যান দর্শকরা।
তবে যতই সৌহার্দ্যমূলক এই ডাইনোসর সীমান্ত থাকুক না কেন। মঙ্গোলিয়ার সঙ্গে বারে বারে সীমান্ত বিরোধিতা হয়েছে চিনের। ২০১৬ সালে তিব্বতি ধর্মগুরু দলাই লামাকে আমন্ত্রণ জানানোর কারণে মঙ্গোলিয়ার উপরে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা চাপাতে শুরু করে চিন। বন্ধ করা হয় সীমান্ত। ভারতে আশ্রিত চতুর্দশ দলাই লামা চিনের চোখে একজন 'বিচ্ছিন্নতাবাদী'। তাঁকে আমন্ত্রণ জানাতেই চিন ক্ষিপ্ত হয়েছিল। কূটনৈতিক বিপদ কাটাতে মঙ্গোলিয়ার তরফে যোগাযোগ করা হয় ভারতের সঙ্গে। কাঠখড় পুড়িয়ে সেবার পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দেয় মঙ্গোলিয়া সরকার। ভারতের তরফে জানানো হয়েছিল ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে সে দেশের মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই আমরা। পরিস্থিতি কূটনৈতিক উপায়ে কিছুটা ঠান্ডা হয়। ঠিক যেমন করে দুটো ডাইনোসর পরস্পর ঠাণ্ডা চোখে চেয়ে থাকে।
চিন ও মঙ্গোলিয়ার মাঝে ডাইনোসর সীমান্ত- এমনটি আর কোথাও খুঁজে পাবে না-কো তুমি!
তথ্যসূত্রঃ The Kissing Dinosaurs of Erenhot, China amusingplanet.com