সাত সতীনের ঝগড়া মেটাতেই শুরু হয়েছিল উৎসব, কোথায় পালিত হয় দুশো বছরের পুরনো এই দোল?

Sat Sateener Dol : আজ থেকে প্রায় দুশো বছরেরও বেশি সময় আগে শুরু হয়েছিল এই দোল উৎসবের রেওয়াজ। আজও সেই ঐতিহ্য নেই এখানে পালিত হয় দোল।

ন্যাড়া পোড়ার আগুনের আঁচে রাত পুহিয়েছে। অতঃপর দোল উৎসব। রঙে রঙে রাঙিয়ে দেওয়ার উৎসব। গতকাল গোটা বাংলা জুড়ে দলের রঙে মাতোয়ারা হয়েছে সকলে, সেই রেশ এখনও কাটেনি। আজ হোলি। বাঙালি ব্যতিরেকে হিন্দিভাষীদের আজ রং খেলার পরব। কালকের মতো আজও সকাল থেকেই শহরের ছবিটা খুব অন্যরকম। ট্রেনে বাসে অফিস টাইমে বাদুড় ঝোলা ভিড় নেই। সরকারি ছুটির মেজাজে দিব্যি কাটছে দিনটা। বসন্তের এইটুকু উদযাপন ঘিরেই চলে বিরাট প্রস্তুতি পর্ব। দোকানে দোকানে বিভিন্ন রঙের আবিরের পসরা বসে। তার সঙ্গেই থাকে পিচকারি, বালতি, মুখোশ অথবা কুখ্যাত বাঁদুরে রং। যদিও আধুনিক জীবনের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে এইসব উৎসবেও খানিক ছেদ পড়েছে। এই প্রজন্মের বাচ্চাদের হাতে সময়ের এতো অভাব যে রং খেলার জন্য সময় জোগাড় করতেও রীতিমতো হিমসিম খায়। কিন্তু দোল উৎসব ঘুরে আজই সারা বাংলা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে নানা ইতিহাস, নানান সব ঐতিহ্য।

নবদ্বীপ, মায়াপুর, শান্তিপুর তথা গোটা নদিয়া জেলার দোল নিয়ে যথেষ্ট আলোচনা রয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। কৃষ্ণ এবং চৈতন্য মহাপ্রভুর প্রসঙ্গ ধরে এখানে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় ভক্তরা। জাত ধর্মের বিভেদ ঘুচে যায় নিমেষেই কিন্তু নদীয়া বাদেও এই বাংলার এমন অনেক জায়গা রয়েছে যেখানকার দল উৎসব ঘিরে রয়েছে অসাধারণ কিছু ঐতিহ্য। হুগলি জেলাতেও রয়েছে এমন কিছু কৃষ্ণ ধাম, যেখানে মহা সমারোহে পালিত হয় দোল উৎসব। তবে আজ যে দোলের কথা আলোচনা করা হবে তা হল জয়নগরের বিখ্যাত ‘সাত সতীনের দোল’।

আরও পড়ুন - ঠাকুরবাড়ির সিদ্ধি, অলিগলির বাঁদুরে রঙ! কেমন ছিল পুরনো কলকাতার দোল?

নামটা শুনতে একটু অন্যরকম লাগছে ঠিকই, তবে এই নামের পিছনেও রয়েছে রহস্য। দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর, শীতকালের অতি প্রিয় মোয়ার নামেই বিখ্যাত এই জায়গা। তবে এই জায়গায় রয়েছে এক বিখ্যাত দোল পূর্ণিমা উদযাপনের রীতি। আজ থেকে প্রায় দুশো বছরেরও বেশি সময় আগে শুরু হয়েছিল এই দোল উৎসবের রেওয়াজ। আজও সেই ঐতিহ্য নেই এখানে পালিত হয় দোল।

সময়টা ১৮২০ সাল। জয়নগরে তখন বিখ্যাত সাত জমিদারি পরিবারের বাস। ব্যবসা, জমি জমা ইত্যাদি সংক্রান্ত বিষয়ে খুঁটিনাটি অশান্তি লেগেই থাকতো এদের মধ্যে। এরকম সময় এই সাত পরিবারের জমিদারেরা ঠিক করেন মিলন উৎসব করার কথন সমস্ত বিবাদ ভুলে দোল উপলক্ষ্যে তারা মিলনের রঙে মেতে ওঠেন। এর আগে অবশ্য এই সাত জমিদারির মধ্যে যা কিছু নিয়েই চলত অশান্তি। ক্ষমতার লড়াই, দেখনদারির লড়াই। ব্রিটিশ আমলে এই জমিদারদের মধ্যে ঝগড়া গড়িয়েছিল আদালত পর্যন্ত। যদিও বিচারক নির্দেশ দেন, ঝগড়া নিজেদের মধ্যেই মিটিয়ে নিতে হবে। সেখান থেকেই শুরু এই মিলনের দোল উৎসবের। ঠিক যেমন সতীনে-সতীনে ঝগড়া লেগে থাকে, তেমনই এই জমিদারদের মধ্যেও ঝগড়া লেগে থাকত বিক্রি সেই থেকে এই দোল উৎসবের নামকরণ করা হয় ‘সাত সতীনের দোল’ নামে। এই সাতটি দোল-মঞ্চ ছিল মোদক পরিবার , আচার্য পরিবার, মুহুরী পরিবার, বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার, চক্রবর্তী পরিবার, চৌধুরী পরিবার, ও বোস পরিবার-এর। যদিও বর্তমানে সেই সাত পরিবার থেকে কোন পাঁচ পরিবারে এসে ঠেকেছে এই উৎসবের রেওয়াজ। প্রতিবছর দোলের আগের রাতে চাঁচর উৎসবের মাধ্যমেই শুরু হয় দোল।

More Articles