ঢাকায় প্রথম ব্যান্ড তৈরি করেছিলেন একজন অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানই
Anglo-Indians of Bangladesh: বাঙালি খ্রিস্টান মহিলাদের পোশাকের মধ্যে শাড়ি এবং সালোওয়ার কামিজ ছিল। অ্যাংলো মহিলারা কিন্তু সবসময়ই ফ্রক বা গাউন পরতেন।
ষাটের দশকে বাঙালি সিনেমাপ্রেমীর নজর কেড়েছিল ‘সপ্তপদী’। তারপর বহুবছর ধরে বাঙালির আইকন হয়ে ছিল বাঙালি ছেলে কৃষ্ণেন্দু আর অ্যাংলো মেয়ে রীনা ব্রাউনের প্রেম। এর বেশ অনেক বছর পর ২০১৭ সালে পরিচালক শামীম আখতার বাংলাদেশে রিলিজ করলেন রীনা ব্রাউন। ঢাকানিবাসী অ্যাংলো মেয়ে সান্দ্রার প্রেমের গল্প। গল্পটির আখ্যান আবর্তিত ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধকে ঘিরে।
বাংলাদেশের সামাজিক ইতিহাসে অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানদের উল্লেখ আমরা খুব কমই পাই। বাংলাদেশি লেখক শাহ্দুজ্জামান দেখিয়েছেন, একটা সময় ঢাকা এবং চট্টগ্রামে বেশ কিছু অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানরা বসবাস করত কিন্তু প্রায় তিন দশক ধরে একেবারেই ঢাকার ইতিহাস থেকে হারিয়ে গেছে তারা। এই গোষ্ঠীর মানুষরা প্রধানত ছড়িয়ে ছিল পুরাতন ঢাকা, তেজগাঁও এবং তেজকুনিপাড়া ইত্যাদি এলাকায়। আবার দেশভাগের কিছু আগে এরা এসে থাকতে শুরু করে ঢাকার দিলু রোডে। দিলু রোড একসময়কার জমজমাট অ্যাংলো কলোনি। ভারতের অন্যান্য অংশ থেকে এরা এসেছিল এখানে। এরা এখানে এসে পৌঁছয় ষাটের দশকে। সত্তর-আশির দশকেও দেখা যেত এদের। কিছুজন এসেছিল পশ্চিমবঙ্গ, হায়দরাবাদ এবং গোয়া থেকে।
ঐতিহাসিক আফসান চৌধুরী দেখিয়েছেন, একসময় এই দিলু রোডে প্রচুর অ্যাংলো চার্চ এবং ইংরেজি মাধ্যম স্কুল ছিল। পঞ্চাশ-ষাটের দশকেও এখানে ছিল অ্যাংলো পাড়া। কারণ তিনি নিজেও ছিলেন ওই এলাকার বাসিন্দা। তিনি বলেছেন, অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানরা ক্যাথলিক ধর্মের উপাসক ছিল কিন্তু এদের খুব সহজেই আলাদা করা যেত বাঙালি খ্রিস্টানদের থেকে। এরা কখনই পশ্চিমি পোশাক ছাড়া পরত না, এদের জীবনপদ্ধতি ছিল নিজস্ব এবং ইংরেজি ভাষায় ছিল স্বচ্ছন্দ। দিলু রোডের পুরনো বাসিন্দাদের অনেকেই অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানদের কথা সহজে মনে করতে পারেন। তাঁদের মতে, অ্যাংলোরা ছিল প্রাণোচ্ছল আর মিশুকে।
আরও পড়ুন- ডার্ক লিপস্টিক, ছোট স্কার্ট! অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান মেয়ে মানেই যৌন উন্মাদনা?
এবারে প্রশ্ন হলো, এই ঢাকা-চট্টগ্রামে অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান বসতি গড়ে উঠল কী করে? চট্টগ্রাম বরাবরই বঙ্গোপসাগরের একটি উল্লেখযোগ্য বাণিজ্যবন্দর। ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির নানাবিধ ব্যবসা চলত এই বন্দর দিয়েই। ফাদার মাইকেল দ্য রোসারিও তাঁর ‘বাংলাদেশে খ্রিস্টমণ্ডলীর ইতিহাস’ বইটিতে লিখেছেন, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আগে প্রায় ১৫৩৭ সাল নাগাদ চট্টগ্রামে উপনিবেশ তৈরি করেছিল পর্তুগিজরা। অ্যাংলো চার্চের পাশাপাশি এ শহরে রয়েছে বেশ কয়েকটি পর্তুগিজ চার্চও। ভিক্টোরিয়া পার্কের আশেপাশেই রয়েছে কয়েকটি চার্চ। পূর্বদিকে সেন্ট গ্রেগরি চার্চ, উত্তরদিকে রয়েছে অ্যাংলিকান সেন্ট থমাস চার্চ আর দক্ষিণে ব্যাপ্টিস্ট মিশন চার্চ স্কুল। শোনা যায়, অ্যাংলিকান সেন্ট থমাস চার্চ পোপের নিয়ন্ত্রণে ছিল না। বরং এর হেড কোয়ার্টার ছিল ‘চার্চ অব ইংল্যন্ড'। অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানরা প্রধানত উপাসনা করত এই চার্চেই। সেন্ট গ্রেগরি চার্চ ছিল পোপের তত্ত্বাবধানে। গোয়ানিজ-পর্তুগিজ বংশোদ্ভূত ইউরেশিয়ানদের প্রার্থনা ঘর ছিল সেন্ট গ্রেগরি। অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানরা অন্য ধর্মের প্রতি সহনশীল হলেও খ্রিস্টধর্মকে আঁকড়ে ছিল বরাবরই। তার একটি কারণ, যে কোনও শহরেই চার্চ-সামাজিকীকরণ ছিল তাদের অ্যাংলো পরিচয় নির্মাণের প্রধান মাধ্যম আর তাদের ইংরেজি ভাষা শিক্ষাও শুরু হতো এখান থেকে।
ঢাকার স্থানীয় মানুষদের কথা অনুসারে, অ্যাংলোরা উচ্চশিক্ষিত না হলেও তাদের ইংরেজি ভাষায় দক্ষতার কারণে তারা নানাবিধ দপ্তরি কাজ করতে পারত। বাণিজ্য, বন্দর ও ব্রিটিশদের নিয়মিত আনাগোনায় পুরনো ঢাকায় তখন ছিল পশ্চিমি সংস্কৃতির ছাপ। ষাট-সত্তরের দশকেও শাহবাগের হোটেল থেকে ভেসে আসত ভায়োলিন বা পিয়ানোর বিদেশি সুর। ঢাকার আধুনিক সিনে-দুনিয়ারও উন্মেষের সময় তখন। পুরনো ঢাকায় ছিল বিখ্যাত সব বেকারি। অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানদের খাদ্যাভ্যাস অনেকটা নির্ভর করত এই বেকারি দ্রব্যের উপর কিন্তু ছোট শহরগুলির মতো ঢাকায় এই বেকারিগুলি অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানরা নিজেরা চালাত না। এই বেকারিগুলো আকারে বেশ বড়, মিলত নানাবিধ ব্রেড ও বিস্কিট। বেকারিগুলির মালিক ছিলেন মুসলিমরা। যদি আমরা খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাস ঘেঁটে দেখি, তাহলে দেখব, রুটি বা ব্রেড জাতীয় আটার দ্রব্য অর্থাৎ বেকারিখাদ্যের প্রথম জন্ম হয় মধ্যপ্রাচ্যে। আরবদেশের মুসলিম বণিকদের হাত দিয়েই বেকারিদ্রব্য এসে পৌঁছয় পাকিস্তান-বাংলাদেশে। সেই সময়ের ঢাকার সাংস্কৃতিক আবহ তৈরিতেও অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানদের অনেকখানি ভূমিকা ছিল। এখানকার প্রথম পশ্চিমি যন্ত্রসঙ্গীতের দোকান ‘মিউজিকাল মার্ট’ তৈরি হয়েছিল অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানদের হাতেই। শুধু এটুকুই নয়, ঢাকার প্রথম মিউজিক ব্যান্ড তৈরি করেছিলেন যে টেলবার্ট জনসন, তিনিও ছিলেন একজন অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান। যুবা গিটারবাদক টেলবার্ট খুব তাড়াতাড়ি মন কেড়ে নিয়েছিলেন ঢাকার তরুণদের। পরে ফাজলে রব, খাজা সাব্বির আর আলমগীর হক-কে নিয়ে তিনি তৈরি করেন ঢাকার জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘ইওলিটস’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যেও সেই সময় প্রবল জনপ্রিয় হয়ে পড়ে পশ্চিমি ব্যান্ড-সংগীত ও গিটার। দেশভাগের সংকীর্ণ রাজনীতি, জাত-ভাষা-ধর্মবোধ মানুষকে অপর করতে শেখায়নি তখনও, তাই সুর-সাহিত্যের মিলনের গতিপথ ছিল মুক্ত। অবিভক্ত ভারতের সংস্কৃতি বরাবরই জল-সার পেয়েছে নানা জাতির আদানপ্রদানে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিমি গান-কাব্যচর্চার আসর বসত অহরহ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য ছিলেন স্যর ফিলিপ জোসেফ হার্টগ।
এই টেলবার্ট জনসন বন্ধু ছিলেন ঐতিহাসিক হাশেম সুফির। তাঁরা দু'জনেই ছিলেন রোকনপুরের বাসিন্দা। ঢাকার একেবারে প্রথম দিককার ইংরেজি মাধ্যম স্কুল ছিল ‘উইলিস লিটল ফ্লাওয়ার’। টেলবার্টের মা ছিলেন এই স্কুলের শিক্ষিকা এবং পরবর্তীতে অধ্যক্ষাও হয়েছিলেন। ঢাকার সেই সময়ের উঠতি সিনেমা-সংস্কৃতির দুনিয়ায় জনপ্রিয় ছিলেন অ্যাংলো অভিনেত্রী অলিভিয়া গোমেজ। প্রায় ৫৩টিরও বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। উত্তমকুমারের সঙ্গেও রয়েছে তাঁর ছবি, বহ্নিশিখা। অধুনা বঙ্গবাজার এলাকায় রেলওয়ে কোয়ার্টারে বড় হয়েছিলেন অলিভিয়া। তাঁর এক বোন ওলগাও ছিলেন জনপ্রিয়। সম্ভবত তাঁদের বাবা কাজ করতেন রেলপরিবহণে।
আরও পড়ুন- ব্রিটিশদের ‘বর্জ্য’! খড়গপুর রেল কলোনিতে মুছে গেছে অ্যাংলো জীবনের ঘ্রাণ
ব্রিটিশরাজের কর্মী হিসাবে অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানরা লক্ষ্মীবাজার, ওয়াড়ি, ফার্মগেট অঞ্চলে আসতে শুরু করে। যেহেতু অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানদের একটা বড় অংশ ছিল রোমান ক্যাথলিক, তাই স্থানীয় ইতিহাসে এদের বাঙালি খ্রিস্টানদের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলার একটা প্রবণতা আছে। কিন্তু অনেকেই দেখিয়েছেন, বাঙালি খ্রিস্টানদের থেকে তাঁদের আলাদা করা যেত সহজেই । যেমন, বাঙালি খ্রিস্টান মহিলাদের পোশাকের মধ্যে শাড়ি এবং সালোওয়ার কামিজ ছিল। অ্যাংলো মহিলারা কিন্তু সবসময়ই ফ্রক বা গাউন পরতেন। আরেকটি কারণ ছিল তাদের খদ্যাভ্যাস। বরাবরই স্থানীয় খাদ্যাভ্যাসের থেকে আলাদা ছিল অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানদের খাওয়াদাওয়া। পাকিস্তান-বাংলাদেশ জুড়ে তখন বড়-বড় বেকারি থাকার কথা আগেই বলেছি। ঢাকার রুনা দত্ত জানিয়েছেন,
“...অ্যাংলোরা ছিল খুব খাটিয়ে। দিনের বেশিরভাগ সময় কাজ করত, ওদের মেয়েরা আমাদের মতো হেঁসেলে খাসি আর কাউঠ্যার মাংস রাঁধত না। ওরা দেখতাম খাবার কিনত বেকারি আর রেস্তরাঁ থেকে। এমনকী খাবারের রুটিনও আমাদের মতো নয়। বেকারি থেকে ভারী জলখাবার আনানোর অভ্যাস ওদের ছিলই। দুপুরের খাবার খেত না তেমন। রাতে সব মাংসের দোকানে ভিড় জমাত। ওদের মেয়েবউরাও যেত বাজারে মাংস কিনতে”।
সম্পূর্ণ ইংরেজি কায়দায় তৈরি প্রথম বেকারি ছিল ‘আলেকজান্ডার’। তাই ঐতিহাসিক হাশেম সুফি বলেছেন, ঢাকায় রেস্তরাঁ সংস্কৃতি তৈরিতে এদের অবদান রয়েছে যথেষ্ট। রুনা দত্তর কথায়,
“ঢাকার উচ্চবর্গদের মধ্যে জন্মদিন পালন, কেক কাটানোর অভ্যাস, বিবাহের বর্ষপূর্তি পালন — এসব শিখিয়েছিল এসব ‘আধা-ফিরিঙ্গি’-রাই। সাহেবরা তো আমাদের সঙ্গে তেমন মিশত না, মিশলেও একেবারেই উঁচু মানুষদের সঙ্গে বা রাজনৈতিক কর্তাবিধাতাদের সঙ্গে।”
আরও পড়ুন- অ্যাংলোদের স্বপ্নে চিরতরে ক্ষতচিহ্ন এঁকে দিয়েছিল দেশভাগ
স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের একটি প্রধান মাধ্যম হচ্ছে ভাষা। এখানকার অ্যাংলোরা বাংলা ভাষার ব্যবহার তেমন না জানলেও তারা কথা বলত ইংরেজি আর উর্দুর মিশেলে। ভাষার আত্তীকরণের আরেকটি কারণ হলো বিবাহ। অনেকক্ষেত্রেই স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে জড়িয়েছিল অ্যাংলোরা।
অধুনা বাংলাদেশে কি খুঁজে পাওয়া যায় তাদের? স্থানীয় সূত্র অনুসারে, খুবই কম সংখ্যক এখনও টিকে আছে দিলু রোডে। তাঁদের অভিবাসন শুরু হয় উনিশ শতকের দ্বিতীয়ভাগ থেকেই। এর একটি কারণ হতে পারে, দেশভাগের পর অস্থির রাজনৈতিক পরিবেশ। “ব্রিটিশরা থাকা অবধি একটা সধারণ ‘সেন্স অব ডিসিপ্লিন’ সবার মধ্যেই ছিল। দেশভাগের চালাকি তখনও জাতি হিংসাকে প্রচারণা দেয়নি। কালচার ছিল খোলামেলা। আর আমরা আমাদের বাঙালি বাড়িতে বা ক্লাবের অনুষ্ঠানে যেতাম। পিয়ানো বাজানোর অনুরোধ আসত আমার কাছে। দেশভাগের নাম করে এই দেশের দুই জাতি আমার-তোমার করা শুরু করল। আর আমরা থেকে গেলাম একেবারে তলানিতে। আবার অনেকে চলে গিয়েছিল ইন্ডিয়াতে”। (সেরল গোমেজ, ১৯৫০)
ডরোথি মেকম্যানামিন দেখিয়েছেন, ভারতীয় অ্যাংলোদের থেকে পাকিস্তানি অ্যাংলোদের রাজনৈতিক সচেতনতা বরাবরই কম ছিল। ফ্রাঙ্ক অ্যান্থনি মুসলিম লীগের বিরোধিতা করে জাতীয় কংগ্রেসকে সমর্থন করায় ভারতে অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানদের জন্য কিছু সুবিধা বরাদ্দ হয়েছিল। লোকসভায় ১৯৫২ সাল থেকে অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানদের জন্য দু'টি আসন সংরক্ষিত হয়েছিল (যদিও পরে সেই সংরক্ষণ তুলে দেওয়া হয়)। কিন্তু পাকিস্তানে সেইরকম কোনও সুবিধা পায়নি অ্যাংলোরা। এমনকী, ১৯৫০-এর শেষদিক থেকেই অ্যাংলোরা রেলপরিবহনে কাজ করাও ছেড়ে দিতে থাকে। অনেক ঐতিহাসিকই অ্যাংলোদের এই বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার কারণ হিসাবে দেখতে চেয়েছেন দেশভাগের হিংস্রতাকে। পঞ্চাশের দশক থেকে সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা শহরকে কেন্দ্র করে যে উদার, মুক্ত ও মিশ্র সংস্কৃতির আবহ তৈরি হয়েছিল, তা খানিকটা থমকে যায় দেশভাগের রক্তলোলুপ বীভৎসতায়। মেকম্যানামিনের মতানুযায়ী, দেশভাগের হিংসার প্রত্যক্ষ প্রভাব অ্যাংলো সম্প্রদায়ের উপর না এলেও জাতিহিংসার যে দামামা বেজে উঠেছিল তাতে নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কায় কেউ স্থানান্তরিত হন ইন্ডিয়ায় আবার কেউ পাড়ি জমান সাগরপাড়ে। হয়তো, এসময় থেকেই কাঁটাতারে বিভক্ত বঙ্গে মাথা তুলে দাঁড়াতে ভয় পায় মিশ্র-সংস্কৃতি। ইংরেজি-উর্দুর মিশেলের মিষ্টি পিয়ানোর সুর আর ভেসে আসে না শাহবাগের হোটেল থেকে। আধা-ফিরিঙ্গিদের ভিড়ে গমগম করে না বিকেলর আজিজা বেকারি। কেউ বেঁচে থাকে জাতি পরিচয় গোপনে, হীনম্মন্যতায়, কেউ মেনে নেয় বলপূর্বক আত্তীকরণ। কেউ পুরোপুরিভাবে হারিয়ে ফেলে নিজস্ব সংস্কৃতি।