বাংলার আকাশে অজানা আলো! অবশেষে সামনে এল আসল রহস্য

Mysterious light on West Bengal : আবার নেটপাড়ায় অনেকেই বলেছিলেন কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইটের ভগ্নাংশ হতে পারে সেই আলো। অবশেষে রহস্য উদঘাটন হল।

ডিসেম্বরের শীতের সন্ধ্যায় বাংলার আকাশে রহস্যময় আলো। যেন উজ্জ্বল রশ্মির টর্চ ভেসে চলেছে আকাশে। মিনিট তিনেক উজ্জ্বলভাবে জ্বলে আবার মিলিয়েও গেল সন্ধ্যের আকাশে। স্বাভাবিক ভাবেই চমকে গেছে বাংলা। বাঁকুড়া, বর্ধমান, দুই মেদিনীপুর, কলকাতার বুকে দাঁড়িয়ে অনেকের চোখেই পড়েছে সেই আলো।

নেটপাড়ার ছড়িয়েও পড়েছে সেই ছবি। স্বাভাবিকভাবেই শুরু হয়েছে জল্পনা। কেউ বলছে অজানা উড়ন্ত বস্তু, এই বুঝি খাস কলকাতার বুকে পা রাখল ভিনগ্রহের কোনও বাসিন্দা। কেউ বলছে উল্কাপাত! কিন্তু এত আলোকজ্জ্বল আকাশে উল্কা চোখে পড়বে? তা তো সম্ভব নয়। তাছাড়া উল্কার আলো এত উজ্জ্বল হয় না। অনেকেই ধারণা করেছিলেন ধুমকেতু। কিন্তু তাও এত উজ্জ্বল হয় না। আবার নেটপাড়ায় অনেকেই বলেছিলেন কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইটের ভগ্নাংশ হতে পারে সেই আলো।

অবশেষে রহস্য উদঘাটন হল। সূত্রে জানা যাচ্ছে, ভারত আজ সফলভাবে শক্তিসম্পন্ন ব্যালিস্টিক মিসাইল অগ্নি-৫ পারমাণবিক উৎক্ষিপ্ত করেছে। সেই পরিকল্পনা মাফিক ১৫ ডিসেম্বর অর্থাৎ আজ নাইট ট্রায়ালের পরিকল্পনা ছিলই। অগ্নি-৫ মিসাইলটি ক্ষেপণ করা হয়েছে ওড়িশা থেকে। ইন্ডিয়ান ডিফেন্স রিসার্চ উইংয়ের সূত্রে জানা যাচ্ছে, সেই অগ্নি-৫ মিসাইলের পরিসীমা পাঁচ হাজার কিলোমিটার। অর্থাৎ ৫০০০ কিলোমিটারেরও বেশি পরিসীমায় এই ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত করার ক্ষমতা রয়েছে।

agni v missile

অগ্নি ফাইভ ক্ষেপণাস্ত্রের প্রজেকশন

কিন্তু হঠাৎ এত শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করে দেখা হল? আসা যাক সেই প্রসঙ্গে।

চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মির বহুদিনের নজর অরুণাচল প্রদেশ ও লাদাখে। গত ৯ ডিসেম্বর পিপলস লিবারেশন আর্মি অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াং অঞ্চল দখলের চেষ্টা করেছে। তারপর থেকেই নড়েচড়ে বসেছে ভারত। অরুণাচল প্রদেশ সীমান্ত অঞ্চলে বেড়েছে নজরদারিও। ভারতীয় বায়ুসেনাও এই অঞ্চলে এখন সদা সজাগ, যাতে চিন বায়ুপথে ভারতে হানা দিতে না পারে।

‘টাইমস নাও’ সূত্রে জানা যাচ্ছে, চিনও যথেষ্ট আঁটঘাট বেঁধেই এসেছিল ভারতকে আক্রমণ করতে। সেনাবাহিনীতে ৩০০ সেনাও উপস্থিত ছিল, যখন পিপলস লিবারেশন আর্মি তাওয়াং অঞ্চল দখলদারির চেষ্টা করে। চিনকে কড়া জবাব দিতেই নাকি আজ অগ্নি-৫ মিসাইলটি পরীক্ষামূলক ভাবে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল।

ইন্ডিয়ান ডিফেন্স রিসার্চ উইংয়ের সূত্রে আরও জানা যাচ্ছে খুব দ্রুত অগ্নি-৬ ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের পরীক্ষাও শুরু হবে। সেই ক্ষেপণাস্ত্রের পরিসীমা আবার ৮০০০ কিলোমিটারেরও বেশি। ২০১২ সাল থেকেই ভারত অগ্নি-৫ ব্যালিস্টিক মিসাইল উৎক্ষেপণের কাজ শুরু করেছে। যদিও এর পরিসীমা কমিয়ে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজারের মধ্যে রাখা হয়েছিল। দাবি করা হয়েছিল এদের পরিসীমা পাঁচ হাজার কিলোমিটার। তবে অগ্নি-৫ এর বর্তমান নতুন রূপে আসায়, বাড়ানো হয়েছে তাদের পরিসীমাও।

agni V missile range

অগ্নি ৫-এর মিসাইল রেঞ্জ

২০১২ সালের পর ২০১৩, ২০১৫, ২০১৬, ২০১৮, এবং ২০২১ সালের বিভিন্ন সময়ে অগ্নি-৫ ব্যালিস্টিক মিসাইল পরীক্ষামূলক ভাবে ভারত থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। ভারতের "ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজে়শন বা সংক্ষেপে ২০০৮ সাল থেকেই তৈরি করছে অগ্নি-৫ মিসাইল। শুধু বায়ুপথেই নয়, জলপথে সাবমেরিন হিসেবেও নিক্ষেপ করা করা যায় অগ্নি-৫-এর মতো ব্যালিস্টিক মিসাইলকে।

agni missile

অগ্নি ৫ মিসাইলের ছবি

ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রে জানা যাচ্ছে, ভারতের উপর চিনের হানা আটকাতেই এই পদক্ষেপ করা হয়েছে। চিনের কাছে ইতিমধ্যেই ডংফেং-৪১-এর মতো ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। যার পরিসীমা ১২ থেকে ১৫ হাজার কিলোমিটার। অগ্নি-৫ ব্যালিস্টিক মিসাইলের পরিসীমা পাঁচ হাজার হলেও, খুব সহজেই তা চিনের একদম উত্তরাংশ অবধি আঘাত হানতে পারে। অগ্নি-৫-এর উৎক্ষেপণের কারণে ১৫ এবং ১৬ ডিসেম্বর অর্থাৎ আজ এবং আগামীকাল বঙ্গোপসাগরের উপর বিমানের উড়ান নিষিদ্ধ করা হয়েছে (নো ফ্লাই জো়ন)।

প্রসঙ্গত, গুপ্তচরবৃত্তির উদ্দেশ্যে ৬ ডিসেম্বর ভারত মহাসাগরের বুকে পাঠিয়েছিল একটি স্পাই ভেসেল। তার তিনদিন পরেই পিপলস লিবারেশন আর্মি অরুণাচলপ্রদেশের তাওয়াং অঞ্চল দখলের চেষ্টা করেছে। সব দিক মাথায় রেখে, ভারতীয় বায়ুসেনা অরুণাচলপ্রদেশ সীমান্তে কেবল কড়া নজরদারিই শুরু করেনি, বায়ুপথে আক্রমণ প্রতিহত করতে দুই দিনের বিশেষ প্রশিক্ষণও শুরু করেছে, জানা যাচ্ছে 'টাইমস নাও' সূত্রে।

More Articles